▪️একাদশী" কি শাস্ত্র সম্মত ❓



▫️একাদশী" কি শাস্ত্র সম্মত ❓

▫️একাদশীর উৎপত্তি:-



🔸শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর লীলাবিলাসের প্রথম থেকেই একাদশীর উপবাসের প্রথা প্রবর্তন করেছিলেন। শ্রীল জীব গোস্বামী তাঁর ভক্তিসন্দত গ্রন্থে স্কন্দ পুরাণের একটি উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, "যে-মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে, সে তার পিতা, মাতা ভাই এবং শুরু হত্যাকারী, এবং সে যদি বৈকুণ্ঠলোকেও উন্নীত হয়, তবুও তার অধঃপতন হয়। একাদশীর দিন শ্রীবিষ্ণুর জন্য সব কিছু রন্ধন করা হয়, "এমন কি অন্ন এবং ডালও, কিন্তু শাস্ত্রে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, সেদিন বৈষ্ণবদের বিষ্ণুর প্রসাদ পর্যন্ত গ্রহন করা উচিত নয়। সেই প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে। একাদশীর দিন কোন রকম শস্যদানা এমন কি অন্ন-তা যদি বিষ্ণুপ্রসাদও হয়, তবুও তা গ্রহণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। বিধবা না হলেও শাস্ত্র অনুসারে একাদশীর ব্রত পালন করার প্রথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তন করেছিলেন (দ্রষ্টব্য- শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত', আদিলীলা, ১৫/৮-১০)

উল্লেখ করেছেন:-   শ্রীল প্রভুপাদ ।

▫️একাদশী নিয়ে উল্লেখ রয়েছে:- 

বিষ্ণু সংহিতা ৪৯/১-৪। 
গর্গ সংহিতা (মাধুর্য খন্ড, ৮/১৩-১৭, ৪৩) 
শ্রীমদ্ভাগবত ৯ম স্কন্ধের ৪র্থ অধ্যায়। 
গরুড় পুরাণ  ১২৩/১১
বরাহ পুরাণ ২১১/৪৭-৪৮
অগ্নি পুরাণ ১৫৭/৩
স্কন্ধ পুরাণ, বিষ্ণু খন্ড, কার্তিকমাস মাহাত্ম্য, ৩৩/৩২-৩৫
বৃহন্নারদীয় পুরাণ ২১/১৭,২৩ ইত্যাদি

▪️একাদশী মাহাত্ম্য:-

সংগ্রহ :- ভক্তিবেদান্ত বুক ট্রাস্ট (একাদশী মাহাত্ম্য)

সাপ্যৈবং মঞ্জুঘোষা চ কৃত্বৈতদব্রতমুত্তমম্।
পিশাচত্বাদ্বিনির্ম্মুক্তা পাপমোচনিকাব্রতাৎ।
দিব্যরূপধরা সা বৈ গতা নাকে বরাপ্সরাঃ।।৪৬
[ পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড, অধ্যায়-৪৬।৪৬ ]
বঙ্গানুবাদঃ
অপ্সরা মঞ্জুঘোষাও উক্ত উত্তম একাদশী ব্রত অনুষ্ঠান পালনে পিশাচত্ব হইতে মুক্ত হইল। পাপমোচনী একাদশী ব্রতের প্রভাবে সে দিব্যরূপ ধারনপূর্ব্বক স্বর্গে গমন করিলো।


সংশয়:- একাদশী মাহাত্ম্য  অনুযায়ী এখানে  সকাম কর্মের কথা উল্লেখ করেছে,  একাদশী থাকার কারন হচ্ছে  তার ফল পাওয়ার উদ্দেশ্য।  যদি কোনো  কাজ ফলের উদ্দেশ্যে  করা হয় সেটি সকাম কর্মের। কিন্তু গীতায় শ্রী কৃষ্ণ  নিষ্কাম কর্ম  করতে বলেছেন।

• গীতায় শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন:-

←গীতা ২/৪৭→


যুক্ত: কর্মফলং ত্যক্ত্বা শান্তিমাপ্নোতি নৈষ্ঠিকীম্ ।
অয়ুক্ত: কামকারেণ ফলেসক্তো নিবধ্যতে।।

←গীতা ৫/১২→

অর্থাৎ: নিষ্কাম কৰ্মযোগিগণ কৰ্মফল ত্যাগ করিয়া সর্বদুঃখ-নিবৃত্তিরূপ স্থিরা শান্তি লাভ করেন ।  সকাম বহির্মুখ ব্যক্তিগণ কামনাবশতঃ ফলে আসক্ত হইয়া বন্ধনদশা প্রাপ্ত হন।

তস্মাদসক্তঃ সততং কার্যং কর্ম সমাচর ।
অসক্তো হ্যাচরন্ কর্ম পরমাপ্নোতি পুরুষঃ।।

←গীতা ৩/১৯→

অর্থাৎ: তুমি আসক্তিশূন্য হইয়া কর্ম সম্পাদন করো , অনাসক্ত হয়ে কর্মানুষ্ঠান করিলে পুরুষ পরমপদ (মোক্ষ) প্রাপ্ত হন ।

গীতায় স্পষ্টভাবে  বলেছে নিষ্কাম কর্ম করার জন্য। 

[ অর্থাৎ ফল লাভের আশায় কোন কর্ম করা উচিত নয় ]

• [ একাদশী মাহাত্ম্য বইয়ে,  সমস্ত পঞ্চ যজ্ঞের ফল লাভ হয়,  সেখানে প্রশ্ন দাঁড়ায়, যে,  একাদশীতে যজ্ঞের ফল লাভ হয়,  কারো মঙ্গল কামনায়, বা,  গীতায়, শ্রীকৃষ্ণ যে পঞ্চযজ্ঞের কথা কেন উল্লেখ করেছেন,  গীতা ৩/১৫ বলেছে, বেদের মন্ত্র দিয়ে যজ্ঞ করার জন্য,  তাহলে কি পরস্পর বিরোধী কথা হচ্ছে না ? ]


কর্ম ব্রহ্মোদ্ভবং বিদ্ধি ব্রহ্মাক্ষরসমুদ্ভবম্।
তস্মাৎ সর্বগতং ব্রহ্ম নিত্যং যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিতম্।।

←গীতা: ৩/১৫→

অর্থাৎ: যজ্ঞাদি কর্ম বেদ থেকে উদ্ভব হয়েছে এবং বেদ অক্ষর পরমাত্মা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। অতএব সর্বব্যাপক ব্ৰহ্ম সর্বদা যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিত আছেন।


[ এখানে বেদের মন্ত্র দ্বারা যজ্ঞ করার কথা বলা হয়েছে। ]


▫️ উপবাস সম্পর্কে গীতায় শ্রী কৃষ্ণ কি বলেছেন →

←গীতা ৬/১৬→

অর্থাৎ: হে অর্জুন! যে অতিরিক্ত ভোজন করে অথবা উপবাস থাকে, আবার অতিরিক্ত নিদ্রা অথবা সমস্ত রাত্রি জাগীয়া থাকে তাহার যোগ হয় না।

 
যুক্তাহারবিহারস্য যুক্তচেষ্টাস্য কর্মসু।
যুক্তস্বপ্নাববোধস্য যোগো ভবতি দুঃখহা।।

←গীতা ৬/১৭→

অর্থাৎ: আহার, বিহার, কর্ম, নিদ্রা ও জাগরণে যিনি সমতা রাখিয়া চলেন, তাহার যোগ দুঃখনাশী হয়।



←গীতা ১৭/৫-৬→

অর্থাৎ: যে সকল লোক অশাস্ত্রীয় কঠোর তপস্যা করে, দম্ভ ও অহংকারের বলে কাম ও আসক্তিপরায়ণ হয় এবং বলশালী হইয়া শরীরের ভূতগুলিকে কষ্ট দেয় আর শরীরের মধ্যস্থ আমাকে কষ্ট দেয়; এইসব লোকেরা অসুরের ন্যায়, ইহা তুমি জানিও।

Those vain and conceited men who, impelled by the force of their lust and attachment, subject themselves to severe austerities not ordained by the scriptures, And, fools that they are, torture all their bodily organs, and Me, too, who dwell within the body- know that they are fiendish in their resolves.

[ অর্থাৎ এর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে,  অশাস্রীয় কঠোর তপস্যা শরীরের ভূতগুলিকে কষ্ট দেয়, সে অসুরের ন্যায়, কার্য করিয়া থাকে ]


• একাদশীর দিন শ্রীবিষ্ণুর জন্য সব কিছু রন্ধন করা হয়, এমন কি অন্ন এবং ডাল ও, কিন্তু শাস্ত্রে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, সেই দিন বৈষ্ণবদের বিষ্ণু প্রসাদ পর্যন্ত গ্রহন করা উচিৎ নয়। সেই প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেয়া যেতে পারে। একাদশীর দিন কোন রকম শস্যদানা এমন কি অন্ন - তা যদি বিষ্ণুপ্রসাদও হয়, তবুও তা গ্রহন কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

[শ্রীল জীব গোস্বামী তাঁর ভক্তি সন্দর্ভ গ্রন্থে স্কন্দ পুরানের উদাহরণ দিয়ে  বলিলেন ! ]


• গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বাসী খাওয়ার খেতে কি বলেছেন ❓

Answer:-        यातयामं गतरसं पूति पर्युषितं च यत् ।
उच्छिष्टमपि चामेध्यं भोजनं तामसप्रियम् ॥

←গীতা ১০/১৭→

Foods that are overcooked, stale, putrid, polluted, and impure are dear to persons in the mode of ignorance.

অর্থাৎযে সকল খাবার বহু অগ্রে তৈয়ারী করা হইয়াছে, রস যাহার শুকাইয়া গিয়েছে, "বাসী", দুর্গন্ধযুক্ত, উচ্ছিষ্ট (কাহারও এঁটো) তাহা তামসিক ব্যক্তির প্রিয়।


[  শ্রীল জীব গোস্বামীর ব্যাখ্যা  মতে এটি তামসিক গুণের মধ্যে পড়ে,  ]



• গীতার শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন:-



যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ।
ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্।। 

←গীতা ১৬/২৩→

অনুবাদঃ যে শাস্ত্রবিধি ( বেদ)পরিত্যাগ করে কামাচারে বর্তমান থাকে, সে সিদ্ধি, সুখ অথবা পরাগতি লাভ করতে পারে না।


[ অর্থাৎ এর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি বা বুঝতে পারি যে,  গীতায় কোথাও,  অতি অনাহারে থেকে একাদশী ব্রত পালন করার কথা বলা হয়নি।  অতি অনাহার তামসিক বলেছে ]

•  গীতা অনুযায়ী শ্রীকৃষ্ণ নিষ্কাম কর্ম করতে বলেছে। কোন কিছু ফলের আশায় একাদশী ব্রত পালন করে, সকাম কর্ম  করতে বলে নাই,।  গীতায় নিষ্কাম কর্ম করতে বলা হয়েছে।


• এর মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে যা এটি  শাস্ত্র সম্মত না।


▫️ পদ্ম পুরান, স্মৃতি শাস্ত্র-অত্রিসংহিতায়, নারীদের একাদশী ব্রত পালনের অধিকার দেই নাই,  নারিরা একাদশী ব্রত পালন করলেন নরকে যাবে। 

• পদ্মপুরাণম্

পতৌজীবতি যা নারী উপবাসং ব্রতং আরেৎ।
আয়ুষ্বংহরতেভর্তুর্মৃতানরকামিচ্ছতি।।

(পদ্মপুরাণম্ সৃষ্টিখণ্ডের ৩৪/৭৪)

অনুবাদঃ পতির জীবিত অবস্তায় যে নারী উপবাস ব্রত পালন করে, সে নারী পতির আয়ু হরন করে এবং মৃত্যুর পর নরক কামনা করে।

• অত্রিসংহিতা

জীবদ্ভর্ত্তরি যা নারী উপোষ্য ব্রতচারিণী।
আয়ুষ্যং হরতে ভর্ত্তুঃ সা নারী নরকং ব্রজেৎ।।

(অত্রিসংহিতা ১৩৬নং শ্লোক।)

অনুবাদ: যে নারী স্বামী জীবিত থাকিতে উপবাস করিয়া ব্রত করে,সে নারী স্বামীর আয়ু হরণ করে ও নরকে গমন করেন।।
এই বচন অনুসারে কোন সধবা নারী, একাদশী হলো উপবাস ব্রত,তাই তা পালন করে স্বর্গে যাওয়া ত দূরের  কথা, সাথে স্বামীর আয়ু হরণ কারিনী হন।

• বিষ্ণুসংহিতায় 

পত্যৌ জীবতি যা যোষিদুপবাসব্রতং চরেৎ।
আয়ুঃ সা হরতে ভর্ত্তুর্নরকঞ্চৈব গচ্ছতি।।

(বিষ্ণুসংহিতা ২৫তম অধ্যায় ১৬নং শ্লোক)

অনুবাদঃ যে স্ত্রী পতি জীবিত থাকিতে উপবাস  ব্রত আচরণ করে, সে নারী স্বামীর আয়ু হরণ ও নরকে গমন করে।।


▫️একাদশী নিয়ে নারীদের প্রতি অবহেলা রয়েছে।  পুরাণ মতে,। এক পুরাণে বলছে একাদশী ব্রত পালন করার জন্য, আরেক পুরাণে বলছে  ব্রত পালন করলে নরকের গমন করবে।  একটি আরেকটি সাথে সংঘর্ষিক। 


• অতএব, একাদশী পবিত্র বেদ ও গীতা, উপনিষদ,  মনুসংহিতা  কোথাও উল্লেখ নেই।  কাজেই এটি অশাস্ত্রীয়।মানব শরীর একটা সাইকেলের মধ‍্যে চলে তাই খাবারের তারতম‍্যে মাঝে মধ‍্যে এক বার না খেয়ে থাকা শরীরের জন‍্য উপকার বা বিজ্ঞান সম্মত কিন্তু একাদশীর নামে যা চলছে বা পাপ পূর্ণের নামে মিথ‍্যাচার করা উচিৎ নয়।

[ এর মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে, এটি শাস্ত্র সম্মত নয়।  ]

অশাস্ত্রীয় ব্রত



ওঁ অসতো মা সদ্গময়।
তমসো মা জ্যোতির্গময়।
মৃত্যোর্মামৃতং গময়।

( - বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ ১।৩।২৮)

অর্থাৎ,
অসত্য থেকে আমাকে সত্যে নিয়ে যাও, অন্ধকার থেকে আমাকে জ্যোতিতে/আলোতে নিয়ে যাও, মৃত্যু থেকে আমাকে অমৃতে নিয়ে যাও।


সত্যের পথে চলেই সত্যের অনুসন্ধান করি

নমস্কার

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ