🍀 "প্রায়শ্চিত্ত ও শুদ্ধি" 🍀

"প্রায়শ্চিত্ত ও শুদ্ধি" 

শুদ্ধি-১ঃ 

ইন্দ্রং বর্ধন্তো অপ্তুরঃ কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্য্যম্। অপঘ্নন্তো অরাবৃণঃ ।। ১ 

পদার্থঃ- (ইন্দ্ৰং বর্ধন্তঃ) ঈশ্বরের মহিমাকে বৃদ্ধি কর (অঙ্কুরঃ পধঘ্নতঃ অরাবৃণঃ) স্বত্বাপহারী অনার্যকে সমুচিত শিক্ষা দাও (কৃণ্বন্তোঃ বিশ্বম্ আর্য্যম্) বিশ্বের সকলকে আর্য কর । [ঋগ্বেদ ৯/৬৩/৫] 

বঙ্গানুবাদঃ- হে মনুষ্য ! ঈশ্বরের মহিমাকে বৃদ্ধি কর, স্বত্বাপহারী অনার্যকে সমুচিত শিক্ষা 

দাও, বিশ্বের সকলকে আর্য কর। 

শুদ্ধ কর-২ঃ 

দৈব্যায় কর্মণে শুন্ধধ্বং দেবযজ্যায়ৈ যদ্বোহ শুদ্ধাঃ 

পরাজঘ্নুরিদং বস্তুচ্ছুন্ধামি।। ২ 

পদার্থঃ- (দৈব্যায় কর্মণে) বেদোক্ত কর্ম করিবার জন্য (শুন্ধধ্বং) শুদ্ধ হও (যৎ) যেহেতু (অশুদ্ধাঃ) অশুদ্ধ কর্মাদি (বঃ) তোমাদিগকে (পরাজন্মুঃ) পরাজয় করিয়াছে (তৎ) এজন্য (দেবযাজ্যায়ৈ) দেবযজ্ঞাদি কার্যের জন্য (শুদ্ধামি) শুদ্ধি করিতেছি।  

              [যজুর্বেদ ১/১৩ ] 

বঙ্গানুবাদঃ- বেদোক্ত কর্ম করিবার জন্য শুদ্ধ হও। যেহেতু অশুদ্ধ কর্মাদি তোমাদিগকে পরাজয় করিয়াছে এজন্য আমি তোমাদিগকে দেবযজ্ঞাদির জন্য শুদ্ধ করিতছি। 

পাপকর্ম-৩ঃ 

যদ্বিদ্বাংসো যদবিদ্বাংস এনাংসি চকৃমা বয়ম্ । যূয়ং নস্তস্মান্মুঞ্চত বিশ্বেদেবাঃ সজোষসঃ।। ৩ 

পদার্থঃ- (বিশ্বে দেবাঃ) বিদ্বানগণ! (বিদ্বাংসঃ যৎ) যাহা জ্ঞাত (যৎ অবিধ্বংসঃ) যাহা অজ্ঞাত (এনাংসি বয়ং চকৃম্) পাপ কর্ম আমরা করিয়াছি (সজোষসঃ যূয়ম্) সমান প্রীতিযুক্ত তোমরা (তষ্মাৎ) সেই পাপ হইতে (নঃ মুঞ্চত) আমাদিগকে মোচন কর। 

         [অথর্ববেদ ৬/১১৫/১] 

বঙ্গানুবাদঃ- হে বিদ্বানগণ! জ্ঞাতই হউক বা অজ্ঞাতই হউক, আমরা যে পাপ কর্ম করিয়াছি, আমাদের সে সব হইতে মুক্ত কর। কারণ তোমাদের প্রতি সকল প্রীতিই সমান। 

স্বপ্ন-৪ঃ 

যদি জাগ্রদ্যদি স্বপন্নেন এনস্যোহকরম্। ভূতং মা তস্মাত্দ্ভব্যং চ দ্রুপদাদিব মুঞ্চতাম্।। ৪ 

পদার্থঃ- (জাগ্রৎ) জাগ্রতাবস্থায় (স্বপন) স্বপ্নাবস্থায় (যদি) যদি (এনস্যঃ এনঃ) পাপ দ্বারা পাপ (অকরম্) করিয়া থাকি (ভূতম্) বর্তমান কালের (ভব্যম্) ভবিষ্যৎ কালের (তস্মাৎ দ্রুপদাৎ ইব) কাষ্ঠ বন্ধন তুল্য সেই বন্ধন হইতে (মা) আমাকে (মুঞ্চতাম্ ) মুক্ত কর। 

         [অথর্ববেদ ৬/১১৫/২] 

বঙ্গানুবাদঃ- জাগ্রতাবস্থায় বা স্বপ্নাবস্থায়, বর্তমান কালে বা ভবিষ্যৎ কালে আমি যে সব পাপ করিয়াছি, কাষ্ঠ বন্ধন হইতে মুক্ত হওয়ার ন্যায় সেই সব হইতে আমাকে মুক্ত কর।

 

প্রায়শ্চিত্ত-৫ঃ 

দ্রুপদাদিব মুমুচানঃ স্বিন্নঃ স্নাত্বা মলাদিব। পূতং পবিত্রেণেবাজ্যং বিশ্বে শুম্ভন্তু মৈনসঃ।। ৫ 

পদার্থঃ- (দ্রুপদাৎ মুমুচানঃ ইব) কাষ্ঠ বন্ধন হইতে মুক্ত হইবার ন্যায় (স্বিন্নঃ স্নাত্বা মলাৎ ইব) জলে ডুব দিয়া স্নান করিলে মল হইতে যেরূপ শুদ্ধ হয় (পবিত্রেণ পূতং আজ্যং ইব) ছাকনী দ্বারা শুদ্ধ ঘৃতের ন্যায় (বিশ্বে) সব ধর্মাত্মারা (এনসঃ) পাপ হইতে (মা শুম্ভন্তু) আমাকে শুদ্ধ করুন। 

          [অথর্ববেদ ৬/১১৫/৩] 

বঙ্গানুবাদঃ- কাষ্ঠ বন্ধন হইতে মুক্ত হওয়ার ন্যায়, জলে ডুব দিয়া স্নান করিলে মল হইতে যেরূপ শুদ্ধ হওয়া যায় এবং ছাকনী দ্বারা ঘৃত যেরূপ শুদ্ধ হয়, সব ধর্মাত্মারা আমাকে সেইরূপ শুদ্ধ করুন। 

ব্ৰহ্মতেজ-৬ঃ 

বৈশ্বদেবীং বর্চসা আরভধ্বং শুদ্ধা ভবন্তঃ শুচয়ঃ পাবকাঃ। অতি ক্রামন্তো দুরিতা পদানি শতং হিমাঃ সর্ববীরাঃ মদেম।। ৬ 

পদার্থঃ- (বৰ্চসা) ব্রহ্মতেজ প্রাপ্তির জন্য (বৈশ্বদেবীং আরভধ্বম্) সর্বগুণের অভ্যাস আরম্ভ কর (শুদ্ধাঃ শুচয়ঃ) নিজেরা শুদ্ধ পবিত্র হইয়া (পাবকাঃ ভবন্তঃ) অন্যকে পবিত্র করিতে পারিবে (দুরিতা পদানি অতিক্রামন্তঃ) পাপ অবস্থাকে দূরে ঠেলিয়া (সর্ববীরাঃ শতং হিমাঃ মদেম) পূর্ণ বীর হইয়া শতবর্ষ সুখ ভোগ কর।  

          [অথববেদ ১২/২/২৮] 

বঙ্গানুবাদঃ- ব্রহ্মতেজ প্রাপ্তির জন্য সর্বগুণের অভ্যাস আরম্ভ কর। নিজেরা শুদ্ধ পবিত্র হইলে অন্যকে পবিত্র করিতে পারিবে। পাপ অবস্থাকে দূরে ঠেলিয়া পূর্ণ বীর হইয়া শতবর্ষ সুখ ভোগ কর।

 

শুদ্ধি দাতা-৭ঃ 

পবমানঃ পুনাতু মা ক্ৰত্বে দক্ষায় জীবসে। অথো অরিষ্টতাতয়ে।। ৭ 

পদার্থঃ- (পবমানঃ) শুদ্ধিদাতা পরমাত্মা (মা) আমাকে (ক্রত্বে) পুরুষার্থের জন্য (দক্ষায়) বলবৃদ্ধির জন্য (জীবসে) দীর্ঘায়ু লাভের জন্য (অথো অরিষ্ট-তাতয়ে) এবং কল্যাণ প্রাপ্তির জন্য (পুনাতু) পবিত্র করুন।  

           [অথর্ববেদ ৬/১৯/২] 

বঙ্গানুবাদঃ- পুরুষার্থের জন্য, বলবৃদ্ধির জন্য, দীর্ঘায়ু লাভের জন্য এবং কল্যাণ প্রাপ্তির জন্য শুদ্ধিদাতা পরমাত্মা আমাকে পবিত্র করুন। 

দেবজন-৮ঃ 

পুনন্তু মা দেবজনাঃ পুনন্তু মনবো ধিয়া। পুনন্তু বিশ্বা ভূতানি পরমানঃ পুনাতু মা।। ৮ 

পদার্থঃ- (দেবজনাঃ) বিদ্বান পুরুষেরা (মা) আমাকে (পুনন্তু) পবিত্র করুন (মনবঃ) মননশীল পুরুষেরা (ধিয়া) বুদ্ধি দ্বারা (বিশ্বা ভূতানি) সব প্রাণী (পবমানঃ) পাবক পরমাত্মা (পুনাতু মা) আমাকে পবিত্র করুন।  

            [অথর্ববেদ ৬/১৯/১] 

বঙ্গানুবাদঃ- বিদ্বান পুরুষেরা আমাকে পবিত্র করুন। মননশীল পুরুষেরা বুদ্ধি দ্বারা আমাকে পবিত্র করুন। প্রাণী মাত্রই আমাকে পবিত্র করুক, পবিত্রতাময় পরমাত্মা আমাকে পবিত্র করুন।  

উন্নত-৯ঃ 

উতদেবা অবহিতং দেবা উন্নয়থা পুনঃ।

 উতাগ শ্চত্রুুষং দেবা দেবা জীবয়থা পুনঃ।। ৯ 

পদার্থঃ- (দেবাঃ দেবাঃ) হে শ্রেষ্ঠ বিদ্বানগণ! (অবহিতম্) অধোগত মনুষ্যকে (পুনঃ উতঃ) পুনরায় অত্যন্ত (উন্নয়থা) উন্নত করিতেছ (আগঃ চক্রুষম্) অপরাধকারীকে (পুনঃ উতঃ) পুনরায় অত্যন্ত (জীবয়থা) জীবন দান কর।  

           [অথর্ববেদ ৪/১৩/১] 

বঙ্গানুবাদঃ- হে মনস্বী বিদ্বানগণ! অধঃপতিত মানবগণকে উপরে উঠাও, পাপীদিগকে উৎকৃষ্ট জীবন দান কর । 

টীকাঃ 

● দেবা= বিদ্বান

 ● বিদ্বাংসো হি দেবাঃ শo ব্রা ৩/৭/৩/১০ 

দুষ্কৃতি-১০ঃ 

যদাশসা নিঃশসাহভিশসো পারিম জাগ্রতো যৎস্বপযদাশসা নিঃশসাহভিশসো পারিম জাগ্রতো যৎস্বপুন্তুঃ। অগ্নির্বিশ্বান্যপ দুষ্কৃতান্য জুষ্টান্যারে অস্মদ্দধাতুঃ।। ১০ 

পদার্থঃ- (আশসা) আশার জন্য (নিঃশসা) দোষের জন্য (অভিশসো) কুসংস্কারের জন্য (জাগ্রতঃ স্বপন্তঃ) স্বপ্নে ও জাগরণে (যদ্ যদ্ উপারিম্) যে যে দোষ আমরা করিয়াছি (অজুষ্টানি) অশিষ্ট (বিশ্বানি দুষ্কৃতানি) সব দুরাচার (অগ্নিঃ) তেজস্বী পরমাত্মা (অস্মদ্ আরে) আমাদের নিকট হইতে দূরে (অপ অধাতু) রাখুন।  

            [ঋগ্বেদ ১০/১৬৪/৩] 

বঙ্গানুবাদঃ- আশার জন্য দোষের জন্য বা কুসংস্কারের জন্য জাগরণে বা স্বপ্নে যে যে পাপ করিয়াছি, সে সব অন্যায় অনাচারকে হে তেজস্বী পরমাত্মন! আমাদের সকলের নিকট হইতে দূর করুন। 

ইন্দ্ৰিয় শুদ্ধি-১১ঃ 

যন্মে ছিদ্রং চক্ষুষো হৃদয়স্য মনসো বাতিতৃণ্ণম বৃহস্পতিৰ্মে তদ্দধাতু । শং নো ভবতু ভুবনস্য যস্পতিঃ।। ১১ 

পদার্থঃ-(যৎ) যাহা (মে) আমার (চক্ষুষঃ) চক্ষুর (হৃদয়স্য) হৃদয়ের (বা মনসা) এবং মনের (অতি তৃণম্) অত্যন্ত বিস্তৃত (ছিদ্রম্) ছিদ্র (তৎ) তাহাকে (মে) আমার (বৃহস্পতিঃ) পরমাত্মা (দধাতু) ঠিক করুন (যঃ) যিনি (ভুবনসা পতিঃ) জগদীশ্বর (নঃ) আমাদের (শম্) কল্যাণকারী (ভবতু ) হউন ।  

               [যজুর্বেদ ৩৬/২] 

বঙ্গানুবাদঃ- আমার চক্ষুর, হৃদয়ের বা মনের যে সব বৃহৎ ত্রুটি আছে, পরমাত্মা সে সব শোধন করুন। যিনি জগতের ঈশ্বর তিনি আমাদের কল্যাণ করুন। 

চিত্তশুদ্ধি-১২ঃ 

পরোপেহি মনস্পাপ কিমশস্তানি শংসসি । পরেহি ন ত্বা কাময়ে বৃক্ষাং বনানি সং চর গৃহেষু গোষুমে মনঃ ।। ১২ 

পদার্থঃ- (মনঃ পাপ) হে মনের পাপ! (পরঃ) দূরে (অপেহি) অপসৃত হও (কিম্‌) তুমি কি (অশস্তানি) অসৎ কথা (শংসসি) বলিতেছ (পরা ইহি) দূরে যাও (ত্বা ন কাময়ে) তোমাকে আমি চাই না (বৃক্ষাম্‌ বনানি) বৃক্ষে বৃক্ষে বনে বনে (সংচর) বিচরণ কর (মে মনঃ) আমার মন (গৃহেষু) গৃহে (গোষু) ও পশু পালনে।  

          [ অথববেদ ৬/৪৫/১] 

বঙ্গানুবাদঃ- হে মানসিক পাপ! দূরে অপসৃত হও। তুমি কি অসদুপদেশ দিতেছ! দূরে যাও তোমাকে আমি চাই না। বৃক্ষে বৃক্ষে বনে বনে বিচরণ কর। আমার মন গৃহকার্যে ও পশু পালনে নিযুক্ত থাকুক। 

কুচিন্তা-১৩ঃ 

অপেহি মনসস্পতেহপক্রাম পরশ্চর । পরো নির্ঋত্যা আ চক্ষ্ব্ বহুধা জীবতো মনঃ।। ১৩ 

পদার্থঃ- (মনসঃ পতে) মনের অধঃপতনকারী কুচিন্তা ! (অপ এহি) দূরে যাও (অপক্রাম) দূরে অতিক্রান্ত হও (পরঃ চরঃ) দূরে চল (পর নির্ঋত্যাঃ) দূরের হানিকে (আচক্ষব) দেখ (জীবতঃ মনঃ) জীবিত মনুষ্যের মন (বহুধা) বহু সামর্থ্যযুক্ত।  

           [ঋগ্বেদ ১০/১৬৪/১] 

বঙ্গানুবাদঃ- হে মানসিক অধঃপতনের মূল কুচিন্তা! যাও, দূরে অপসৃত হও, দূরে চল। ভবিষ্যতের হানিকে দেখ। জীবিত মনুষ্যের মন বহু সামর্থ্যযুক্ত।

 

তথ্যসূত্রঃ বেদসার।

 ✍️ হৃদয় সূত্রধর

 

ও৩ম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ