▪️সনাতন ধর্ম ও সাম্যবাদ 🌱


সাম্যবাদ হচ্ছে সনাতন ধর্মের অন্যতম সৌন্দর্য। এখন এই সাম্যবাদের মধ্যে অনেক কিছুই আসে যেমন সকল বর্ণে সমানতা, নারী-পুরুষ সমানতা, সকল জীবে সমানতা ইত্যাদি । ভেদাভেদ দূর করে সকলের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের নির্দেশক হিসেবে ঈশ্বরের প্রদত্ত জ্ঞান বেদে এর  তুলনা হয় না। নিচে বৈদিক মন্ত্র ও বেদ বহির্ভূত কিছু শ্লোক দ্বারা সনাতন ধর্ম ও সাম্যবাদ নিয়ে আলোচনা করা হলো। 

------------সনাতন ধর্মে বর্ণবাদের সত্যতা----------
_______________________________________

বর্তমান সমাজের অনেকেই বর্ণবাদের অপব্যাখ্যা দিয়ে সনাতন ধর্মকে নিচু করে থাকেন। এখনো পর্যন্ত অনেক সনাতনীই আছেন যাদের বর্ণপ্রথা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব রয়েছে। তাদের ধারনা বর্ণ নির্ধারিত হয় জন্মসূত্রে। ভগবান কি এতটাই নিষ্ঠুর যে তিনি কাউকে জন্মগতভাবেই কাউকে সম্মানিত করবেন আবার কাউকে লাঞ্ছিত....??

নাহ!!! কখনোই না। সনাতন ধর্মে বর্ণ জন্ম সূত্রে নয় কর্ম সূত্রে নির্ধারন করার বিধান দেওয়া হয়েছে। বর্ণবাদ সম্পর্কে যজুর্বেদে বলা হয়েছেঃ-

🏵️ ব্রাহ্মণাস্যে মুখমাসীদ্ধাহু রাজন্যঃ কৃতঃ 
উরূ তদস্য যদ্বৈশ্য পভ্যাং শূদ্রোজায়তঃ  🏵️

🌸 =[যজুর্বেদ ৩১/১১]= 🌸

🔶 অনুবাদঃ যে ব্যাক্তি বেদ বিদ্যা শম-দমাদি উত্তম গুণে মুখ্য, ব্রহ্মের জ্ঞাতা এবং মুখের মাধ্যমে জগৎকে জ্ঞান দান করেন তিনি ব্রাহ্মণ ৷ যিনি অধিক পরাক্রমশালী, বাহুর তুল্য কার্যসিদ্ধি করেন তিনি ক্ষত্রিয়। যিনি ব্যবহার বিদ্যায় প্রবীণ হয়ে উরুর ন্যায় জগৎকে ধারণ করেন তিনি বৈশ্য এবং যিনি সেবায় প্রবীণ, কর্মে কঠোর তিনি পায়ের ন্যায় পরিশ্রমী শুদ্র।

বর্ণবাদ নিয়ে শ্রীমদ্ভাগবত গীতায় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ আরও বলেছেনঃ-

🏵️ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়শাং শূদ্রানাং চ পরন্তপ | 
কর্মাণি প্রবিভক্তানিং স্বভাপ্রভবৈর্গুণৈঃ ||🏵

🌸 =[শ্রীমদভগবদগীতা ১৮/৪১]= 🌸

🔶 অনুবাদঃ স্বভাবজাত গুণ অনুসারে ব্রাহ্মণ,  ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্রদের কর্মসমূহ বিভক্ত হয়েছে। 

🏵️ চাতুর্বর্ণং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ🏵️
 
🌸 =[শ্রীমদভগবদগীতা ৪/১৩]= 🌸

🔶 অনুবাদঃ চারটি বর্ণকে আমি সৃষ্টি করেছি তাদের তিনটি প্রাকৃতিক গুণ ও কর্মের ভিত্তিতে।

উক্ত মন্ত্র ও শ্লোক গুলো হতে স্পষ্ট যে বর্ণ জন্মসূত্রে নয় কর্মসূত্রে নির্ধারিত হবে 😊

-------------সনাতন ধর্মে নারী ও পুরুষ ---------------
_______________________________________

বেদে সবসময়ই নারী পুরুষ সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে যেমনঃ- 

🏵️ অমো॒ঽহম॑স্মি॒সা ত্বং॒ সামা॒হম॒স্ম্যৃক্ত্বং দ্যৌরহং পৃ॑থিবী ত্ব॑ম্ || 🏵️
 
🌸 =[অথর্ববেদ ১৪/২/৭১]= 🌸

🔶 অনুবাদঃ স্বামী যেমন জ্ঞানী, স্ত্রীও তেমনি জ্ঞানি। স্বামী ঋক মন্ত্র তো স্ত্রী সাম মন্ত্র।

রামায়ণে মহর্ষি বাল্মিকী বলেনঃ-

🏵️ না গৃহী না বস্ত্রাণি না প্রাকাস্তিক্রিয়ঃ 🏵️ 

🌸 =[বাল্মিকী রামায়ণ ১১৪/২৭]= 🌸

🔶 অনুবাদঃ গৃহ, প্রাচীর ও বস্ত্র নারীর প্রকৃত আচ্ছাদন নয়। স্বামী হতে প্রাপ্ত সংস্কার ও চরিত্রই তার প্রকৃত আচ্ছাদন। 

অপরদিকে, পুরুষদের জন্য বেদে বলা হয়েছেঃ-

🏵️ মমেদসত্ত্বং কেবলো নান্যাসং কীৰ্তয়াশ্চন৷৷ 🏵️
 
🌸 =[অথর্ববেদ ৭/৩৮/৪]= 🌸

🔶 অনুবাদঃ স্বামীর উচিত শুধু একমাত্র একজন স্ত্রীর প্রতি অনুরক্ত থাকা। দ্বিতীয় কোন নারীর প্রতি অনুরাগ তো দুরে থাক, অন্যকোন নারী সম্বন্ধে তার আলোচনাও করা উচিত নয়।

অত:পর নারীদের জন্য মনুসংহিতায় বলা হয়েছেঃ-

🏵️যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ
যত্রৈতা ন পূজ্যন্তে সর্বস্তত্রাফলঃ ক্রিয়াঃ🏵️

🌸 =[মনুসংহিতা ৩/৫৬]= 🌸

🔶 অনুবাদঃ যেখানে নারীদের সম্মান করা হয়, সেখানে দেবতারা আনন্দ করেন। অন্য দিকে, যেখানে তাদের সম্মান করা হয় না, সেখানে সমস্ত আচার নিস্ফল।
------------------সকল জীবে সমানতা---------------
_________________________‌______________

সনাতন এর সৌন্দর্য সাম্যবাদে। সবাইকে সমান চোখে দেখা  । সনাতন ধর্মে কেবল সকল মানুষই নয় সকল জীবে সমানতা দেখানো ও সমস্ত জীবের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে নিচে কিছু উদাহরণ দেওয়া হলোঃ-

🏵️সংগচ্ছধ্বং সংবদধ্বং সংবো মনাংসি জানতাম্ ৷ দেবাভাগং যথাপূর্ব্বে সংজানানা উপাসতে ৷৷ 🏵️
(ঋগ্বেদ ১০/১৯১/২)

🔶 বঙ্গানুবাদঃ— হে মনুষ্য ! তোমরা একসঙ্গে চল,একসঙ্গে বলো, একসঙ্গে মিলিয়া আলোচনা করো। তোমাদের মন উত্তম সংস্কারযুক্ত হউক ৷ পূর্বকালীন জ্ঞানী পুরুষেরা যেরূপ কর্তব্য কর্ম সম্পাদন করিয়াছেন তোমরাও সেই রূপ করো ৷

🏵️ সমানো  মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী  সমানং মনঃ সহ চিত্তমেষাম্।
সমানং মন্ত্রমভি মন্ত্রয়ে বঃ সমানেন বো হবিষা জুহোমি।।🏵️
(ঋগ্বেদ ১০/১৯১/৩)

🔶 বঙ্গানুবাদঃ  তোমাদের বিচার এক হউক, প্রাপ্তি অথবা কার্য প্রবৃত্তি এক হউক, এই প্রকার তোমাদের এক মন্ত্রের সাথে চিত্তও এক হউক, তোমাদের সকলকে এক মন্ত্রে যুক্ত করিয়াছি,  তোমাদের এক প্রার্থনা,এক উপাসনা কর্ম হউক,এক কর্ম দ্বারা সকলে আপন হউক।।৩।।

🏵️সমানীব আকুতি সমানা হৃদয়ানি বঃ ৷ সমানমস্তু বো মনো যথা বঃ সু সহাসতি ৷৷ 🏵️
(ঋগ্বেদ ১০/১৯১/৪)

🔶 বঙ্গানুবাদঃ— তোমাদের সকলের লক্ষ্য সমান হউক, তোমাদের হৃদয় সমান হউক, তোমাদের মন সমান হউক ৷ এই ভাবে তোমাদের সকলের শক্তি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হউক ৷


🏵️ মিত্রস্য চক্ষুষা সমীক্ষামহে 🏵️

🌸 =[যজুর্বেদ ৩৬/১৮]= 🌸

🔶 অনুবাদঃ সমগ্র জীবকে নিজের বন্ধুর দৃষ্টিতে দেখবে

🏵️ পশূন্ পাহি |পশূংস্ত্রায়েথাং 🏵️

🌸 =[যজুর্বেদ ১/১, ৬/১১]= 🌸

🔶 অনুবাদঃ পশুসমূহকে রক্ষা করো।পশুসমূহকে লালন-পালন করো।

🏵️ পর্যস্তাং পৃথিবীং সর্বাং সাশ্বাং সথকুঞ্জরাম্ |  
যোমোচয়েন্মৃত্যুপাশাৎপ্রাপ্নুয়াদ্ধর্মমুত || 🏵️

🌸 =[মহাভারত ৫/৯৩/৬]= 🌸

🔶 অনুবাদঃ যে ব্যক্তি কাউকে প্রাণে রক্ষা করে, এমনকি পশুপাখির প্রাণও রক্ষা করে, সে যেন সমগ্র পৃথিবীকে মৃত্যুপাশ থেকে মুক্ত করে উত্তম মর্যাদা লাভ করে।

------------মনুষ্যত্ব জাগরণে সনাতন ধর্ম-----------
_______________________________________

▪️অন্যান্য ধর্ম বলে সেই ধর্মকে অনুসরণ করতে কিন্তু সনাতন ধর্ম বলে নিজেকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। হ্যা এটাই সত্য সনাতন ধর্মে উপরোক্ত শ্লোক ও মন্ত্র গুলো হতে বিষয়টি গঙ্গা জলের মতো স্পষ্ট যে সাম্যবাদ সনাতন ধর্মের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সনাতন ধর্ম কেবলমাত্র কিছু মানুষের মধ্যেই সীমিত নয় পশু-পাখি, গাছ-পালা, কীট-পতঙ্গ সবার জন্যই সমতার রয়েছে ।  🌸

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

🔸সনাতন ধর্ম ও নারী 💐

সনাতন ধর্মে কি গোমূত্র পানের উল্লেখ রয়েছে ⁉️

▪️একাদশী" কি শাস্ত্র সম্মত ❓