রামায়ণ ও অপপ্রচার বিভ্রান্তি


"রামায়ণ ও অপপ্রচার বিভ্রান্তি"

☑️✍️ এ জগৎে বহু মনুষ্য জন্মলাভ করেছে এবং প্রকৃতির নিয়মে মৃত্যুবরণ করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাস বহ রথী-মহারথী পণ্ডিতন্মন্যদের এবং মনিষী মহাপুরুষদের আগমন হয়েছে। তারা এ জগৎ করে তুলেছেন শ্রেষ্ঠ, সমাজ ও জাতিকে দিয়েছেন নবদিগন্ত। সেজন্য, তারা সর্বদা তাদের কৃতকর্মের মাধ্যমে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন সকলের হৃদয়ে। সেই সকল শ্রেষ্ঠ মনুষ্যগণ আমাদের নিকট প্রেরণা ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। কারণ, মনুষ্য সর্বদা শ্রেষ্ঠ মনুষ্যদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে চলে। মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম সেই ইতিহাস শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম স্থানে অধিষ্ঠিত। ধার্মিক, সচ্চরিত্র, ক্ষত্রিয় তেজসম্পন্ন যোদ্ধা, আদর্শ শাসক এবং কল্যাণ ও সহিষ্ণু প্রজাপালক এরুপ বহু উপমা দ্বারা মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামকে ভূষিত করা হয়েছে বাল্মিকী রামায়ণে এবং ইতিহাস বিজ্ঞদের দ্বারা। সেজন্য, বর্তমান সময়ে কল্যাণরাষ্ট্রের ধারণার সহিত বহু রাজনৈতিক ব্যক্তি মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম এর রাম রাজ্যের তুলনা করে থাকে। সে সুমহান চরিত্র, সনাতন ধর্মের প্রাণ পুরুষ মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম সম্পর্কে মহর্ষি বাল্মিকী বলেছিলেন,   

"য়াবৎ স্থাস্যন্তি গিরয়ঃ সরিতশ্চ মহীতলে।
তাবদ্ রামায়ণকথা লোকেষু প্রচরিষ্যতি"।।

- বাল্মিকী রামায়ণ বালকান্ড ২/৩৬  

অর্থাৎ, যতকাল এই ধরণীতলে পর্বত দাড়িয়ে থাকবে আর নদীর ধারা প্রবাহমান থাকবে, ততকাল শ্রী রামের রামায়ণকথা এই জগতে লোকমুখে প্রচারিত হবে।

☑️✍️বর্তমান সময়ে এসেও আমাদের মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম এর আদর্শ সকল মনুষ্যের নিকট অনুকরণীয় এবং অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। কিন্তু কিছু সনাতন বিদ্বেষীমহল বিভিন্ন সময়ে মিথ্যা ও অর্ধসত্য তথ্যের আশ্রয়ে সাধারণ ধর্মানুরাগী অমৃতের সন্তানদের মনে বিভ্রান্তি তৈরিতে সর্বদা সচেষ্ট। তাহারা বিভিন্ন প্রোপাগাণ্ডার আশ্রয়ে প্রকৃত সত্যকে আড়ালে রেখে আর্য শ্রেষ্ঠ মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম এর উত্তম চরিত্রকে অভিযুক্ত করতে চায়। এরুপ দুটো বিতর্কিত অভিযোগ সম্পর্কে সনাতন ধর্মের প্রত্যেকে সচেতন হওয়া এবং সত্যকে জানা আবশ্যক। 

১."শুদ্র শম্বুকে হত্যা"🚫
২."মাতা সীতার প্রতি অবিচার"🚫 

☑️✍️ মহর্ষি বাল্মিকী কর্তৃক রচিত মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম এর ইতিহাস আমাদের সকলেই অধ্যয়ন করা হয়েছে। কিন্তু কিছু তথ্য আমাদের আলোচনা করা প্রয়োজন যা আমাদের বিভ্রান্তি দূর করতে সহায়ক। 

☑️✍️ বর্তমান সময়ে আমরা যেসকল বিভ্রান্তিমূলক তথ্য রামায়ণে খুঁজে পাই তার বেশিরভাগ তথ্য প্রক্ষিপ্ত বা পরবর্তী সময়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। এটা আমাদের মনগড়া কোনো কথা নয়! বরং, ভারতের বরোদা ওরিয়েন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষণাকৃত তথ্য। উক্ত ইন্সটিটিউটের গবেষকগণ বিভিন্ন দেশ থেকে রামায়ণে ৮৬টি পান্ডুলিপি উদ্ধার করে তা ৩৭টি শ্রেণীতে বিভক্ত করেন। যার মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন পান্ডুলিপি উদ্ধার হয় নেপালের বীর গ্রন্থাগারে। বর্তমানে অধ্যয়নকৃত রামায়ণে আদিকান্ডে ৭৭টি অধ্যায় থাকলেও, পূর্বে পান্ডুলিপি সমূহে ৬১টি অধ্যায় রয়েছে এবং আরো কিছু পান্ডুলিপিতে ৪৯টি অধ্যায়ের উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ, মাত্র ১০০০ বছরে বহু প্রক্ষিপ্ততা যুক্ত হয়ে রামায়ণে কিছু অগ্রহণযোগ্য তথ্যের প্রবেশ হয়েছে। যেমন, মাতা সীতার অগ্নিপরীক্ষা, শম্বুক হত্যা যা মূল বাল্মিকী রামায়ণ এর অংশ নয় বরং ইহা প্রক্ষিপ্ত। 

প্রক্ষিপ্ততা প্রবেশের বিষয়ে বহু গবেষক তাদের গবেষণা মূলক গ্রন্থ রচনা করেছেন। সেরূপ, University of Edinburgh এর এমেরিটাস অধ্যাপক Dr. John Brockington এর লেখা Righteous Rāma: The Evolution of an Epic এ বলা হয়েছে বাল্মিকী রামায়ণ প্রক্ষিপ্ত অংশ প্রবেশ করেছে ৫ টি ধাপে। ১ম স্তরে মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম এ বীরোচিত ইতিহাস ও তৎকালীন বৈদিক যুগের সমাজ ব্যবস্থার বর্ণনা পাওয়া যায়। পরবর্তী খ্রিষ্টীয় ১ম-৩য় শতকে বিভিন্ন মতবাদ বা মত প্রভাব প্রাথমিক পর্যায়ে মূল রামায়ণে এসব মতের ধারণা প্রবেশ করে। সর্বশেষ স্তরে, মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম এর সাথে অবতারবাদ বা পৌরাণিক তথ্য প্রবেশ করে। ফলস্বরূপ, আজকে আমরা রামায়ণে বিভিন্ন তথ্য পেয়ে থাকি যা মূল বাল্মিকী রামায়ণের অংশ নয়। কিন্তু এরুপ হওয়া কারণ কি? বৈদিক যুগ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মত ও পথের প্রচারের কারণে এমন হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। কারণ, নিজস্ব মত প্রতিষ্ঠার জন্য রামায়ণ ও মহাভারতের মতো এমন ২য় কোনো গ্রন্থ নেই। তবে কেউ যদি মনে করে থাকে রামায়ণই কেন এরুপ ইতিহাসের প্রক্ষিপ্ততা প্রবেশ করলো। তাহলে, এটা বোধগম্য হওয়া প্রয়োজন যে, পৃথিবীর প্রতিটি ঐতিহাসিক গ্রন্থে কম বেশি তথ্য প্রবেশ করে। যেমন, গ্রীক লেখক মেগাস্থিনিস এর লেখা  "টা ইন্ডিকা" কিংবা গ্রীক ইতিহাসমূলক গ্রন্থ বা আধুনিক সময়ে সংঘটিত হওয়া বিভিন্ন যুদ্ধে। সেজন্য, বাল্মিকী রামায়ণে তেমনি এরুপ বৃহৎ অভিযোগ রয়েছে, শুদ্র শম্বুকে হত্যা ও মাতা সীতার অগ্নি পরিক্ষা। 

☑️=[]শুদ্র শম্বুকে হত্যা[]=☑️

শ্রীরাম এর জীবনী নিয়ে একটি কলঙ্কজনক অভিযোগ যে তিনি তপস্যা করার অপরাধে শম্বুক নামে এক শুদ্রকে হত্যা করেছে, এমন কথা বলা আছে রামায়ণের উত্তরকাণ্ডের ২৪ নং উপাখ্যানে, ৭২ থেকে ৭৬ সর্গে।
কিন্তু আমাদের অনেক এর অজানা যে উত্তরকান্ড মূল রামায়ণের অংশ নয় বরং ইহা প্রক্ষিপ্ত বা পরবর্তী সময়ে অন্তর্গত হয়েছে। 

যুদ্ধ থেকে ফেরার পর, শ্রীরামের চরিত্রের এই সব নানা অসঙ্গতি ও আপত্তিকর ব্যাপার সম্পর্কে রাজশেখর বসু তার অনুবাদিত রামায়ণের ভূমিকায় বলেছেন,

"এই আপত্তির একটা উত্তর দেওয়া যেতে পারে। বর্তমান বাল্মীকি রামায়ণের কতক অংশ পরে জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যেমন উত্তরকাণ্ড। যুদ্ধকাণ্ডের শেষে রামায়ণ মাহাত্ম্য আছে, তাতেই প্রমাণ হয় যে মূল গ্রন্থ সেখানেই সমাপ্ত। 

একজন ইংরেজ গবেষক A Berriedale Keith এর মতে, যিনি মূল রামায়ণের সাথে উত্তরকাণ্ড জুড়ে দিয়েছেন তার সময় সম্ভবত খ্রি.পূ. ২০০ থেকে ৪০০ অব্দ। এই প্রাচীন কবি সম্পর্কে রাজশেখর বসুর মন্তব্য-

"এ কথা নিশ্চিত যে মূল গ্রন্থে যিনি সীতার নির্বাসন প্রভূতি জুড়ে দিয়েছেন তিনিও অতি প্রাচীন এবং তাঁর কবিত্ব সামান্য নয়।… তিনি নিজের স্বাতন্ত্র রাখেন নি, তাঁর রচনা বাল্মীকির রচনার সঙ্গে এমনভাবে জড়িয়ে গেছে যে সমস্তই এখন বাল্মীকির নামে চলে।"

অর্থাৎ, একথা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, 
উত্তরকান্ড রামায়ণ বাল্মীকি ঋষির লেখা নয়। যা রামায়ণ পরবর্তীকালে সংযোজন করা হয়েছে। এবং ইহা বিচার্য বিষয় যে, মূল সংস্কৃত বাল্মিকী  রামায়ণের শেষে ও উত্তর রামায়ণের পূর্বে, রামায়ণের মাহাত্ম্য লেখা হয়েছে অর্থাৎ রামায়ণ পাঠের উপকার বিষয়ে লেখা হয়েছে। যে কোনো গ্ৰন্থের মাহাত্ম্য লেখা হয়, তার শেষ পর্যায়ে। কোনো গ্ৰন্থের মধ্যে মাহাত্ম্য লেখা হয় না। কিন্তু, অবাক করার মতো বিষয় হল এই যে, উত্তর কান্ডেও রামায়ণ পাঠের মাহাত্ম্য লেখা আছে। আমরা সকলে জানি যেকোনো গ্রন্থে দুবার মাহাত্ম্য লেখা হয় না তাহলে এখানে ব্যতিক্রম ঘটার কি কারণ? বাল্মীকি রামায়ণে  একশ ত্রিশটি সর্গ বা অধ্যায় আছে। যদি উত্তরকান্ড মহর্ষি বাল্মীকি কর্তৃক রচিত হয়, তাহলে উত্তরকান্ড শুরু হওয়ার কথা ছিলো (১৩২) একশ বত্রিশ অধ্যায় থেকে তবে উত্তর কান্ড শুরু হয়েছে পুনরায় প্রথম সর্গ থেকে। অর্থাৎ, উত্তর রামায়ণে,মূল রামায়ণের ধারাবাহিকতা রক্ষিত হয়নি।

উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে ইহা উপলব্ধি করতে পারি যে, উত্তর কান্ড মূল বাল্মিকী রামায়ণের অংশ নয় 
বাল্মীকি রামায়ণ ১৩০তম সর্গেই সমাপ্ত এবং উত্তরকান্ড পরবর্তী সময়ে মূল রামায়ণের সাথে সংযোজিত হয়েছে বা প্রক্ষিপ্ত হয়েছে।

সুতরাং, রাম কর্তৃক শূদ্র শম্বূকের হত্যা কোনোদিনই সংঘটিত হয়নি।

রাম রাজ্যে কখনো এরুপ বর্বরোচিত কান্ড সংঘটিত হয়নি বরং রাম রাজ্য ছিলো বর্তমান সময়ের কল্যাণ রাষ্ট্রের চেয়ে অধিকতর শ্রেষ্ঠ। 

"ন পর্যদেবেন বিধবা ন চ ব্যালকৃতং ভয়ম৷
ন ব্যধিজং ভয়ং চাসীদ্ রামে রাজ্যং প্রশাসতি"।। 
- বাল্মিকী রামায়ণ যুদ্ধকান্ড ১২৮/৯৮ 

⚜️রামের শাসনকালে বিধবাদের ক্রন্দন শোনা যেত না, হিংস্র প্রাণীর ভয় ছিলো না, ব্যাধি থেকে উৎপন্ন ভয়ও ছিলো না অর্থাৎ রোগ কাউকে কষ্ট দিতো না।

নির্দস্যুরভবল্লোকো নানর্থং কশ্চিদস্পৃশৎ । 
ন চ স্ম বৃদ্ধা বালানাং প্রেতকার্যানি কুৰ্বতে।। 
- বাল্মিকী রামায়ণ যুদ্ধকান্ড ১২৮/৯৯ 

⚜️ প্রজাগণ চোর-ডাকাতের ভয় থেকে রহিত, কেউ কারো প্রতি অনর্থ বা পাপ করতো না। বৃদ্ধদের সম্মুখে শিশুদের মৃত্যু হতো না।

সর্ব মুদিতমেবাসীৎ সর্বো ধর্মপরো্যভবৎ। 
রামমেবানুপশ্যন্তো নাভ্যহিংসন্ পরস্পরম্।। 
- বাল্মিকী রামায়ণ যুদ্ধকান্ড ১২৮/১০০ 

⚜️সকলেই সন্তুষ্ট ছিলো, সকলেই ধর্মপরায়ণ ছিলো, রামকে স্মরণে রেখে পরস্পর হিংসা করতো না। 

"আসন্ বর্ষসহস্রানি ততা পুত্র সহশ্রিনঃ" 
- বাল্মিকী রামায়ণ যুদ্ধকান্ড ১২৮/১০১

⚜️ অনেক পুত্র-পৌত্র যুক্ত বংশ সহস্র বর্ষ পর্যন্ত চলত। 

☑️=[]মাতা সীতার প্রতি অবিচার[]=☑️

মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম ছিলেন সুযোগ্য শাসক এবং আদর্শ স্বামী। রামায়ণে তাহার মহিমা যেন পদ্মফুলের মতো করে উপস্থাপিত। মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম এর চরিত্রে প্রতি আরো একটি অসম্ভব অভিযোগ মাতা সীতাকে সন্দেহ করে অগ্নিপরীক্ষার আদেশ প্রদান৷ কিন্তু সত্যি কি মাতা সীতার অগ্নিপরীক্ষা সংঘটিত হয়েছে? পূর্বের অভিযোগ এর মতো এই অভিযোগটিও মিথ্যা ও অমূলক। ঋষি বাল্মিকী যেমন কোনো দস্যু ছিলেন না তেমনি মাতা সীতার অগ্নিপরীক্ষা কোনো সিদ্ধ কোনো সত্য নয়। পূর্বের ব্যাখ্যায় আমরা দেখছি প্রতিটি ইতিহাসে রয়েছে কিছু কালের মিশ্রণ এবং তথ্যের উপস্থিতি। প্রাচীন ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য এটা যে তার কলেবর যত বড় হয় তাতে প্রক্ষেপণ তথা অনৈসর্গিকতা তত বৃদ্ধি পায়। সেজন্য, কিছু ইতিহাসবিদ এরুপ ধারণা করে থাকেন যে, মধ্যযুগের বা বিভিন্ন মতবাদের প্রচারের জন্যে এরুপ তথ্য সংযুক্ত হয়। যা দ্বারা মাতা সীতার সতীত্বের মহিমা প্রচারের প্রচেষ্টা করা হয়। যাকে ইংরেজি শব্দ অভিধানে Metaphor- রূপক,উপমা নামে অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ, কোনো বিশেষ তত্ত্বকে আরো সুন্দর ও উপমা দিয়ে উপস্থাপন করা হয়। আমাদের সকলের জানা উচিত, মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম নারীদের নিয়ে কি আদর্শ ধারণ করতেন তা নিম্নোক্ত শ্লোকে স্পষ্ট হয়ে উঠে, 

"ন গৃহাণি ন বস্ত্রাণি ন প্রাকারাস্ত্তিরক্রিয়া।
নৈদ্দৃশ্য রাজসৎকারা বৃত্তমাবরণং স্ক্রিয়া।।"
(বাল্মিকী রামায়ণ ৬.১১৪.২৭)

অর্থাৎ, গৃহদ্বারা নয়, পোশাক নয়, কোনো প্রকার আবদ্ধ দেয়ালে লোকচক্ষু থেকে আবৃত থাকা নয়, নয় কোনো রাজ আভিজাত্য, চরিত্রই একজন নারীর প্রকৃত আবরণ।

মহাভারতে যে রাম উপাখ্যান আছে, তারও কাহিনী, রামের সীতা উদ্ধার পর্যন্তই শেষ। সুতরাং যুদ্ধ শেষে অযোধ্যায় ফেরার পর সীতার প্রতি রামের সন্দেহ এবং সীতার বনবাস পরবর্তী কাহিনী, যার জন্য রামকে অনেকেইঅভিযুক্ত করে এবং তার সমালোচনা করে, সেটা সত্য নয় বলেই প্রমাণিত হয়। 

ইংরেজি গল্পের শেষে একটি অংশ সর্বদা থাকে যাকে, Happily Ever After ending বলা হয়। বাল্মিকী রামায়ণে এর যুদ্ধকান্ডের ৯৫-১০৬তম শ্লোক ছিলো সেই Happily Ever After ending. যেখানে উল্লেখিত রয়েছে মাতা সীতা ও মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম সুখী সমৃদ্ধ জীবন অতিবাহিত করেছিলেন। তাহলে পরবর্তী সময়ে এরুপ অগ্নি পরিক্ষার ও পুনঃ বনবাসের তথ্য অমূলক বা অসংগতি মনে হওয়া স্বাভাবিক নয় কি? 

পরিশিষ্ট: 

The most effective way to destroy people is to deny and obliterate their own understanding of their history.” ― George Orwe

অর্থাৎ, মানুষকে ধ্বংস করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল তাদের ইতিহাস সম্পর্কে তাদের নিজস্ব উপলব্ধি অস্বীকার করা এবং মুছে ফেলা। সেরূপ প্রচেষ্টা বহুবার হয়েছে আমাদের সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে। সেজন্য আজ এতো সংশয়, দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছে। মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম এবং মাতা সীতা আমাদের সকলের নিকট পূজনীয় ব্যক্তিত্ব। কিন্তু ইতিহাসের ঘেরাটোপে বিভিন্ন তথ্যের মিশ্রণ কিংবা কবিকল্পনা কখনো রামায়ণকে করে তুলেছে কাল্পনিক, কখনো করেছে বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত। সকল সমালোচনাকারীরা কখনোই তথ্যের সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে সত্যকে উপলব্ধির প্রয়াস করেনি বরং অসম্পূর্ণ তথ্য দ্বারা রামায়ণে বাল্যবিবাহ, কখনো কাল্পনিক উপমা, কিংবা নারীর প্রতি অমর্যাদার অভিযোগের তীরের নিশানা করেছে। কিন্তু সত্যকে কি কখনো এড়িয়ে চলা যায়? হে অমৃতের সন্তানগণ! আমরা সকলে শাস্ত্র বিমুখ হওয়াতে আমাদের মাঝে এক শিকড় হীন বৃক্ষের মনোভাব ব্যক্ত হয়েছে। যার ফলে আমরা মুখোমুখি হচ্ছি কিছু অযৌক্তিক অভিযোগের। তাই আসুন সত্যকে জানি, মিথ্যাকে পরিহার করি। নিজ শাস্ত্র অধ্যয়ন করি।

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ