মনুস্মৃতি ও বিভ্রান্তি নিবারণ



"মনুস্মৃতি ও বিভ্রান্তি নিবারণ"

🙏🪴নমস্কার সকল অমৃতের সন্তানগণ। বৈদিক অমৃত জ্ঞান প্রচারে নিয়োজিত VEDA পেজ আপনাদের স্বাগতম।🪴🙏

➡️ সনাতন ধর্মে জ্ঞানকে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করা হয়। কারণ, জ্ঞান সেই জলন্ত প্রদীপস্বরুপ যা অজ্ঞানীকে অন্ধকার থেকে অমৃতের দিকে ফিরে আসতে সহায়তা করে। সেজন্য, সনাতন ধর্মে পবিত্র বেদ ব্যতীত অন্যান্য বহু স্মৃতি শাস্ত্র, দর্শন কিংবা ঋষি প্রণীত গ্রন্থসমূহ রয়েছে। যা সনাতন ধর্মের উদারতা ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়। ফলস্বরূপ, চার্বাক দর্শনের উপস্থিতি যেমন রয়েছে, তেমনি সাংখ্য দর্শনের উপস্থিতিও লক্ষনীয়। 

➡️ কিন্তু সমাজে দর্শন শাস্ত্র যেমন নতুন দিশা প্রদান করে তেমনি সমাজের সকলের নিরাপত্তা ও অন্যায় অপরাধ প্রতিরোধে প্রণিত হয় ন্যায়শাস্ত্র। একটি রাষ্ট্রে সংবিধানকে প্রামাণ্য হিসেবে গ্রহণ করে প্রণীত হয় বিভিন্ন দন্ডব্যবস্থা। তদরুপ, বৈদিক ভারতে সমাজে নীতিব্যবস্থার ভারসাম্য বজায় রাখার নিমিত্তে প্রণয়ন হয় এক শ্রেষ্ঠ বিধান। যা মনুস্মৃতি হিসেবে সমধিক পরিচিত। মহর্ষি মনু এই গ্রন্থের রচয়িতা।  যেখানে মনুষ্যের সামাজিক জীবন ব্যবস্থায় ধর্ম, অর্থ, ন্যায়সহ বহু প্রাসঙ্গিক বিষয় স্থান পেয়েছে। সেজন্য, মহর্ষি মনুকে প্রথম বিধিবদ্ধ ন্যায়শাস্ত্রের রচয়িতা উপাধি দেওয়া হয়। 

➡️ কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে, বিভিন্ন কুচক্রীমহল মনুস্মৃতির বিভিন্ন শ্লোকের উদ্ধৃতি চিহ্নিত করে। এই নীতিশাস্ত্রকে অযৌক্তিক, নারীবিদ্বেষী, জাতি-বিভেদ সহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করে। 

📜তবে সত্যি কি মহর্ষি মনু রচিত মনুস্মৃতি এমন পক্ষপাতদুষ্ট⁉️

📜সত্যি কি বেদজ্ঞ মহর্ষি মনু পবিত্র বেদ এর বিরুদ্ধ শ্লোকের উপস্থাপন করেছেন মনুষ্যের প্রথম ন্যায়শাস্ত্রে ⁉️

📜 মনুসংহিতা বিভ্রান্তি: 

মহর্ষি মনু ছিলেন পবিত্র বেদ এর জ্ঞানে জ্ঞানান্বিত। তিনি পবিত্র বেদ এর উপর ভিত্তি করে রচনা করেন মনুস্মৃতির। কিন্তু মনুস্মৃতির মাঝে বিভিন্ন জাতিবিদ্বেষ কিংবা নারীবিদ্বেষী শ্লোকের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। এরুপ হওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় মনুসংহিতার প্রক্ষিপ্তপাঠ। অর্থাৎ, সময়ের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল তাদের নিজ স্বার্থোদ্বারে মত্ত হয়ে বিভিন্ন শ্লোকের প্রবেশ ঘটান। যা মনুস্মৃতিকে করে তুলে বিতর্কিত। ফলস্বরূপ, বর্তমান সময়ে বা পূর্বে মনুস্মৃতি দহন কিংবা ইহার অমর্যাদা করার মতো ঘটনা সংঘটিত হয়। 

কিন্তু মনুস্মৃতিকে এইরূপ অবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য 'হরিদ্বার গুরুকুল কাংড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য  ড.সুরেন্দ্রকুমারজী এই বিষয়ে অনুসন্ধানকার্য্য প্রারম্ভ করেন'। তিনি প্রক্ষিপ্তপাঠ  নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে পক্ষপাত ভাবনা পোষণ না করে কিছু মানদণ্ডকে আধারশীলা করেছেন যা বিদ্বানদের নিকট সর্বমান্য।

সেই মানদণ্ডগুলো হলো -  

১.অন্তর্বিরোধ বা পরস্পরবিরোধ 

২.প্রসঙ্গবিরোধ  

৩.বিষয়বিরোধ বা প্রকরণবিরোধ  

৪.অবান্তরবিরোধ 

৫.শৈলীবিরোধ 

৬.পুনরুক্তি 

৭.বেদবিরোধ। 

ফলস্বরূপ, এরুপ মানদন্ডের মাধ্যমে ড. সুরেন্দ্র কুমার মনুস্মৃতি থেকে প্রক্ষিপ্ত অংশ আলাদা করে মনুস্মৃতির মৌলিক শ্লোক সমূহ নির্ধারণ করতে সক্ষম হন। 

1.প্রথম অধ্যায়ে মোট ১১৯টি শ্লোক, তারমধ্যে ৬৩টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৫৬টি মৌলিক।

2.দ্বিতীয় অধ্যায়ে মোট ২৪৯টি শ্লোক, তারমধ্যে ৬৩টি প্রক্ষিপ্ত এবং ১৮৬টি মৌলিক।

3.তৃতীয়  অধ্যায়ে মোট ২৮৬টি শ্লোক, তারমধ্যে ২০২টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৮৪টি মৌলিক।

4.চতুর্থ অধ্যায়ে মোট ২৬০টি শ্লোক, তারমধ্যে ১৭০টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৯০টি মৌলিক।

5.পঞ্চম অধ্যায়ে মোট ১৬৯টি শ্লোক, তারমধ্যে ১২৮টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৪১টি মৌলিক।

6.ষষ্ঠ অধ্যায়ে মোট ৯৭টি শ্লোক, তারমধ্যে ৩৩টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৬৪টি মৌলিক।

7. সপ্তম অধ্যায়ে মোট ২২৬টি শ্লোক, তারমধ্যে ৪২টি প্রক্ষিপ্ত এবং ১৮৪টি মৌলিক।

8.অষ্টম অধ্যায়ে মোট ৪২০টি শ্লোক, তারমধ্যে ১৮৭টি প্রক্ষিপ্ত এবং ২৩৩টি মৌলিক।

9.নবম অধ্যায়ে মোট ৩৩৬টি শ্লোক, তারমধ্যে ১৭১টি প্রক্ষিপ্ত এবং ১৬৫টি মৌলিক।

10. দশম অধ্যায়ে মোট ১৩১টি শ্লোক, তারমধ্যে ১২৪টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৭টি মৌলিক।

11.একাদশ অধ্যায়ে মোট ২৬৬টি শ্লোক, তারমধ্যে ২৩৪টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৩২টি মৌলিক। 

12.দ্বাদশ অধ্যায়ে মোট ১২৬টি শ্লোক, তারমধ্যে ৫৪টি প্রক্ষিপ্ত এবং ৭২টি মৌলিক।

মোট শ্লোক- (১৯৯+২৪৯+২৮৬+২৬০+১৬৯+৯৭+২২৬ +৪২০+৩৩৬+১৩১+২৬৬+১২৬) = ২৬৮৫

প্রক্ষিপ্ত শ্লোক - (৬৩+৬৩+২০২+১৭০+১২৮+৩৩+৪২+১৮৭ +১৭১+১২৪+২৩৪+৫৪) = ১৪৭১

মৌলিক শ্লোকসংখ্যা- (৫৬+১৮৬+৮৪+৯০+৪১+৬৪+১৮৪ +২৩৩+১৬৫+৭+৩২+৭২) = ১২১৪

এরুপ সংশয় নিবারণ এর মাধ্যমে ড. সুরেন্দ্র কুমার মনুস্মৃতির বিশুদ্ধ ভাষ্য আমাদের নিকট পৌঁছে দেন। যেখানে নেই কোনো বেদবিরুদ্ধ বা নারীবিদ্বেষী বা জাতিবিদ্বেষী শ্লোক। সনাতন সমাজ ফিরে পায় তাদের শ্রেষ্ঠ ন্যায়শাস্ত্র। 

কিন্তু মনুস্মৃতির প্রক্ষিপ্তপাঠ থেকে মৌলিক শ্লোকসমূহ উপস্থাপন এর পরও বহু মানুষের মাঝে এরুপ সংশয় পোষণ হয়ে থাকে নারীর মর্যাদার প্রশ্ন এবং শুদ্রের প্রতি সাম্যতার আচরণ। সেজন্য, উক্ত সংশয় নিবারণে আমাদের উচিত মনুস্মৃতি থেকে শ্লোক উদ্ধৃত করা। 

মনুস্মৃতিতে নারীর মর্যাদা: 

সনাতন ধর্ম শাস্ত্রে নারীকে দেওয়া হয়েছে শ্রেষ্ঠ মর্যাদা। পবিত্র বেদ এর পরে মনুস্মৃতিতে নারীকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনের উপদেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু কুচক্রী মহল সর্বদা এরুপ আরোপ করে থাকে মনুস্মৃতি নারী বিদ্বেষী। সত্যি কি তাই? 

◑মনুস্মৃতিতে মহর্ষি মনু বলেছেন যে–

"যত্র নার্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ ।

যত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ" ॥ ৩/৫৬

অর্থাৎ, যে কুলে নারীদের পূজা অর্থাৎ সম্মান হয়, সেই কুলে দিব্য গুণ, দিব্য ভোগ ও উত্তম সন্তান হয় এবং যে কুলে নারীদের পূজা হয় না, সেখানে তাহাদের সব ক্রিয়া নিষ্ফল হয় জানিবে।

মহর্ষি মনু নারীদের পরিবারে স্ত্রীর মহত্ত্ব সম্পর্কে বলেছেন,

        

"পিতৃভির্ভ্রাতৃভিশ্চৈতাঃ পতিভির্দেবরৈস্তথা।

পূজ্যা ভূষয়িতব্যাশ্চ বহুকল্যাণং ঈপ্সুভিঃ" ॥ ৩/৫৫

অর্থাৎ, পিতা, ভ্রাতা পতি ও দেবরের পক্ষে যথাক্রমে স্বীয় কন্যা, ভগ্নী, স্ত্রী ও ভ্রাতৃবধূ আদি স্ত্রীকে সর্বদা পূজা করা উচিত অর্থাৎ যথাযোগ্য মধুর ভাষণ, ভোজন, বস্ত্র ও অলঙ্কারাদিদ্বারা প্রসন্ন রাখিবে। যাহারা কল্যাণ কামনা করে, তাহারা স্ত্রীদিগকে কখনও ক্লেশ দিবে না।

মহর্ষি মনু নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার সম্পর্কে বলেছেন,

"যথৈবাত্মা তথা পুত্রঃ পুত্রেণ দুহিতা সমা ।

তস্যাং আত্মনি তিষ্ঠন্ত্যাং কথং অন্যো ধনং হরেৎ"॥ ৯/১৩০

অর্থাৎ, যেমন নিজ আত্মা, তেমনই পুত্র অর্থাৎ নিজ আত্মা আর পুত্রে যেমন ভেদ নেই তেমন পুত্র কন্যায় ভেদ নেই, যদি পুত্র না থাকে তাহলে নিজ আত্মাস্বরূপ কন্যাই পিতা-মাতার ধনের অধিকারী হয়।

মহর্ষি মনু নারীদের বিবাহের অধিকার সম্পর্কে বলেছেন,

"কামং আ মরণাত্তিষ্ঠেদ্গৃহে কন্যা র্তুমত্যপি ।

ন চৈবৈনাং প্রয়চ্চেত্তু গুণহীনায় কর্হি চিৎ"॥ ৯/৮৯

অর্থাৎ, বরং কন্যা মৃত্যু পর্যন্ত বিবাহ না করিয়াই পিতৃগৃহে থাকিবে, তথাপি গুণহীন, অযোগ্য ও দুষ্ট পুরুষের সঙ্গে কন্যার বিবাহ দিবে না।

মহর্ষি মনু নারীদের যৌতুক-নিষেধ সম্পর্কে বলেছেন, 

"স্ত্রীধনানি তু যে মোহাদুপজীবন্তি বান্ধবাঃ ।

নারী যানানি বস্ত্রং বা তে পাপা যান্ত্যধোগতিম্"॥ ৩/৫২

অর্থাৎ, পতির যে বান্ধবেরা [পিতা-মাতা, ভগ্নি-ভ্রাতা আদি সম্বন্ধী] মোহবশত স্ত্রীধন, স্ত্রীদিগের অশ্বাদি যান বা বস্ত্র আদি গ্রহণ করে, তাহা উপভোগ করে জীবন নির্বাহ করে সেই পাপীরা নীচগতি প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ তাদের পতন হয়।

➡️ বর্তমান সময়ে আমরা একটি বিশেষ প্রবাদ ব্যবহার করে থাকি Ladies First। কিন্তু আমাদের অজানা যে মনুসংহিতা মহর্ষি মনু এরুপ ধারণা পোষণ করে বলেছেন, 

"চক্রিণো দশমীস্থস্য রোগিণো ভারিণঃ স্ত্রিয়াঃ ।

স্নাতকস্য চ রাজ্ঞশ্চ পন্থা দেয়ো বরস্য চ" ॥ ২/১৩৮

অর্থাৎ, রথারূঢ়, নব্বই ঊর্ধ্ব বয়সী, রোগী, ভারবাহী, স্ত্রী, স্নাতক, রাজা এবং বর এদের প্রথমে রাস্তা দিয়ে যেতে দেওয়া উচিৎ।

এছাড়াও মহর্ষি মনু নারীর অধিকার বিষয়ে যেমন উপদেশ প্রদান করেছেন, তেমনি নারীর প্রতি অমর্যাদা ও অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে শাস্তির বিধান নির্ধারণ করেছেন। ধর্ষণ, নারী অপহরণসহ বিবিধ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ প্রাণদন্ডের বিধান পর্যন্ত রয়েছে। 

মনুস্মৃতিতে শুদ্র: 

"জন্মহোক যথাতথা কর্ম হোক ভালো" বাংলা অভিধানে এরুপ প্রবাদ খুবই প্রচলিত। পবিত্র বেদ, শ্রীমদ্ভগবদগীতায় স্পষ্ট রুপে উল্লেখিত রয়েছে  মনুষ্য জন্ম মাত্রই তাহার বর্ণ নির্ধারিত হয় না,বরং তার গুণ ও কর্ম অনুসারে মনুষ্য ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র বর্ণ প্রাপ্ত হয়ে থাকে। 

কিন্তু অনেকে অজ্ঞানতা এরুপ আরোপ করে থাকে যে, মনুস্মৃতি জাতিবাদের পোষক এবং শুদ্রের প্রতি বৈষম্যপূর্ণ আচরণের সিদ্ধান্ত দেয়। কিন্তু ইহা সত্য নয়! পবিত্র বেদ ও শ্রীমদ্ভগবদগীতার মতো মনুস্মৃতিতেও গুণ ও কর্ম অনুসারে বর্ণ নির্ধারণ এবং চারবর্ণের পরস্পরের প্রতি কল্যাণকর আচরণের উপদেশ দেয়।  

মনুস্মৃতির দশম অধ্যায়ের ৬৫তম শ্লোকে বলা হয়েছে, 

"শূদ্রো ব্রাহ্মণতামেতি ব্ৰাহ্মণশ্চেতি শূদ্ৰতাম্ । 

ক্ষত্রিয়াজ্জাতমেবস্তু 

বিদ্যাদ্বৈশ্যাত্তথৈব চ"।।

অনুবাদ-- যদি কেউ শূদ্র  কূলে উৎপন্ন হয়ে, ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় অথবা বৈশ্যর,গুণ-কর্ম-স্বভাব বিশিষ্ট হয় তবে সে, ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় অথবা বৈশ্য হবে।

সেইরূপ, কেউ ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় অথবা বৈশ্যকূলে  জন্মগ্রহণ করে শূদ্রের গুণ-কর্ম-স্বভাব বিশিষ্ট হলে সে শুদ্র হবে।

মনুস্মৃতির দ্বিতীয় অধ্যায়ের ১৬৮তম শ্লোকে বলা হয়েছে, 

"যোহনধীত্য দ্বিজো বেদমন্যত্র কুরুতে শ্রমম্।

স জীবন্নেব শূদ্রত্বমাশু গচ্ছতি সান্বয়ঃ"।।

অনুবাদ---যে ব্রাহ্মণ আদি তিন বর্ণ, বেদ অধ্যয়ন না করে অন্যান্য অর্থশাস্ত্র স্মৃতিশাস্ত্র প্রভৃতিতে অত্যন্ত যত্ন করেন তিনি জীবিত অবস্থাতেই অতি শীঘ্র শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হন।

উপরিউক্ত দুটো শ্লোক থেকে ইহা বোধগম্য যে পবিত্র বেদ ও শ্রীমদ্ভগবদগীতার মতো মনুস্মৃতিতেও গুণ ও কর্ম অনুসারে বর্ণ নির্ধারিত হয়। কিন্তু কেউ শুদ্র বর্ণ প্রাপ্ত হলেও তাকে অবজ্ঞা অবহেলা করা উচিত নয়। বরং তার প্রতি সদ্ব্যবহার করাই উত্তম কার্য। 

মনুস্মৃতির তৃতীয় অধ্যায়ের ১১২তম শ্লোকে বলা হয়েছে, 

वैश्यशूद्रावपि प्राप्तौ कुटुम्बेऽतिथिधर्मिणौ ।भोजयेत्सह भृत्यैस्तावानृशंस्यं प्रयोजयन् 3/112

অর্থাৎ, শুদ্র বা বৈশ্য অতিথি রূপে আসলে ব্রাহ্মণ তাকে সম্মানের সহিত ভোজন করাবেন। (মনুস্মৃতি ৩।১১২)

পরবর্তী শ্লোকে পুনরায় বলা হয়েছে, 

भुक्तवत्स्वथ विप्रेषु स्वेषु भृत्येषु चैव हि ।भुञ्जीयातां ततः पश्चादवशिष्टं तु दम्पती 3/116

অর্থাৎ, আপন সেবক (শুদ্র) কে প্রথম ভোজন করানোর পর দম্পতি ভোজন করবেন।(মনৃস্মৃতি ৩।১১৬)

 

➡️ উপরিউক্ত শ্লোক বিশ্লেষণ থেকে আমরা সহজে উপলব্ধি করতে পারি৷ মহর্ষি মনু তাহার বিশুদ্ধ মনুসংহিতায় শুদ্রের নেই যে সাম্য, ন্যায় এবং অধিকার এর বিধান নির্ধারণ করেছে তা বর্তমান সমাজে বিদ্যমান শ্রেণি বৈষম্য দূরীকরণেও এক অনন্য দৃষ্টান্ত। একজন অশিক্ষিত ব্যক্তিকে সমাজে মূর্খ বলা হয়। কিন্তু তাহার প্রতি ঘৃণা নয় বরং প্রেমের শিক্ষা দেয় মনুস্মৃতি। 

➡️ হে অমৃতের সন্তানগণ! মহর্ষি মনু আদি ন্যায়শাস্ত্রের রচিয়তা। যিনি সমাজের প্রতিটি মানুষ, নর-নারী, ব্রাহ্মণ-শুদ্রের প্রতি সাম্য, ন্যায়ের বিধান দিয়েছেন। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মহর্ষি মনুর রচিত মনুস্মৃতিতে বিভিন্ন উদ্দেশ্য প্রণোদিত শ্লোকের প্রবেশ ঘটে। যা জনমনে তৈরি করে বিভ্রান্তি। আমাদের শাস্ত্র অজ্ঞানতার কারণে আমাদের নিকট এরুপ সংশয়ের উদ্ভব ঘটে। যা নিবারণে প্রয়োজন শাস্ত্রের অধ্যয়ন। তাই আসুন বৈদিক শাস্ত্র সমূহের অধ্যয়ন করি। 

"বেদ এর আদর্শে জীবন নির্মাণ, 

  মনুষ্য মাত্রই অমৃতের সন্তান'

ঈশ্বর করিয়াছেন সাম্যের বিধান,

 চলো গাই পরমাত্মার স্তুতিগান"

প্রচারে: VEDA

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ