"প্রতিবন্ধী বা দিব্যাঙ্গের প্রতি প্রেমভাব "



📜 প্রতিবন্ধী বা দিব্যাঙ্গের প্রতি প্রেমভাব 📜

🙏🚩নমস্কার সকল অমৃতের সন্তানগণ।

➡️ এ জগৎে সকলে অমৃতের সন্তান। কেউ ছোট বড় নয় বরং সকলে সমান, ইহা পবিত্র বেদ এর উপদেশ।

"শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ" - ঋগ্বেদ ১০/১৩/১
 অর্থাৎ, শোন হে বিশ্ববাসী, তোমরা সকলে অমৃতের সন্তান।

➡️ মনুষ্য জন্ম মাত্রই সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠে না বরং কিছু মানুষ রয়েছে যারা কিছু ক্ষেত্রে শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। একসময় বিভিন্ন সমস্যা অনুসারে অন্ধ, লেংড়া, কানা, খোড়া বলে অভিহিত করা তো। কিন্তু বর্তমানে এ অমানবিক নিষ্ঠুর শব্দগুলো প্রয়োগ করা হয় না। বর্তমানে কেউ শারীরিকভাবে অক্ষম হলে, তবে তার শারীরিক অক্ষমতাকে নির্দেশ করে তাকে প্রতিবন্ধী বলা হয়। যদি কেউ চোখে দেখতে না পায়, তবে তাকে পূর্বের মত অন্ধ না বলে বর্তমানে 'দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী' নামে অবিহিত করা হয়। এমনিভাবে যদি কেউ অস্বাভাবিক আচরণ করে, তবে পূর্বের মত উন্মাদ, পাগল ইত্যাদি নামে অবিহিত না করে তাকে 'বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী' বলা হয়।
তবে সংস্কৃত অভিধানে এরুপ প্রতিবন্ধকতা সম্পন্ন ব্যাক্তিদের দিব্যাঙ্গ বলা হয়। অর্থাৎ,দৈবী কারণে সে শারীরিকভাবে অক্ষম তাকে দিব্যাঙ্গ বলা হয়। 

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পৃথিবীর আনুমানিক ৬৫ কোটি লোক, যাদের মধ্যে ২০ কোটি শিশু, এরা কোন না কোনভাবে পঙ্গু বা প্রতিবন্ধী৷ সেই শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের শ্রদ্ধাপূর্বক প্রতিবছর ৩ ডিসেম্বরকে বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে। শারীরিকভাবে অসম্পূর্ন মানুষদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগীতা প্রদর্শন ও তাদের কর্মকান্ডের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্দেশ্যেই এই দিবসটির সূচনা। 

➡️ জগৎ এর সকল মানব মাত্রই অমৃতের সন্তান। সেরুপ, প্রতিবন্ধী বা দিব্যাঙ্গ ব্যক্তিও সমঅধিকার ও মর্যাদার অধিকারী। তার প্রতি বৈষম্য, পরিহাসমূলক ও অবমাননাকর শব্দের প্রয়োগ কদাপি উচিত নয়। আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, যে কোন পরিস্থিতিতে আমরা যে কোন তথাকথিত সুস্থ মানুষও এমন অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে। তবে আমাদের অনেক এর অজানা যে এরুপ মানবিক আচরণ এর উদাহরণ মহাভারতে উল্লেখিত রয়েছে।  এ প্রসঙ্গে মহাভারতের অনুশাসন পর্বে বলা হয়েছে:

"হীনাঙ্গানতিরিক্তাঙ্গান্ বিদ্যাহীনান্ বিগর্হিতান্ । 
রূপদ্রবিণহীনাংশ্চ সত্ত্বহীনাংশ্চ নাক্ষিপেৎ" ॥
-মহাভারত:অনুশাসন পর্ব, ৯১/৩৪📖🚩

অর্থাৎ, হীনাঙ্গ, অতিরিক্তাঙ্গ,বিদ্যাহীন, অত্যন্ত নিন্দিত, শ্রীহীন কদাকার, নিঃস্ব ও দুর্বল ব্যক্তিগণকে নিয়ে নিন্দা বা পরিহাস করবে না।

দিব্যাঙ্গ বা প্রতিবন্ধীদের প্রতি উপহাসমূলক আচরণ অনুচিত হিসেবে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে মহর্ষি মনু কর্তৃক প্রণীত ন্যায়বিধান মনুস্মৃতি ৪র্থ অধ্যায়ের ১৪১তম শ্লোকে, 

হীনাঙ্গানতিরিক্তাঙ্গান্ বিদ্যাহীনান্ বয়োঽধিকান্। রূপদ্রব্যবিহীনাংশ্চ জাতিহীনাংশ্চ নাক্ষিপেৎ৷৷ 
 - মনুসংহিতা:৪/১৪১📖🚩

"যারা হীনাঙ্গ (অর্থাৎ যাদের কোনও অঙ্গের হীনতা আছে; যেমন, কাণা, খোঁড়া ইত্যাদি), অতিরিক্তাঙ্গ (অর্থাৎ যাদের অঙ্গের আধিক্য আছে, যেমন, হাতে বা পায়ে ছয়টি আঙ্গুল আছে), যারা বিদ্যাহীন, যারা ‘বয়োধিক’ অর্থাৎ অত্যন্ত বৃদ্ধ, যারা রূপহীন (অর্থাৎ যাদের অঙ্গ-সন্নিবেশ বিকৃত, যেমন টেরা প্রভৃতি), যারা ধনহীন এবং জন্মপরিচয়হীন —তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ বা নিন্দা করবে না।"

➡️ মহর্ষি মনু মনুস্মৃতিতে প্রতিবন্ধী বা দিব্যাঙ্গদের নিয়ে ব্যঙ্গ বা নিন্দা করতে নিষেধ করেছেন। তবে যারা এরুপ বিধানের অমান্য করে তাদের জন্য নির্ধারিত হয়েছে দন্ডবিধান। মনুস্মৃতি ৮ম অধ্যায়ের ২৭৪তম শ্লোকে বলা হয়েছে, 
 
কাণং বাপ্যথবা খঞ্জমন্যং বাপি তথাবিধম্।
তথ্যেনাপি ব্রুবন্ দাপ্যে দণ্ডং কার্ষাপণাবরম্।।
-মনুসংহিতা ৮/২৭৪📖🚩

অর্থাৎ, কাণা, খোঁড়া অথবা ঐ প্রকার বিকলাঙ্গ ব্যক্তিকে কেউ যদি বিদ্রুপ করে কাণা, খোঁড়া বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে তবে কমপক্ষে এক কার্ষাপণ অর্থদণ্ড বিধান করতে হবে।

➡️ হে অমৃতের সন্তানগণ! সকল জীবকে মিত্রের চোখে দেখবে - যজুর্বেদ ৩৬/১৮। কারো প্রতি বৈষম্য বা হীন আচরণ করা অনুচিত। সকলকে সহোযোগিতা এবং প্রেম পূর্বক আচরণ করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। তাই দিব্যাঙ্গ বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি প্রতি আমাদের সকলের উচিত ভালোবাসা ও সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করা। ইহা! সত্য সনাতন বৈদিক ধর্মের আদর্শ। 

প্রচারে: VEDA

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ