ঈশ্বর কি সাকার না নিরাকার ❓


                           ঈশ্বর কি সাকার না নিরাকার ❓



সত্যার্থ প্রকাশঃ 

ঈশ্বর নিরাকার। কারণ, সাকার হইলে তিনি ব্যাপক হইতেন না। ব্যাপক না হইলে - সর্বজ্ঞাদি গুণও তাঁহাতে সম্ভব হইত না। কারণ পরিমিত বস্তুর গুণ-কর্ম স্বভাবও পরিমিত এবং উহা শীতোষ্ণ ক্ষুধা-তৃষ্ণা, রোগ-দোষ ও ছেদন-ভেদনাদি বিহীন হইতে পারে না। সুতরাং ঈশ্বর নিশ্চয়ই নিরাকার। সাকার হইলে তাঁহার নাসিকা, কর্ণ এবং চক্ষু প্রভৃতি অঙ্গের নির্মাতা অপর কেহ থাকা উচিত। কারণ, যাহা সংযোগ হইতে উৎপন্ন হয়, তাহার সংযোগকর্তা নিরাকার ও চেতন হওয়া অবশ্য উচিত। যদি কেহ বলেন যে, ঈশ্বর স্বেচ্ছায় স্বয়ং স্বীয় শরীর নির্মাণ করিয়াছেন, তাহা হইলেও সিদ্ধ হইতেছে যে, শরীর নির্মাণের পূর্বে তিনি নিরাকার ছিলেন। অতএব পরমাত্মা কখনও শরীর ধারণ করেন না, কিন্তু তিনি নিরাকার বলিয়া সমগ্র জগৎকে সূক্ষ্ম কারণ হইতে স্থুলাকাররূপে নির্মাণ করিয়া থাকেন। 



বৈদিক প্রশ্নোত্তরঃ

বেদ ও সাধারণ জ্ঞান অনুযায়ী তিনি নিরাকার। যদি তার একটি আকার থাকতো তবে তিনি সর্বত্র বিরাজমান হতে পারতেন না, কারণ আকার একটা নির্দিষ্ট সীমাবদ্ধ অস্তিত্বকে সূচিত করে । এবং তাই, সেক্ষেত্রে (অর্থাৎ সাকার হলে) তাঁর অস্তিত্ব নির্দিষ্ট সীমানার পরে থাকা উচিত নয়।

ঈশ্বরের আকার শুধুমাত্র দেখা যাবে যদি তিনি স্থুল হন, কারন আলোক তরঙ্গকে প্রতিফলিত করতে পারে এমন কোনো বস্তুর চেয়ে কোন বস্তু সুক্ষ্ম হলে সে সুক্ষ্ম বস্তুটিকে আর দেখা যায় না। এখন বেদ স্পষ্টভাবে বলে ঈশ্বর সুক্ষ্মতম, ফাঁকহীন এবং সমভাবে সর্বব্যাপী। অতএব, তাঁর কোনো আকার থাকতে পারে না।

যদি ঈশ্বর একটি আকার থাকে, তার মানে কেউ তার আকার তৈরী করেছেন। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। যদি কেউ বলেন যে ঈশ্বর নিজেই নিজের আকার বানিয়েছেন, এর অর্থ তিনি আগে নিরাকার ছিলেন।

যদি আপনি বলে থাকেন যে ঈশ্বর সাকার এবং নিরাকার উভয়ই, এটা সম্ভব নয় কারণ এটা দ্বন্দ্বমূলক।

যদি আপনি বলে থাকেন যে তিনি সময়ে সময়ে দিব্য রূপ গ্রহণ করেন, দয়া করে দিব্য রূপ বলতে কি বোঝায় তা বোঝান। ধরুন ঈশ্বর একটি মানুষের দিব্যরূপ গ্রহণ করলেন। এখন, আপনি কিভাবে ঈশ্বর পরমাণু এবং অ-ঈশ্বর পরমাণুর সীমানা নির্ধারণ করবেন? উপরন্তু, যেহেতু তিনি একই ঘনত্বসহ (অভিন্নভাবে) সর্বত্র উপস্থিত, তাহলে আমরা মানব-ঈশ্বর এবং বাকি জগতের মধ্যে পার্থক্য কিভাবে করব ? আর যদি ঈশ্বর সর্বত্র একই থাকেন, তবে আমরা কিভাবে (তাঁর অস্তিত্বের) সীমানাটি দেখতে পাব?

মানুষের শরীর হিসাবে যা আমরা দেখি, আসলে, বাকি জগতের সঙ্গে বস্তু এবং শক্তি একটি ক্রমাগত বিনিময়। মানুষের শরীরের অংশের এবং বিশ্বের বাকি অংশের প্রতিটি পরমাণুকে পার্থক্য করা অসম্ভব একটা ব্যাপার। তাই একইভাবে মানব-শরীরী ঈশ্বরের দেহকে (দেহের পরমাণুকে) পৃথক করা অসম্ভব হবে। উদাহরণস্বরূপ, মানব-ইশ্বর থেকে থুতু, প্রস্রাব, ঘাম এবং অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ কি ঐশ্বরিক হবে?

বেদে, ইশ্বরের আকারের কোন ধারণা নেই । এ ছাড়া, এমন কিছু নেই যা ঈশ্বর নিরাকারভাবে করতে পারেন না, যে তাকে অবশ্যই একটি শরীর ধারন করতে হবে।


নিরাকারঃ-
স পর্যগাচ্ছুক্রমকায়ম ব্রণম স্নাবিরং
শুদ্ধ মপাপ বিদ্ধম্ কবির্মনীষী পরিভূঃ স্বয়ম্ভূর্যাথা তথ্যতোহর্থাম্ব্যদধাচ্ছা শ্বতীভ্যঃ সমাভ্যঃ ।।
                                                   যজুর্বেদ. ৪০/৮
বঙ্গানুবাদঃ

পরমাত্মা সর্বব্যাপক,সর্বশক্তিমান, শরীররহিত, ছিদ্র
রহিত, স্নায়ু আদির বন্ধন রহিত,রোগরোহিত, জম্মরহিত,শুদ্ধ, নিষ্পাপ, সর্বজ্ঞ, অন্তর্যামী,
দুষ্টের দমন কর্তা ও অনাদি। তিনি তাহার শ্বাশত প্রজা জীবের জন্য যথাযথ ফলের বিধান করেন।


                                ও৩ম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন