🔸সনাতন শাস্ত্রে ধর্ষণের শাস্তির বিধান:-


🙏🌿 নমস্কার 🌿🙏

🌿✍️ মানব সমাজ আজ সভ্যতার চরম শিখরে অবস্থান করছে। বর্বর যুগ অতিবাহিত করে আজ আমরা নিজেদের সভ্য বলে সম্মোধন করে থাকি। কিন্তু আমরা সভ্যতাকে গ্রহণ করলেও কিছু অসভ্যতা আমাদের সমাজে আজও বিদ্যমান। নারীর প্রতি অবজ্ঞা, অবহেলা ও নির্যাতন অন্যতম বর্বর এবং ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ  । কিন্তু সনাতন শাস্ত্র মতে নারীর মর্যাদা সর্বোত্তম। নারী সমাজের অলংকার স্বরুপ ও শোভাবর্ধনকারী।

🌿 সনাতন শাস্ত্রে নারীর মর্যাদা:-

"য়ত্র নার্য়্যস্ত পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ।  য়ত্রৈতাস্তু ন পূজ্যন্তে সর্বাস্তত্রাফলাঃ ক্রিয়াঃ"।। - মনুস্মৃতি ৩/৫৬ 📖

অর্থাৎ, যেখানে নারীদের যথাযথ শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হয়, সে সমাজ দিব্য গুণ তথা দিব্য ভোগ (উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি) লাভ করে। যে সমাজে নারীদের যোগ্য সম্মান করে না, তারা যতই মহৎ কর্ম করুক না কেন, তার সবই নিষ্ফল হয়ে যায়।

"কেতুরহং মূর্ধাহমুগ্রা বিবাচনী, মমেদনু ক্রতুং পতিঃ সেহানায়া " - ঋগ্বেদ- ১০/১৫৯/২ 📖

অর্থাৎ, নারী জ্ঞানবতী, গৃহে মূখ্য স্থানীয়া ধৈর্য্য শালিনী, বক্তৃতাকারিনী ও শত্রুনাশিনী।

"পুরুষেভ্যো গোভ্যো অশ্বেভ্যঃ শিবা"
-অথর্ববেদ--৩/২৮/৩ 📖

অর্থাৎ, তারা সর্বভূতের কল্যণদায়িনী, সর্ববিজয়া।

"তস্মাদেতাঃ সদা পূজ্যা ভূষণাচ্ছাদনাশনৈঃ। ভূতিকামৈর্নরৈর্নিত্যং সৎকরেষূউসর্বেষু চ"
- মনুস্মৃতি৩/৫৯

অর্থাৎ, একজন পিতা, ভাই, পতি যারা ঐশ্বর্য কামনা করে, তারা স্ত্রীলোকদের সম্মান প্রদর্শন তারাপ্রসন্ন রাখবে এবং পোশাক ও খাদ্য দ্বারা আবৃত রাখবে। স্ত্রী জাতিকে সর্বদা পবিত্র হিসেবে গভীরভাবে শ্রদ্ধা করবে।

✍️🌿 কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত আমাদের সমাজ নারীদের প্রতি সে সম্মান প্রদর্শন না করার ফলে আজ সমাজ অধঃপতিত হচ্ছে। নারীর প্রতি নির্যাতন এর নিকৃষ্টতম উদাহরণ হলো ধর্ষণ। ধর্ষণ বর্তমান সময়ের অন্যতম নিকৃষ্টতম সমস্যা।

✍️🌿 কিন্তু ধর্ষণ কি ?

আমেরিকান সাংবাদিক ও নারীবাদী লেখক সুজান ব্রাউন্সমিলারের ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত 'অ্যাগেইনস্ট আওয়ার উইল :ম্যান উইমেন অ্যান্ড রেপ' গ্রন্থে তিনি বলছেন, ধর্ষণ কোনো স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া নয়; প্রাণিকুলের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনাও স্বাভাবিক নয়। এটিকে মানুষের অবদমিত যৌন চাহিদার প্রকাশ হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। ব্রাউন্সমিলারের মতে, ধর্ষণ একটি ক্ষমতা প্রদর্শনের হাতিয়ার; যেটি পুরুষ নারীকে পদানত করে রাখার জন্য ব্যবহার করে। আর ডব্লিউ কনেল তাঁর 'ম্যাসক্যুলিনিটিজ' গ্রন্থে পৌরুষের নানা ধারণাকে সংজ্ঞায়িত করার সময় দেখিয়েছেন, 'হেজিমোনিক ম্যাসকুলিনিটি' বা আধিপত্যবাদী পৌরুষ কীভাবে পুরুষকে আগ্রাসী করে তোলে এবং এই আগ্রাসনের শিকার শুধু নারীই নন; নাবালক থেকে শুরু করে কম বয়সী আর অপেক্ষাকৃত দুর্বল পুরুষরাও হন।

বাংলাদেশে ধর্ষণ একটি ক্রম বর্ধমান সামাজিক সমস্যা। বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ নারীর মধ্যে প্রায় ১০ জন ধর্ষণের শিকার হন।[১] ২০২১ সালে গৃহীত এক হিসবে পাওয়া গেছে যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পূর্ববর্তী ৫ বছরে ৩০ হাজার ২৭২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী ২০১৯ সালে এক হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন৷ ২০১৮ সালে এই সংখ্যা ছিলো ৭৩২ জন৷  ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হন ৮১৮ জন নারী৷ ২০১৯ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৭৬ জনকে৷ আর আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন ১০ জন নারী৷ বাংলাদেশে গণ ধর্ষণের ঘটনাও অহরহ ঘটে থাকে।

সনাতন শাস্ত্র মতে নারীর প্রতি নির্যাতন বা ধর্ষণের শাস্তি:-

✍️ "পুরুষাণাং কুলীনানাং নারীণাং.... হরণে বধং অর্হতি"।। - মনুস্মৃতি-৮/৩২৩

অর্থাৎ, নারী অপহরণকারীদের মৃত্যুদণ্ড হবে।

✍️ " পরদারাভিমর্ধেষু প্রবৃত্তান্নৃন্মহীপতিঃ। উদ্বেজনকরৈর্দন্ডৈশ্চিহ্নয়িত্বা প্রবাসয়েৎ"
-মনুস্মৃতি- ৮/৩৫২

অর্থাৎ, যারা নারীদের ধর্ষণ করে বা উত্ত্যক্ত করে বা ব্যভিচারে প্ররোচিত করে, তাদের এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে তা অন্যদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে এবং কেউ তা করতে আর সাহস না পায়।

✍️ "যস্ত্বা ভ্রাতা পতির্ভূত্বা জারো ভূত্বা নিপদ্যতে।
প্রজাং যস্তে জিঘাংসতি তমিতো নাশয়ামসি ॥"
-অথর্ববেদ ২০।৯৬।১৫

অনুবাদঃ হে স্ত্রী !  যে ব্যভিচারী পুরুষ ছলে ভাই কিংবা স্বামী হয়ে ধর্ষণ করে এবং এভাবে তোমার গর্ভস্থ সন্তানকে গর্ভপাতরূপে হত্যা করে তাকে এই জীবনেই আমরা রাজ্যাধিকারীগণ বিনষ্ট করি ।

✍️ "যস্ত্বা স্বপ্নেন তমসা মোহয়িত্বা নিপদ্যতে।
প্রজাং যস্তে জিঘাংসতি তমিতো নাশয়ামসি ॥"
-অথর্ববেদ ২০।৯৬।১৬

অনুবাদঃ হে স্ত্রী  !  যে ব্যভিচারী পুরুষ স্বপ্ন ঔষধি দ্বারা ,  অন্ধকারে , তোমাকে জ্ঞানরহিত করে ধর্ষণ করে এবং এভাবে তোমার গর্ভস্থ সন্তানকে গর্ভপাতরূপে হত্যা করে তাকে এই জীবনেই আমরা রাজ্যাধিকারীগণ বিনষ্ট করি । 

✍️ "পর্যস্তাক্ষা অপ্রচঙ্কশা অস্ত্রৈণাঃ সন্তু পণ্ডগাঃ।
অব ভেষজ পাদয় য ইমাং সম্বিবৃৎসত্যপতিঃ স্বপতিং স্ত্রিয়ম্ ॥" - অথর্ববেদ ৮।৬।১৬

অনুবাদঃ তত্ত্বজ্ঞানীদের নিন্দুক ও ব্যভিচারী পুরুষ যেন কখনো শাসনকর্তা কিংবা আমাদের স্ত্রীদের সাথে মিলিত না হয় । হে ভয় নিবারক মানব ! যে ব্যক্তি স্বামী না হয়েও স্বামীরূপে পতিব্রতা স্ত্রীদের নিকট আসতে চায় সেই ব্যক্তিকে দণ্ডদান করে অধঃপতিত করো  ।

✍️ "পরদারাভিমর্ষেষু প্রবৃত্তান্ নূন্ মহীপতিঃ। উদ্বেজনকরৈদণ্ডৈশ্চিহ্নয়িত্বা প্রবাসয়েৎ।।"
-মনুস্মৃতি ৮।৩৫২

অনুবাদঃ যে সব লোক পরদারসম্ভোগে প্রবৃত্ত হয় রাজা তাদের নাক-কান-ছেদন প্রভৃতি এমন উদ্বেগজনক দণ্ডের দ্বারা চিহ্নিত ক'রে দেবেন যা দেখে সকলে ভীত হয়; সেই অবস্থায় তাদের দেশ থেকে বহিষ্কৃত ক'রে দেবেন।

"পশুমাংসং দাহয়েৎ পাপং শয়নে তপ্ত আয়সে।
অভ্যাদধ্যুশ্চ কাষ্ঠানি তত্র দহ্যেত পাপকৃৎ।।"
--(মনুস্মৃতি--- ৮।৩৭২,বিশুদ্ধ -৮/২১৭)--
.
অনুবাদঃ সেই রূপে যে পুরুষ তাহার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিয়া পরস্ত্রী বা বেশ্যাগমন করে বা অন্য স্ত্রীলোককে ধর্ষণ করে, সেই পাপীকে উত্তপ্ত লৌহ পালঙ্কে শায়িত করিয়া বহুলোকের সম্মুখে জীবিত অবস্থায় ভস্মীভূত করিবে।
.
এছাড়াও যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতায় বলা আছে,
.
অর্থাৎ, যদি কোন পুরুষ কোন নারীকে ধর্ষণ করে তাহলে তার পুরুষাঙ্গ ও অন্ডঃকোষ কর্তন করতে।
-(যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতা ১৩/২৮,২৯)
.
"एष धर्मोऽखिलेनोक्तो वेतनादानकर्मणः ।अत ऊर्ध्वं प्रवक्ष्यामि धर्मं समयभेदिनाम् ।।"8/218
.
★যে স্ত্রী স্বজাতির অহঙ্কারে
স্বামীকে ত্যাগ করে পরপুরুষের সাথে
ব্যভিচার করে, সেই মহিলাকে বহু
লোকের সামনে কুকুর দষ্ট(কুকুরের
কামড়ের দ্বারা) করে হত্যা করা হবে।
✔ ---(মনুসংহিতা ৮/৩৭১, বিশুদ্ধ -৮/২১৮)

"परदाराभिमर्शेषु प्रवृत्तान्नॄन्महीपतिः ।उद्वेजनकरैर्दण्डैश्छिन्नयित्वा प्रवासयेत् "।।8/352

অর্থাৎ,  যারা নারীদের ধর্ষণ করে বা উত্যক্ত করে বা তাদের ব্যাভিচারে প্ররোচিত করে তাদের এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে তা অন্যদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে এবং কেউ তা করতে আর সাহস না পায়।” (মনুসংহিতা ৮/৩৫২)

"पुरुषाणां कुलीनानां नारीणां च विशेषतः ।मुख्यानां चैव रत्नानां हरणे वधं अर्हति "।।8/323

অর্থাৎ,  নারী অপহরণকারীদের মৃত্যুদণ্ড হবে।” (মনুসংহিতা ৮/৩২৩)

"कूटशासनकर्तॄंश्च प्रकृतीनां च दूषकान् ।स्त्रीबालब्राह्मणघ्नांश्च हन्याद्द्विट्सेविनस्तथा ।।"9/232

অর্থাৎ, যারা নারী, শিশু ও গুণবান পণ্ডিতদের হত্যা করে, তাদের কঠিনতম শাস্তি দিতে হবে।” (মনুসংহিতা ৯/২৩২)

🌿✍️ নারী সে তো দেবী। আমাদের সমাজে নারীদের সম্মান প্রতিষ্ঠায় বৈদিক শাস্ত্র প্রামাণিক দলিল। ধর্ষণ বর্তমান সময়ের অন্যতম ব্যাধিস্বরুপ। এ সমস্যা উৎপাটন করে সমাজকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে। সনাতন শাস্ত্র সবসময় মানবসমাজের দিশারি স্বরুপ। তাই আসুন বেদ এর দিকে ফিরে আসি৷ আপন করি বৈদিক ধর্ম। 

প্রচারেঃ VEDA
🌿🙏 --------------ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি --------------- 🙏🌿

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন