▪️মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ২০০তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে আলোচনা:-

➡️ মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী ২০০তম জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনার সারসংক্ষেপ:-

🌼 নমস্কার সকল অমৃতের সন্তানগণ

"আধুনিক ভারতের মহান পথপ্রদর্শক স্বামী দয়ানন্দের প্রতি আমার প্রজন্ম হতে শ্রদ্ধা জানাই, যিনি ধর্ম ও প্রথার বিভ্রান্তিকর জটিলতার মধ্য থেকে আমাদের দেশের অধঃপতিত দিনগুলোকে আলোকিত  করেছিলেন যা একটি সরল পথের দিকে নিয়ে যাওয়ায় তার উদ্দেশ্যে ছিল।"
- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,শান্তিনিকেতন 🌿

🌼✍️মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর আদর্শ এবং শিক্ষা এমনই ছিলো যে তা মহাত্মা গান্ধী থেকে A. David Jackson, USA পর্যন্ত সকল বিদ্বান ব্যক্তিই তার আদর্শের প্রতি সম্মান জানাতে ছিলেন তৎপর। 
আধুনিক ভারতের ঋষি খ্যাত মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী   ছিলেন ভারত গড়ার পুরোধা ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। তিনি তৎকালীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন, যুক্তিবোধহীন সনাতনী সমাজকে এক নতুন দিশা দিয়েছিলেন। ভারত যখন ইংরেজ শাসন বিধস্ত তখন আলোর মশাল নিয়ে সকলকে স্বরাজে স্বপ্ন দেখানো ব্যক্তি মহর্ষি। একজন ঋষি কিভাবে পুরো পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছেন তা সত্যি গবেষণার বিষয়। সনাতনী সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে তিনি বলেন, 

“ তোমাদের পূর্বপুরুষেরা বনজঙ্গলে বাস করা কোন অসভ্য জাতি ছিলো না ৷ এই পৃথিবীকে আলোকিত করা মহাপুরুষ ছিলেন ৷ তোমাদের ইতিহাস  পরাজয়ের নয়, বিশ্ব বিজেতাদের গৌরব গাঁথার ৷ তোমাদের বেদমন্ত্র গোচারণকারীদের গান নয়, শ্রীরাম এবং শ্রীকৃষ্ণের মত মহাত্মাদের গঠন করা অমর সত্য ৷”        -মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী 

(বেদবাণী: হিন্দি মাসিক পত্রিকা ; ডিসেম্বর ১৮৮৯)

তিনি ভঙ্গুর সমাজকে পুনরায় সংগঠিত করতে নিরলস প্রচেষ্টা করেছেন আজীবন। 

✍️কুসংস্কার নির্মূল: মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী উপলব্ধি করেছিলেন যে সমাজ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে। সেজন্য এসকল কুসংস্কার দূর করে সকলকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করাই সর্বোত্তম কার্য। তবে ভারত মুক্ত হবে শৃঙ্খলের বেড়ি থেকে। মহর্ষি তৎকালীন সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। তিনি সুবিধাবঞ্চিত,অবহেলিত,নিপীড়িত দলিত জনগোষ্ঠীদের হরির সন্তান তথা হরিজন নামে আখ্যায়িত করেছিলেন। 
তিনি পবিত্র বেদ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করেন কেউ ছোট বড় নয়,  সকলেই অমৃতের সন্তান। 

✍️নারী শিক্ষা: তৎকালীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজে নারীরা ছিল নিগৃহীত। কিন্তু মহর্ষি পবিত্র বেদ থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করেন নারীর অধিকার রয়েছে শাস্ত্র পাঠে, গায়ত্রী মন্ত্র জপের এবং শিক্ষা লাভের৷ তিনি প্রথম নারীদের পুনরায় উপনয়ন দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। 

✍️অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ: মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী সর্বদা ছিলেন জাতপ্রথা এবং অস্পর্শতার বিরুদ্ধে। তিনি সবসময় মানুষের মাঝে বেদ জ্ঞান ছড়িয়ে দিয়ে সকলকে ঐক্য ও সাম্যর বাণী শোনাতেন। তৎকালীন সময়ে দলিত সম্প্রদায়কে সব দিক থেকে অত্যাচার ও নিগৃহীত করা হতো। মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীই প্রথম তাদের হরিজন বা হরির সন্তান বলে উল্লেখ করেন।  

"দয়ানন্দজী অস্পৃশ্য জাতির নিকট প্রীতি ও প্রেমের হস্ত বাড়াইয়াছে এবং তাহাদিগকে সমাজের অন্তর্ভুক্ত করিয়া আলিঙ্গন করিতেছে। আর্য সমাজের নেতাদের কর্মে অনুরাগ আছে এবং এ জন্য তাহারা যথেষ্ট আত্মত্যাগও করিয়াছেন। আর্যসমাজ তাহার কর্ম তালিকার মধ্যে স্ত্রী-শিক্ষাকে এক মহত্বপূর্ণ স্থান দান করিয়াছে। আর্য সমাজ আমাদের মাতৃভূমির উদ্ধারের জন্য বহু কিছুই করিয়াছে, এ জন্য ইহা আমাদের নিকট চিরকৃতজ্ঞতার পাত্র।"-(আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়)

✍️কুপ্রথা দূরীকরণ: তৎকালীন সময়ে বাল্যবিবাহ,
সতীদাহ,যৌতুকপ্রথা,অস্পৃশ্যতা,নরবলি,গুরুদাসী,সেবাদাসী প্রচলিত ছিলো। ফলে মানুষের সনাতনধর্মের প্রতি বিরুপ চিন্তা জন্মায়। যা সনাতনী সমাজের জন্য অশনিসংকেত হিসেবে দেখা দিয়েছিল। ঠিক সেসময় মহর্ষি আলোর মশাল হয়ে বেদবিহিত সনাতনধর্মকে সবার মাঝে পুনরায় ছড়িয়ে দেন। অসামাজিক, কুপ্রথা দূরীকরণে তিনি বহু বিতর্ক সভায় অংশগ্রহণ করেন। সফল ভাবে ধর্মের নামে অধর্মকে যারা স্থাপন করে নিজেদের ফায়দা লুটছিল তাদের প্রচেষ্টাকে তিনি ব্যর্থ করে দেন। 

✍️বেদ ভাষ্য ও অমর গ্রন্থ রচনা: মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী যখন বেদকে সবার নিকট পৌঁছে দেওয়ার সংকল্প নেন তখন তিনি লক্ষ্য করেন বিভিন্ন উদ্ভট ও অবৈদিক ভাষ্য চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। ফলস্বরূপ, সনাতনী সমাজ পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ছে। সেজন্য তিনি রচনা করেন ঋগ্বেদাদিভাষ্য ভূমিকা। 

নিজ বেদভাষ্যের স্বরূপ সম্পর্কে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর প্রতিজ্ঞা ছিল (একাংশ)-

আৰ্য্যাণাং মুন্যৃষীণাং য়া ব্যাখ্যারীতিঃ সনাতনী। তাং সমাশ্ৰিত্য মন্ত্ৰার্থা বিধাস্যন্তে তু নান্যথা৷৷

>এই বেদভাষ্যে কোনরূপ অপ্রমাণ বিষয় লিখিত হইবে না, পরন্তু ব্রহ্মা হইতে ব্যাসদেব পর্যন্ত যত ঋষি মুনি (বা আপ্তগণ) জন্ম গ্রহণ করিয়াছেন, তাঁহাদিগের ব্যাখ্যার রীতি অনুসারে এই ভাষ্য প্রণীত হইবে।।

সত্যার্থশ্চ প্রকাশ্যেত বেদানাং য়ঃ সনাতনঃ ৷ ঈশ্বরস্য সহায়েন প্রয়ত্নোऽয়ং সুসিধ্যতাম্।।

 >এই ভাষ্য দ্বারা বেদের প্রকৃত অর্থ সংসারে প্রসিদ্ধ হউক, এবং বেদের প্রকৃত অর্থ যাহাতে লোকমাত্রেই অবগত হন, তজ্জন্যই আমি এই বেদভাষ্য প্রণয়নরূপ প্রযত্ন করিতেছি। সর্বশক্তিমান পরমেশ্বরের সহায় ও কৃপাবলে যাহাতে উত্তমরূপে এই কাৰ্য্যে সিদ্ধি লাভ করিতে সমর্থ হই, ইহাই আমার পরমাত্মার নিকট (সবিনয়) প্রার্থনা।

তথ্যসূত্রঃ ঋগ্বেদাদিভাষ্যভুমিকা- মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী

🤔⁉️কেন তার ভাষ্যকে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষ্য বলা হয় তার রয়েছে কিছু উপযুক্ত কারণ। 

প্রথমত, তিনি বিশ্বাস করতেন যে বেদই প্রামাণিক জ্ঞানের একমাত্র উৎস এবং তাদের আক্ষরিক অর্থের উপর ভিত্তি করে ব্যাখ্যা করা উচিত। তিনি ইন্টারপোলেশনের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং বেদকে মানুষের মতামত ও বিশ্বাসের প্রভাব থেকে মুক্ত সত্যের অপরিবর্তনীয় ও চিরন্তন উৎস হিসেবে দেখেছিলেন।

দ্বিতীয়ত, তিনি বেদের ব্যাখ্যায় যুক্তি ও যুক্তির গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি অন্ধ বিশ্বাসের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং বেদের শিক্ষাগুলি বোঝার জন্য লোকেদের নিজস্ব যুক্তি এবং বিচার ব্যবহার করতে উত্সাহিত করেছিলেন।

তৃতীয়ত, তিনি জাতিভেদ প্রথা এবং বর্ণ-ভিত্তিক বৈষম্যের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যা তাঁর সময়ে হিন্দু সমাজে প্রচলিত ছিল। তিনি বর্ণপ্রথাকে একটি সামাজিক মন্দ হিসাবে দেখেছিলেন যা বেদের শিক্ষার পরিপন্থী ছিল এবং জাতি বা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সকল মানুষের সমতার পক্ষে সমর্থন করেছিলেন।

অবশেষে, তিনি শিক্ষার গুরুত্ব এবং জ্ঞানের সাধনায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি এই মূল্যবোধের প্রচার এবং লিঙ্গ বা সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে সকলকে শিক্ষা প্রদানের জন্য আর্য সমাজ নামে একটি হিন্দু সংস্কার আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন।
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর বেদের ব্যাখ্যা অনন্য ছিল যে এটি যুক্তি, যুক্তি, সমতা এবং শিক্ষার উপর জোর দিয়েছিল এবং তার সময়ে হিন্দু সমাজে প্রচলিত অন্ধ বিশ্বাস, বর্ণ-ভিত্তিক বৈষম্য এবং কুসংস্কারকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। 

মহর্ষি দয়ানন্দ এর বেদভাষ্য এতই সাড়া জাগানো ছিলো যে, জার্মান সংস্কৃত বিশারদ, ম্যাক্স মুলার বলেছেন, সংস্কৃত সাহিত্য শুরু হয় ঋগ্বেদ দিয়ে এবং শেষ হয় দয়ানন্দের ঋগ্বেদাদিভাষ্য ভূমিকা দিয়ে। ( আমরা ভারত থেকে কি শিখবো ভাষণের তৃতীয় সংস্করণ)  

 "আমি জানি স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী মহৎ উদ্দেশ্যেই কর্ম করিয়াছেন। স্বামী দয়ানন্দ যে কাজ করিয়া গিয়াছেন তাহাতেই তাহার শিষ্যগণের তৃপ্ত থাকা উচিৎ নয় বরং যে কার্য তিনি অসম্পূর্ণ রাখিয়া গিয়াছে তাহা সমাপ্ত করা উচিৎ। আর্য সমাজের যদি কিছু সেবা করিতে পারি তবে নিজেকে ধন্য মনে করিব।"-(পাশ্চাত্য দার্শনিক ম্যাক্সমুলার)

"বেদভাষ্য সম্বন্ধে আমার পূর্ণ বিশ্বাস- যে ভাষ্যই প্রামাণিক বলিয়া স্থিরীকৃত হউক না কেন, স্বামী দয়ানন্দ সর্বাগ্রে পূজা পাইবেন, কারণ বেদ ভাষ্যের প্রকৃত রহস্য তিনিই আবিষ্কার করিয়াছেন। বিশৃঙ্খল, অবিদ্যা, অন্ধকার ও বহু শতাব্দীর ভ্রমজালে জনতা আবদ্ধ ছিল। তাহার দৃষ্টিই এসব ভেদ করিয়া সত্যকে গ্রহণ করিয়াছিল। রাজা রামমোহন রায় উপনিষদ পর্যন্ত পৌছিয়াই নিবৃত্ত হইয়াছিলেন, আরও অগ্রসর হইয়া অনুভব করিয়াছিলেন যে বেদই মানব জ্ঞানের মূল প্রসবণ।" ("Dayananda and the Vedas" by শ্রী অরবিন্দ)

✍️অমর গ্রন্থ সত্যার্থ প্রকাশ: 
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী তাহার জীবনে এক অমর গ্রন্থ রচনা করিয়াছেন যা সত্যার্থ প্রকাশ নামে সুবিখ্যাত। বহু পন্ডিত মনিষী তার এই গ্রন্থ থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তিনি উক্ত গ্রন্থ সুনিপুণ ভাবে প্রকৃত সনাতনধর্ম এবং বেদ এর স্বরুপ ও মনুষ্যের করণীয় সম্পর্কে তুলে ধরেন। কিন্তু তিনি সর্বদা সতর্ক ছিলেন ভুলভ্রান্তি বিষয়ে। তাই তিনি সবার উদ্দেশ্য বলেছেন, 

"আমার কথাকে কখনো তোমরা অলঙ্ঘনীয় ভেবোনা, তোমরা সবসময় সত্যের অন্বেষণ করবে, সত্য অন্বেষণ করতে গিয়ে আমার কখনো ভুলও যদি পাও তবে তাহা বর্জন করবে। সত্য যাই হোক তাহা গ্রহণ করতে এবং মিথ্যাকে বর্জন করতে কখনো পিছপা হবে না। বিদ্বান ব্যক্তি মাত্রেরই উচিত সত্যের অন্বেষণ করা।" 

"সত্যার্থ প্রকাশে দয়ানন্দজীর জ্ঞানের পরিচয় রয়েছে, ভারতীয় সর্বজনীন দার্শনিক ধারায় এ জ্ঞানের মূল্য অমূল্য"-(শ্রী বিপিনচন্দ্র পাল)

⚜️এমনই ছিলো মহর্ষির আদর্শ। তিনি সব্য সময় সত্যান্ধেষী হতে বলেছেন। 

✅বৈদিক শিক্ষা প্রসার: 
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী উপলব্ধি করেছিলেন এ দেশ তার ইতিহাস থেকে বিস্মৃত হয়েছে। তারা ভুলে গেছে এ ভূমিতে জন্মানো সুশ্রুত, আর্যভট্ট, চাণক্যদের কথা। তাই তিনি পুনরায় গুরুকুল স্থাপনের জন্য আহৃবান জানান। তার আদর্শ ও অনুপ্রেরণায় তারই যোগ্য শিষ্য স্বামী শ্রদ্ধানন্দজ্বী বহু জায়গায় গুরুকুল স্থাপন করেন। যা বর্তমানে DAV নামে পরিচিত এবং শুধু ভারতে নয় বহির্বিশ্বেও DAV এর কার্যক্রম সফলতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দয়ানন্দ অ্যাংলো-বৈদিক কলেজ পরিচালনা কমিটি (DAVCMC) নামে পরিচিত একটি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা ভারতে এবং ভারতের বাইরে ৯০০ টিরও অধিক বিদ্যালয় সহ ৭৫টি কলেজ এবং একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে থাকে। ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতীর আদর্শের উপর ভিত্তি করে এটি প্রতিষ্ঠিত। 

⚜️ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন ও মহর্ষি: 
ভারতের স্বরাজের অনুপ্রেরণা হিসেবে মহর্ষি ছিলেন প্রথম আলোর মশাল। তিনি প্রথম ভারতের সকলের মাঝে স্বাধীনতা বাণী ছড়িয়ে দেন। তিনি সকল মানুষের মাঝে এক সাম্য ও ঐক্যের বাণী ছড়িয়ে দেন। সেজন্য স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদানকারী বহু মহান ব্যক্তিত্ব মহর্ষির প্রতি জানান আকুল শ্রদ্ধা। 

"স্বামীজী ভারতের জাতীয়তা, সামাজিক এবং ধর্মীয়ভাবে একীভূত করার আদর্শ উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। ভারতীয়দেরকে এক জাতি হিসাবে গড়ে তুলতে তিনি বিদেশী শাসন থেকে মুক্ত করা প্রয়োজন বলে মনে করেছিলেন।"-(রামানন্দ চ্যাটার্জী)

"স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী নিঃসন্দেহে একজন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি যিনি আধুনিক ভারতে নৈতিক মূল্যবোধের , ধর্মীয় সাম্যবাদের পুনর্জাগরণের পথিকৃৎ। সমাজ সংষ্কার, গঠনে তার আর্যসমাজ নিঃসন্দেহে একটি মাধ্যম।" -(নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু,VEDIC Magazine 1922)

"মহর্ষি দয়ানন্দ ছিলেন ধর্মযোদ্ধা, সমাজ সংস্কারক, রাষ্ট্র নির্মাতা ও নির্ভীক সন্ন্যাসী। তাহার মতো আর্য অনুসরণকারীর মধ্যেও মহর্ষির গুণ আদর্শ ব্যাপকরূপে দৃষ্ট হয়। (জহরলাল নেহেরু,কলিকাতা আর্য সমাজের মন্দিরে বক্তৃতার অংশ,১৯২৯)

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার অনুপ্রেরণা জন্য তাকে ভারতে প্রপিতামহ বলে সম্বোধন করা হয়। সেজন্য মহর্ষিকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করার কথা বলেছিলেন স্যার যদুনাথ সরকার। 

"যখন ভারতের উত্থানের ইতিহাস লিখিত হইবে, তখন সন্ন্যাসী দয়ানন্দকে সর্বোচ্চ আসন দিতে হইবে।"-স্যার যদুনাথ সরকার

শুধু সনাতনী সমাজ নয় বরং অন্যান্য মতে অনুসারীরা তাকে শ্রদ্ধা করতো। তেমনি একজন স্যার সৈয়দ আহমদ খান। তিনি বলেন, 

"আমি সর্বদা তাকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতাম কারণ তিনি এমন একজন দুর্দান্ত এবং বিদ্বান মানুষ ছিলেন যে সমস্ত ধর্মের প্রিয় মানুষ তাকে সম্মান করতেন। আমার কাছে তিনি এমন একজন মহান ব্যক্তি ছিলেন যার সমতুল্য সমগ্র ভারতে নেই।"
-স্যার সৈয়দ আহমদ খান। 

বর্তমানে সময়ে মহর্ষির আদর্শ এবং আমাদের জীবনে তা যেভাবে অনুকরণীয়: 
বর্তমান সমাজ দিকভ্রান্ত হচ্ছে। পবিত্র বেদ এবং বৈদিক জ্ঞান থেকে নিজেদের দূরে ঠেলে দিয়ে নিজেদেরকে চালিত করছে অন্ধকারের দিকে। কিন্তু আমরা বৃহদারণ্যক উপনিষদের সে বাণীকে ভুলে যেতে পারি না আমাকে মৃত্যু থেকে অমৃতের দিকে নিয়ে যাও। মহর্ষি নিজেকে এমন মহান ব্যক্তি হিসেবে দাবী করেননি। তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন বেদ এর প্রচারে। তিনি বলেন, আমার মৃত্যুর পর আমাকে নিয়ে কোনো মন্দির নির্মাণ করবে না। আমরা আজকের যুবসমাজসহ সকল সনাতনী মানব জাতির সংবিধান স্বরূপ পবিত্র বেদকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া প্রত্যয় করি। সকলের মাঝে সত্যকে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় করি। শান্তি, সৌহার্দ্য ও ভাতৃত্বের বন্ধনে মানবজাতিকে শ্রেষ্ঠ করি। আসুন বেদ এর দিকে ফিরে আসি। অমৃতের দিকে ফিরে আসি। সত্যের দিকে ফিরে আসি। 

ভারতের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নতির ক্ষেত্রে "মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী" যে অবদান রেখেছেন তা অতুলনীয়। সমাজে যখন ধর্মের নামে জাতপাত, অস্পৃশ্যতা,নারী শিক্ষা, বেদের ভুল ব্যাখ্যার কারণে সনাতনীরা পশ্চাৎপদ হতে হতো ঠিক তখনই "মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী" বেদের আলোকে আমাদের ধর্মের সঠিক রাস্তা দেখিয়েছেন। মহর্ষি সবার প্রতি আহবান করে বলেছেন "বেদো কি ওর লটৌ" অর্থাৎ বেদের পথে ফিরে এসো। 

—মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীর ২০০ তম জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করুক।

প্রচারে:- VEDA

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

🔸সনাতন ধর্ম ও নারী 💐

সনাতন ধর্মে কি গোমূত্র পানের উল্লেখ রয়েছে ⁉️

▪️একাদশী" কি শাস্ত্র সম্মত ❓