| যজ্ঞ ও বিজ্ঞান



নমস্কার সকল অমৃতের সন্তানগণ। 

বৈদিক জ্ঞান প্রচারে নিয়োজিত VEDA পেজ এ আপনাদের স্বাগতম। 

সনাতন ধর্ম সর্বদাই বিজ্ঞানের সাথে সামনৃজ । কারণ পবিত্র বেদই বিজ্ঞানের বহু তত্ত্বের অনুপ্রেরণা দানকারী। বিগব্যাং, সূর্য গ্রহণ, সালোকসংশ্লেষণ ইত্যাদি বহু তত্ত্বের উপস্থিতি পবিত্র বেদ ও বৈদিক শাস্ত্র সমূহে বিদ্যমান। তেমনি যজ্ঞ করার বিধান সনাতন ধর্মে প্রমূখ বলে বিবেচিত। 

পঞ্চ মহাযজ্ঞের একটি যজ্ঞ অগ্নিহোত্র যজ্ঞ। যা প্রতিটি মনুষ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কার্য বলে অভিহিত রয়েছে। 

পবিত্র বেদ এ বলা হয়েছে, 

সমিধাগ্নিং দুবস্যত ঘৃতৈর্বোধয়াতিথিম্ ।
অস্মিন্ হব্যা জুহোতন ॥

পদার্থঃ- (ঘৃতৈঃ) ঘৃতাদি শুদ্ধ দ্রব্রের সহিত (সমিধা) কাষ্ঠ দ্বারা (অতিথিম্) অগ্নিকে (বোধয়ত) প্রজ্জ্বলিত কর। এই অগ্নিতে পুষ্টি, মধুর, সুগন্ধি, রোগনাশক পদার্থের বিশেষভাবে আহুতি প্রদান কর। এই দেবযজ্ঞ বা অগ্নিহোত্র পালন কর।

এবং শ্রীমদ্ভগবদগীতায় ১৮তম অধ্যায়ের ৫ম শ্লোকে বলা হয়েছে,  

🌿যজ্ঞ, দান এবং তপস্যারূপ কর্ম কখনো ত্যাগ করা উচিত নয়।🌿

=[গীতা-১৮/৫]=

কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত বর্তমান সমাজে কিছু দিকভ্রান্ত ব্যক্তি যজ্ঞকে অবৈজ্ঞানিক এবং পরিবেশ দূষণসহ নানান অভিযোগে অভিযুক্ত করে। 

তাই আজ আমরা জানার প্রচেষ্টা করবো অগ্নিহোত্র যজ্ঞের উপকারিতা এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তি। 

যজ্ঞ শব্দ ‘যজ্‌’ ধাতু দিয়ে তৈরি। ‘যজ্’ ধাতুর তিনটি অর্থ-‘যজ্ দেবপূজা সঙ্গতিকরণ দানেষু' অর্থাৎ ১। দেবপূজা ২। সঙ্গতিকরণ ও ৩। দান। সুতরাং যজ্ঞের বিভিন্ন প্রকার এইরূপ-দেবযজ্ঞ (অগ্নিহোত্র বা হবন), ব্রহ্মযজ্ঞ, পিতৃযজ্ঞ, বলিবৈশ্যদেবযজ্ঞ, অতিথিযজ্ঞ, অশ্বমেধযজ্ঞ ইত্যাদিতে যজ্ঞের প্রায় সমস্ত অর্থ নিহিত আছে ··।

“যজ্ঞ” শব্দটি ব্যাপক। ঋগ্বেদে এই শব্দ ৫৮০ বার, যজুর্বেদে ২৪৩ বার, সামবেদে ৬৩ বার এবং অর্থববেদে ২৯৮ বার অর্থাৎ চার বেদে যজ্ঞ শব্দ মোট ১১৮৪ বার উল্লেখ রয়েছে। 

 পবিত্র বেদ এ যজ্ঞের মহিমা: 
অথর্ববেদে ২০তম কান্ডের ১৭মং সুক্তের ৫নং মন্ত্রে বলা হয়েছে, যজ্ঞ করায় ঐশ্বর্য ও সুখের বৃদ্ধি হয় ।
‘“যজ্ঞ ইন্দ্ৰমবর্ধয়দ্”
অর্থাৎ, যজ্ঞ করায় ঐশ্বর্য ও সুখের বৃদ্ধি হয় ।
 
তেমনি বলা হয়েছে যজুর্বেদ এর ৯ম অধ্যায়ের ১২নং মন্ত্রে, যজ্ঞ দ্বারা প্রাণের শুদ্ধি হয়। এইজন্য  যজ্ঞকে অমৃত বলা হয়েছে।

অথর্ববেদে আরো বলা হয়েছে, 
যজ্ঞের দ্বারা নির্মল বায়ু সেবন করলে প্রাণী বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত নীরোগও সুখী জীবনযাপন করতে পারে।
(অথর্ববেদে (২/১১/৬)

বৈজ্ঞানিক গবেষণা: 

ফ্রান্সের একজন বিজ্ঞানী ত্রেলে ভারতে এসে যজ্ঞের উপর একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। ফলস্বরূপ তিনি আবিষ্কার করেন যজ্ঞের যে আম গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয় এবং যে সকল হব্য সামগ্রী ব্যবহার করা হয় তা থেকে Formic Aldehyde নামক গ্যাসের সৃষ্টি হয়। যা দ্বারা বাতাসে থাকা ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে এবং যা বায়ু বিশুদ্ধ করে। 

যজ্ঞের উপর আরো কিছু গবেষণা কর্ম পরিচালিত হয়েছে। ভারতে অবস্থিত National Botanical Research Institute কর্তৃক পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা যায় যে, যে কক্ষে তারা যজ্ঞ সম্পন্ন করেছেন সে কক্ষে পূর্বের তুলনায় ৯৪.৫ শতাংশ জীবাণু ধ্বংস হয়ে কক্ষের বাতাস বিশুদ্ধ হয়েছে। এ বিষয়ে গবেষক দলের প্রধান শেখর নওতিয়াল বলেন, 

"Burning wood and medical herbs, better known as 'havan samagri', ( mixture of wood and odoriferous and medical herbs) can effectively reduce pathogens in the air", NRBI's senior scientist Chandra Shekhar Nautial. 

আরো একটি গবেষণা কর্ম অনুষ্ঠিত হয়েছিল শিকাগো,  (ইলিনায়) ১৯৮৫ সনের মে মাসে , ‘সেভেন কন্টিনেন্ট ডাউসর্স গ্রুপ স্প্রিং কনভেনশনে’ (ইউ.এস.সৎসঙ্গ ১৩, ৫ জুলাই, ১৯৮৫) শ্রী হোজিজ বক্তৃতা দেওয়ার সময় বললেন, “আমি প্রথমবার যজ্ঞ করে আশ্চর্যজনক ফল লাভ করলাম মন এত শান্ত হলো যে, তিন মিনিটেই মন একাগ্র হয়ে ধ্যানাবস্থা এসে গেল অথচ অন্য সময় এক ঘন্টার আগে এরকম অবস্থায় পৌঁছাতে পারিনি”। এটা স্বাভাবিক যে, যজ্ঞ দ্বারা শরীর ও মনের চাপ (টেনশন) দূর হয়।

এরুপ বহু তথ্য প্রমাণ রয়েছে, যা দ্বারা আমি সত্যি উপলব্ধি করতে পারি যে যজ্ঞ আমাদের জীবনে কিভাবে উপকারী এবং তা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত। সমালোচনাকারীগণ বিভিন্ন ভাবে সনাতন বৈদিক জ্ঞানকে অসম্মান করতে পারে কিন্তু সত্য সত্যই। সত্যকে এড়িয়ে চলা যায়, তবে অস্বীকার করা সম্ভব নয়। 

তাই হে অমৃতের সন্তানগণ আমরা আমাদের শেকড়ে ফিরে আসি। মানবজীবনের পঞ্চ মহাযজ্ঞের বিধান পালন করি। বেদ এর বিধান নিজেদের জীবনে প্রয়োগ করে জীবনকে করি আরো সুন্দর এবং আনন্দময়। 

ও৩ম্ কৃণন্তে বিশ্বমার্যম।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

🔸সনাতন ধর্ম ও নারী 💐

সনাতন ধর্মে কি গোমূত্র পানের উল্লেখ রয়েছে ⁉️

▪️একাদশী" কি শাস্ত্র সম্মত ❓