যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও গায়ত্রী উপাসনা

নমস্কার সকল অমৃতের সন্তানগণ 🕉️🙏

➡️✍️ পৃথিবীতে বহু মানুষ জন্মলাভ করে এবং প্রতিনিয়ত মৃত্যু বরণ করে। ইহা সমগ্র জগৎ অটুট নিয়ম। কিন্তু কিছু শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি এই জগৎ এ এমন কিছু কর্মসম্পাদন করে যা তাকে নিয়ে যায় শ্রেষ্ঠত্বের আসনে। সকলে তাহাকে অনুসরণ করে তেমনি শ্রেষ্ঠ হওয়ার অনুপ্রেরণা লাভ করে। সে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম আর্য শ্রেষ্ঠ যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তিনি ছিলেন ইতিহাস শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক চরিত্র, কুটনৈতিক এবং শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা। মহাভারত অশ্বমেধিক পর্ব ৬৩/১৮-২২ বলা হয়েছে 

"ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কখনো মিথ্যা বলতেন না, এমনকি হাস্য পরিহাসও না। সত্য ও ধর্মই তার মধ্যে নিত্য প্রতিষ্ঠিত ছিল। তিনি (ধর্ম) যুদ্ধে কখনো পৃষ্ঠ প্রদর্শন করতেন না।" 

➡️✍️সে আর্য শ্রেষ্ঠ এর জন্ম জয়ন্তী উপলক্ষে তাহার নিকট থেকে আমাদের অনুপ্রেরণা লাভ করার জন্য সামান্য কিছু তথ্যাদি উপস্থাপন। বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন বেদজ্ঞ জ্ঞানী। তিনি সকল সময় ধর্মাচরণ ও বেদবিহিত কর্মকে অনুসরণ করতেন। আমাদের অনেক এর জানার আগ্রহ রয়েছে যে যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে কোন মহামন্ত্র জপ করতেন। এরুপ সংশয় নিবারণ এর জন্য উত্তর হলো তিনি প্রাত্যাহিক গায়ত্রী মন্ত্রের জপ এবং ধ্যান করতেন।
সে পবিত্র গায়ত্রী মন্ত্রটি হলো:

 সেই পবিত্র মন্ত্রটি হল বেদের সর্বশ্রেষ্ঠ মন্ত্র গায়ত্রী মন্ত্র। 

"ও৩ম্ ভূর্ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি‌।
ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ" ।। 

◽- [ ঋগ্বেদ ৩/৬২/১০,যজুর্বেদ ৩/৩৫,৩০/২,সামবেদ উত্তরার্চ্চিক ৬/৩/১০] 

অর্থাৎ, পরমাত্মা প্রাণস্বরুপ, দুঃখনাশক ও সুখস্বরুপ। সেই জগতসৃষ্টিকারী ও ঐশ্বর্যপ্রদাতা পরমাত্মার বরণযোগ্য পাপ-বিনাশক তেজকে আমরা ধারণ করি। তিনি আমাদের বুদ্ধিকে শুভ গুণ, কর্ম ও স্বভাবের দিকে চালনা করুক  l 

শ্রীমদ্ভগবদগীতার মাঝে যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, গীতযোগ্য শ্রুতির মধ্যে তিনি বৃহৎসাম এবং জগতের সকল ছন্দ বা মন্ত্রসমূহের মধ্যে গায়ত্রী ছন্দে গায়ত্রী মন্ত্র। 

বৃহৎসাম তথা সাম্নাং গায়ত্রী ছন্দসামহম্।
মাসানাং মার্গশীর্ষোঽহমৃতূনাং কুসুমাকরঃ৷৷
- শ্রীমদ্ভগবদগীতা ১০/৩৫

অর্থাৎ, আমি গীতযোগ্য শ্রুতির মধ্যে বৃহৎসাম, ছন্দসমূহের মধ্যে গায়ত্রী ছন্দ, মাসসমূহের মধ্যে অগ্রহায়ণ এবং ষড় ঋতুর মধ্যে ঋতুরাজ বসন্ত।

কিন্তু গায়ত্রী ছন্দ কেন শ্রেষ্ঠ ⁉️ 

কারণ ঋগ্বেদ এর প্রথম সূক্ত গায়ত্রী ছন্দে শুরু হয়েছে। শ্রীমদ্ভগবদগীতার দশম অধ্যায় তো বটেই, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনের বিভিন্ন স্থানেই গায়ত্রী মন্ত্রের প্রসঙ্গ পাওয়া যায়। তিনি এবং তার ভ্রাতা উভয় দ্বিজত্ব প্রাপ্ত হয়ে গুরুকুলে গায়ত্রী ধারণ করেন এবং বেদজ্ঞান অর্জনের যাত্রা শুরু করেন

ততশ্চ লব্ধসংস্কারৌ দ্বিজত্বং প্রাপ্য সুব্রতৌ।
গর্গাদ্ যদুকুলাচার্যাদ্ গায়ত্রং ব্রতমাস্থিতৌ॥ 
প্রভবৌ সর্ববিদ্যানাং সর্বজ্ঞৌ জগদীশ্বরৌ।
নান্যসিদ্ধামলজ্ঞানং গূহমাওনৌ নরেহিতৈঃ।।
অথো গুরুকুলে বাসমিচ্ছন্তাবুপজগ্মতুঃ। 
কাশ্যং সান্দীপনিং নাম হ্যবন্তীপুরবাসিনম্॥ 
- শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ:১০.৪৫.২৯-৩১

অর্থাৎ, এইভাবে যদুকুলাচার্য গর্গের নিকট উপনয়ন সংস্কার প্রাপ্ত হয়ে বলরাম এবং শ্রীকৃষ্ণ দ্বিজত্বে উপনীত হলেন। তাঁরা পূর্ব হতেই ব্রতনিয়মাদির প্রতি নিষ্ঠাপরায়ণ ছিলেন, এখন গায়ত্রী ধারণ করে অধ্যয়ন-প্রারম্ভের নিয়মানুসারে ব্রহ্মচর্য ব্রত গ্রহণ করলেন৷ 

যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রতিদিন নিয়মিত ব্রাহ্মমুহুর্তে শয্যা ত্যাগ করে প্রাত্যহিক ধর্মাচরণসমূহ পালন করতেন। 

ব্রাহ্মে মুহূর্ত উত্থায় বায়ুপস্পৃশ্য মাধবঃ। 
দধ্যৌ প্রসন্নকরণ আত্মানং তমসঃ পরম্॥ 
একং স্বয়ংজ্যোতিরনন্যমব্যয়ং
স্বসংস্থয়া নিত্যনিরস্তকল্মষম্।
ব্রহ্মাখ্যমস্যোদ্ভবনাশহেতুভিঃ
স্বশক্তিভিলক্ষিতভাবনিবৃতিম্।।
অথাপ্লুতোঽম্ভস্যমলে যথাবিধি
ক্রিয়াকলাপং পরিধায় বাসসী। 
চকার সন্ধ্যোপগমাদি সত্তমো
হতানলো ব্রহ্ম জজাপ বাগ্ যতঃ৷৷
- শ্রীমদ্ভাগবত:১০.৭০.৪-৬

অর্থাৎ, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রতিদিন ব্রাহ্মমুহূর্তেই শয্যাত্যাগ করতেন এবং হস্তবদনাদি প্রক্ষালিত করে নিজ মায়াতীত আত্মস্বরূপের ধ্যানে মগ্ন হতেন। তাঁর দেহের রোমকূপ সকলে তখন যেন আনন্দের বিচ্ছুরণ হত।

পরবর্তী সময়ে গুরুকুল ত্যাগ করেও তিনি সে প্রাত্যহিক ধর্মাচরণ সমূহ পালন করতেন যা আমাদের নিকট অনুকরণীয়। মহাভারতের শান্তিপর্বে যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এর গায়ত্রী মন্ত্র উপাসনার উল্লেখ পাওয়া যায়,  

বৈশম্পায়ন উবাচ।
ততঃ শয়নমাবিশ্য প্রসুপ্তো মধুসূদনঃ। 
যামমাত্রাৰ্দ্ধশেষায়াং যামিন্যাং প্ৰত্যবুধ্যত॥
স ধ্যানপথমাবিশ্য সৰ্বজ্ঞানানি মাধবঃ ।
অবলোক্য ততঃ পশ্চাদ্দধ্যৌ ব্ৰহ্ম সনাতনম্।।
(মহাভারত: শান্তিপর্ব,৫২.১-২) 

"বৈশম্পায়ন বললেন–এরপর কৃষ্ণ শয্যায় প্রবেশ করে নিদ্রিত হলেন এবং রাত্রি যামাৰ্দ্ধমাত্র অবশিষ্ট থাকতেই তাঁর নিদ্রা ভঙ্গ হল। 
তদনন্তর যাতে সমস্ত জ্ঞান উৎপন্ন হয়, সেইভাবে ধ্যান অবলম্বন করে, তিনি নাকের অগ্রদেশ দেখতে দেখতে সনাতন ব্রহ্মের চিন্তায় মগ্ন হলেন।"

তত উণ্থায় দাশার্হঃ স্নাতঃ প্রাঞ্জলিরচ্যুতঃ।
জপ্ত্বা গুহ্যং মহাবাহুরগ্নীনাশ্রিত্য তস্থিবান্।।
(মহাভারত: শান্তিপর্ব,৫২.৭)

"অনন্তর মহাবাহু শ্রীকৃষ্ণ শয্যা হতে উঠে, স্নান করে, হস্তযুগল প্রাঞ্জলিবদ্ধ করে গুহ্য গায়ত্রী মহামন্ত্র জপ করে প্রাতঃসন্ধ্যা সমাপন করলেন। এরপরে হোমাগ্নির নিকটে গিয়ে, প্রাতঃকালীয় হোম নিষ্ঠার সাথে সমাধা করলেন।"

হে অমৃতের সন্তানগণ! শ্রীমদ্ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, 

"য়দ্ য়দ্ আচরতি শ্রেষ্ঠস্তত্তদেবেতরো জনঃ।
স য়ৎ প্রমাণং কুরুতে লোকস্তদনুবর্ততে।।"
- গীতা ৩/২১

অর্থাৎ, শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিরা যা যা আচরণ করেন, সাধারণেরা সেরূপই আচরণ করে। তিনি যা প্রামাণিক করেন, লোকেরা তারই অনুবর্তন করে।

তাহলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেখানে নিজে বেদজ্ঞ বিদ্বান ছিলেন, প্রতিনিয়ত ব্রাহ্মমুহুর্তে উঠে গায়ত্রী মন্ত্র উপাসনা করতেন সেখানে আজকে আমরা এত দ্বিধা বিভক্ত কেন? সে শ্রেষ্ঠ পুরুষকে কি অনুসরণ করে আমরা নিজেদের তার দেখানো পথে নিয়ে যেতে পারি না? পবিত্র আমাদের সে এক মন্ত্রের জয়গানের শিক্ষা দেয়। সে শ্রেষ্ঠ পরমাত্মা আমাদের এক মন্ত্রে আমাদের ঐক্যবদ্ধ করেছেন তাহলে আমরা সে এক মন্ত্রে মিলিত হই। 

সমানাে মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী সমানং মনঃ সহ চিত্তমেষাম্। 
সমানং মন্ত্রমভিমন্ত্রয়ে বঃ সমানেন বাে হবিষা জুহােমি॥ 
- ঋগ্বেদ ১০/১৯১/৩

অর্থাৎ, তােমাদের সকলের মিলনের মন্ত্র এক হােক,
মিলনভূমি এক হােক এবং মনসহ চিত্ত এক হােক। তােমরা একতার মন্ত্রে উদীপ্ত হয়ে অগ্রগামী হও। তােমাদেরকে দেয়া খাদ্য-পানীয় ঐক্যবদ্ধভাবে সুষম বণ্টন করে গ্রহণ কর।

জয় শ্রীকৃষ্ণ - শুভ জন্মাষ্টমী 

প্রচারে: VEDA

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

🔸সনাতন ধর্ম ও নারী 💐

সনাতন ধর্মে কি গোমূত্র পানের উল্লেখ রয়েছে ⁉️

▪️একাদশী" কি শাস্ত্র সম্মত ❓