বেদপাঠ ও যজ্ঞ কি কখনো পরিত্যাগ করা উচিত ⁉️


বেদপাঠ ও যজ্ঞ কি কখনো পরিত্যাগ করা উচিত ⁉️

একজন মনুষ্যের কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারিত হয় ধর্মশাস্ত্রের অনুশাসন এর উপর ভিত্তি করে। সনাতন ধর্মশাস্ত্র আমাদের নৈতিকতা, আদর্শ ধারণ, মনুষ্যত্বের বিকাশের জন্য আলোকবর্তিকা প্রদান করে। যা যৌক্তিক, উপর্যুক্ত ও শ্রেয়তর তা একমাত্র সনাতন শাস্ত্র অনুমোদন করে। 

সেজন্য আমাদের কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে এবং করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে জানতে হলে নিশ্চিত রুপে সে ধর্মশাস্ত্র অধ্যয়ন করা আবশ্যিক। 

প্রাচীন বৈদিক সমাজে বেদপাঠ ও যজ্ঞ ছিল অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যিক করণীয় কার্য। বেদ জ্ঞানের চর্চা, যজ্ঞ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মনুষ্য তাহার জীবনকে ক্রমান্বয়ে উত্তম দিশায় পরিচালিত করে। জ্ঞানের বৃদ্ধি ঘটিয়ে, নিজেকে সমৃদ্ধ করে। 

তবে ধীরে ধীরে সে প্রাচীন পরম্পরা লুপ্ত হতে হতে এখন দৃষ্টি আকর্ষণ করা দুষ্কর হয়ে গিয়েছে। যে বেদপাঠ ও তাহার বিশ্লেষণ দ্বারা আর্যাবর্ত লাভ করেছিলো শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা। সে আর্যাবর্তে বেদপাঠ ও যজ্ঞ নিয়ে উত্থাপিত হচ্ছে যৌক্তিকতার সংশয়। কতিপয় অজ্ঞানী বেদপাঠ অপ্রয়োজনীয় ও যজ্ঞকে অমূলক প্রমাণের চেষ্টায় রত। সে সংশয় নিবারণে আমাদের শাস্ত্রের ব্যাখ্যা প্রয়োজন। 

যজ্ঞের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করা উচিত। যজ্ঞ ও বেদপাঠ আমাদের ধর্মাচরণের অঙ্গ। আমরা যতপ্রকার কর্ম করি, তাহার মধ্যে যজ্ঞ সর্বশ্রেষ্ঠ। 

শতপথ ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে, 

"যজ্ঞো বৈ শ্রেষ্ঠতমং কর্ম" - শতপথ ব্রাহ্মণ ১/৭/৩/৫ 

অর্থাৎ, যজ্ঞই শ্রেষ্ঠতম কর্ম।

একজন যোগীর জন্য বেদপাঠ ও যজ্ঞ অনুষ্ঠান করা কর্তব্য। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, 

"স্বাধ্যায়জ্ঞান যজ্ঞাশ্চ যতয়ঃ সংশিতব্রতাঃ"
 - গীতা ৪/২৮ 

অর্থাৎ, দৃঢ়ব্রতযুক্ত যত্নশীল যোগিগণ বেদপাঠ ও জ্ঞানরুপ যজ্ঞপরায়ণ হন।

যজ্ঞের মাধ্যমে আমরা পরমাত্মার কর্ম সম্পাদন করি। সেজন্য শ্রীমদ্ভগবদগীতায় উল্লেখ রয়েছে, 

"সর্বগতং ব্রহ্ম নিত্যং যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিতম্" - গীতা ৩/১৫ 

অর্থাৎ, সর্বব্যাপক ব্রহ্ম(বেদ) সর্বদা যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিত।

বেদপাঠ ও অগ্নিহোত্র আমাদের নিকট পরমাত্মার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং নিজের ভক্তি নিবেদন করার অন্যতম মাধ্যম। কারণ পরমাত্মাকে জানার প্রয়াস করা এবং তাহার নির্দেশিত কর্ম করাই কর্তব্য। সেজন্য তৈত্তিরীয় উপনিষদে বেদপাঠ ও যজ্ঞকে পরম তপস্যা বলা হয়েছে। 

"অগ্নিহোত্রং চ স্বাধ্যায়প্রবচনে চ।
 তদ্ধি তপস্তদ্ধি তপঃ।।" - তৈত্তিরীয় উপনিষদ ১/৯/১ 

অর্থাৎ,  স্বাধ্যায় (বেদপাঠ) ও অগ্নিহোত্র অনুষ্ঠান করবে - এগুলো যথার্থ তপস্যা। 

একজন জ্ঞানী চিত্ত শুদ্ধ করণে যজ্ঞের অনুষ্ঠান প্রয়োজন। যজ্ঞ অনুষ্ঠান, দান ও তপস্যা করার মাধ্যমে জ্ঞানীর চিত্ত আরো পবিত্র হয়ে উঠে।

"যজ্ঞো দানং তপশ্চৈব পাবনানি মনীষিণাম্" 
- গীতা ১৮/৫ 

অর্থাৎ, যজ্ঞ, দান ও তপস্যাই পণ্ডিতগণের চিত্ত-শুদ্ধিকর কর্ম। 

তবে আমরা জগতে বহু বস্তু, সম্পদ দান করতে পারি। কিন্তু জ্ঞান অপেক্ষা পবিত্র ও শ্রেষ্ঠ কিছুই নেই। সেজন্য মহর্ষি মনু সকল দানের মধ্যে ব্রহ্মজ্ঞান বা বেদজ্ঞান দান সর্বশ্রেষ্ঠ। 

"সর্বেষামেব দানানাং ব্রহ্মদানং বিশিষ্যতে"
 - মনুস্মৃতি ৪/৩৩৩

অর্থাৎ, সকল প্রকার দানের মধ্যে ব্রহ্মজ্ঞান (বেদজ্ঞান) দান সর্বশ্রেষ্ঠ দান।

আমরা বেদপাঠ ও যজ্ঞের শাস্ত্রীয় দৃঢ় ভিত্তির মাধ্যমে ইহার আবশ্যিকতা উপলব্ধি করতে পারি। সেজন্য, কোনো অবস্থাতে বেদপাঠ ও যজ্ঞ ত্যাগ করা উচিত নয়। শ্রীমদ্ভগবদগীতা যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্পষ্টত উল্লেখ করেছেন,

"নিশ্চয়ং শৃণু মে তত্র ত্যাগে ভরতসত্তম। ত্যাগো হি পুরুষব্যাঘ্র ত্রিবিধঃ সংপ্রকীর্তিতঃ ॥ 
যজ্ঞদানতপঃকর্ম ন ত্যাজ্যং কার্যমেব তৎ। যজ্ঞো দানং তপশ্চৈব পাবনানি মনীষিণাম্ ॥"
- গীতা ১৮/৪-৫

অর্থাৎ, হে ভরতসত্তম (অর্জুন)। সেই ত্যাগের বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত শ্রবণ করো। হে পুরুষব্যাঘ্র! ত্যাগ অবশ্যই তিন প্রকার কথিত হয়েছে। যজ্ঞ, দান ও তপস্যাদি কর্ম পরিত্যাজ্য নয়, এগুলো পালন করাই কর্তব্য। কেননা, যজ্ঞ, দান ও তপস্যাই পণ্ডিতগণের চিত্ত-শুদ্ধিকর কর্ম।

অতএব, হে অমৃতের সন্তানগণ। বেদপাঠ ও যজ্ঞ আমরা প্রত্যহ অনুষ্ঠান করি৷ কোনো অবস্থাতে আনরা বেদপাঠ ও যজ্ঞ পরিত্যাগ না করি।

প্রচারে:-  Veda 

🔎Run with #veda 

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ