"সংগঠন সুক্ত ঠোঁটে রয়েছে ঋষি, তবে হৃদয়ে নয়"
"সংগঠন সুক্ত ঠোঁটে রয়েছে ঋষি,
তবে হৃদয়ে নয়"
প্রতিটি প্রাণী মাত্রই অমৃতের সন্তান! প্রত্যেক মনুষ্য একে অপরের ভ্রাতা স্বরুপ। সকলের এই ধরিত্রীর মাঝে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে, রয়েছে নিজের অবস্থানকে সুউচ্চ স্থানে পৌঁছে দেওয়ার। কিন্তু সে প্রগতিশীল চিন্তার মাঝে বাঁধা স্বরুপ হয়ে দাঁড়ায় বিভেদ, বৈষম্য ও হীনমন্যতা।
সম্প্রতি ভারতের উত্তরপ্রদেশে একটি বিবাহ অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। নাহ! কারণটা অর্থ কিংবা চাঁদাবাজি নয় বরং তথাকথিত দলিত হিসেবে পরিচিত হওয়ার অপরাধে। শুধু এই ঘটনা নয়, বরং ভারতে এমন ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এ যেন মধ্য যুগে সংগঠিত হওয়া বিবিধ জাতিগত বৈষম্যের পুনরাবৃত্তি। সময়ের বিবর্তনে এই জাতিভেদ প্রথা নিঃশেষ হচ্ছে ধীরে ধীরে। কিন্তু সম্পূর্ণ রুপে বিলুপ্তি যেন শতাব্দীর অপেক্ষা।
কিন্তু কেন আমরা সনাতনীরা এই বিভেদকে সমূলে বিনষ্ট করে, সাম্য-ভাতৃত্ব-প্রেম এর নতুন অঙ্কুরের বীজ বপন করছি নাহ ⁉️
দুঃখজনক হলেও সত্যি! ইহার কারণ আমরা সনাতনী ঐক্যের জয়গান গাইতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করি কিন্তু তাকে হৃদয়ে ধারণ করে ভাতৃত্ব বোধ এর যাত্রা শুরু করতে দ্বিধান্বিত। আমরা বেদকে ধর্মের মূল হিসেবে গ্রহণ করি, তবে কেন সে বেদের জ্ঞানকে হৃদয়ে ধারণ করে বিভেদ এর দেয়াল ভেঙে দিচ্ছি নাহ ⁉️
ঋগ্বেদ ৯ম মন্ডল, ১১২তম সুক্তের ১ম মন্ত্রে পরমাত্মা তো স্বয়ং আমাদের উদ্দেশ্যে বলছেন,
"নানানাং বা উ ন ধিয়ো বি ব্রতানি জনানাম্।"
-ঋগ্বেদ ৯/১১২/১
অর্থাৎ, আমাদের নানা জনের চিন্তা, মেধা ও বুদ্ধি নানারকম। আর সেই অনুসারেই আমাদের ব্রত তথা কর্ম নির্ধারিত হয়।
যে শ্রীমদ্ভগবদগীতাকে প্রতিটি সনাতনী গৃহে, মন্দিরে সর্বদা বিদ্যমান দেখতে পাওয়া যায়। যে অমৃত জ্ঞান অর্জন করে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে জ্ঞান বিপ্লবের ঝড় বয়ে যাচ্ছে সে শ্রীমদ্ভগবদগীতার জ্ঞান ধারন করে অস্পৃশ্যতাকে কেন ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছি নাহ ⁉️
শ্রীমদ্ভগবদগীতা যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এ বিষয় স্পষ্ট করে বলেছেন,
"চাতুর্বর্ণং ময়া সৃষ্টং গুণকর্মবিভাগশঃ"
- শ্রীমদভগবদগীতা ৪/১৩
অর্থাৎ গুণ ও কর্মের অনুসারেই চার বর্ণের শ্রেণীবিভাগ হয়েছে।
"ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং শূদ্রানাং চ পরন্তপ।
কর্মাণি প্রবিভক্তানিং স্বভাবপ্রভবৈর্গুণৈঃ"।।
- শ্রীমদভগবদগীতা ১৮/৪১
অর্থাৎ, হে পরন্তপ! স্বভাবজাত গুণ অনুসারে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্রদের কর্মসমূহ বিভক্ত হয়েছে।
জাতিপ্রথা সনাতন এর অংশ নয়। ইহা কিছু অজ্ঞ, স্বার্থবাদী মনোভাবের ব্যক্তিদের তৈরি বিভেদ এর দেয়াল। যা আমাদের ঐক্যের, প্রেমে, সংঘবদ্ধতার পথে বাঁধা। যা আমাদের দীর্ঘ সময় ধরে কুঁড়ে কুঁড়ে শেষ করে দিচ্ছে। আমরা সনাতনী ইহা আমাদের পরিচয়। কে সাকারবাদী, কে নিরাকারবাদী, কে কোন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে, কে দলিত এটা আমাদের প্রকৃত পরিচয় নয়। আমাদের প্রকৃত পরিচয় আমরা সেই সনাতন এর ধারক, আমরা সনাতনী। সংগঠন সুক্তকে শুধু মুখে স্লোগান হিসেবে নয়, বাস্তবে প্রয়োগ করে বিভেদ দেয়াল ভেঙে দিয়ে প্রমাণ করতে হবে আমরা সকলে এক ও ঐক্যবদ্ধ। বেদ আমাদের শেকড়, গায়ত্রী মন্ত্র আমাদের গান, ও৩ম্ আমাদের প্রাণ।
🔎Run with #veda
মন্তব্যসমূহ