👉 মানবজীবনের চার আশ্রমের প্রথম আশ্রম হল ব্রহ্মচর্যাশ্রম। উপনয়নের পর গুরুগৃহে শিক্ষালাভের সময়কালকে বলার হয় ব্রহ্মচর্য আশ্রম ।
👉 গার্হস্থ্য আশ্রমের পূর্ব পর্যন্ত এই আশ্রমের স্থিতিকাল ৷ ব্রহ্মচর্য পালনকারীদের বলা হয় ব্রহ্মচারী। আর নারীদের বলা হয় ব্রহ্মচারিণী । ব্রহ্মচর্য শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় - ব্রহ্মন্ - চর-য। আলোচনার সুবিধার্থে আমরা ব্রহ্মচারী শব্দটিই ব্যবহার করবো কেননা বিধি ও বিধান উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য🚩
💥 ব্রহ্মচারী অর্থ কি?
'ব্রহ্মন্' শব্দের অর্থ - পরব্রহ্ম, বেদমন্ত্র, বেদ, ওঙ্কার, ব্রাহ্মণ, ব্রহ্মশক্তি, জ্ঞান, তপ, পবিত্রতা, মুক্তি, সত্য, অন্ন, ধন, জল, সূর্য, মহত্ত্ব, বৃহত্তম ইত্যাদি ।
' বৃহ - মন্' ধাতু থেকে ব্রহ্ম শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে। এই ধাতুর অর্থ - বৃদ্ধি করা, উন্নত করা, বিকশিত করা, প্রগতিশীল করা, ব্যাপ্ত হওয়া। এই জন্য 'ব্রহ্ম' শব্দের অর্থ - বৃদ্ধি, প্রসারণ, বিকশিত ইত্যাদি হওয়া সম্ভব ।
'চারী' (চারিন্) শব্দের অর্থ - চলনকারী, গতিশীল, উদ্যমী, পুরুষার্থী ইত্যাদি ।
🚩অতএব,
" 'ব্রহ্মচারী' শব্দের অর্থ আমরা পাচ্ছি -
(১) জ্ঞানের বৃদ্ধির জন্য প্রযত্নকারী
(২) বেদের প্রচারের জন্য কার্যকারী
(৩) পবিত্র হওয়ার জন্য কর্মকারী সত্যনিষ্ঠ ও ধর্মাচরণকারী
(৪) বুদ্ধির বিকাশে সচেষ্ট
(৫) ধন ও অন্নের বৃদ্ধিকারী
(৬) তপস্বী
(৭) ঈশ্বরভক্ত
(৮) ব্ৰহ্মতেজকে নিজের অভ্যন্তরে ধারণকারী
💥ব্রহ্মচর্য সম্পর্কে যোগদর্শনে (২।৩৮) মহর্ষি পতঞ্জলি বলেছেন:-
🌸 'ব্রহ্মচর্য প্রতিষ্ঠায়াং বীর্যলাভঃ' 🌸
👉👉 অর্থাৎ ব্রহ্মচর্য অবলম্বনে শক্তি ও ব্রহ্মতেজ লাভ হয়।🚩
💥• ব্রহ্মচারীর কর্তব্যাকর্তব্য 👇
👉 বেদ [ব্রহ্মচারী সূক্ত - অথর্ববেদ ১১।৫]
ও মনুস্মৃতি [২। ১৬২-১৮০]
শাস্ত্রে ব্রহ্মচারীর কি কি করা উচিৎ ও কি কি উচিৎ নয় তা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণ দেওয়া হয়েছে। উক্ত বিধিনিষেধ সমূহ নিম্নরূপ 👇
💥ব্রহ্মচারীর অবশ্যই পালনীয় 👇
১। প্রতিদিন ব্রাহ্মমুহূর্তে উঠে ধর্মতত্ত্ব চিন্তন এবং বেদমন্ত্রের [ গায়ত্রী মন্ত্র, যজুর্বেদ ৩৪।৩৪-৩৮] মাধ্যমে পরমাত্মার বন্দনা করা।🚩
২। এরপরে শয্যা ত্যাগ করে হাত মুখ ধুয়ে স্নান করে নিতে হবে।🚩
৩। এরপরে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রণাম করে দেবযজ্ঞ তথা অগ্নিহোত্র সম্পন্ন করা।🚩
৪। তারপরে বিহিত, শুদ্ধ, পবিত্র ও পুষ্টিকর খাদ্য আহার করে নিজের অধ্যয়নের কাজে মনোনিবেশ করা। বেদ বিহিত ও গীতোক্ত [১৭।৮] সাত্ত্বিক আহার করতে হবে । আয়ু, উৎসাহ, বল, আরোগ্য, চিত্ত-প্রসন্নতা ও রুচি- এসকলের বর্ধনকারী এবং সরস, স্নেহযুক্ত, সারবান্ এবং প্রীতিকর- এইরূপ আহার সাত্ত্বিক আহার ।🚩
৫। অষ্টাঙ্গ যোগ অনুশীলন চর্চা ক্রমান্বয়ে শুরু করতে করতে হবে [ মনু০ ৪।২০৪]।🚩
💥 যোগদর্শন [২।২৯] অনুযায়ী যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণ, ধ্যান ও সমাধি।
💥 যোগসূত্রে [ ২।৩০ ] যম ৫ প্রকার। অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য, অপরিগ্রহ।
👉 অর্থাৎ ব্রহ্মচর্য আশ্রম যোগেরই একটি অংশ। অধ্যয়নের জন্য আমরা প্রাথমিকভাবে আমাদের পরিবার সমাজ ও মূখ্যভাবে বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা লাভ করি ।
🌸 তৈত্তিরীয় উপনিষদে [১।১১। ২] বলা হয়েছে - আমরা যেন মাতা-পিতা- আচার্যদের ধর্মসঙ্গত বিষয়ই গ্রহণ করি । দোষসমূহ নয় । যা আমরা সত্য বলে জানবো শাস্ত্রের আলোকে তাই যেন আমরা মেনে চলি ও প্রচার করি।🚩
🌸 ব্রহ্মচারীগণ কি পড়বে ও তাদের শিক্ষকগণ কি ভাবে পড়াবেন তা নিয়ে তৈত্তিরীয় উপনিষদে [১।৯।১] খুব সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে -👇
(১) শাস্ত্রবিহিত ও যথাযথ আচরণ করে সত্যবিদ্যাসমূহ অধ্যয়ন করতে হবে। বৈরবুদ্ধি ত্যাগ করে সবাইকে কল্যাণের দিকে নিয়ে যাওয়া ও তার উপদেশ প্রদান করা সকলের কর্তব্য বলে মহর্ষি মনু [২।১৫৯-১৬০] বলেছেন। ঋত অর্থাৎ সত্য জীবনে আচরণ ও ধারণ করতে হবে।🚩
(২) তপের অর্থাৎ ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণে রেখে, সকল দোষ বর্জন করতে হবে। মহর্ষি মনু [২।৮৮] বলেছেন সারথির অশ্বনিয়ন্ত্রণের মত বিদ্বান তার মন ও আত্মাকে চিত্ত কলুষিতকারী বিষয় থেকে দূরে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।🚩
(৩) অগ্ন্যাদি পদার্থ বিজ্ঞানের তত্ত্ব অর্থাৎ বিজ্ঞানের সমস্ত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তত্ত্ব নিবিড়ভাবে মনোযোগ দিয়ে অনুশীলন করতে হবে। অগ্নিহোত্রাদি দেবযজ্ঞ করতে হবে।🚩
(৪) অতিথিসেবা - মানবসেবা করতে হবে । পত্নীগমন, সন্তান উৎপাদন-পালন, তাদের বিবাহ ও নাগরিক - রাজ্য সংক্রান্ত বিষয় জানতে হবে। বীর্যরক্ষা সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।🚩
💥ব্রহ্মচারী নিষিদ্ধ বিষয় সমূহ নিম্নরূপ👇
১। ব্রহ্মচারী নেশা জাতীয় দ্রব্য, নিষিদ্ধ আহার, ব্যভিচার পরিত্যাগ করবে। এছাড়াও কোন খাবারে যেন অতিরিক্ত আসক্তি না জন্মে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। 🚩
২। নিজের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য রক্ষায় সবসময় সচেষ্ট থাকবে। হস্তমৈথুন, অশ্লীল আচরণ-ভাষণ ও কর্ম সর্বথা পরিত্যাজ্য।🚩
৩। জুয়া খেলা, পরনিন্দা-পরচর্চা, মিথ্যাকথা বলা, অলসতার জন্য পরনির্ভরশীলতা, অপরের অপকার এসব সব সময় পরিত্যাগ করবে। ভিতরে এক ও বাইরে আরেক আচরণের নাম ছলনা ও কপটতা। কারো উপকারকে অস্বীকার করাকে বলে কৃতঘ্নতা । আমাদের সর্বদা এসব দোষ ত্যাগ করতে সচেতন থাকতে হবে।🙏🚩💥 পরিশেষে আমাদের আপ্ত ঋষিগণ যে উপদেশ [তৈ০উ০ ১।১১।১-৪] ব্রহ্মচারীসহ সকলকে দিয়েছিলেন মানবজীবনের পাথেয় স্বরূপে তার সারঃ- 👇
(১) সত্য বলবে, ধর্মের আচরণ করবে। 🙏
(২) বেদ পাঠ ত্যাগ করবে না। তার অধ্যয়ন ও অধ্যাপনে অমনোযোগী হবে না ।🙏
(৩) আচার্যকে গুরুদক্ষিণা দিয়ে তার শিক্ষার সম্মান করবে। মাতা-পিতা - অতিথি আদি দেবের সম্মান করবে।🙏
(৪) সন্তানসূত্র ছিন্ন করবে না। বংশরক্ষার জন্য বিবাহ তথা গার্হস্য আশ্রমে প্রবেশের নির্দেশ।🙏🧡
(৫) শ্রদ্ধা, নম্রতা, সম্ভ্রম ও বন্ধুভাবে দান করবে। দানে যেন অহং বোধ বা অশ্রদ্ধা না আসে ।🚩
(৬) আত্মরক্ষা ত্যাগ করবে না।🚩
(৭) অনিন্দনীয় মানে যা কিনা খারাপ ও শাস্ত্র বিরোধী নয় সেকল কাজ ত্যাগ করবে না । ভালো কাজই মানবের অনুষ্ঠেয় । যদি কারো কাজে সংশয় আসে তবে বিদ্বান ও বেদাদি শাস্ত্ৰ যা বলে সেই অনুযায়ীই চলবে। 🚩
👉 কেননা
'
🌸 ধর্মং জিজ্ঞাসমানানাং প্রমাণং পরমং শ্রুতিঃ' 🌸
[মনু০ ২।১৩ ]
অর্থাৎ → ধর্মজিজ্ঞাসায় বেদই পরম প্রমাণ ♥