🚩🚩সনাতন বৈদিক ধর্মের ধর্মগ্রন্থ পরিচিতি। 🌿

🕉️🕉️🕉️
নমস্কার 🙏🙏🙏
ও৩ম্ কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম।
♦️আজকের আলোচনার বিষয়ঃ
🚩🚩সনাতন বৈদিক ধর্মের ধর্মগ্রন্থ পরিচিতি।
আজকের পোষ্টে আমরা আলোচনা করব সনাতন বৈদিক ধর্মের ধর্মগ্রন্থ নিয়ে। অর্থাৎ শাস্ত্রীয় কোন সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষেত্রে কোন কোন গ্রন্থকে আমাদের ধর্মে প্রামাণ্য হিসেবে ব্যাবহার করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আজকের পোষ্টে আমরা শুধুমাত্র ধর্মগ্রন্থগুলোর নাম ও সংক্ষিপ্ত বিবরন জানব পরের পোষ্টগুলোতে বিস্তারিতভাবে এদের নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব।
তাহলে শুরু করা যাক,
↘️প্রথমেই আসে সনাতন ধর্মের প্রধান ও ঈশ্বরপ্রদত্ত ধর্মগ্রন্থ বেদ। সকল শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে এর কথাই সর্বপ্রধান।
বেদে উল্লেখিত জ্ঞানের ভিত্তিতে একে চারভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
১)ঋগ্বেদ
২)যজুর্বেদ
৩)সামবেদ
৪)অথর্ববেদ
এদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিন্মরুপ-
১)ঋগ্বেদ এর মন্ত্র সংখ্যা ১০৫৫২ টি যেগুলোকে মণ্ডল নামক ১০ টি অধ্যায়ে এবং প্রতিটি মণ্ডল সূক্ত নামক অনেকগুলো উপ-অধ্যায় এ বিভক্ত।
২) যজুর্বেদ এর ৪০টি অধ্যায়।
মোট মন্ত্রসংখ্যা ১৯৭৫ টি।
৩) সামবেদের ৩ টি ভাগ--- পূর্বার্চিক,মহানাম্নিআর্চিক এবং উত্তরার্চিক।
মোট মন্ত্রের সংখ্যা ১৮৭৫।
৪)অথর্ববেদকে ব্রহ্মবেদ ও বলা হয়। এটি ২০টি কাণ্ডে বিভক্ত । এর মন্ত্রসংখ্যা ৫৯৭৭।
🌿অর্থাৎ চার বেদের মোট মন্ত্রসংখ্যা দাঁড়ায়-১০৫৫২+১৯৭৫+১৮৭৫+৫৯৭৭=২০৩৭৯ টি।
☘️বেদের জ্ঞানকে আরো সহজ সাবলীলভাবে তুলে ধরার জন্য ঋষিরা আরো তিনধরনের গ্রন্থ বৈদিক যুগেই কিন্তু পরবর্তীকালে রচনা করেন। যেমন-
১) ব্রাহ্মন
২) আরণ্যক
৩)উপনিষদ
এদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিন্মরুপ-
↘️ব্রাহ্মন➡️বেদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও দর্শন সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদানকারী গ্রন্থসমুহ। এর রচয়িতা বিবিধ ঋষি। একক কোন রচয়িতা নেই।এগুলো প্রগতিশীল ধর্মীয় ব্যাখ্যা গ্রন্থ।
এখানে যেমন জনকের কথাও আছে তেমনি পরিক্ষিতের পরের কথাও আছে। তবে এগুলো সবই স্বতন্ত্র গ্রন্থ।
☘️প্রধান ব্রাহ্মণ গ্রন্থসমূহ হল-
* ঐতরেয় ব্রাহ্মণ (ঋগ্বেদ সম্বন্ধীয়)
* কৌষিতকি ব্রাহ্মণ( ঋগ্বেদ সম্বন্ধীয়)
* শতপথ ব্রাহ্মণ(যজুর্বেদ সম্বন্ধীয়)
* মহাতাণ্ড্য ব্রাহ্মণ (সামবেদ সম্বন্ধীয়)
*ছান্দেগ্য ব্রাহ্মণ(সামবেদ সম্বন্ধীয়,যার একটি অংশ ছান্দেগ্য উপনিষদ নামে পরিচিত)
* গোপথ ব্রাহ্মণ (অথর্ববেদ সম্বন্ধীয়)
এছাড়া আরো কিছু ব্রাহ্মন দেখা যায় তবে তা অপ্রধান হিসেবেই পরিগনিত। শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষেত্রে উপরেরগুলোই যথেষ্ট।
↘️আরণ্যক➡️ প্রধানত বেদের কর্মকাণ্ড এবং কিছুটা ক্ষেত্রে বেদের জ্ঞানকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করে যে গ্রন্থসমূহ তাই আরণ্যক। আরণ্যক সমূহ মূলত ব্রাহ্মণ গ্রন্থ সমূহের ই নির্বাচিত অংশবিশেষ।
আরন্যক গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বৃহদারণ্যক, তৈত্তিরীয় আরণ্যক, কঠ আরণ্যক ইত্যাদি।
তৈত্তিরীয় উপনিষদ তৈত্তিরীয় আরণ্যকের অংশ ।
↘️উপনিষদ➡️ উপনিষদ হলো বৈদিক ঋষি গণের শিষ্যের সাথে বিভিন্ন আলোচনা।।
মুলত বেদের বিভিন্ন বিষয়কে ঋষিগণ উপনিষদে আলোচনা করছেন তাদের শিষ্যদের নিকট।
বিস্তারিত ভাবে বললে-
বেদের অন্তে যে দর্শন পাওয়া যায় তাই বেদান্ত তথা উপনিষদ।উপনিষদ শব্দের অর্থ নিকটে এসে শোনা।প্রাচীন মহর্ষিদের তপোবনে গুরুগৃহে গুরুর নিকটে এসে শিষ্যদের প্রশ্ন ও গুরু কর্তৃক প্রদত্ত সেই প্রশ্নসমূহের উত্তর উপনিষদ এর আলোচ্য বিষয়বস্তু।বৈদিক দর্শনের মুকুটরুপ এই গ্রন্থসমূহ।
☘️মূখ্য বা প্রধান বৈদিক উপনিষদ ১১ টি।
১ ঈশোপনিষদ ( যজুর্বেদ ভিত্তিক)
২ কেনোপনিষদ ( সামবেদ ভিত্তিক)
৩ প্রশ্নোপনিষদ ( অথর্ববেদ ভিত্তিক )
৪ মাণ্ডুক্য উপনিষদ (অথর্ববেদ ভিত্তিক)
৫ মুণ্ডক উপনিষদ ( অথর্ববেদ ভিত্তিক )
৬ ঐতরেয় উপনিষদ ( ঋগ্বেদ ভিত্তিক )
৭ তৈত্তিরীয় উপনিষদ ( যজুর্বেদ ভিত্তিক )
৮.কঠোপনিষদ (যজুর্বেদ ভিত্তিক)
৯. ছান্দোগ্য উপনিষদ ( সামবেদ ভিত্তিক)
১০. বৃহদারণ্যক উপনিষদ ( যজুর্বেদ ভিত্তিক)
১১.শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ( যজুর্বেদ ভিত্তিক)
🔰বেদাঙ্গ➡️বৈদিক সাহিত্যের শেষদিকে সংহিতা , ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদের বাইরেও এক বিশাল সাহিত্য গড়ে উঠেছিল, যার নাম বেদাঙ্গ । বেদ সঠিক ভাবে জানতে হলে বা বুঝতে হলে এই বেদাঙ্গের জ্ঞান অপরিহার্য এবং বাধ্যতামূলক । তবে জনসাধনের পাঠের ক্ষেত্রে শুধু স্বরের জ্ঞান লাভ করাই যথেষ্ট বলেই আমার মত।
☘️বেদাঙ্গ মুলত ছয় প্রকারঃ
🔰শিক্ষা
-বেদের মন্ত্রসমূহের সঠিক উচ্চারণ প্রণালী যে গ্রন্থসমূহে আলোচনা করা হয়।
🔰কল্প
-যেসকল গ্রন্থে বেদোক্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানসমূহের যেমন যজ্ঞ,হোম,ষোড়শ সংস্কার ইত্যাদির প্রণালী আলোচিত হয়।
🔰ব্যাকরণ
-বৈদিক গ্রন্থসমূহের শব্দপ্রয়োগ এবং অর্থব্যবহার নিয়ে আলোচনা করে।পাণিনির অষ্টাধ্যয়ী ব্যাকরণ গ্রন্থের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
🔰নিরুক্ত
-শব্দের উৎপত্তি ও এর ব্যাবহারবিধি আলোচিত হয়।
🔰ছন্দ-
সা রে গা মা পা ধা নি সা
সা নি ধা পা মা গা রে সা
এই সাতটি(কেননা সা ছন্দটি দুইবার উচ্চারিত) স্বরের কথা আমরা কে না জানি?আমরা যারা গান শুনি বা শুনিনা,দেখি বা দেখিনা,গাইতে পারি বা পারিনা সবাই ই জানি যে যেকোন গানের সুর এই সাতটি স্বর দিয়েই গঠিত হয়।কিন্তু আমরা কি জানি যে এই সাতটি স্বর আসলে কি?
আপনি যখন বেদ পাঠ করতে যাবেন তখন দেখবেন প্রতিটি মন্ত্রের আগে চারটি তথ্য দেয়া থাকে।ওই মন্ত্রের দেবতা তথা বিষয়বস্তু কি,মন্ত্রের দ্রষ্টা ঋষি কে,মন্ত্রের ছন্দ কি এবং মন্ত্রের স্বর কি।
বেদের মন্ত্রসমূহের স্বর মোট সাতটি।এগুলো হল যথাক্রমে ষদ্জ,ঋষভ,গান্ধার,মধ্যম,পঞ্চম,ধৈবত,নিষাদ।
মূলত এই নামগুলোর সংক্ষিপ্ত রুপ ই হল আমাদের সা রে গা মা পা ধা নি সা!
☘️ষদ্জ(সা)
☘️ঋষভ(রে)
☘️গান্ধার(গা)
☘️মধ্যম(মা)
☘️পঞ্চম(পা)
☘️ধৈবত(ধা)
☘️নিষাদ(নি)
☘️ষদ্জ(সা)
মূলত সঙ্গীতশাস্ত্রের উদ্ভব ই হয়েছে পবিত্র সামবেদ থেকে।আর এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে যে বেদাঙ্গশাখা তার নাম ছন্দ।
🔰জ্যোতিষ
-গ্রহ-নক্ষত্রসমূহের গতিবিধি সংক্রান্ত বিজ্ঞান
↘️উপবেদ➡️ বৈদিক পরবর্তীযুগে জ্ঞানের বিভিন্ন শাখা নিয়ে জ্ঞানী ব্যাক্তিদের বিভিন্ন রচনা এগুলো। মূলত এদের চারভাগে ভাগ করা হয় -
🔰আয়ুর্বেদ➡️চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে আলোচনা করে।যেমন-চরক সংহিতা,সুশ্রুত সংহিতা।
🔰ধনুর্বেদ ➡️সমরবিদ্যা অথবা যুদ্ধ
বিদ্যা,রণকৌশল,আধ্যাত্মিকতা, কর্ম, কর্তব্য, নাগরিক,
কূটনীতিবিদ্যা।
🔰গন্ধর্ববেদ ➡️সঙ্গীত,
প্রাকৃতিক সুরসংক্রান্ত বিদ্যা।
🔰স্থাপত্যবেদ ➡️স্থাপত্য
বিষয়ক বিদ্যা।
🌿সূত্র গ্রন্থ
সূত্রগ্রন্থ তিনপ্রকার।
১🔰শ্রৌত সূত্র ➡️যাদের কাজ হল বেদোক্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠান পদ্ধতি আলোচনা করা।
২🔰ধর্মসূত্র➡️যাদের কাজ হল বিভিন্ন ট্র্যাডিশনাল অনুষ্ঠান ও বিধিবিধানসমূহের আলোচনা করা।
৩🔰গৃহ্যসূত্র➡️যা বিভিন্ন সাংসারিক অনুষ্ঠানবিধি যেমন বিবাহ,নামকরণ,জন্ম,মৃত্যু ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে।
এছাড়া আছে শূল্বসূত্র এটি মুলত যজ্ঞের বেদী , পাত্র ও ব্যবহার্য জিনিসের মাপ , সংখ্যা ইত্যাদি এপ্লাইড ম্যাথম্যাটিকস এর বিষয় নিয়ে আলোচনা করে অর্থাৎ যজ্ঞের বেদী দৈর্ঘ্য ৩ হাত হলে প্রস্থ ও গভীরতা কত হবে, কোন যজ্ঞ বেদী অনুযায়ী চামচের বা পাত্রের আকার কয় আঙুল হবে, দূরত্ব কত হবে এইসব নিয়েই এই গ্রন্থ। যজুর্বেদের ক্ষেত্রেই এই গ্রন্থ দেখা যায়।
নিচে এদের শ্রেনীবিভাগ উল্লেখ করা হলো-
🚩ঋগ্বেদ
☘️শ্রৌতসূত্র : (১) আশ্বলায়ন (২) শাংখায়ন (৩) পরশুরাম।
🔰গৃহ্যসূত্র : (১) আশ্বলায়ন (২) শাংখায়ন।
♻️ধর্মসূত্র : (১) বশিষ্ঠ
🚩সামবেদ
☘️শ্রৌতসূত্র : (১) লাট্যায়ন বা আর্ষেয়কল্প (২) দ্রাহ্যায়ন (৩) জৈমিনীয়।
🔰গৃহ্যসূত্র : (১) গোভিল (২) দ্রাহ্যায়ন (৩) জৈমিনীয় (৪) খাদির।
♻️ধর্মসূত্র : (১) গৌতম।
🚩যজুর্বেদ
☘️শ্রৌতসূত্র : (১) কাত্যায়ন।
🔰গৃহ্যসূত্র : (১) পারস্কর বা বাজসনেয়।
♻️ধর্মসূত্র : (১) শঙ্খ (২) লিখিত।
☣️শুল্বসূত্র : (১) কাত্যায়ন।
🚩অথর্ববেদ
☘️শ্রৌতসূত্র : (১) বৈতান।
🔰গৃহ্যসূত্র : (১) কৌশিক।
♻️ধর্মসূত্র : (১) পঠিনসী।
↘️ধর্মস্মৃতি শাস্ত্র➡️ ধর্মস্মৃতি শাস্ত্র
মূলত বেদভিন্ন সনাতন ধর্মের যত গ্রন্থ রয়েছে তার সব ই স্মৃতিশাস্ত্র।স্মৃতিশাস্ত্র তার অথোরিটির জন্য শ্রুতি বা বেদের উপর নির্ভরশীল।তবে ধর্মস্মৃতি নামে কিছু গ্রন্থ রয়েছে যাতে হিন্দু ধর্মের আইনকানুন বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে।
🔰স্মৃতি সংহিতা (সমাজ ব্যবস্থাপক শাস্ত্র) — ৩৯টি
১) মনুসংহিতা
২) অত্রিসংহিতা
৩) বিষ্ণুসংহিতা
৪) হারীত সংহিতা
৫) যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতা
৬) উশনঃ সংহিতা
৭) অঙ্গিরাঃ সংহিতা
৮) যম সংহিতা
৯) আপস্তম্ব সংহিতা
১০) সংবর্ত্ত সংহিতা
১১) কাত্যায়ন সংহিতা
১২) বৃহস্পতি সংহিতা
১৩) পরাশর সংহিতা
১৪) ব্যাস সংহিতা
১৫) শঙ্খ সংহিতা
১৬) লিখিত সংহিতা
১৭) গৌতম সংহিতা
১৮) শাতাতপ সংহিতা
১৯) বসিষ্ঠ সংহিতা
২০) দক্ষ সংহিতা
২১) প্রজাপতি স্মৃতিঃ
২২) লঘুশঙ্খ স্মৃতিঃ
২৩) শঙ্খ-লিখিত স্মৃতিঃ
২৪) উশনস(শুক্র) সংহিতা
২৫) বৃহৎযম স্মৃতি
২৬) লঘুযম স্মৃতিঃ
২৭) অরুণ স্মৃতিঃ
২৮) অত্রি স্মৃতিঃ
২৯) আঙ্গিরস স্মৃতিঃ(পূর্ব)
৩০) উত্তরাঙ্গিরস স্মৃতিঃ
৩১) কপিল স্মৃতিঃ
৩২) লঘ্বাশ্বলায়ন স্মৃতিঃ
৩৩) বাধুল স্মৃতিঃ
৩৪) বৃদ্ধহারীত স্মৃতিঃ
৩৫) লোহিত স্মৃতিঃ
৩৬) দালভ্য স্মৃতিঃ
৩৭) কণ্ব স্মৃতিঃ
৩৮) বৃহৎপরাশর স্মৃতিঃ
৩৯) নারদ স্মৃতি(নারদীয় মনুসংহিতা)
এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
🔰মনুস্মৃতি/মনুসংহিতা -- মহর্ষি মনু কর্তৃক রচিত। ১২ টি অধ্যায় রয়েছে এতে।
🔰যাজ্ঞবাল্ক্য স্মৃতি -- ঋষি যাজ্ঞবাল্ক্য কর্তৃক রচিত। ৩ টি অধ্যায়ে সন্নিবেশিত।
🔰পরাশর স্মৃতি। ইত্যাদি।
বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য মুনি ঋষি যতগুলো স্মৃতিশাস্ত্র প্রণয়ন করেছেন তার মধ্যে বর্তমানে প্রেক্ষাপটে মনু ও যাজ্ঞবল্ক্য এবং ক্ষেত্রবিশেষে অন্য স্মৃতির বেদস্বীকৃত শ্লোকগুলোই মান্য কারন এগুলোতে পরবর্তী সময়ে অনেক বেদবিরুদ্ধ মতও প্রবেশ করানো হয়েছিল।
এবিষয়ে ব্যাসস্মৃতি ও মনুস্মৃতিতে প্রমান রয়েছে-
☣️শ্রুতিসবমৃতিপুরাণানাং বিরোধো যত্র দৃশ্যতে। তত্ৰ শ্ৰৌতং প্রমানন্ত তয়োর্দ্বৈধে স্মৃতির্ব্বরা||
♻️(ব্যাস সংহিতা ১।৪)
অর্থাৎ শ্রুতি ও স্মৃতি ও পুরাণের বিরোধ দেখা যায় সেখানে শ্রুতি কথিত বিধিই বলবান এং যেস্থলে স্মৃতি ও পুরাণের বিরোধ দেখা যায়, সেস্থলো স্মৃতিকথিত বিধিই বলবান।
আবার,
☣️যারা কামে আসক্ত নয় তাঁদের পক্ষেই প্রকৃত ধর্মজ্ঞান লাভ সম্ভব । আর ধর্মজিজ্ঞাসু ব্যক্তিদের কাছে বেদই প্রকৃষ্ট প্রমাণ । সুতরাং যেখানে শ্রুতি(বেদ) ও স্মৃতির বিরােধ হবে সেখানে শ্রুতি(বেদ)-র মতই গ্রাহ্য । তাই শ্রুতি(বেদ)কে সর্বোৎকৃষ্ট প্রমাণ বলা হয়েছে । ॥
♻️(মনুস্মৃতি ২।১৩)
🚩🚩অর্থাৎ স্মৃতি শাস্ত্রের মধ্যে যে আইনগুলো বৈদিক শিক্ষার বিরোধী তা বাতিল।🚩🚩
↘️দর্শনশাস্ত্র
ষড়দর্শন বেদভিত্তিক ছয়টি দর্শন। ভারতবর্ষে উদ্ভূত দর্শনসমূহকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা হয় আস্তিক ও নাস্তিক। যে দর্শনসমূহ বেদকে প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকার করে সেগুলোকে বলা হয় আস্তিক দর্শন।
🔰সাংখ্য
🔰যোগ
🔰ন্যায়
🔰বৈশেষিক
🔰মীমাংসা
🔰বেদান্ত - এই ছয়টি আস্তিক দর্শন এবং এগুলিকে একত্রে বলা হয় ষড়দর্শন।
🌿নীতিশাস্ত্র
নীতিশাস্ত্র দর্শনের একটি শাখা যেখানে নৈতিকতা, ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ নিয়ে আলোচনা করা হয়। তাত্ত্বিক দিকগুলো, যেমন - ভাল-মন্দের সংজ্ঞা এর সাথে প্রায়োগিক দিক, যেমন - মানুষের ভাল বা মন্দ ব্যবহারের সংজ্ঞা-ও এর আলোচ্য বিষয়। মানুষের ব্যবহারগত সম্পর্কের তাৎপর্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে নীতিশাস্ত্র বিকাশ লাভ করেছে।উল্ল্যেখযোগ্য বৈদিক নীতিশাস্ত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-
🔰বিদুর নীতি
🔰চাণক্য নীতি
🔰ভর্তৃহরি
🔰কনিক
🔰বৃহস্পতি
🔰শুক্র
↘️ইতিহাস➡️
যেসকল গ্রন্থ প্রাচীন বৈদিক সভ্যতার ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করে তাদের ইতিহাস গ্রন্থ বলা হয়।প্রাচীন মনিষী এবং বিখ্যাত ব্যাক্তিবর্গের জীবন থেকে ভালোমন্দ শিক্ষা নেয়া ই এই ইতিহাস গ্রন্থের উদ্দ্যেশ্য।
↘️ইতিহাস গ্রন্থ দুইটি-
🔰রামায়ণ(মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রী রামচন্দ্রের জীবনী)
এবং
🔰মহাভারত(প্রাচীন ভারতের বিখ্যাত দুই রাজবংশ কৌরব ও পাণ্ডবদের মধ্যকার ধর্মযুদ্ধের ইতিহাস।এছাড়া পরমযোগী যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জীবনীর উল্লেখযোগ্য কথন পাওয়া যায় এতে)। এছাড়া মহাভারতের ভীষ্মপর্বের অংশ ৭০০ শ্লোক ও ১৮ অধ্যায় বিশিষ্ট শ্রীমদভগবদগীতা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দর্শন শাস্ত্রের এক অনন্য উদাহরণ।
উপরে যে শাস্ত্রগুলোর কথা উল্লেখ করা হলো তা সনাতন ধর্মের দুইটি প্রধান দর্শনের অবলম্বী তথা বৈদিক ও পৌরানিক উভয়েই মেনে চলে। কিন্তু পৌরাণিকরা এই গ্রন্থগুলোর সাথে ১৮+ পুরান, চন্ডী, তন্ত্র এরকম অতিরিক্ত কিছু গ্রন্থকেও প্রামান্য হিসেবে গ্রহন করে তাদের সিদ্ধান্ত প্রতিপাদন করে।
-- এই হলো আমাদের সনাতন ধর্মের সকল শাস্ত্রের একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা।
এখানে চেষ্টা করা হয়েছে মোটামুটি সকল ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত একটা পরিচয় তুলে ধরার জন্য। ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে এবং সকল মুনি ঋষিদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করে আজকের পোষ্ট এখানেই সমাপ্ত করলাম।
এতক্ষন ধরে পোষ্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ঈশ্বর সবার মঙ্গল করুক।
🕉️শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ🕉️
🚩🚩🚩ও৩ম্ কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্যম🚩🚩🚩
🚩🚩🚩জয় শ্রীকৃষ্ণ🚩🚩🚩
🚩🚩🚩জয় শ্রীরাম🚩🚩🚩
🚩🚩🚩জয় আর্যবর্ত🚩🚩🚩
🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏🙏
🕉️🕉️🕉️

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন