🌿 কোন পথে যাবো আমরা ❓

কোন পথে যাবো আমরা ⁉️

🌸মৈতং পন্থামনু গা ভীম এষ যেন পূর্বং নেয়থ তং ব্রবীমি। তম এতৎপুরুষ মা প্র পত্থা ভয়ং পরস্তাদভয়ং তে অৰ্বাক্ ॥ 🌸
[অথর্ববেদ ৮।১।১০]

🔸অনুবাদঃ (এতম্) এই (পন্থাম্) পথে [অধর্মপথ] (মা অনু গাঃ) কখনো যেও না, (এষঃ) এটি (ভীমঃ) ভয়ানক, (যেন) যেই [মার্গে] (পূর্বম) এর আগে (ন ইয়থ) তুমি যাওনি, (তম্) সেই [মার্গ] সম্পর্কে (ব্রবীমি) আমি বলছি। (পুরুষ) হে মানব! (এতৎ) এই (তমঃ) অন্ধকারে (প্র) সামনে (মা পত্থাঃ) পা বাড়িও না (পরস্তাৎ) দূরস্থানে [কুপথ] (ভয়ম্) ভয় রয়েছে, (অর্বাক্) এদিকে [ধর্মপথে ] (তে) তোমার জন্য (অভয়ম্) অভয় রয়েছে ॥🚩

🔹জীবনে চলার পথ অত্যন্ত বন্ধুর। এই জড় জাগতিক জীবনে পারে। সাধারণ মানবগণ তো সামান্যই ‼️

কঃ পন্থাঃ❔ পথ কি ⁉️

👉এটি সনাতন প্রশ্ন । অনাদিকাল হলে মানব এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে আসছে। দেশ-কাল - পাত্রভেদে কখনো কখনো জীবনের কোন এক একান্ত সময়ে নিজের মনে এই প্রশ্নের উদ্রেক হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর । খুব অল্প মহাত্মাই আছেন যারা কিনা এই প্রশ্নের উত্তর জানতে পেরেছে ও সেই অনুযায়ী জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।♥
🌸মৈতং পন্থামনু গা.. 🌸
  
- এই পথে যেও না আমরা যারা এই সংসারে আছি তারা সবাই জানি যখন কঠিন কর্তব্য বা সিদ্ধান্তের সময় আসে তখন সাংসারিক মোহ আমাদের ঘিরে ফেলে। বিচারকের সামনে যখন তার সন্তানকে অপরাধী হিসেবে আনা হয় তবে দোষ প্রমাণ হওয়ার পরেও সন্তানস্নেহ অনেক সময়ই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। ন্যায় বিচার করতে দেয় না। সে কি -

🌸গুরুপদিষ্টেন রিপৌ সুতেপি বা নিহন্তি দণ্ডেন স ধর্মবিপ্লবম্ ।🌸

🔸অর্থাৎ - আইন ভঙ্গকারীকে, হোক না যে ধর্মভঙ্গকারী পুত্রই - ন্যায়ব্যবস্থানুযায়ী দণ্ড দেয়⁉️

🔹না, অধিকাংশ সময় এই সমাজে স্বজন প্রীতিতে আমরা ভুলে যাই । দণ্ড ও ন্যায়ের পথ ছেড়ে অধর্মকে প্রশ্রয় দেই । ভুলে যাই যে দুজনেও যদি একান্তে কোন কুপরামর্শ করে তবে সেই কথাও পরমেশ্বরের কাছে গোপন থাকে না ।👈

🌸তদ্বেদ বরুণস্তৃতীয়ঃ🌸

[অ০ ৪।১৬।২]

🔸=> · তৃতীয় এক পরমেশ্বর সব কিছুই জানেন ও সব কিছুরই সাক্ষী।🧡

👉ঋগ্বেদে [১।১৬৪।২০] তাই বলা হচ্ছে:-

🌸তয়োরন্যঃ পিপ্পলং স্বাদ্বত্ত্যনশন্নন্যোহভিচাকশীতি 🌸

🔸=> এক জীব জাগতিক সুখ উপভোগ করছে। আর পরমাত্মা কেবল তার কর্মের সাক্ষী হয়ে আছেন ।🚩
👉আমরা ভুলে যাই যে👈

🌸 মা ব এনো অন্যকৃতং ভুজেম 🌸

[ঋ০ ৬।৫১।৭]

🔸=> আমরা অন্যের পাপের কর্মফল ভোগ করি না ।

আমাদের একসময় আমাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করতেও হবে

🌸 কৃত্যা কর্তারমৃচ্ছতু 🌸

[অ০ ৫।১১।১৪]

🔸=> অসৎ কাজের ফল তার কর্তাকেই ভোগ করতে হয়।

তাও আমরা বিস্মৃত হই । তাই বেদমাতা আমাদের এই মন্ত্রের মাধ্যমে বারংবার পুনঃস্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে হে মানব! যেও না সেই ভীষণ ভোগময়, বিলাসময় কিংবা অসৎ পথে। সে পথ যে খুব কঠিন, খুব ভয়ানক ।🚩

👉আজকাল একটা প্রশ্ন খুবই কমন । মানব জীবনের লক্ষ্য কি⁉️

♻️ খাও - দাও, আনন্দ করো, ভোগ করো- এটাই ⁉️
👉বহুকাল আগে রাবন মাতা সীতাকে বলেছিল :- 

🌸 ভুক্ষ্ব ভোগান্যথাকামং পিব ভীরু রমস্ব চ। 🌸

[বাল্মিকী রামায়ণ ৫।২০।২৩]

🔸অর্থাৎ, সীতে! যথেষ্ট ভোগ করো। খাও, পান করো আনন্দ করো।

🌸পিব বিহর রমস্ব ভুংক্ষ্ব ভোগান্ ।🌸

[ বাল্মিকী রামায়ণ ৫।২০।৩৫]

🔸অর্থাৎ, পান করো, বিহার করো, রমণ করো। কেবল ভোগ করো।

🔹কিন্তু মাতা সীতা বেদজ্ঞ। তিনি জানতেন, পড়েছিলেন - 
🌸মৈতং পন্থামনুগাঃ 🌸 

পতিব্রতা মা আমার সেই পথে যাননি । রাক্ষসরাজ রাবণের সেই বচনকে তিনি পদদলিত করেছিলেন।🚩

কেবল যথেচ্ছ ভোগ মানুষের ধর্ম নয় । ভোগ - পান - আহার এগুলোই জীবের উদ্দেশ্য হলে মানুষ ও পশুর মধ্যে তফাৎ কি⁉️
ভোগ তো রাক্ষসের বৈশিষ্ট্য। স্বয়ং রাবণ বলছে -

🌸স্বধর্মো রক্ষসাং ভীরু সর্বথৈব ন সংশয়ঃ। গমনং বা পরস্ত্রীণাম্ হরণম্ সম্প্রমথ্য বা।। 🌸

[বাল্মিকী রামায়ণ ৫।২০।৫]

🔸অর্থাৎ, হে ভীতসন্ত্রস্ত সীতে! পরস্ত্রীগমন = ব্যভিচার কিংবা পরস্ত্রীহরণ রাক্ষসের স্বাভাবিক ধর্ম। এতে কোন সন্দেহ নেই।
তবে কি আমরা রাক্ষস হবো ⁉️

বেদ বলছে :-

👉 না জীব 👈

🌸 ভীম এষঃ🌸 
🔸- এই পথ যে ভয়ানক।

এখনো " Eat, drink and be merry" খাও, পান করো আর আনন্দ করো এই জড় জাগতিক নীতিতে আমরা আকৃষ্ট । এই তত্ত্বই আজিকাল প্রচারিত হচ্ছে সর্বত্র। কুটিলগণই রাবণের সমর্থনকারী রাক্ষস ধর্মের প্রচার করছে।🚩

যখন জীবন যাত্রায় মানুষ অগ্রসর হতে নেয় তখন তার সামনে দুটো পথ আসে । একটিতে ভোগ্যবস্তু থাকে অন্যটিতে এমন কিছু থাকে না। সাধারণ মানুষ অধিকাংশ সময় অপরিপক্ক বিবেক ও চিন্তা নিয়ে বেদমাতার আদেশ ভুলে প্রথমোক্ত পথে গমন করে। কারণ দুটি - মন্দমতি ও সাংসারিক লালসার পূর্তির সম্ভাবনা। 🚩

কঠোপনিষদে এক রূপক আখ্যানে এই কথাটিই বলা হয়েছে:-

🌸শ্রেয়শ্চ প্রেয়শ্চ মনুষ্যমেতঃ🌸

[কঠোপনিষদ ১।২।২]

🔸=> কল্যাণের মার্গ এবং মনের প্রিয় হওয়া বিষয়ের মার্গ, এই উভয়ই মানবের কর্মানুসারে লাভ হয়। 🧡

·♻️কারা এই মহা সংসার সাগরে সঠিক পথ গ্রহণ করে ⁉️

🌸তৌ সম্পরীত্য বিবিনক্তি ধীরঃ ।
শ্রেয়ো হি ধীরোঽডি প্ৰেয়সো বৃণীতে 🌸

[কঠোপনিষদ ১।২।২]

🔸=> ধীর মানবই প্রবৃত্তি মার্গ অপেক্ষা কল্যাণের মার্গকেই সর্বদা গ্রহণ করেন।🚩
পক্ষান্তরে কারা এই ভোগের পথে যায় ⁉️

🌸প্ৰেয়ো মন্দো যোগক্ষেমাদৃণীতে ॥🌸 

[কঠোপনিষদ ১।২।২]

🔸=> অবিবেকী মানব ধনের উপার্জন ও রক্ষণ দ্বারা প্রবৃত্তিমার্গকেই স্বীকার করেন।🚩

← কিন্তু কেন তারা এই পথ অনুসরণ করে, আকৃষ্ট হয় ⁉️

🌸অবিদ্যায়ামন্তরে বর্তমানাঃ স্বয়ং ধীরাঃ পণ্ডিতংমন্যমানাঃ । দন্দ্রম্যমাণাঃ পরিয়ন্তি মূঢ়া অন্ধেনৈব নীয়মানা যথান্ধাঃ ॥ 🌸

[কঠোপনিষদ ১।২।৫]

🔸 => অবিদ্যার মধ্যে অর্থাৎ অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত থেকে যারা নিজে নিজেকে ধীর এবং পণ্ডিত মনে করে সেই বিক্ষিপ্ত চিত্তযুক্ত ব্যক্তিগণ অত্যন্ত কুটিলগতি দ্বারা সেই প্রকারে পরিভ্রমণ করে যেই প্রকার একজন অন্ধের দ্বারা পরিচালিত আরেক অন্ধ ভ্রমণ করে ।👈

🔷বেদ বলে এই পথে যেও না । তুমি আগে যাওনি। তোমার আগে যারা এই পথে গিয়েছে বা যারা যাবে তারা সবাই কি জেনেছে❔
জেনেছে যে - 🌸যেন পূর্বং নেয়থ তং ব্রবীমি।🌸 
🔸অন্ধকারে ঢাকা ।

🌸তম এতৎ পুরুষ মা প্রপন্থাঃ🌸

🔸- হে মানব । এই অন্ধকারে পতিত হয়ো না। মানব তো আকৃষ্ট হচ্ছে এই পথে। কেন হচ্ছে। 

এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন 

🌸ন সাম্পরায়ঃ প্রতিভাতি বালং
অয়ং লোকো নাস্তি পর ইতি মানী
পুনঃ পুনর্বশমাপদ্যতে মে ॥
প্রমাদ্যন্তং বিত্তমোহেন মূঢ়ম্ । 🌸

[ কঠোপনিষদ ১।২।৬]

🔸=> ধনরূপী মোহে মোহগ্রস্ত, প্রমত্ত, বিবেকহীন মানবের পরলোকের বিচার থাকে না। এই লোক ভিন্ন পরলোক নেই এরূপ ভাবনাযুক্ত মানুষ বারংবার আমার (মৃত্যুর) বশীভূত হয়।♥

🔹হে জীব ‼️ তোমরা কার পথে চলবে❔ মাতা সীতা ও বেদের পথে নাকি রাক্ষস তথা অধর্মের পথে ⁉️ তাড়াতাড়ি করে মোহে আকৃষ্ট হয়ো না। বরং 👇

🌸অহ ধীতিমশ্যাঃ🌸

ঋগ্বেদ ২।৩১।৭

🔸হে মানব! ধৈর্য ধারণ করো।🚩

🚩বুঝে শুনে, ধর্ম ও বিবেক অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নাও । পথের বর্ণনা ও ফলাফল দুটোই তোমার সামনে।🚩

🔷 কিন্তু যে পথেও যাও মনে রেখো বন্ধু -

🌸তব প্রণীতী তব শূর শর্মন্না বিবাসন্তি কবয়ঃ সুযজ্ঞাঃ🌸

[ ঋগ্বেদ ৩।৫১/৭]

🔸অর্থাৎ, উত্তম কর্মকারীই পরমাত্মার আশ্রয় লাভ করে🧡
তাই,

🌸পরস্তাদভয়ং তে অর্বাক্🌸

🔸-ধর্মের পথে এসো, বেদের পথে এসো। এখানেই রয়েছে অভয় 🧡

নমস্কার 🙏
ও৩ম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ🙏

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন