যজ্ঞ কী ?
জগৎ পিতা-সৃষ্টিকর্তা-পরব্রহ্ম চিন্তা করলেন যে, জীবদের মলমূত্র দ্বারা এই ভূমি, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্বারা এই বায়ুমণ্ডল এবং অন্যান্য দুর্গন্ধযুক্ত ক্রিয়াগুলির দ্বারা এবং জলকে বিভিন্ন ভাবে দূষিত করার ফলে জীবনের অস্তিত্বই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। অতএব, তিনি সৃষ্টির আদিতে অগ্নি-বায়ু-আদিত্য-অঙ্গিরা ঋষিদের মাধ্যমে মানবকল্যাণ হেতু বেদের অবতারণা করলেন যার মধ্যে যজ্ঞ নামক কর্মেরও উপদেশ দিলেন। সম্পূর্ণ জগতে ব্যাপক বিষ্ণুরূপ যজ্ঞ দ্বারা সৃষ্টির সমস্ত দেবতাদেরকে সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত করার উপায় তিনি “যজ্ঞো বৈ বিষ্ণু” বাক্যাংশে বলে দিলেন।
যজ্ঞ থেকে উত্থিত সুগন্ধিত ধোঁয়া অন্তরিক্ষের উপরে দ্যুলোক পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এই ভেষজগুণযুক্ত ধোঁয়া বায়ু পরিশুদ্ধ করে মেঘের মাধ্যমে জলতে নির্মল করে দেয়। এই নির্মল বর্ষাজল পৃথিবীর মলকে ধুয়ে পরিষ্কার করে দেয় এবং পর্জন্য পিতার বর্ষণ হেতু এই ভূমিমাতা শস্য শালিনী হয়ে বহুবিধ উদ্ভিদ ও জীবকে তার গর্ভ থেকে বাইরে প্রকাশ করে।
এইজন্য অর্থববেদে (১২/১/১২) ঋষি বলেছেনঃ
‘মাতা ভূমিঃ পুত্রো অহং পৃথিব্যাঃ । পর্জন্য পিতা স উ নঃ পিপর্তু।”
“যজ্ঞ” শব্দটি ব্যাপক। ঋগ্বেদে এই শব্দ ৫৮০ বার, যজুবেদে ২৪৩ বার, সামবেদে ৬৩ বার এবং অর্থব বেদে ২৯৮ বার অর্থাৎ চার বেদে যজ্ঞ শব্দ মোট ১১৮৪ বার এসেছে।
যজ্ঞ শব্দ ‘যজ্’ ধাতু দিয়ে তৈরি। ‘যজ্’ ধাতুর তিনটি অর্থ—‘যজ্ দেবপূজা সঙ্গতিকরণ দানেষু' অর্থাৎ ১। দেবপূজা ২। সঙ্গতিকরণ ও ৩। দান। সুতরাং যজ্ঞের বিভিন্ন প্রকার এইরূপ-দেবযজ্ঞ (অগ্নিহোত্র বা হবন), ব্রহ্মযজ্ঞ, পিতৃযজ্ঞ, বলিবৈশ্যদেবযজ্ঞ, অতিথিযজ্ঞ, অশ্বমেধযজ্ঞ ইত্যাদিতে যজ্ঞের প্রায় সমস্ত অর্থ নিহিত আছে ··। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনাদি কাল থেকে যজ্ঞের প্রচলন ছিল যদিও আজ প্রদীপ, মোমবাতি, ধূপবাতি তার রূপ পরিগ্রহ করেছে ।
তথ্যসূত্রঃ যজ্ঞ ও বিজ্ঞান
ওম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ