🔸আমরা সনাতনীরা সনাতন ধর্ম কে ঠিকভাবে বুঝি আর নাই বা বুঝি, তবুও আমরা কম-বেশি ঈশ্বরের স্তুতি করে থাকি। যেমন তিনি সচ্চিদানন্দ স্বরূপ অর্থাৎ ঈশ্বর সত্য-চেতন যুক্ত ও আনন্দ স্বরূপ, তিনি শিব স্বরূপ অর্থাৎ তিনি জীবের মঙ্গলকারী ইত্যাদি। আমরা ঈশ্বরের নানান গুণগত নাম দ্বারা স্তুতি করে থাকি। স্তুতির বিষয়ে ঋষি দয়ানন্দ বলেছেন-''ঈশ্বরের স্তুতি করলে তার প্রতি প্রীতি জন্মে। তার গুণ-কর্ম-স্বভাব দ্বারা নিজ গুণ কর্ম স্বভাবের সংশোধন হয়'' [সত্যার্থ প্রকাশ, সপ্তম সমুল্লাস] । যেমন ঈশ্বরের এক নাম 'শিব' [য়জুর্বেদ ১৬/২,৩,৪ ১৩] অর্থাৎ তিনি কল্যাণকারী, এই স্তুতি থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে আমরাও যেন কল্যাণকারী হই। ঈশ্বরের আর এক নাম 'কবি' [য়জুর্বেদ ৪০/৮] অর্থাৎ তিনি সর্বজ্ঞ। এই স্তুতি থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে আমরাও যেন বেদ আদি শাস্ত্র দ্বারা অপরা-পরা বিদ্যা সম্পর্কে জ্ঞাত হই। ঈশ্বরের আর এক নাম 'শুদ্ধম্' অর্থাৎ তিনি শুদ্ধ, তিনি অবিদ্যা আদি দোষ রহিত, তাই আমরাও যেন অবিদ্যা আদি দোষ রহিত হতে পারি এবং শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে শুদ্ধ থাকি। ঈশ্বর 'অপাপবিদ্ধম্' অর্থাৎ তিনি কখনই পাপের সহিত যুক্ত, পাপকারী এবং পাপের প্রতি আকৃষ্ট হয়না, তাই আমরাও যেন পাপ কাজ না করি। ঈশ্বর ন্যায়কারী তাই আমাদেরও ন্যায়কারী হওয়া উচিত। ঈশ্বরের আর এক নাম 'মিত্র' অর্থাৎ আমাদের উচিত সকলের সাথে মিত্র ভাব রাখা। ঈশ্বরের এমন নানান গুণগত নাম রয়েছে যেগুলো আমাদের ধারণ করা উচিত।
আমরা যদি ইশ্বরের গুণ গুলোর সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে তার কীর্তন করি, তাহলে আমাদের মধ্যে ঈশ্বরে প্রতি প্রীতি ভাব উৎপন্ন হবে এবং তার যে সকল গুলো আমাদের কাছে ধারণের যোগ্য, সেগুলো ধারণ করার ফলে আমাদের গুণ-কর্ম-স্বভারের সংশোধন হবে। কিন্তু আমরা যদি শুধুই ঈশ্বরের স্তুতি করি এবং তার গুণ কর্ম স্বভাব কে ধারণ করার কোনো চেষ্টা না করে ঈশ্বরের গুণ কর্ম স্বভাবের বিপরীত কুকর্ম করি, তাহলে স্তুতি করে কোনো লাভ নাই। ঋষি দয়ানন্দ বলেছেন- যে ব্যক্তি ভণ্ডের ন্যায় পরমেশ্বরের গুণ কীর্তন করে থাকে এবং নিজ চরিত্র সংশোধন করে না তার স্তুতি নিষ্ফল। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে কোনো এক ব্যক্তি য়জুর্বেদ ৪০/৮ মন্ত্র দ্বারা ঈশ্বরের স্ততি করেন এবং তিনি এই মন্ত্র দ্বারা জানতে পারেন যে ঈশ্বর পাপ কাজ করে না। কিন্তু সেই ব্যক্তি নিয়ত চুরি করে এবং চুরি করাকে সে পেশা মনে করে। তাহলে তার কি লাভ ঈশ্বরের স্তুতি করে ? অতএব আমরা স্তুতিতে ঈশ্বরের যে সকল গুণের কীর্তন করি তার দ্বারা আমাদের গুণ কর্ম স্বভাবকে সংশোধন করতে হবে, তাহলেই আমাদের উপকার হওয়া সম্ভব।
ও৩ম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ