▪️বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।💐


🙏🌿 নমস্কার 🌿🙏

🌼✍️বেদ আমাদের মানবজাতির সংবিধান স্বরূপ। পৃথিবীর বহু মানুষ তার থেকে জ্ঞান সংগ্রহ করে মুগ্ধ হয়েছেন। সে সকল কিংবদন্তি ও শ্রদ্ধাতুল্য মানুষদের মধ্যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অন্যতম। তিনি বহু ব্রহ্ম সংগীত যেমন রচনা করেছেন তেমনি বেদ ও উপনিষদ এর মন্ত্র ও শ্লোক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কিছু অমর কবিতা বা সংগীত রচনা করেছেন। আজ আমরা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে পবিত্র বেদ ও বৈদিক জ্ঞানের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করব। 

কবিগুরু সর্বদা কুসংস্কার পরিহার করে জ্ঞানের মুক্ত চর্চা করতেন। তাই তৎকালীন সময়ে রাজা রামমোহন রায় এর সাথে তিনিও সমাজ সংস্কারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু তিনি এসকল সমাজ সংস্কার এর ক্ষেত্রে বেদকে ভিত্তি হিসেবে ধরে এগিয়েছেন। তার বহু কবিতার লাইন বেদ ও উপনিষদ থেকে সংগ্রহ।

📑পবিত্র বেদ ও বিশ্বকবি: 

🌼অগ্নে ত্বং নো মনোবোধীশ্রুধী হবম্৷ ঋগ্বেদ- ৫/২৪/১৩📖🌿

রবিঠাকুর বলছেন, 
মোর হৃদয়ের গোপন বিজন ঘরে
একেলা রয়েছ নীরব শয়ন পরে
প্রিয়তম হে জাগো জাগো জাগো।

🌼✍️রবীন্দ্রনাথ তাঁর তপতী নাটকে চারটি বেদমন্ত্রের ব্যবহার করেছিলেন। তার মধ্যে দুটি ঋকবেদ থেকে , একটি অথর্ববেদ থেকে, একটি যজুর্বেদ থেকে। তাছাড়া অনেকগুলি বেদের সুক্তের তিনি সুর করেছেন। কয়েকটির তিনি অনুবাদ ও সুর দু-ই করেছেন। সপ্তম মন্ডল,সুক্ত৮৯,ঋক২-৪॥
 
🌼✍️ঋগ্বেদ   সাতজন মহিলা ঋষির মন্ত্রাবলি পাওয়া যায়। প্রথম মন্ডলে অগস্ত পত্নী লোপামুদ্রা, পঞ্চম মন্ডলে অত্রি কন্যা বিশ্ববারা, অষ্টম মন্ডলে অত্রি কন্যা অপালা, দশম মন্ডলে কক্ষিবৎ কন্যা ঘোষা, বিবাহ সুক্তের সাবিত্রী, অম্ভৃণ কন্যা বাক্, আর সপত্নী বাঁধন সুক্তের ইন্দ্রাণী।

বাক দেবীর একটি সুক্ত—- “অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসুনাং চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্”
আমি রাষ্ট্রশক্তি আমি বসু বা ঐষর্যের লেনদেন, আমি ক্রিয়াকান্ডের প্র্থম যজ্ঞভাগী।

রবীন্দ্রনাথের  কবিতায় সেই সুর——“আমারি চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ চুনি উঠল রাঙা হয়ে”
আবার কখনও বলছেন —- “আমায় নইলে ত্রিভূবনেশ্বর তোমার প্রেম হত যে মিছে।”

📑উপনিষদ ও কবিগুরু:- 

"শৃন্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রা
আ যে ধামানি দিব্যানি তস্থূ"॥
           - শ্বেতাশ্বতর উপনিষৎ ২/৫📖🌿

"বেদাহমেতং পুরুষং মহান্তম্‌
আদিত্যবর্ণং তমসঃ পরস্তাৎ।
তমেব বিদিত্বাতিমৃত্যুমেতি
নান্যঃ পনথা বিদ্যতে অয়নায়"॥
           - শ্বেতাশ্বতর উপনিষৎ ৩/৮📖🌿

অর্থাৎ, শোনো বিশ্বজন,
শোনো অমৃতের পুত্র যত দেবগণ; দিব্যধামবাসী,
আমি জেনেছি তাঁহারে
মহান্ত পুরুষ যিনি আঁধারের পারে; জ্যোতির্ময়।
তাঁরে জেনে তাঁর পানে চাহি
মৃত্যুরে লঙ্ঘিতে পারো, অন্য পথ নাহি ৷৷


"যস্তু সর্বানি ভূতানি আত্মনেব অনুপশ্যতি।
সর্ব ভূতেষু চাত্মানং ততো ন বিজুগুপ্ততে"।। 
- ঈশোপনিষদ ৬📖🌿 

অর্থাৎ, যিনি নিজের আত্মায় সবাইকে এবং সবার মধ্যে নিজেকে দর্শন করেন তিনি কখনও কারো কাছ থেকে নিজেকে গোপণ করেন না। সবাইকে আপন করার ভাবনা। পর বলে কেউ নেই।বসুধৈব কুটুম্বকম্। এই পৃথিবীর সবাই আপনজন।আত্মীয়। যাজ্ঞ্যবল্ক্যের এই মন্ত্রটি-ই বিশ্বভারতীর মূল মন্ত্র।

🌼✍️বর্তমানে আমরা বেদকে দূরে ঠেলে দিয়ে নিজেদের পতনের সম্মুখীন করছি। বিশ্বকবির মনে প্রাণে ছিল বৈদিকতার ছোঁয়া। আজকে যেখানে সনাতনীগণ নিজেদের হিন্দু পরিচয় দিতে কুন্ঠাবোধ করে সেখানে কবিগুরুর কন্ঠে উঠে এসেছে হিন্দু হিসেবে নিজেকে গর্বিত হওয়ার অনুপ্রেরণা,  

আমি হিন্দু, এ কথা বলিলে যদি নিতান্তই কেন লজ্জার কারণ থাকে, তাতে সে লজ্জা আমাকে মনে প্রাণে হজম করিতে হইবে, কারণ আমি মনে প্রাণে হিন্দু।

  - আত্মপরিচয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

🌼✍️রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেমন বেদের অনুরাগী ছিলেন তেমনি ছিলেন বৈদিক জ্ঞানের শীর্ষ মহর্ষিদের অনুসারী। বেদ কে আমাদের মাঝে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে যার অবদান অনন্য তিনি আমাদের মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী। রবীন্দ্রনাথ এর সাথে দয়ানন্দজীর রয়েছে চমকপ্রদ এক স্বল্প ইতিহাস। 

নিম্নে তাহার বর্ণনা করা হলো: 

দয়ানন্দ সম্পর্কে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করায় তিনি বলিয়াছিলেন, "১১ই মাঘ, ত্রিচত্বারিংশৎ মাঘোৎসবের সময় স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী নিমন্ত্রিত হইয়া আমাদের বাড়িতে আসিয়াছিলেন। তাহার সঙ্গে তাহার একজন শিষ্যও ছিলো। আমাদের বাড়িতে ব্রাহ্মসমাজের বহু নেতাই সেদিন উপস্থিত ছিলেন। স্বামীজির আগমন উপলক্ষে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিও আসিয়াছিলেন। স্বামীজিকে বাবা আদর সম্মানের সঙ্গে দোতলার ঘরে লইয়া বসাইলেন। স্বামীজির উজ্জ্বল চক্ষু, সহাস্য মুখ, তেজোব্যাঞ্জক কথাবার্তা, সরল মধুর হাবভাব দেখিয়া মুগ্ধ হইলাম। আমরা কয়েক ভাই তাহার পদস্পর্শ করিয়া প্রণাম করিলাম। তিনি আমাদিগকে আশীর্বাদ করিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, রাজনারায়ন বসু, হেমচন্দ্র চক্রবর্তীর সঙ্গে বেদ ও ব্রাহ্মসমাজ সম্বন্ধে কত কি আলোচনা করিলেন। আমার বয়স তখন ১০-১১ বর্ষ হইবে। বাবার ইঙ্গিতে আমরা কয়েক ভাই সমবেত কণ্ঠে বেদ ও উপনিষদের কয়েকটি মন্ত্র পাঠ করিয়া স্বামীজিকে শুনাইলে তিনি খুবই আনন্দ প্রকাশ করিলেন।

-বঙ্গে দয়ানন্দ, পৃষ্ঠা-২৩-২৪📖🌿
গ্রন্থকার-পন্ডিত দীনবন্ধু বেদশাস্ত্রী

🌼✍️সত্যি উপলব্ধি হয়, বেদ ও বেদজ্ঞ পন্ডিতদের প্রতি বিশ্বকবির শ্রদ্ধা ও অনুরাগ। আজ এই রবীন্দ্র জয়ন্তীতে সশ্রদ্ধ প্রণাম কবিগুরুর প্রতি। 
প্রচারেঃ VEDA
🌿🍂--------ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি --------🍂🌿

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

🔸সনাতন ধর্ম ও নারী 💐

সনাতন ধর্মে কি গোমূত্র পানের উল্লেখ রয়েছে ⁉️

▪️একাদশী" কি শাস্ত্র সম্মত ❓