দানশীল


🙏নমস্কার🙏


📑✍️ধন ধান্যে পুষ্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা। কবি গুরুর গানে এ ধরিত্রীর অকৃপণতা ফুটে উঠে। এ পৃথিবীতে কেউ স্থায়ী বসবাসকারী নয়। তাই একে অপরের মাঝে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মাঝে রয়েছে সাম্যের সমাজ গঠনের সূত্র। এজন্য আমাদের উচিত দানশীল হওয়া। যখন আমরা সঠিক  সময়ে সঠিক পাত্রে দান করব তা সমাজ ও নিজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। আজকে আমরা একজন মনুষ্যের দানশীল হওয়ার বিষয়ে বৈদিক শাস্ত্রের নির্দেশ আলোচনা করব। 


❄️দান করা প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য। সে কখনো স্বার্থপর  এর মতো নিজে ভক্ষণ করতে পারেনা। তার উচিত জীব সেবা করা। তাহাই পরমাত্মার উপদেশ। 


"মোঘমন্নং বিন্দতে অপ্রচেতাঃ সত্যং ব্রবীমি বধ ইত স তস্য।

নার্যমণং পুষ্যতি নো সখায়ং কেবলাঘো ভবতি কেবলাদী"।।

-ঋগ্বেদ ১০/১১৭/৬📖🌿


অর্থাৎ, যে ব্যক্তি দুঃস্থদের সাহায্য করেনা,অজ্ঞানী এবং অন্তঃদৃষ্টিহীন তার সকল উন্নতি ই বৃথা,সকল সম্পত্তি ই অনর্থক। যে অন্যদের সাহায্য করেনা,অভুক্ত রেখে কেবল নিজে খায় সে মূলত পাপ ই ভোজন করে।


কৃপণতা ব্যক্তির মনকে উদার হতে বাধাগ্রস্ত করে। এতে ব্যক্তির মন সংকীর্ণ মানসিকতার হয়ে উঠে। 


"অরাতে চিত্তং বীৎর্সন্ত্যাকূতিং পুরুষস্য চ"

 -অথর্ববেদ ৫/৭/৮📖🌿


অর্থাৎ, কৃপণতা মানুষের মন এবং সংকল্পকে মলিন করে দেয়।


📑✍️কিন্তু দান কি, কিভাবে দান করা উচিত, দান কত প্রকার এ সংশয় আমাদের মনে বিস্ময় বিতর্কের জন্ম দেয়। সে বিষয়ে যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উত্তম ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। 


দান হলো কোনো ব্যাক্তি কতৃক অন্য উপযুক্ত ব্যক্তিকে সহায়তা প্রদান। 


দান তিন প্রকার। যথা:- 

১. সাত্ত্বিক দান ২. রাজসিক দান ৩. তামসিক দান 


সাত্ত্বিক দান:- 


"দাতব্যমিতি যদ্দানং দীয়তেহনুপকারিণে।

দেশে কালে চ পাত্রে চ তদ্দানং সাত্ত্বিকং স্মৃতমং"।।

শ্রীমদ্ভগবদগীতা - ১৭/২০📖🌿


অর্থাৎ, দান করা কর্তব্য, এই মনোভাব নিয়ে উপযুক্ত স্থানে, কালে ও পাত্রে, উপকারের বিনিময়ে উপকার আশা না করে যে দান দেওয়া হয়, তাই সাত্ত্বিক দান। 


রাজসিক দান:- 


"যত্তু প্রত্যুপকারার্থং ফলমুদ্দিশ্য বা পুনঃ। 

দীয়তে চ পরিক্লিষ্টং তদ্দানং রাজসং স্মৃতম্"।।

শ্রীমদ্ভগবদগীতা - ১৭/২১📖🌿


অর্থাৎ, কিন্তু প্রত্যুপকারের জন্য, ফল, কামনা করে অথবা কষ্টের সাথে যে দান দেওয়া হয়, তাহা রাজসিক দান। 


তামসিক দান:- 


"অদেশকালে যদ্দানমপাত্রেভ্যশ্চ দীয়তে। 

অসৎকৃতমবজ্ঞাতম্ তৎ তামসমুদাহৃতম্"।।

শ্রীমদ্ভগবদগীতা - ১৭/২২📖🌿


অর্থাৎ, অনুপযুক্ত স্থানে ও কালে,  অযোগ্য পাত্রে,  অশ্রদ্ধা এবং অবজ্ঞার সাথে যে দান করা হয় তাহা তামসিক দান। 


📑✍️এর থেকে উপলব্ধি হয় যে আমাদের দান করলে শুধু কর্তব্য শেষ নয়। বরং কোন প্রকারের দান আমরা করছি সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। কিন্তু কোন দান সর্বশ্রেষ্ঠ। এর উত্তর আমরা খুঁজে পাই মনুসংহিতায়, 


"সর্ব্বেষামেব দানানাং ব্রহ্মদানং বিশিষ্যতে।

বার্য্যন্নগোমহীবাস্তিলকাঞ্চনসর্পিষাম্"।।

- মনুসংহিতা ৪/২৩৩📖🌿


অর্থাৎ,  যত ধরনের দান এই পৃথিবীতে আছে,জলদান,অন্নদান, ধেনুদান ভূমিদান, বস্ত্রদান, তিলদান,স্বর্ণদান,এই সকল দানের মধ্যে বেদের দান/বেদশিক্ষা দান সর্বশ্রেষ্ঠ দান। 


অনেক মূর্খ ব্যক্তি তার সম্পদ কমে যাবে এই জন্য দান করা থেকে বিরত থাকেন। যা সত্যি অযৌক্তিক। 

পবিত্র বেদ আমাদের উপদেশ দিয়েছে,


" বাং রাতিরুপ দসৎকদা 

  চনাস্মদ্রাতিঃ কদা চন" -ঋগ্বেদ ১/১৩৯/৫📖🌿


অর্থাৎ,  হে মানবজাতি! তোমাদের দেওয়া দান কখনো নষ্ট হয় না, কখনো কমে যায় না অর্থাৎ দান করলে ধন হ্রাস হয় না।


দানশীল হওয়া আমাদের অন্যন্য এক গুণাবলি হওয়া উচিত। দান করাকে উৎসাহিত করার জন্য পরমাত্মার উপদেশ, 


"শত হস্ত সমাহার,সহস্র হস্ত সং কির"

- অথর্ববেদ ৩/২৪/৫📖🌿


অর্থাৎ, আয় করতে হাতটিকে শতটিতে বৃদ্ধি কর আর দান করতে তাকে সহস্রটিতে রুপান্তরিত কর!


📑✍️পবিত্র বেদ আমাদের সবসময় মানুষ হিসেবে কর্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। দান করা মনুষ্যের মহৎ এক গুণ। পৃথিবীতে দান করার মাধ্যমে সাম্য ও ভাতৃত্ববোধের জন্ম হয়। তাই আসুন বেদ এর পথে ফিরে এর বৈদিক গুণাবলি ধারণ করে হয়ে উঠি আর্য তথা শ্রেষ্ঠ। 


🌿 ---------ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি--------------- 🌿


 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

🔸সনাতন ধর্ম ও নারী 💐

সনাতন ধর্মে কি গোমূত্র পানের উল্লেখ রয়েছে ⁉️

▪️একাদশী" কি শাস্ত্র সম্মত ❓