🌸মানব জন্মে কেউ কি পূর্ণ সুখী হতে পারে❓
📖উত্তরঃ অবশ্যই না। যার কারণ ত্রিবিধ দুঃখ।প্রত্যেক মানবের জীবনে ত্রিবিধ দুঃখ রয়েছে।
"ও৩ম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ"
ইহাতে তিনবার শান্তি পাঠের প্রয়োজন কারণ, সংসারে ত্রিবিধ তাপ অর্থাৎ দুঃখ আছে।
যথাঃ-
🔸দুঃখ তিন প্রকার৷
- ১. আধ্যাত্মিক দুঃখ। নিজের মনের অহংকার, হিংসা, বিদ্বেষ এসব পুষে রাখলে এসব দ্বারা মানুষ নিজেই দুঃখ-কষ্ট পায়৷ তাই এগুলো আধ্যাত্মিক দুঃখ।
- ২. আধিদৈবিক দুঃখ৷ প্রকৃতিক বস্তুসমূহ, যাদেরকে আমরা দেবতাও বলি, তাদের দ্বারা যেসব দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে সেগুলো আধিদৈবিক দুঃখ৷ যেমন— ঝড়, বন্যা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা প্রভৃতি৷
- ৩. আধিভৌতিক দুঃখ। অন্যান্য প্রাণী, মানব দ্বারা আমরা যেসব দুঃখ-কষ্ট পাই সেগুলো আধিভৌতিক দুঃখ।
(প্রথম সমুল্লাস, সত্যার্থ প্রকাশ) পৃষ্ঠা নম্বরঃ- "৭-৮"
▪️সংখ্যা দর্শন বলা হয়েছেঃ-
“কুত্রাপি কোঽপি সুখী ন।”(সাংখ্য ৬।৭)অর্থাৎ, কোথাও কেউই সুখী নয়।
🔸আরও বলেছেনঃ-
“ দৃষ্টাৎ তৎসিদ্ধিনিবৃত্তেঽপ্যনুবৃত্তি দর্শনাৎ।”(সাংখ্য ১।২)অর্থাৎ, দৃষ্ট ভৌতিক পদার্থের মাধ্যমে দুঃখ থেকে চিরন্তনভাবে মুক্তি পাওয়া যায় না। ভৌতিক পদার্থের মাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য দুঃখ থেকে মুক্তি পাওয়া গেলেও আবার দুঃখ কিছুক্ষণ পর ফিরে আসে“অথ ত্রিবিধদুঃখাত্যন্তনিবৃত্তিরত্যন্ত পুরুষার্থঃ।”(সাংখ্য ১।১)অর্থাৎ, তিন প্রকার দুঃখ থেকে অত্যন্ত নিবৃত্তিই(মোক্ষ) হলো অত্যন্ত পুরুষার্থ(লক্ষ্য) ।
“পরিণামতাপসংস্কারদুঃখৈর্গুণবৃত্তিবিরোধাচ্চ দুঃখমেব সর্বং বিবেকিনঃ।”(যোগ ২।১৫)অর্থাৎ, পরিণাম, তাপ, সংস্কার এই তিন প্রকার দুঃখ এবং ত্রিগুণের বৃত্তির বিরোধের কারণে বিবেকীর কাছে সবগুলোই হলো দুঃখ ৷
🔸পরিণাম, তাপ এবং সংস্কার এখানে দুঃখের তিনটি প্রকারভেদঃ-
- ১. পরিণাম দুঃখ- আপাতত দৃষ্টিতে যেসব কর্ম সুখের মনে হয়, কিন্তু দিন শেষে দুঃখময় পরিণাম প্রদান করে, সেগুলোকে পরিণাম দুঃখ বলা হয় ৷
- ২. তাপ দুঃখ— মানুষের সুখ সাময়িক। এই সায়মিক সুখকেই মানুষ আকড়ে ধরে রাখতে চায়। ফলে মানুষের মনের মধ্যে সুখ হারানোর ভয় সর্বদা বিদ্যমান থাকে। এই ভয় থেকে যে দুঃখের অনুভূতি হয় সেটিই তাপ দুঃখ । এছাড়াও নিজের সীমিত সুঃখ এবং অন্যের তার চেয়ে অধিক সুখ দেখার কারণে মনের মধ্যে যে ঈর্ষার ভাব তৈরি হয় এবং তার কারণে মনে যে দুঃখ প্রাপ্ত হয়, সেটিও তাপ দুঃখ ৷
- ৩. সংস্কার দুঃখ- সুখের সামন্যতম অনুভূতিও মানুষের মনে চিরকাল সঞ্চিত থাকে। এই অনুভূতি পরবর্তী দুঃখের সময় অতীতের সুখের স্মৃতি হয়ে বার বার মানুষকে দুঃখ দেয়। এই স্মৃতিই হলো সংস্কার দুঃখ। তাই দৈন্দিন জীবনে এতভাবে আসন্ন দুঃখকে আমরা অতিক্রম করতে পারি না। আমরা সংসার, জগতে যেরকম। আষ্টেপৃষ্টে আছি, দুঃখেও সেভাবে জড়িয়ে আছি। এজন্য আমাদের পক্ষে সরাসরি দুঃখকে রোধ করা সম্ভব হয় না।
🔸দুঃখের মূল কারণ আমাদের কর্মঃ-
कृ॒तꣳ स्म॑र | কৃতং স্মর"[यजुर्वेद ४०/१५ | যজুর্বেদ ৪০/১৫]অর্থ— হে মনুষ্য !তোমার কৃতকর্মকে স্মরণ করো।
▪️অথর্ববেদে বলা হয়েছেঃ-
"सु॒कर्मा॑णःसु॒रुचो॑ | সুকর্মাণঃ সুরুচোঃ"[अथर्ववेद १८/३/२२ | অথর্ববেদ ১৮/৩/২২]অর্থ— সুকর্মকারী যশস্বী হয়।
🔸ন্যায় দর্শনে বলা হয়েছেঃ-
“দুঃখজন্মপ্রবৃত্তিদোষমিথ্যাজ্ঞানানাম্ উত্তরোত্তরাপায়ে তদনন্তরাপায়াদপবর্গঃ।”(ন্যায় ১।১।২)অৰ্থাৎ দুঃখ, জন্ম, প্রবৃত্তি, দোষ, মিথ্যাজ্ঞান এসবের ক্রমান্বয়ে বিনাশে পূর্বগুলোর বিনাশ ঘটে এবং অপবর্গ লাভ হয় ৷
▪️অর্থাৎ ত্রিবিধ দুঃখ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় চিরমুক্তি তাই আমাদের নিজ নিজ কর্ম(নিষ্কাম কর্ম) করে যেতে হবে। কর্মের মাধ্যমে আমরা ত্রিবিধ দুঃখ থেকে মুক্ত হতে পারব।
🔸যজুর্বেদ এর দূর্গুণ দূর করার মন্ত্রঃ-
ও৩ম্ বিশ্বানি দেব সবিতর্দুরিতানি পরাসুব। যদভদ্রন্তন্ন আসুব।।[যজুঃ৩০।৩]অর্থাৎ হে সকল সৃষ্টির রচয়িতা পরমেশ্বর! আমাদের সব দূর্গুণ দূর করিয়া যাহা কিছু কল্যাণকর তাহাই দান করুন।।
▪️পরমেশ্বরের কাছে আমার প্রার্থনাঃ-
🪔আমি যেন কখনো দুঃখী না হই। 🪔(ঋগ্বেদ ১০.১৮.১৩)
প্রচারেঃ VEDA
ও৩ম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ
