পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ সুখী সমৃদ্ধ হওয়ার প্রত্যাশা করে। কিন্তু এ সংসারে কেউ পূর্ণ সুখী হতে পারে না। আমরা সুখকে প্রাপ্ত করার জন্য নিরলস প্রচেষ্টায় লিপ্ত থাকি কিন্তু প্রকৃত সুখ কি তা উপলব্ধি করতে পারি না।
তাহলে কিভাবে প্রকৃত সুখকে প্রাপ্ত করতে পারে?
এ অভিধান বর্ণনায় প্রয়োজন প্রকৃতিতে ফুলের অবদান উপমাকে উন্মোচিত করে। ফুল কখনো নিজের জন্য ফোটে না বরং সে তার সৌরভ ও সৌন্দর্য দ্বারা সকলের মনকে আনন্দিত করে তোলে। তাহার প্রচেষ্টা শুধু নিজেকে নিয়ে নয় বরং সকলের প্রতি নিজেকে সমর্পিত করার মাঝে।
তদরুপ, মনুষ্য কখনো নিজ স্বার্থ, অহংবোধ এবং একাকী সুখী হতে পারে না। কারণ তার আকাঙ্ক্ষার শেষ নেই।
"পুলুকামো হি মর্ত্যঃ" [ ঋগ্বেদ ১.১৭৯.৫ ]
মানুষের চাওয়া ও পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিবৃত্তির কোনো শেষ নেই ।
তাই মনুষ্যকে নিজের সুখের পাশাপাশি অপরের প্রতি সহমর্মিতা, ভালোবাসা ও সুখ সমৃদ্ধির কামনা করাই উচিত।
"আ শাসতে প্রতি হর্যন্ত্যুক্থেমা হরী বহতস্তা নো অচ্ছ" - [ঋগ্বেদ ১.১৬৫.৪]
অর্থাৎ , যেভাবে নিজের সুখের কামনা করা হয় , সেভাবে সকলের সুখের জন্য তাদের দুঃখ দূর করা উচিৎ।
হিংসা বা বিদ্বেষ ভাবকে দূরে করে অপরের কল্যাণ কামনা করা উচিত।
"যুযোধ্যস্মদ্ দ্বেষাংসি' [ ঋগ্বেদ-২.৬.৮ ]
হে পরমেশ্বর! আমাদের হৃদয় থেকে ঈর্ষা , দ্বেষ , বৈরী ভাবকে দূর করো ।
যেন আমরা অপরের প্রতি ভালোবাসার বাণী ছড়িয়ে দিতে পারি। আমরা প্রতিনিয়ত নিজ চরিত্রের উন্নতির প্রচেষ্টা করতে হবে।
" আর মা সুচরিতে ভজ । " [ যজুর্বেদ ৫.৮ ]
হে পরমেশ্বর ! আমাকে সচ্চরিত্র প্রদান করো ও তা ধারণ করতে সক্ষম করো।
কারণ মানবের শ্রেষ্ঠত্ব তা ভোগ বিলাসিতায় নয় বরং ত্যাগ স্বীকার করে অপরের মঙ্গল কামনা করাই তার চরিত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
আমাদের লক্ষ্য কখনো বিশ্বকে পদানত করা নয়, অন্য মতের অনুসারীকে ঘৃণা করা নয়। বরং, আমাদের লক্ষ্য অজ্ঞানীকে জ্ঞান প্রদান করা।
"কেতুং কৃগ্বন্নকেতবে" [ যজুর্বেদ ২৯.৩৭ ] অজ্ঞানীকে জ্ঞান প্রদান করতে পারি।
এবং, বিশ্বের সকলকে ভালোবাসার সম্পর্কে আবদ্ধ করা। কারণ, "বসুধৈব কুটুম্বকম " এ বিশ্ব একটি পরিবার।
সত্যমার্গে নিজেকে পরিচালিত করা। কখনো ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়া নয়। তাই আমাদের প্রার্থনা,
"অভয়ং কৃণুহি বিশ্বতো নঃ" [ যজুর্বেদ ৭.৩৭ ]
হে পরমাত্মান্ ! আমাকে সমস্ত দিক থেকে নির্ভয় করো।
অসহায়কে সহযোগিতা করা, ক্ষুদার্থ ব্যাক্তিকে খাদ্য প্রদান করা আমাদের কর্তব্য,
"ক্ষুধ্যদ্ভ্যো বয় আসুতিং দাঃ"
[ঋগ্বেদ ১/১০৪/৭]
অর্থাৎ, ক্ষুধার্তকে অন্ন ও পানীয় দাও।
"শত হস্ত সমাহার,সহস্র হস্ত সং কির"
[অথর্ববেদ ৩/২৪/৫]
অর্থাৎ, আয় করতে হাতটিকে শতটিতে বৃদ্ধি কর আর দান করতে তাকে সহস্রটিতে রুপান্তরিত কর!
তাই হে অমৃতের সন্তানগণ। সুখ কখনো ব্যক্তি স্বার্থ থেকে প্রাপ্ত হতে পারে না। বরং পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা, সহযোগিতাই পারে একটি সুখী সমৃদ্ধ সমাজ গড়তে। কারণ পরমাত্মা আমাদের উপদেশ দিয়েছেন,
"সমানী প্রপা সহ বোরন্নভাগঃ সমানে যোক্ত্রে সহ বো যুনজ্মি।
সমঞ্চোহগ্নিং সযপর্যতারা নাভিমিবাভিতঃ"।।
- অথর্ববেদ ৩/৩০/৬
অর্থাৎ,হে মনুষ্যগণ তোমাদের ভোজন ও আহার হোক একসাথে,একপাত্রে, তোমাদের সকলকে এক পবিত্র বন্ধনে যুক্ত করেছি,তোমরা সকলে এক হয়ে পরমাত্মার উপাসনা(যজ্ঞাদি,ধ্যান) করো ঠিক যেমন করে রথচক্রের চারদিকে অর থাকে!
ও৩ম্ শান্তি শান্তি শান্তি 🕉️🚩
প্রচারে: VEDA