✅ অপপ্রচার এর প্রত্যুত্তর ধর্মই সনাতন - সনাতনই ধর্ম
নমস্কার 🕉️🚩
➡️✍️ সনাতনই ধর্ম, ধর্মই সনাতন। যা সকল মানুষকে বিভক্ত নয় বরং ভাতৃত্বের শিক্ষা প্রদান করে। সর্বদা সত্য অন্বেষণ এর জন্য অনুপ্রেরণা দেয়। ঈশ্বর পবিত্র বেদ এর মাঝে সে সকল অমৃত জ্ঞান প্রদান করেছেন যা একজন মনুষ্যের স্বীয় কর্তব্য ও দায়িত্ব পালনে প্রয়োজনীয়। সবার আচরণ ভিন্ন কারণ তারা ভিন্ন ভিন্ন মতে বিশ্বাসী। কেউ যা উচিত বলে মান্য করে, অন্য কেউ তাকে নিষিদ্ধ ও অবৈধ বলে ঘোষণা করে। কিন্তু এমন দ্বিধা বিভক্ত, বহু মতের অমিল এমন সৃষ্টি কি ঈশ্বর কর্তৃক গৃহীত হতে পারে। নাহ! হতে পারে না। কারণ ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়। তাই তার প্রণীত ধর্ম এক তার কোনো বিভেদ বা পরিবর্তন সম্ভব নয়। তা চির শাশ্বত ও সনাতন। তাই ঈশ্বর কতৃক প্রণীত ধর্ম সনাতন বা চিরন্তন।
➡️ কিন্তু ধর্ম কি ? ধর্মের লক্ষণ সমূহ কি কি ?
আমাদের ধর্মের নামই ধর্ম। সংস্কৃত শব্দ ধৃ ধাতু হতে ধর্ম শব্দের উৎপত্তি যার অর্থ ধারণ করা। স্বয়ং ঈশ্বর যে ধর্মের প্রবর্তন করেছেন;আমরা সেই চিরন্তন ধর্মের ধারক। ধর্মের আগে কোন বিশেষ্য বা বিশেষণ এর প্রয়োজন নেই যে অমুক ধর্ম, তমুক ধর্ম। সেরূপ যেমন সত্য সত্যই, ন্যায় ন্যায়ই। এদের পূর্বে কোনো বিশেষণের প্রয়োজন নেই। তেমনি ধর্ম সত্য, তাই তাকে সত্যধর্ম বলা হয়। ধর্ম শাশ্বত চিরন্তন, তাই তাকে সনাতন ধর্ম বলা হয়। এই ধর্ম সৃষ্টির নিয়মে সুশৃঙ্খলভাবে প্রবাহিত, তাই তাকে ঋতম্ বলা হয়। যে ব্যক্তি বা বস্তু যে বৈশিষ্ট্য ধারণ করে সেটিই তার ধর্ম। যেমন- জলের ধর্ম তারল্য, আগুনের ধর্ম তাপ, পশুর ধর্ম পশুত্ব তেমনি মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব বা মানবতা। সেজন্য একমাত্র সনাতনধর্মে বলা হয়েছে,
"মনুর্ভব জনয়া দৈবং জনম্"
- ঋগ্বেদ, ১০/৫৩/৬।
অর্থাৎ, প্রকৃত মানুষ হও এবং অন্যকেও মানুষ হিসেবে গড়ে তোল।
সেজন্য, মনুষ্যের ধর্ম হলো মনুষ্যত্ব বা মানবতা। পবিত্র বেদ ও বৈদিক শাস্ত্র সমূহে কখনো ভৌগোলিক ভাবে কোনো কিছু হওয়া বা না হওয়ার উল্লেখ নেই। শুধু বলা হয়েছে, শ্রেষ্ঠ হতে, যোগী হতে, ধার্মিক হতে।
"যতোহভ্যুদয়নিঃশ্রেয়সসিদ্ধিঃ স ধৰ্মঃ"॥
- বৈশেষিক দর্শন ১/১/২
পদার্থঃ (যতোঃ) যা দ্বারা (অভ্যুদয়ঃ) অভ্যুদয় (নিঃশ্রেয়সসিদ্ধিঃ) [ ভাষ্যকারঃ আচার্য উদয়বীর শাস্ত্রী, আর্যসমাজ ] নিঃশ্রেয়স সিদ্ধি হয় (সঃ ধর্মঃ) তা-ই ধর্ম।
অর্থাৎ, যা দ্বারা পদার্থ সমূহের যথাযথ জ্ঞান ও তার প্রয়োগ দ্বাএয়া উন্নতি সিদ্ধ হয় তাই ধর্ম । এবং সেই ধর্মের পথপ্রদর্শক পবিত্র বেদ।
"চোদনালক্ষণোহর্থো ধর্মঃ"।
- পূর্বমীমাংসা ১/১/২
পদার্থঃ (চোদনালক্ষণঃ) চোদনা = নোদনা = প্রেরণা, যার লক্ষণ - সাধন এবং (অর্থঃ) অর্থ = বেদ শাস্ত্র প্রতিপাদিত বা বোধিত বিষয় তাহাই (ধর্মঃ) ধর্ম।
[ ভাষ্যকারঃ আচার্য উদয়বীর শাস্ত্রী, আর্যসমাজ ]
➡️ তবে কি কি গুণাগুণ ধর্মের লক্ষণ বা একজন ধার্মিককের পরিচয় বহন করে? এরুপ সংশয় নিবারণে মহর্ষি মনু বলেছেন,
"ধৃতিঃ ক্ষমা দমোহস্তেয়ং
শৌচমিন্দ্রিয়-নিগ্রহঃ।
ধীর্বিদ্যা সত্যমক্রোধো
দশকম্ ধর্মলক্ষণম্"
-মনুসংহিতা, ৬/৯২
অর্থাত্, সহিষ্ণুতা,ক্ষমা ,চুরি না করা ,শুচিতা ,ইন্দ্রিয়সংযম,শুদ্ধ বুদ্ধি,জ্ঞান,সত্য এবং ক্রোধহীনতা-এইটি দশটি ধর্মের লক্ষণ।
➡️ ধর্মের প্রবর্তক বা রচিয়তা কে❓
ধর্মের প্রবর্তক স্বয়ং ঈশ্বর। এবং সেই ধর্মই সনাতন অর্থাৎ চিরন্তন। ধর্ম বা সনাতন ধর্মের দু'টি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল– দিব্য ও সত্য। অর্থাৎ, সনাতন ধর্ম দিব্য, অর্থাৎ অপৌরুষেয় এবং যুগপৎভাবে সনাতন ধর্ম সত্য।
➡️ ✍️কিন্তু বহু মানুষের মাঝে একটি দ্বন্দ্ব লক্ষ্য করা যায়, যারা এরুপ সংশয় প্রকাশ করে যে, যদি ধর্ম একটাই হয় তাহলে পৃথিবীতে এত ধর্ম কিভাবে রয়েছে? একটি ধর্মের আদর্শ কেন অন্য ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক?
সত্যিকার অর্থে, এরুপ ধারণা আমাদের মনে অজ্ঞতার কারণে তৈরি হয়ে থাকে। ধর্ম ও রিলিজিয়ন এক বিষয় নয়। পৃথিবীতে আমরা যে সব প্রচলিত Religion দেখি সেগুলো ধর্ম নয়। সেগুলো নির্দিষ্ট কিছু আচার অনুষ্ঠান নিয়ম কানুনের সমষ্টিগত সাংস্কৃতিক, ভৌগলিক ও রাজনৈতিক মতাদর্শ। যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষের আদর্শের কারণে তৈরি যা বহু ক্ষেত্রে ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক পটভূমি দ্বারা প্রভাবিত। Religion শব্দের সংস্কৃত অর্থ ধর্ম নয়, Religion শব্দের সংস্কৃত অর্থ মার্গ। ধর্ম শব্দটা Religion এর বাংলা হিসেবে আমরা প্রচলিত ভুল অর্থে বা Misnomer হিসেবে ব্যবহার করি।
➡️জলের কি কখনো আলাদা আলাদা ধর্ম থাকে?
➡️অগ্নির কি কখনো আলাদা আলাদা ধর্ম থাকে?
➡️বায়ুর কি কখনো আলাদা আলাদা ধর্ম থাকে?
➡️জল, অগ্নি, বায়ুর ধর্ম কি সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয়?
➡️জল, অগ্নি, বায়ু কি কখনো তাদের ধর্ম পরিবর্তন করতে পারে?
এর সদুত্তর হলো : না। এমনটা সম্ভব নয় যে, অগ্নি পূর্বে সকল কিছু দগ্ধ করতো এখন করে না। যদি এমন হয় বা অগ্নি তার দগ্ধ করার ধর্ম পরিবর্তন করে তাহলে আমরা কি তাকে কখনো অগ্নি বলতে পারবো? অবশ্যই না। তাই শাস্ত্রে বলা হয়েছে, ধর্ম মাত্রই সনাতন বা চিরন্তন। অর্থাৎ, যা ছিল আছে থাকবে। যার শুরু নেই বা বিনাশ নেই। যা পরিবর্তন করা যায় না। তাহাই সনাতন বা চিরন্তন। এজন্য, মত বা পথ পরিবর্তন করা সম্ভব, তবে ধর্ম পরিবর্তন সম্ভব নয়। মত বা পথের নাম বিশেষণ হয়, কিন্তু ধর্ম ধর্মই। সত্য যেমন সত্যই, ন্যায় যেমন ন্যায়, তেমনি ধর্মই ধর্ম তাহার আলাদা নামের প্রয়োজন নেই। বরং উপমা রয়েছে যে সনাতন। এবং সে উপমা দ্বারা পরমাত্মাকেও নিত্য সনাতন বলা হয়েছে, তেমনি ধর্মকেও সনাতন বলা হয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে কিছু অবার্চীন, সংস্কৃত জ্ঞানহীন, হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির কপি-পেস্ট ব্যক্তিসমূহ এরুপ অযৌক্তিক অভিযোগ উত্থাপন করার প্রয়াস করে যে সনাতন শব্দ বৈদিক শাস্ত্র সমূহে নেই।
= সত্যি কি তাই⁉️
তবে আমরা তথ্য প্রমাণ এর সাহায্যে উদ্ঘাটন এর প্রয়াস করি আমাদের ধর্ম শাস্ত্রে সনাতন শব্দ এর উল্লেখ রয়েছে কি না!
পবিত্র বেদ সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ। সেজন্য বলা হয়,
“বেদোখিলো ধর্মমূলম্।” -মনুসংহিতা ২/৬
অর্থাৎ, বেদ হল হল ধর্মের মূল। ধর্মের বিষয়ে বেদই স্বতঃ প্রমাণ।
সে অমৃত জ্ঞান গ্রন্থের অথর্ববেদ কান্ড ১০, সুক্ত ০৮, মন্ত্র ৩২ এ বলা হয়েছে যে,
"অংতি সন্তং ন জহাত্যন্তি সন্তং ন পশ্যতি।
দেবস্য পশ্য কাব্যং ন মমার ন জীর্যতি"।।
- অথর্ববেদ, ১০/৮/৩২
অনুবাদ: মনুষ্য সমীপবর্ত্তী পরমাত্মাকে দেখেও না, তাঁহাকে ছাড়িতেও পারে না। পরমাত্মার কাব্য বেদকে দেখ; তাহা মরেও না, জীর্ণও হয় না।
অর্থাৎ পরমাত্মা যেমন সনাতন, তার বেদবাণীও সনাতন, বেদ কখনো জীর্ণ হয়না।
✅তাহলে এই মন্ত্রে স্পষ্টত উল্লেখ রয়েছে যে সেই পরমাত্মা সনাতন এবং তাহার বাণীও সনাতন। কারন সে বেদ বাণী মরেও না, জীর্ণ হয় না। আর যা অনাদি, নিত্য ও শাশ্বত তাহাই তো সনাতন।
পরবর্তী মন্ত্রে সেই পরমাত্মাকেও সনাতন বলে অভিহিত করা হয়েছে,
"ও৩ম্ ভোগ্য ভবদথো অন্নমদদ্ বহু ।
যে দেবমুতরাবন্তমুপাসতৈ সনাতনম্" ।।
➢ অথর্ববেদ, ১০/৮/২২।
পদার্থঃ— (যঃ) যে ব্যক্তি (দেবম্) ঐ প্রকাশময় (উতারাবন্তম্) শ্রেষ্ঠ গুণের চরমসীমারূপ (সনাতনম্) সনাতন পরমেশ্বরকে (উপাসাতৈ) উপসনা করে, সে (ভোগ্যঃ) উত্তমভোগকারী (ভবত) হয়, (অয়ো) এবং (বহু অন্নম অদত্) দীর্ঘ সময়কাল পর্যন্ত সুখপ্রাপ্ত হয় অর্থাৎ জীবকে প্রচুর অন্ন প্রদান পূর্বক সুদীর্ঘ জীবন প্রাপ্ত করে।
অর্থাৎ, সেই সনাতন পরমেশ্বরকে স্মরণকারী ব্যক্তি উত্তম ভোক্তা ও সুদীর্ঘকাল পর্যন্ত অন্নঅাদিকে প্রাপ্ত করে পুষ্ট হয়ে থাকে।
Translation: Whoever worships and meditates on Eternal Brahma, highest object of worship, would receive unbounded food of life and joy, and indeed Brahma itself would reveal its presence as food for his joyous experience in meditation.
✅এখানে স্পষ্টত পরমেশ্বরকে সনাতন বলে অভিহিত করা হয়েছে। (সনাতনম্)
একই বেদ এর পরবর্তী মন্ত্রে উল্লেখ রয়েছে,
"ও৩ম্ সনাতনমেনমাহুরুতাদ্য স্যাপ্তুনর্ণবঃ ।।
অহোরাত্রো প্রজায়েতে অন্যো অন্যস্য রূপয়ো" ।।
➢ অথর্ববেদ, ১০/৮/২৩।
পদার্থঃ— (এনম) এই পরমাত্মাকে (সনাতনং অাহুঃ) সনাতন বলা হয়, পরন্ত (উত অদ্য) তা তো আজও (পুনর্ণবঃ) পুনঃ নতুনের নতুন হয়। যে ভাবে (অহোরাত্রো) দিন ও রাত (অন্যঃ অন্যস্য রূপয়োঃ) এক রূপ হতে অন্য রূপে রূপান্তরিত হয়ে (প্রজায়েতে) উৎপন্ন হয়। দিনের পর রাত এবং রাতের পর দিন হয় এ জন্য রাত দিন নতুন নতুন লাগে,সেই প্রকারে সনাতন হয়েও ঈশ্বর নবীন হতেও নবীন। তিনি কখনও জীর্ণ হন না।
অর্থাৎ, রাত দিনের এই চক্র সেই সৃষ্টির আদি হতেই চলছে। তারপরেও প্রতিটি দিন, প্রতিটি রাত আমাদের কাছে নতুনের মতো লাগে। ঠিক তেমনি অনাদি অনন্ত সনাতন হয়েও ঈশ্বর সবসময় নবীন।
Translation: say this Brahma is Sanatana, Eternal, beyond time and age, and yet it arises ever anew in time and presence, as the day and night arise anew and follow each other in relation to the form and time of the occasion.
📖🕉️ শ্রীমদ্ভগবদগীতায় ৪র্থ অধ্যায়ের ৩০তম শ্লোকে বলা হয়েছে,
"সৰ্ব্বেহপ্যেতে যজ্ঞবিদো যজ্ঞক্ষয়িতকল্মষাঃ ।
যজ্ঞশিষ্টামৃতভুজো যান্তি ব্রহ্ম সনাতনম্" ।।
-শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৪/৩০
অর্থাৎ, এই যজ্ঞবিদ্গণ সকলেই যজ্ঞদ্বারা নিস্পাপ হয়ে থাকেন; যাঁহারা অমৃত-স্বরূপ যজ্ঞাবশিষ্ট অন্ন ভোজন করেন, তাঁহারা সনাতন ব্রহ্মপদ লাভ করেন।
Translation: these performers who know the meaning of sacrifice become cleansed of sinful reactions, and, having tasted the nectar of the results of sacrifices, they advance toward the supreme eternal atmosphere.
"ত্বমক্ষরং পরমং বেদিতব্যং ত্বমস্য বিশ্বস্য পরং নিধানম্ ।
ত্বমব্যয়ঃ শাশ্বতধর্মগোপ্তা সনাতনস্ত্বং পুরুষো মতো মে ।। - শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ১১/১৮
অর্থাৎ, তুমি পরম অক্ষর একমাত্র জ্ঞাতব্য ; তুমি বিশ্বের পরম আশ্রয় ; তুমি অব্যয়, শাশ্বত ধর্মের রক্ষক এবং সনাতন পুরুষ, এই আমার অভিমত।
Translation: You are the supreme primal objective. You are the ultimate resting place of all this universe. You are inexhaustible, and You are the oldest. You are the maintainer of the eternal Dhamra, the Personality of Godhead. This is my opinion.
✅উক্ত মন্ত্র ও শ্লোকের মাঝেও আমরা সেই পরমেশ্বরকে সনাতন বলে অভিহিত করার উল্লেখ পাই। সনাতনং আহুঃ)। তাহলে কিভাবে ভন্ডরা এরুপ অভিযোগ করে যে ধর্মগ্রন্থ এর মাঝে সনাতন শব্দের উল্লেখ নেই। এটা কি তাদের অপব্যাখ্যা নয়?
অপপ্রচারকারীগন হয়তো অভিযোগ তুলতে পারে যে এখানে পরমেশ্বরকে সনাতন বলা হয়েছে। কিন্তু ধর্মকে সনাতন বলা হয়নি। এটা তাদের অজ্ঞাতারই বহিঃপ্রকাশ। কারণ সনাতনধর্মে ঈশ্বর অনাদি এবং তার সৃষ্ট ধর্মও চিরন্তন তাই তাকে সনাতন বলা হয়।
তাহার পরেও তাদের ভ্রম দূর করার জন্য মনুস্মৃতির ৪র্থ অধ্যায়ের ১৩৮ শ্লোকের উদ্ধৃতি দেওয়া আবশ্যক। সেখানে বলা হয়েছে,
"প্রিয়ং চ নানৃতং ব্রুয়াদেষ ধর্ম্মঃ সনাতনঃ"।।
- মনুস্মৃতি ৪/১৩৮
অর্থাৎ, অপরের হিতকর প্রিয় সত্য কথা বলিবে, অপ্রিয় সত্য কথা কখনো বলিবে না যাহা লোকের মর্মভেদ করে, অপরকে প্রসন্ন করার নিমিত্তেও আবার মিথ্যা বলিবে না, ইহাই বেদবিহিত সনাতন ধর্ম।
তাহলে আমরা এখানে সেই সনাতন শব্দ পুনরায় খুঁজে পাই যা অপপ্রচারকারীগন চক্ষু থাকার পরেও দেখে না। উক্ত শ্লোকে স্পষ্টত বলা হয়েছে, ইহাই বেদবিহিত সনাতনধর্ম। তাহলে আর কেন সংশয়?
মনুস্মৃতির ২য় অধ্যায়ের ৮ নং শ্লোকে এটিই পুনরায় বলা হচ্ছে-
"পিতৃদেব মনুষ্যাণাং বেদশ্চক্ষুঃ সনাতনম্।
অশক্যাঞ্চাপ্রমেয়ঞ্চ বেদশাস্ত্রমিতি স্থিতি"।।
- মনুস্মৃতি ১২/৯৪
অর্থাৎ, পিতৃগণ, দেবগণ এবং মনুষ্যের পক্ষে বেদই সনাতন চক্ষু স্বরুপ, বেদ প্রণয়ন করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়, এবং মীমাংসাদিশাস্ত্র-নিরপেক্ষভাবে ঐ বেদ শাস্ত্রের তত্ত্ব অবগত হওয়াও অসম্ভব, এটি স্থির সিদ্ধান্ত।
✅তাহলে মনুস্মৃতি থেকে আমরা তিনটি শ্লোকে সনাতন শব্দের উল্লেখ পাই। তবু কেন বলা হয় সনাতন শব্দের উল্লেখ শাস্ত্রে নেই। ধর্ম সনাতন কারণ তাহা সেই সনাতন পরমেশ্বরের সৃষ্টি। তাই মতবাদীগণ যতই প্রচেষ্টা করুক তারা সনাতনধর্মকে তাদের মত বা পথের আদর্শে ব্যাখ্যা করতে পারে না।
➡️সনাতন শব্দের উল্লেখ পবিত্র বেদ ও মনুস্মৃতি এবং শ্রীমদ্ভগবদগীতা ছাড়াও তার উল্লেখ ঐতিহাসিক গ্রন্থ মহাভারতেও রয়েছে।
মহাভারত - অনুশাসন পর্ব - অধ্যায় ১৫তম,
"দেবাসুরমুনীনাং তু যচ্চ গুহং সনাতনম্।
গুহায়াং নিহিতং ব্রহ্ম দুর্ব্বিজ্ঞেয়ং মুনেরপি" ॥২৯||
অর্থাৎ, যিনি দেবতা, অসুর ও মুনিগণের নিকটেও গুপ্ত বহিয়াছেন, যে সনাতন অক্ষ সাধুগণের হৃদয়গুহায় নিহিত আছেন এবং যিনি মুনিগণেরও দুৰ্ব্বিজ্ঞেয়, এই সেই ভগবান সৰ্ব্বকারী, সৰ্ব্বতোমুখ, সৰ্ব্বাত্মা, সর্ব্বদর্শী, সৰ্ব্বত্রগামী, সর্বজ্ঞ, দেহসৃষ্টিকারী, দেহপুষ্টিকারী, দেহধারী, দেহসংহারী, দেহিগণের গতি, প্রাণকাৰী, প্ৰাণৰক্ষাকারী, প্রাণধারী, প্রানদাতা, প্রাণিগণের গতি ও দেহৰক্ষার উপায় এবং ভক্ত, ধ্যানকারী আত্মজ্ঞ ও মুক্তিকামিগণের যিনি গতি এই সেই পরমেশ্বর।
"অতঃ প্রবর্ত্ততে সর্বমস্মিন্ সর্বং প্রতিষ্ঠিতম্।
অস্মিংশ্চ প্রলয়ং যাতি অয়মেকঃ সনাতনঃ" ॥৩৬
অর্থাৎ, এই মহাদেব হইতেই সমস্ত উৎপন্ন হয়, ইহাতেই সমস্ত প্রতিষ্ঠিত আছে এবং এই মহাদেবেই সকল লয় প্রাপ্ত হইয়া থাকে। সুতরাং একমাত্র ইনিই
সনাতন ॥
"এতৎপদমনুদ্বিগ্নমেতদৃব্রহ্ম সনাতনম্ ।
শাস্ত্রবেদাঙ্গবিদুষামেতদ্ধ্যানং পরং পদম" ॥৫৭৷
অর্থাৎ, ইনিই নির্ভয় স্থান, ইনিই সনাতন ব্রহ্ম এবং শাস্ত্র ও বেদাঙ্গবিদগণেৰ ইনিই পরম ধ্যানের বিষয়।
উপরোক্ত ২৯/৩৬/৫৭ শ্লোকে এবং ৬২/৬৩ শ্লোকেও সনাতন শব্দের উল্লেখ রয়েছে। সেই পরমেশ্বরকে সনাতন বলা হয়েছে। তাই ভন্ডরা যে অভিযোগ সমূহ করে যে শাস্ত্রে সনাতন শব্দের উল্লেখ নেই এটি অন্য মত থেকে চুরি করা তার প্রতি আহ্বান থাকবে কপি-পেস্ট ত্যাগ করে কিছু শাস্ত্র নিজে অধ্যয়ন করতে। তাহলে সে সত্যকে উপলব্ধি করতে পারবে৷
➡️ ✍️হে অমৃতের সন্তানগণ! সত্য যেমন সত্যই, ন্যায় যেমন ন্যায়, তেমনি ধর্মই ধর্ম তাহার আলাদা নামের প্রয়োজন নেই। বরং উপমা রয়েছে যা সনাতন। সেই উপমা যা পরমেশ্বরকে সনাতন বলে অভিহিত করে, সেই উপমা যা প্রকৃতিকেও সনাতন বলে। তাই সনাতন অর্থ যা ছিলো আছে থাকবে। তাই ধর্মও সনাতন তাহার পরিবর্তন মানে বস্তুর অস্তিত্ব অসম্ভব। সেজন্য ধর্মকেও সনাতন বলে অভিহিত করা হয়েছে।
আর তাই সনাতন পরমব্রহ্ম প্রেরিত সনাতন বেদবাণীর দ্বারা বিধৃত ও দৃষ্ট যে ধর্ম তাই সনাতন ধর্ম। ধর্ম মানেই সনাতন কারণ সৃষ্টির আদি থেকেই ধর্ম বিদ্যমান। আর তাই কোন মানুষ ধর্মের প্রবর্তক হতে পারেনা কারণ মানুষ সৃষ্টির আগে থেকেই ধর্ম মহাজগতে উপস্থিত।
➡️✍️ এরুপ অপপ্রচার সম্পর্কে সচেতন হতে প্রয়োজন শাস্ত্রীয় জ্ঞান অর্জন। কারণ জ্ঞানই আমাদের অন্ধকার থেকে আলোতে পৌঁছে দেয়। তাই আসুন বেদ এর অমৃত জ্ঞান অধ্যয়ন করি ও প্রচার করি।
"শেয়ার করে পৌঁছে দিন
অপপ্রচার রুখে দিন" 📢✊
বি:দ্র: আমরা পৃথিবীর প্রতিটি মত ও পথকে সম্মান করি ও শান্তি ও সৌহার্দ্যে বিশ্বাসী। উক্ত পোস্ট শুধুমাত্র সনাতন ধর্ম নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার এর প্রত্যুত্তর দেওয়া হয়েছে। কোনো মত বা পথ বা religion কে হেয় করা হয়নি।
প্রচারে:- VEDA
মন্তব্যসমূহ