✅ "সনাতন ধর্ম শাস্ত্রীয় প্রশ্নোত্তর"
➡️✍️সনাতন ধর্ম শাস্ত্র সমূহ মানব এবং বিশ্বের সকলকে ভাতৃত্ব ও একতা শিক্ষা দেয়। এমন কোনো বিষয় নেই যা সনাতন শাস্ত্র সমূহে আলোচনা করা হয়নি৷ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মানব সন্তান কি করণীয় এবং কি বর্জনীয় তার সঠিক মার্গ প্রদর্শন করা হয়েছে শাস্ত্র সমূহে।
নিম্নে কিছু সংশয়ী প্রশ্ন এবং তার যথাযথ উত্তর প্রদান করা প্রয়াস করা হলো:
➡️ সনাতন ধর্ম শাস্ত্রে ব্যাভিচার নিয়ে কি বলা হয়েছে⁉️
নারী ও পুরুষ বিবাহের মাধ্যমে গার্হস্থ্য আশ্রমে পদার্পণ করবে এবং নিজ জীবনকে পরিচালিত করবে মোক্ষ অর্জনের পথে। কিন্তু কোনো নারী বা পুরুষ যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় তাহলে তাহা হবে অধর্ম।
"পর্যস্তাক্ষা অপ্রচঙ্কশা অস্ত্রৈণাঃ সন্তু পণ্ডগাঃ।
অব ভেষজ পাদয় য ইমাং সম্বিবৃৎসত্যপতিঃ স্বপতিং স্ত্রিয়ম্ ॥" - অথর্ববেদ ৮/৬/১৬📖🕉️
অর্থাৎ, তত্ত্বজ্ঞানীদের নিন্দুক ও ব্যভিচারী পুরুষ যেন কখনো শাসনকর্তা কিংবা আমাদের স্ত্রীদের সাথে মিলিত না হয় । হে ভয় নিবারক মানব ! যে ব্যক্তি স্বামী না হয়েও স্বামীরূপে পতিব্রতা স্ত্রীদের নিকট আসতে চায় সেই ব্যক্তিকে দণ্ডদান করে অধঃপতিত করো ।
"পরদারাভিমর্ষেষু প্রবৃত্তান্ নূন্ মহীপতিঃ। উদ্বেজনকরৈদণ্ডৈশ্চিহ্নয়িত্বা প্রবাসয়েৎ।।"
-মনুস্মৃতি ৮/৩৫২📖🕉️
অর্থাৎ, যে সব লোক পরদারসম্ভোগে প্রবৃত্ত হয় রাজা তাদের নাক-কান-ছেদন প্রভৃতি এমন উদ্বেগজনক দণ্ডের দ্বারা চিহ্নিত ক'রে দেবেন যা দেখে সকলে ভীত হয়; সেই অবস্থায় তাদের দেশ থেকে বহিষ্কৃত ক'রে দেবেন।
তাই নারী পুরুষ উভয় ব্যভীচার রুপ পাপ থেকে বিরত থাকবে।
➡️ সনাতন ধর্ম শাস্ত্রে ধর্ষণ বিষয়ে কি বলা হয়েছে⁉️
সনাতন ধর্ম শাস্ত্র সমূহে নারীকে দেবী, জ্ঞানের ধারক রুপে মর্যাদা প্রদান করা হয়। সেজন্য নারীর প্রতি কোনো অবিচার, অন্যায় কাজ অবৈধ এবং শাস্তি যোগ্য। সেজন্য শাস্ত্রে নারীর ধর্ষণের জন্য রয়েছে শাস্তির বিধান।
"যস্ত্বা ভ্রাতা পতির্ভূত্বা জারো ভূত্বা নিপদ্যতে।
প্রজাং যস্তে জিঘাংসতি তমিতো নাশয়ামসি ॥"
-অথর্ববেদ ২০/৯৬/১৫📖🕉️
অর্থাৎ, হে স্ত্রী ! যে ব্যভিচারী পুরুষ ছলে ভাই কিংবা স্বামী হয়ে ধর্ষণ করে এবং এভাবে তোমার গর্ভস্থ সন্তানকে গর্ভপাতরূপে হত্যা করে তাকে এই জীবনেই আমরা রাজ্যাধিকারীগণ বিনষ্ট করি ।
" পরদারাভিমর্ধেষু প্রবৃত্তান্নৃন্মহীপতিঃ। উদ্বেজনকরৈর্দন্ডৈশ্চিহ্নয়িত্বা প্রবাসয়েৎ"
-মনুস্মৃতি- ৮/৩৫২📖🕉️
অর্থাৎ, যারা নারীদের ধর্ষণ করে বা উত্ত্যক্ত করে বা ব্যভিচারে প্ররোচিত করে, তাদের এমন শাস্তি দিতে হবে যাতে তা অন্যদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করে এবং কেউ তা করতে আর সাহস না পায়।
✅সেজন্য আমরা সকলে নারীকে সম্মান করবো এবং নারীর প্রতি যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবো।
➡️ সনাতন ধর্ম শাস্ত্রে মদ্যপান বা নেশাদ্রব্য বিষয়ে কি বলা হয়েছে?
সনাতন শাস্ত্র সমূহ সে সকল জিনিসের বৈধতা প্রদান করেছে যা মনুষ্যের জন্য মঙ্গলকর এবং শুভ। তাই শাস্ত্রে মদ্যপান বা নেশাদ্রব্য গ্রহণের বিষয় রয়েছে তীব্র নিষেধাজ্ঞা।
"নকী রেবন্তং সখ্যায় বিন্দসে পীয়ন্তি তে সুরস্বঃ।
যদা কৃণোষি নদনুং সমূহস্যাদিৎপিতে হুয়সে"।।
- ঋগ্বেদ ৮/২১/১৪📖🕉️
অর্থাৎ, তোমরা সুরাপানকারী,নেশাকারী সঙ্গী অথবা বন্ধু যদি সবচেয়ে বিদ্বান বা ধনীও হয় তারপরও বজ্রপাততূল্য এবং অবশ্য পরিত্যাজ্য।
"সুরা বৈ মলমন্নানাং পাপ্মা চ মলমুচ্যতে।
তস্মাদ্বাহ্মণরাজন্যৌ বৈশ্যশ্চ ন সুরাং পিবেৎ" ॥
- মনু ১১/৯৪
অর্থাৎ, সুরা বা মদ অন্নের মল আর মলকে পাপ বলা হয়, এই জন্য দ্বিজরা কদাপি মদ্য পান করবে না।
✅সেজন্য, আমরা সকলে মদ্যপান বা সুরা পান থেকে বিরত থাকব । মদ্যপানকারী বা সুরা পানকারী থেকে দূরে থাকবো।
➡️ সনাতন ধর্ম শাস্ত্রে পোশাক সম্পর্কে কি বলা হয়েছে⁉️
সনাতন ধর্ম কোনো পক্ষপাতমূলক উপদেশ দেয় না। বরং শাস্ত্র সমূহে রয়েছে সমান নিষেধ ও উপদেশ। বহু মতে দেখা যায়, নারীকে তার পোশাক দ্বারা প্রভাবিত করতে কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে নিশ্চুপ। কিন্তু ধর্মে নারী পুরুষ উভয়কে শালীনতা উপদেশ দিয়েছেন।
"অধঃ পশ্যস্ব মোপরি সন্তরাং পাদকৌ হর।
মা তে কশপ্লকৌ দৃষান্তস্ত্রী হি ব্রহ্মা বভুবিথ"।।
- ঋগ্বেদ ৮/৩৩/১৯📖🕉️
অর্থাৎ, হে পুরুষ ও নারী,তোমাদের দৃষ্টি সবসময় হোক ভদ্র ও অবনত। তোমাদের চলন হোক সংযত,দেহ হোক পোষাকে আবৃত,নগ্নতা হোক পরিত্যজ্য।
কিন্তু শুধু পোশাক দ্বারা কখনো নারীর চরিত্রের বিচার হয় না সেজন্য মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম বলেছেন,
"ন গৃহাণি ন বস্ত্রাণি ন প্রাকারাস্ত্তিরক্রিয়া।
নৈদ্দৃশ্য রাজসৎকারা বৃত্তমাবরণং স্ক্রিয়া।।"
- বাল্মিকী রামায়ণ ৬/১১৪/২৭📖🕉️
অর্থাৎ, গৃহদ্বারা নয়, পোশাক নয়, কোনো প্রকার আবদ্ধ দেয়ালে লোকচক্ষু থেকে আবৃত থাকা নয়, নয় কোনো রাজ আভিজাত্য, চরিত্রই একজন নারীর প্রকৃত আবরণ।
✅তাই আমাদের পোশাক যেমন শালীন হবে তেমনি উন্নত হবে আমাদের চিন্তাও।
➡️সনাতন ধর্ম শাস্ত্রে অশ্লীলতা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে⁉️
সনাতন ধর্ম পবিত্রতা ও শালীনতা শিক্ষা দেয়। তাই অশালীন যা হা কিছু তা অধর্ম। আমরা অশালীন কিছু দেখা বা তা চর্চা থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিয়েছে বেদাদি শাস্ত্রসমূহ।
"ও৩ম্ ভদ্রং কর্ণেভি শৃনুয়াম দেবা ভদ্রং পশ্যেমাক্ষ ভির্যজত্রাঃ।
স্থিরৈরঙ্গৈস্তুস্টুবাংসস্তনুভির্ব্যশেম দেবহিতং যদায়ু"।।
- ঋগ্বেদ ১/৮৯/৮📖🕉️
অর্থাৎ, হে ঈশ্বর, আমরা যেন তোমার ভজন করি, কান দিয়ে শ্লীল ও মঙ্গলময় কথাবার্তা শুনি, চোখ দিয়ে শ্লীল ও মঙ্গলময় দৃশ্য দেখি। তোমার আরাধনাতে যে আয়ুস্কাল ও সুদৃঢ় দেহ প্রয়োজন তা যেন আমরা প্রাপ্ত হই।
✅ সেহেতু, আমরা অশালীন কার্যক্রম থেকে বিরত থেকে নিজেদের করে তুলি শ্রেষ্ঠ।
প্রচারে: VEDA
মন্তব্যসমূহ