▫️ আমাদের কর্মফল থেকে ভোগব্যতীত কি মুক্তি সম্ভব ❓

🕉️নমস্কার🕉️

➡️পরমাত্মা, জীবাত্মা ও প্রকৃতি - এই তিন সত্তা অনাদি। কিন্তু প্রকৃতি ও জীবাত্মা পরমাত্মা থেকে ভিন্ন সত্তা। কারণ পরমাত্মার বৈশিষ্ট্য অন্য দুই সত্তা থেকে তাহাকে আলাদা করে। ঈশ্বর এক সত্তা যিনি সর্বত্র বিরাজমান, নিরাকার, অনাদি, অনন্ত, সর্বেশ্বর, সর্বব্যাপক, সচ্চিদানন্দ, ন্যায়কারী, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, অজন্মা, দয়ালু, নির্বিকার, অনুপম, সর্ব অন্তর্যামী, অমর, অজর,অভয়,নিত্য, পবিত্র, সৃষ্টিকর্তা। পরমাত্মা কোনো কর্মফলের দ্বারা আবদ্ধ নন। কিন্তু জীবাত্মা এই অবস্থা থেকে মুক্ত নয়। অর্থাৎ, জীবাত্মা তাহার কৃত কর্মের জন্য বারংবার জন্ম মৃত্যু বন্ধনে আবদ্ধ। 

➡️মানুষ কর্ম করলে কর্মানুযায়ী ফল হবে এটাই শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত। তাই বাংলা ভাষায় একটি বিখ্যাত প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে, যেমন কর্ম তেমন ফল। সনাতন ধর্মের বিখ্যাত উক্ত তত্ত্বটি পাশ্চাত্যে Karma নামে অভিহিত। এই ' সংস্কৃত ' শব্দটি এতই প্রভাবশালী যে Karma শব্দটি বর্তমানে ইংরেজি অভিধানে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত। 

➡️জীবাত্মা কর্মের ক্ষেত্রে যদিও স্বাধীন, তবে কর্ম ফল কি হবে তা জীবাত্মা নির্ধারণ করতে পারে না। সেজন্য শ্রীমদ্ভগবদগীতা অধ্যায় ২য়, শ্লোক-৪৭ বলা হয়েছে, 

"কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন। 
মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোহস্ত্বকর্মণি"।।
- শ্রীমদ্ভগবদগীতা ২/৪৭📖🕉️

অর্থাৎ, কর্মেই তোমার অধিকার, কর্মফলে তোমার কোনো অধিকার নেই। কর্মফল যেন তোমার কর্মপ্রবৃত্তির হেতু না হয়, কর্ম ত্যাগেও যেন তোমার প্রবৃত্তি না হয়। 

➡️কর্ম ফলে আমাদের কোনো অধিকার নেই। তাই আমাদের নিষ্কাম কর্ম করার জন্য উপদেশ দেওয়া হয়েছে। তাহলে আমরা কি সে কৃত কর্ম ফলের বন্ধন থেকেও মুক্ত নাকি কর্ম ফল থেকে কোনো মুক্তি সম্ভব নয় ? 

➡️সত্যিকার অর্থে কর্ম ফল ভোগের মাধ্যমে কর্মফল বিনষ্ট হয়। ইহা ব্যতীত অন্য কোনো উপায় নেই যা দ্বারা কর্ম ফল ভোগ না করে তার থেকে মুক্তি সম্ভব। 
সেজন্য আমাদের কর্ম করার জন্য সর্বদা অনুপ্রাণিত করা হয়েছে, কর্ম ফলের প্রতি আসক্তি এড়িয়ে চলার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা যেমন কর্ম সম্পাদন করবো তেমনি তাহার ফল হবে। তাই পবিত্র বেদ এ বলা হয়েছে, 

"पक्तारं॑ प॒क्वः पुन॒रा वि॑शाति"  -अथर्ववेद १२/३/४८
"পক্তারং পক্বঃ পুনরা বিশাতি"
- অথর্ববেদ ১২/৩/৪৮📖🕉️

অর্থাৎ, মানুষ যেমন রন্ধন করে তেমনই ভক্ষণ করে।

➡️আমরা যদি সৎ কর্ম করি তাহলে তা শুভ ফল বয়ে আনে এবং যদি কুকর্ম করি তাহার তাহার ফলও খারাপ হবে৷ সেজন্য, যেকোনো ব্যক্তি তার কৃত কর্মের দ্বারা আবদ্ধ। 

➡️কেউ যদি এরুপ ধারণা করে যে, সে অন্যের ক্ষতি করে নিজেকে ভালো রাখতে পারবে তাহলে এটি সে ব্যক্তির মূর্খতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। পবিত্র বেদ স্পষ্টত বলছে, 

"उदे॒णीव॑ वार॒ण्य॑भि॒स्कन्धं॑ मृ॒गीव॑।कृ॒त्या क॒र्तार॑मृच्छतु॥"
[अथर्ववेद ५/१४/११]

"উদেণীব বারণ্যভিস্কন্ধং মৃগীব।কৃত্যা কর্তারমৃচ্ছতু।।" -অথর্ববেদ ৫/১৪/১📖🕉️

অর্থাৎ,  অসৎকর্ম কর্তার দিকেই ফল হয়ে ফিরে আসে যেমন মৃগ ব্যাধের দিকে,বাঘ শিকারীর দিকে,হস্তী লুব্ধকের দিকে ফিরে আসে।

"इष्वा॒ ऋजी॑यः पततु॒ द्यावा॑पृथिवी॒ तं प्रति॑।सा तं मृ॒गमि॑व गृह्णातु कृ॒त्या कृ॑त्या॒कृतं॒ पुनः॑॥"[अथर्ववेद ५/१४/१२]

"ইস্বা ঋজীয়ঃ পততু দ্যাবাপৃথিবী তং প্রতি।সা তং মৃগমিব গৃহ্নাতু কৃত্যা কৃত্যাকৃতং পুনঃ।।"
-অথর্ববেদ ৫/১৪/১২📖🕉️

অর্থাৎ, দ্যুলোক ও পৃথিবীলোকে দুষ্টকর্ম ফল হয়ে ফেরত আসে কর্তার দিকে যেমন উপরে ছোঁড়া ধনুক নিচের দিকে দ্রুত তেড়ে আসে,যেমনটা আসে বাঘ হরিণের দিকে।

"अ॒ग्निरि॑वैतु प्रति॒कूल॑मनु॒कूल॑मिवोद॒कम्।सु॒खो रथ॑ इव वर्ततां कृ॒त्या कृ॑त्या॒कृतं॒ पुनः॑॥"[अथर्ववेद ५/१४/१३]

"অগ্নিরিবৈতু প্রতিকূলমনুকূলমিবোদকম্।সুখো রথ ইব বর্ততাং কৃত্যা কৃত্যাকৃতং পুনঃ।।"
-অথর্ববেদ ৫/১৪/১৩📖🕉️

অর্থাৎ, যেমন দ্রুতগামী রথ,তেমনি কর্ম ফল হয়ে দ্রুত ফিরে আসে কর্তার দিকে,তপ্ত অগ্নির ন্যায় প্রতিকূল দণ্ড হয়ে অসৎকর্মার দিকে,শীতল জলের ন্যায় অনুকূল সুখ হয়ে সৎকর্তার দিকে।

➡️তাহলে উপরোক্ত মন্ত্রদ্বয় থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, আমাদের কর্মের মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যতকে প্রভাবিত করে থাকি। 

➡️কিন্তু আমাদের পূর্বোক্ত কর্ম যদি বর্তমান ভোগের কারণ হয়, তবে কি বর্তমান কর্মও পূর্বোক্ত কর্মের কারণ হতে পারে বা প্রতিবন্ধক হতে পারে⁉️

এ বিষয়ে মহর্ষি জৈমিনি তাঁর বিখ্যাত দর্শন গ্রন্থ মীমাংসা দর্শনে বলেছেন–
"নিয়মো বা তন্নিমিত্তত্বাৎ কর্তুস্তৎকারণং স্যাৎ॥"
মীমাংসা দর্শন– ৬।২।১৫📖🔥

➡️জীবের ভোগ (ফল) পূর্ব কর্ম অনুসারে প্রাপ্ত হয় । কিন্তু জীব কর্ম করায় স্বতন্ত্র হয়ে থাকে । এরূপ নিয়ম অর্থাৎ ব্যবস্থা রয়েছে । বর্তমানে ক্রিয়ামান কর্ম পূর্ব কর্ম ভোগ করার নিমিত্তে হতে পারে । তাই পূর্ব কর্মের ভোগ  ক্রিয়ামান কর্মের বাধক হয় না ।

➡️কিন্তু এমন যদি হয়ে থাকে, তাহলে ঈশ্বর কি আমাদের পাপের ক্ষমা করবেন না⁉️ 
যদি তিনি আমাদের পাপের ক্ষমা না করেন তাহলে তিনি কিভাবে ক্ষমাশীল⁉️

➡️এরুপ সংশয় নিবারণ এর জন্য আমাদের উপলব্ধি প্রয়োজন যে ঈশ্বরের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। আমরা সকলে জানি পরমেশ্বর সর্বশ্রেষ্ঠ ন্যায়বিচারকারী৷ তিনি কোনো প্রকার পক্ষপাত করেন। তাহার নিকট সকলে সমান। তিনি যেমন সর্বশ্রেষ্ঠ ন্যায়বিচারকারী, তেমনি করুণাময় ও ক্ষমাশীল। 

➡️ক্ষমা করা অর্থ অপরাধীর অপরাধ ক্ষমা করে দেয়া বোঝায় না। কারণ যদি অপরাধীকে ক্ষমা করা দেয়া হয়,তবে নির্দোষ মানুষ তার শিকার হয়ে যাবে। সুতরাং, যদি কোন অপরাধীকে বিচার না করা হয়, তবে একজন বিচারক নির্দোষ ব্যক্তিদের পক্ষে দয়ালু হতে পারবেন না। এটা অপরাধীদের জন্য ন্যায়বিচারও হবে না কারণ তাতে সেই অপরাধী আরও অপরাধ করা থেকে বিরত থাকবে না।

➡️উদাহরণস্বরূপ, যদি অপরাধীকে ক্ষমা করে দেয়া হয়, তবে সে আবারও বেশ কিছু নির্দোষ ব্যক্তিদের ক্ষতি করবে। যদি তাকে কারাবন্দী করা হয়, তবে এটি কেবল নির্দোষদের ক্ষতি করা রুখে দেয় না, বরং তার নিজেকে উন্নত করার সুযোগ দেয় ফলস্বরূপ সে আর অপরাধ করবে না। তাই ন্যায় বিচার মূলত দয়ার সমর্থক। অর্থাৎ, অপরাধী তার কৃত কর্মের দ্বারা প্রাপ্ত ফল ভোগ করতে হবে। তবেই সে তার অজ্ঞতা থেকে মুক্ত হবে এবং তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হবে। 

➡️শুধুমাত্র "সরি" বলাটা ঈশ্বরের ক্ষমা প্রাপ্তির জন্য যথেষ্ট না। পাপ বা অপরাধের উৎস অজ্ঞতা। যতক্ষণ পর্যন্ত অজ্ঞতা দূর করা যাচ্ছে না, আত্মা তার কর্মের জন্য যথাযথ শাস্তি বা পুরষ্কার পেতে প্রতি মুহুর্তে বিভিন্ন জন্ম এবং মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে যাবে । এই ন্যায়বিচারের সকল উদ্দেশ্য হল আত্মাকে পরমানন্দের উপহার প্রদান করা এবং এটাই সেই আত্মার প্রতি তার দয়াশীলতা।

➡️ঈশ্বর যদি পাপীকে তার কৃত কর্মের ফল প্রদান না করে। তাহলে সেই অপরাধী বা পাপী যার প্রতি অন্যায় করেছে তার প্রতি অবিচার করা হবে। ঈশ্বর কি এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ করতে পারেন যেখানে তিনি সর্বশেষ্ঠ ন্যায়বিচারক।

➡️কিন্তু বিভিন্ন মতের অনুসারীরা এরুপ প্রচার করে থাকে যে, যদি তুমি আমার মত গ্রহণ করো তাহলে তোমার সকল কৃত পাপ থেকে তুমি মুক্তি পাবে বা তুমি যদি কোনো বিশেষ স্থানে যাও বা বিশেষ কিছু ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাহলে তা তোমাকে তোমার সকল পাপ বা কর্মফল এক নিমিষেই শেষ হবে এবং তুমি মুক্তি পাবে? 

➡️দুর্ভাগ্যবশত, যারা তাদের মত বা পথের দিকে মানুষকে এই বলে আকর্ষণের চেষ্টা করে যে - ঈশ্বর তাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন, তারা আসলে নিজেদের এবং জনগণকে বোকা বানাচ্ছেন। ধরুন কারো ডায়াবেটিস আছে। এটা কি শুধু 'দুঃখিত' বললেই দূর হয়ে যায়? যখন একটি শারীরিক রোগকে মুক্ত করতে 'দুঃখিত' বলার চেয়ে অনেক বেশি কিছু করা লাগে, কিভাবে মানব মনের মত একটা জটিলতর বিষয়ের ক্ষেত্রে 'দুঃখিত' বললেই মুক্ত হয়ে যায়?

➡️উক্ত মতাদর্শগুলোতে একটি বিরাট ত্রুটি আছে, তারা এক জীবনে বিশ্বাস করে এবং পুনর্জন্ম বা জন্মান্তরে বিশ্বাস করেনা। তাই তারা মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য কৃত্রিম সংক্ষিপ্ত তাড়াতাড়ি' সূত্র তৈরি করতে চায় এবং মানুষরা তাদের সাথে একমত না হলে তারা তাদেরকে নরকের ভয় দেখায়।

➡️এরুপ কখনোই সম্ভব নয়, যে আপনি বা আমি দুঃখিত বললে তার থেকে মুক্তি সম্ভব। বরং, অনুতপ্ত হওয়া ও নিজের অজ্ঞতা দূর করার মাধ্যমে কর্ম ফলের থেকে মুক্তি সম্ভব। আর সে উপলব্ধি তখনই হবে, যখন আপনি নিজ কৃত কর্মের ফল ভোগ করবেন। 

➡️তাহলে আমাদের কিভাবে কর্ম সম্পাদন করা উচিত? যাহাতে আমরা এরুপ কর্মফলের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার থেকে মুক্তি পাবো? 

➡️নিষ্কাম কর্মই হলো সে উপায় বা মার্গ। যার দ্বারা ব্যক্তি কর্মফলের আসক্তি থেকে মুক্ত হয়ে মোক্ষ প্রাপ্তি করতে পারে। পবিত্র বেদ এ সেই নিষ্কাম কর্ম করার উপদেশ রয়েছে, 

কুর্বন্নেবেহ কর্মাণি জিজীবিষেচ্ছতং সমাঃ।
এবং ত্বয়ি নান্যথেতোঽস্তি ন কর্ম লিপ্যতে নরে॥২॥
-যজুর্বেদ ৪০/২📖🕉️
[ভাষ্যকার— মহর্ষি শ্রীমদ্দয়ানন্দ সরস্বতী ]

পদার্থঃ মনুষ্য (ইহ) এই সংসারে (কর্মাণি) ধর্মযুক্ত, বেদোক্ত নিষ্কাম কর্ম (কুর্বন্ এব) করেই (শতম্) শত (সমাঃ) বর্ষ (জিজীবিষেৎ) জীবিত থাকার ইচ্ছা করবে। (এবম্) এইপ্রকার ধর্মযুক্ত কর্মে প্রবৃত্তমান (ত্বয়ি) তোমাতে (নরে) ব্যবহারের নির্দেশক মনুষ্যে (কর্ম) মনোরথ সম্বন্ধিত অধর্মযুক্ত, অবৈদিক কাম্য কর্মের (ন লিপ্যতে) আবরণ থাকবে না (ইতঃ) এই বেদোক্ত কর্ম ভিন্ন (অন্যথা) অন্য প্রকারে সেই কর্মের আবরণের অভাব (ন অস্তি) হয় না॥২॥

সরলার্থঃ মনুষ্য এই সংসারে বেদোক্ত নিষ্কাম কর্ম করেই শতবর্ষ জীবিত থাকার ইচ্ছা করবে। এইপ্রকার ধর্মযুক্ত কর্মে প্রবৃত্তমান মনুষ্য তোমাতে অবৈদিক কাম্য কর্মের আবরণ থাকবে না। এই বেদোক্ত কর্ম ভিন্ন অন্য কোনো পথে মনুষ্য সেই কর্মের আবরণ থেকে মুক্ত হতে পারে না॥২॥

ভাবার্থঃ মনুষ্যগণ আলস্য পরিত্যাগ করে সর্বদ্রষ্টা, ন্যায়াধীশ পরমাত্মা এবং পালনযোগ্য তাঁর আজ্ঞা মেনে চলে, শুভ-কর্ম করে এবং অশুভ কর্মকে পরিত্যাগ করে, ব্রহ্মচর্যের দ্বারা বিদ্যা তথা উত্তম শিক্ষা লাভ করে, উপস্থেন্দ্রিয়ের সংযম দ্বারা বীর্য বৃদ্ধি করে, অকাল মৃত্যুকে প্রতিহত করবে এবং যুক্ত আহার-বিহারের দ্বারা শতবর্ষ আয়ু প্রাপ্ত করবে। যেমন যেমন মনুষ্য সুকর্মে চেষ্টা করে, সেরূপ পাপকর্ম থেকে তার বুদ্ধি নিবৃত্ত হতে থাকে। এর ফলস্বরূপ তার বিদ্যা, আয়ু ও সুশীলতা বৃদ্ধি পায়॥

এবং শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৩য় অধ্যায়ের ১৯তম শ্লোকে বলা হয়েছে, 

"তস্মাদসক্তঃ সততং কার্যং কর্ম সমাচর ।
অসক্তো হ্যাচরন্ কর্ম পরমাপ্নোতি পুরুষঃ"।। 
- শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৩/১৯📖🕉️

অর্থাৎঃ তুমি আসক্তিশূন্য হইয়া কর্ম সম্পাদন করো , অনাসক্ত হয়ে কর্মানুষ্ঠান করিলে পুরুষ পরমপদ (মোক্ষ) প্রাপ্ত হন ।

➡️নিষ্কাম কর্মের মাধ্যমে আমরা কর্ম ফলের আশা ত্যাগ করে শুধুমাত্র কর্তব্য সম্পাদনের নিমিত্তে কর্মে লিপ্ত হই। যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এরুপ নিষ্কাম কর্মের কথা বারংবার বলেছেন। শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৪র্থ অধ্যায়ের ২০তম শ্লোকে বলা হয়েছে, 

"ত্যাত্ত্বা কর্ম্মফলাসঙ্গং নিত্যতৃপ্তো নিরাশ্রয়ঃ।
কর্ম্মণ্যভিপ্রবৃত্তোহপি নৈব কিঞ্চিৎ  করোতি সঃ"।
-শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৪/২০📖🕉️

অনুবাদঃ- যিনি কর্মফলে অনাসক্ত হইয়া কর্মে প্রবৃত্ত থাকিয়া  সর্বদা সন্তুষ্ট  এবং 'আমিত্ব' ভাববিমুক্ত তিনি কর্ম দ্বারা পরিবৃত থাকিয়াও কিছু  করেন না,অর্থাৎ কর্ম করার কোন দোষই তাঁহাকে  স্পর্শ করিতে পারেনা।

➡️যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এরুপ নিষ্কাম কর্ম পালনকারী ব্যক্তিকে শ্রীমদভগবদগীতা ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের ১ম শ্লোকে যোগী বলেছেন, 

"অনাশ্রিতং কর্মফলং কার্যং কর্ম করোভি যঃ।
স সন্ন্যাসী চ যোগী চ ন নিরগ্নির্নচাক্রিয়ঃ"।।
- শ্রীমদভগবদগীতা ৬/১📖🕉️

অর্থাৎ, যিনি কর্মফলের প্রতি আসক্ত না হয়ে তাঁর কর্তব্য কর্ম করেন তিনিই যথার্থ সন্ন্যাসী বা যোগী। যিনি যজ্ঞাদি শ্রোতকর্ম ত্যাগ করিয়াছেন অথবা সর্ববিধ শারীর কর্ম ত্যাগ করিয়াছেন তিনি নহেন। 

➡️হে অমৃতের সন্তানগণ! সফলতার জন্য কোন সংক্ষিপ্ত বা দীর্ঘমেয়াদি পথ নেই। শুধুমাত্র সঠিক পথ আছে!  কোনও বিভ্রান্তিকর এবং প্রতারণাপূর্ণ সংক্ষিপ্ত পথের চেয়ে এই সঠিক পথের সাফল্য অনেক বেশি সন্তুষ্টকর! তাই যারা আপনাকে শর্টকাট পদ্ধতি অনুসরণ করে কর্ম ফল থেকে মুক্ত হওয়ার কথা বলে তাদের অজ্ঞানতা সম্পর্কে সচেতন হোন। 

প্রচারে: VEDA

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

🔸সনাতন ধর্ম ও নারী 💐

সনাতন ধর্মে কি গোমূত্র পানের উল্লেখ রয়েছে ⁉️

▪️একাদশী" কি শাস্ত্র সম্মত ❓