আয়ুর্বেদ শাস্ত্র কি ⁉️ প্রাচীন ভারতে আয়ুর্বেদ চর্চা !
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র কি
আয়ুর্বেদ শব্দের মধ্যে দুটি পদ আছে- আয়ু ও বেদ। অর্থ জীবনের বিজ্ঞান। আয়ুর্বেদ পঞ্চম বেদ হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। এর জন্মও যুগযুগব্যাপী বিকাশ এই ভারতেই হয়েছে। কোন এক প্রাচীনকালে হিমালয়ের পাদদেশে ঋষিদের এক মহাসম্মেলনে আয়ুর্বেদের সৃষ্টি হয়েছিল। মহর্ষি আত্রেয়র সভাপতিত্বে তাঁর ছয়জন শিষ্য ছয়টি আয়ুর্বেদ গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। তাই আয়ুর্বেদকে নিত্য ও অপৌরুষেয় বলা হলেও আয়ুর্বেদ গ্রন্থগুলি পৌরষেয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে আয়ুর্বেদের উপযোগিতা কি ?
যে শাস্ত্রের সাহায্যে আয়ু বা জীবন লাভ করা যায়, সেই শাস্ত্রকে বলা হয় আয়ুর্বেদ। ভারতে যে আয়ুর্বেদ বা চিকিৎসা বিজ্ঞান পরবর্তীকালে বিশেষ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল, তার মূল নিহিত ছিল অথর্ববেদের ভৈষজ্য বিষয়ক মন্ত্রগুলিতে। এখানে তরুন (জ্বর) প্রভৃতি নানাবিধ রোগের কথা বলা হয়েছে। রোগ নিবারক বিভিন্ন ভেষজের কথাও এখানে পাওয়া যায়। ভাঙাহাড় জোড়া দিতে লতাগুল্মের ব্যবহারের কথাও এখানে আছে। এছাড়া বৈদিকযুগে বন্ধ্যাত্বকরণ এবং মস্তিষ্কের শল্যচিকিৎসা বিদ্যারও বিশেষ চর্চা হত। তাই V.V. Varadachari মন্তব্য করেছেন 'Surgery was practised including major operations like amputation, laporotomy and trephining of the skull." অতএব চিকিৎসা শাস্ত্রে অথর্ববেদের অবদান অনস্বীকার্য।
আয়ুর্বেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হল-
"স্বাস্থ্যস্য স্বাস্থ্য রক্ষনম। আতুরাশ্চ বিকার প্রকশনম।।"
অর্থাৎ সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং অসুস্থতার নিরাময় করা। একে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় Preventive&curative health care service বলা হয়।
প্রাচীন ভারতের আয়ুর্বেদাচার্য
ভারতবর্ষে আয়ুর্বেদ-চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। ঋগ্বেদে, অথর্ববেদের ভৈষজ্য যন্ত্রে বিভিন্ন গাছ-লতাপাতার প্রয়োগে রোগ-নিরাময়ের কথা পাওয়া যায়। এই যন্ত্রগুলি প্রাচীন আয়ুর্বেদ চিকিৎসার মূলস্বরূপ। পরবর্তীকালে উক্ত যন্ত্রগুলির ভাষ্যে চিকিৎসা পদ্ধতির বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। বেদে বিশেষত অথর্ববেদে ভৈষজ্যসূক্ত প্রাচীনতম চিকিৎসাগ্রন্থরূপে মর্যাদাপ্রাপ্ত।
প্রাচীন ভারতে আয়ুর্বেদের উদ্ভব
ভারতের অসংখ্য গাছপালার বিভিন্ন অংশের স্বাদ, গন্ধ,বিক্রিয়ার জ্ঞান কিভাবে চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায় তার নির্দেশ আছে এখানে। কালক্রমে অষ্টাঙ্গ আয়ুর্বেদের উদ্ভব হয়। এই আটটি অঙ্গের পরিচয় ও এই এই বিষয়ে রচিত গ্রন্থের নাম হল-
১) কায়চিকিৎসা
পরিপাক ও বিপাক ক্রিয়ার সমস্যা থেকে জাত রোগ যেমন জ্বর অতিসার মেহ ইত্যাদির চিকিৎসা। গ্রন্থ-ভেলসংহিতা, জতুকর্ণসংহিতা, নাগার্জুনের যোগসার, চক্রপাণির চিকিৎসারসংগ্রহ, ভাবমল্লের ভাবপ্রকাশ ইত্যাদি।
২) শালাক্যতন্ত্র
মুখমন্ডলের রোগের চিকিৎসা। যেমন বিধেয়তন্ত্র, নিমিতন্ত্র, কাত্যায়নতন্ত্র।
৩) শল্যতন্ত্র
অস্ত্রোপচার। যেমন ভোজতন্ত্র, ভানুকীতন্ত্র,কপিলতন্ত্র।
৪) অগদতন্ত্র
প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম বিষে সংঘটিত রোগের চিকিৎসা।
৫) ভূতবিদ্যা
মনের চিকিৎসা হল ভূতবিদ্যা ।
৬) কুমারভৃত্য
শিশুচিকিৎসা। যেমন রাবণের কুমারভৃত্য, অজ্ঞাত কারও বালচিকিৎসা।
৭) রসায়ন
যৌবনধারকবিদ্যা। যেমন -কুচুমার তন্ত্র।
৮) বাজীকরণ
বংশরক্ষা সম্পর্কিত চিকিৎসা।
দাহবাহিসংহিতা ও কাশ্যপসংহিতায় অন্য অঙ্গগুলির আলোচনা আছে।
রোগ নির্ণয়ের জন্য আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে আটটি স্পেসিমেন বা বৈশিষ্ঠ্য পরীক্ষা করা হয়-
• আকৃতি Appearance, রোগীর চেহারা, হাঁটাচলার ধরন, অবস্থান
• দ্রাক-দৃষ্টিশক্তি
• স্পর্শ-ত্বকের সংবেদনশীলতা
• জিহ্বা- Tongue
• মল- Stool
• মুত্র- Urine
• নাড়ি - Pulse
• শব্দ-রেসপিরেটরী সাউন্ড
আয়ুর্বেদে সপ্তধাতু অর্থাৎ রোগের সাথে সম্পর্কযুক্ত সাতটি উপাদানের কথা বলা হয়েছে-
• রক্ত - Blood
• রস - Plasma
• মাংস - Muscle
• চর্বি- Fat
• অস্থি - Bone
• মজ্জা -Bone marrow
• শুক্র - Semen
প্রাচীন ভারতের চিকিৎসা বিজ্ঞান ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্র
আচার্য দের মতামত সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে কিছু সংকলন গ্রন্থের উদ্ভব হয়। চরক সংহিতা, সুশ্রুতসংহিতা ও বাগভট্টের অষ্টাঙ্গ হৃদয় সংহিতা এই তিনটিকে একত্রে আয়ুর্বেদের বৃহৎত্রয়ী বলা হয়।
১) চরক সংহিতা
আনুমানিক প্রথম শতকে রচিত প্রাচীনতম ও সমৃদ্ধতম গ্রন্থ। আত্রেয়র শিষ্য অগ্নিবেশ প্রথমে এই গ্রন্থটি রচনা করেন। পরে চরক ও দৃঢ়বল দুবার সম্পাদনা করেন। গ্রন্থটি আটটি স্থানে বিভক্ত – সূত্র, নিদান, বিমান, শরীর,ইন্দ্রিয়,চিকিৎসা,কল্প ও সিদ্ধি। এগুলি কয়েকটি অধ্যায়ে বিভক্ত। গ্রন্থে মোট অধ্যায়ের সংখ্যা ১২০। মানুষের শারীরিক মানসিক তথা সর্ববিধ কল্যাণের জন্য ও দীর্ঘ জীবন লাভের অভিপ্রায়ে এই মহান গ্রন্থ রচনা হয়। রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ দুই বিষয়েই এখানে আলোচনা আছে। এটি প্রাচীন ভারতের চিকিৎসাশাস্ত্রের তত্ত্ব দর্শন রোগ ও আরোগ্য বিষয়ক সম্পূর্ণাঙ্গ অনবদ্য রচনা।
মোট ৪৩ টি টিকা গ্রন্থ এর আছে।যেমন ভট্টার হরিশচন্দ্রের চরকন্যাস, স্বামীকুমারের চরকপঞ্জিকা, চক্রপাণি দত্তের আয়ুর্বেদদীপিকা।
•সূত্র স্থানম্ (৩০টা অধ্যায়), (এতে রোগ নিরাময়ের উপায়,সম্বলিত পান-ভোজন ও চিকিত্সকের দায়িত্ব সমূহর বিষয় আছে।)
• নিদান স্থানম্ (৮ টা অধ্যায়), (এতে আটটা প্রধান রোগের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।)
• বিমান স্থানম্ (৮ টা অধ্যায়), (এতে চিকিত্সা-জ্ঞান ও রোগের কারকের বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।)
• শরীর স্থানম্ (৮টা অধ্যায়), (এতে গর্ভাধান ও মানুষের শরীর-রচনার কথা আলোচনা করা হয়েছে।)
• ইন্দ্রিয় স্থানম্ (১২ টা অধ্যায়),(এতে রোগ নির্ণয় ও রোগের পূর্বাভাসের বিষয়ে বিশদ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।)
• চিকিত্সা স্থানম্ (৩০টা অধ্যায়), (এতে বিশেষ চিকিত্সা সমূহর বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।)
• কল্প স্থানম্ (১২টা অধ্যায়), (এতে সাধারণ চিকিত্সার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।)
ও
• সিদ্ধি স্থানম্ (১২টা অধ্যায়), (এতে সাধারণ চিকিত্সার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।)
- বিশদে পড়ুন – চরকসংহিতা ( Charaksanghita ) টীকা
২) সুশ্রুত সংহিতা
ধন্বন্তরি প্রবর্তিত সম্প্রদায়ের সংকলন আনুমানিক ৫ম শতকে রচিত ও নাগার্জুনের সম্পাদিত। এর ৬টি অধ্যায় – সূত্র, নিদান, শারীর, চিকিৎসা, কল্প ও উত্তর। শল্যপ্রক্রিয়ার ৭টি ভেদ – ছেদন, ভেদন, লেখন, ত্রয্যন, আহরণ বিস্রবণ, সীবন। প্লাস্টিক সার্জারির আলোচনাও এখানে আছে। টিকা লিখেছেন জৈয়ট গয়দাস প্রমুখ।
সুশ্রুত সংহিতা’ প্রাচীন ভারতের আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসা গ্রন্থ। এর রচয়িতা "শল্যচিকিৎসা / সার্জারীর জনক" খ্যাত মহর্ষি সুশ্রুত।
গ্রন্থটি দুটি মূল অংশে বিভক্ত। প্রথম পাঁচটি অধ্যায় নিয়ে গঠিত হয়েছে ‘পূর্বতন্ত্র’ এবং পরের অংশটি ‘উত্তরতন্ত্র’। ছয়টি কাণ্ডে বিভক্ত ১৮৬টি অধ্যায়ে বিধৃত এই মহাগ্রন্থ।
এখানে আছে ১১২০ টি রোগের বর্ণনা,
৭০০ ভেষজ উদ্ভিদের কথা,
৬৪ টি রাসায়নিক মিশ্রনের বর্ণনা যা বিভিন্ন খনিজ থেকে তৈরি হয় এবং আরও ৫৭ টি মিশ্রন যা প্রানিজ উপাদান থেকে প্রস্তুত করা হত ।
১২০ রকমের সার্জারির যন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে, ৫৬টির বিশদ বর্ণনাসহ। ব্যবহারের আগে যন্ত্রগুলি জলে ফুটিয়ে জীবানুমুক্ত করা হত, রোগীকে অজ্ঞান করে নেওয়া হত।
তিনি তার গ্রন্থের বড় অংশই বরাদ্দ রেখেছেন শল্যচিকিৎসা বা সার্জারির জন্য। ১৪ রকম পদ্ধতিতে ১৫ রকম ফ্র্যাকচার সারানোর কথা বলা হয়েছে। অনেক জটিল ও বিস্তৃত অস্ত্রোপচারের বিষয়েও বলা আছে। প্রাচীনকালে শাস্তিস্বরূপ অনেকের নাক কেটে দেয়া হতো। সুশ্রুত দেহের অন্য অংশ থেকে চামড়া এনে সেই নাক মেরামতের বর্ণনা দিয়েছেন।
মহর্ষি সুশ্রুত একজন ভালো চিকিৎসক হবার জন্য মৃতদেহের ডিসেকশন ও বিশ্লেষণের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
৭৫০ খ্রিস্টাব্দের কাছকাছি খলিফা আব্বাসীর সময়ে বইটিকে আরবি ও ফারসি ভাষায় অনুবাদ করা হয় কিতাব-শশুন-এ-হিন্দ এবং কিতাব-এ-সুশ্রুদ নামে। প্রথম ইউরোপিয়ান হিসেবে বইটির ল্যাটিন অনুবাদ করেন হেসলার এবং জার্মান অনুবাদ করেন মুলার।
প্রাচীন এ গ্রন্থের ঐতিহাসিক মূল্য ও গুরুত্ব বিবেচনায় এনে গত জুনে ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছে।
- বিশদে পড়ুন – সুশ্রুত সংহিতার বিষয়বস্তু সংক্ষেপে বর্ণনা
৩) অষ্টাঙ্গহৃদয় সংহিতা
আনুমানিক ষষ্ঠ শতকে বৌদ্ধ বাগভট্ট রচিত এই গ্রন্থে আট অঙ্গের আলোচনা আছে। অরুণদত্ত, হেমাদ্রি এর টীকা লিখেছেন।
এছাড়াও চিকিৎসাশাস্ত্রের পৃথকভাবে বিভিন্ন শাখায় বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে। যেমন-
- ১. শারীরতত্ত্বঃ- ভাস্করভটের শারীরপদ্মিনী।
- ২. নিদানঃ- মাধবের মাধবনিদান।
- ৩. ভৈষজ্যতত্ত্বঃ- রাজবল্লভের দ্রব্যগুণ।
- ৪. পথ্যতত্ত্বঃ- সুষেণের অন্নপানবিধি।
- ৫. নাড়ীবিজ্ঞানঃ- কণাদের নাড়ীবিজ্ঞান।
- ৬. পশুচিকিৎসাঃ- নীলকণ্ঠের মাতঙ্গলীলা।
• শারীরতত্ত্ব (Anatomy and Physiology)—এই বিষয়ে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ভাস্করভট্টের ‘শারীরপদ্মিনী,। বিংশ শতাব্দীতে গ্ণনাথসেন ‘প্রত্যক্ষশারীর’ নামে একটি সংকলনগ্রন্থ প্রকাশ করেন।
• নিদান— রোগনির্ণয় বিষয়ক চিকিৎসাশাস্ত্র। এই বিষয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ ‘রুগবিনিশ্চয়’ বা ‘মাধবনিদান’।
এছাড়া ধন্বন্তরির নামে প্রচলিত ‘চিকিৎসাসংগ্রহ’, গননাথসেনের ‘সিদ্ধান্তনিদান’ এই প্রজায়ের বিখ্যাত গ্রন্থ।
• ভৈষজ্যতত্ত্ব— বিভিন্ন গাছ-গাছড়ার গুণাগুণ নির্ণয় ও চিকিৎসা এর আলোচ্য বিষয়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ—চক্রপাণিদত্তের ‘দ্রব্যগুণসংগ্রহ’, রাজবল্লভের ‘দ্রব্যগুণ’ প্রভৃতি।
• কায়চিকিৎসা—জ্বর, অতিসার, কুষ্ঠ, মেহ প্রভৃতি যোগের চিকিৎসা এর আলোচ্য বিষয়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ—নাগার্জুনের ‘যোগশতক’ বা ‘যোগসার’, চক্রপাণিদত্তের ‘চিকিৎসাসারসংগ্রহ’, শার্ঙ্গধরের ‘শার্ঙ্গধরসংহিতা’, ভাবমল্লের ‘ভাবপ্রকাশ’ প্রভৃতি।
• কৌমারভৃত্য—এর বিষয় শিশুচিকিৎসা।উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ—রাবণ-রচিত ‘কুমারভৃত্য’, অজ্ঞাতনামা লেখকের ‘বালচিকিৎসা’ প্রভৃতি।
• স্বাস্থ্যতত্ত্ব— সুস্বাস্থ্য এর আলোচ্য বিষয়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ—গঙ্গারামদাসের ‘শারীরনিশ্চয়াধিকার’, গোবিন্দরায়ের ‘স্বাস্থ্যতত্ত্ব’ প্রভৃতি।
• পথ্যতত্ত্ব—পথ্যসংক্রান্ত আলোচনা এর বিষয়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ— সুষেণ-রচিত ‘অন্নপানবিধি’, রঘুনাথের ‘পথ্যাপথ্যনিঘণ্টু’ প্রভৃতি।
• নাড়ীবিজ্ঞান— নাড়ীপরীক্ষা ও রোগনির্ণয় এর আলোচ্য বিষয়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ— কণাদের ‘নাড়ীবিজ্ঞান’, রাবণ-প্রণীত ‘নাড়ীপরীক্ষা’, গোবিন্দরায়ের নাড়ীপরীক্ষা’ প্রভৃতি।
• পশুচিকিৎসা— হস্তিচিকিৎসা, আশ্বচিকিৎসা, গবাদিপশুচিকিৎসা এর মূল আলোচ্য বিষয়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ— নীলকণ্ঠ ও নারায়ণের ‘মাতঙ্গলীলা’ শালিহোত্রের অশ্বশাস্ত্র প্রভৃতি।
সব মিলিয়ে আমরা দেখি যে রোগপূর্ব সাবধানতা ও রোগোত্তর চিকিৎসা দুই বিষয়েই প্রাচীন ঋষিতুল্য চিকিৎসকরা অজস্র গ্রন্থ রচনা করেছিলেন যা তথাকথিত কাব্যচর্চার পাশাপাশি ভারতের বিজ্ঞানচর্চার ধারাকেও অক্ষুণ্ন রেখেছিল।
আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসাপদ্ধতি বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃতি প্রায় একটি চিকিৎসাব্যবস্থা। আপনারা জেনে আরো অবাক হবেন যে চরক সংহিতায় বর্ণিত Health ( স্বাস্থ্য) এর সঙ্গাটিও স্বাস্থ্যের সঙ্গা হিসেবে WHO করেছে। সঙ্গাটি হল-
সংদোষা সমাগ্নি সংধাতু মলক্রিয়া প্রসন্নাত্মা ইন্দ্রিয়াস মনস্বাথ অভিদ্যতে।
চরক সংহিতা ২৪.৪১
অর্থাৎ, যখন দেহ এবং এর অভ্যন্তরীন জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া সাম্যবস্থা বজায় থাকে, দেহের বর্জ্যনিষ্কাশন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে, যখন আত্মা ইন্দ্রিয় ও মন সমাবস্থায় বিরাজ করে সেই অবস্থায় স্বাস্থ্য অর্জিত হয়েছে বলে ধরা হয়।
🖋️ আদিত্য আচার্য
মন্তব্যসমূহ