বহুধা বিভক্ত সনাতনী সমাজে ঐক্য কি করা সম্ভব ❓



▪️বহুধা বিভক্ত সনাতনী সমাজে ঐক্য কি করা সম্ভব ❓

নমস্কার সকল অমৃতের সন্তানগণ! মনুষ্য মাত্রই অমৃতের সন্তান, তাদের মধ্যে কোনো প্রভেদ থাকতে পারে না। ভৌগোলিক সীমানা আমাদেরকে একে অপরের থেকে দৃশ্যমান দূরত্ব নির্দেশ করলেও, মনোগত দিক থেকে আমরা একই পরিবার সেজন্য সনাতন সংস্কৃতিতে বলা হয়েছে, "বসুধৈব কুটুম্বকম" অর্থাৎ, এই বিশ্ব একটি পরিবার। এই ধরিত্রীর মাঝে প্রত্যেকের সাথে আমাদের রয়েছে এক অকৃত্রিম বন্ধন। ভৌগোলিক পরিচয়গত কারণে ভিন্নতা সৃষ্টি হয় লৌকিক সংস্কৃতিতে। বৈচিত্র্যময় হয়ে উঠে জগৎ। কিন্তু মনের সুগভীর স্থানে সকলে এক স্বর্গীয় বন্ধনে আবদ্ধ। 

এই দর্শনই সনাতন ধর্ম শাস্ত্রের উদারতার প্রতীক। কেউ পর নয় বরং সকলে আপন, কেউ শত্রু নয় বরং মিত্র, কেউ ছোট বড় নয় বরং সকলে সমান। 

"অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাস এতে সং ভ্রাতরো বাবৃধুঃ" 
 - ঋগ্বেদ ৫/৬০/৫
 
অর্থাৎ, তোমরা সকলে ভ্রাতা, কেউ ছোট নয়, কেউ বড় নয়।

বর্তমান সময়ে সেই সুউচ্চ হিমালয়ের ন্যায় বৈদিক সভ্যতায় সময়ের পরিক্রমায় বহু বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রগতি লাভ করেছে। সেই বৈচিত্র্যতার মাঝে উদারতার প্রভাব লক্ষ্যনীয়। সেজন্য মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, 

"Our ability to reach unity in diversity will be the beauty and the test of our civilization."
 — Mahatma Gandhi

কিন্তু সেই বৈচিত্র্যতা থেকে এখন প্রতিযোগিতার উদয় হয়েছে। ফলস্বরূপ, দ্বন্দ্ব, নিজের মতকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার প্রবণতা, অনৈক্য বৃদ্ধি সহ বহুবিধ ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে এই হিমালয় প্রতিম সভ্যতায়। 

📜তবে অন্তর্ঘাতে লিপ্ত সনাতনীদের কি বৈচিত্র্যময়তার মাঝে ঐক্য অসম্ভব? 

না! অসম্ভব নয় বরং এরুপ বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি আমাদের শক্তি। কিন্তু সেই শক্তি তখনই কার্যকরী হতে পারে যখন সে শিকড়হীন হবে না। বৃক্ষ যেমন শিকড়হীন হয়ে বাঁচতে পারে না, তেমনি বৈদিক সভ্যতার শেকড় বা ভিত্তিস্বরুপ বেদ ব্যতীত কি করে তা অস্তিত্বমান থাকতে পারবে? 

মনুসংহিতায় বলা হয়েছে "বেদঃ অখিলঃ ধর্মমূলম্"
অর্থাৎ বেদ সমগ্র ধর্মের মূল।(মনুস্মৃতি-২/৬)। আমাদের সত্য সনাতন বৈদিক ধর্মের মূল ভিত্তি বেদ যা সমগ্র জ্ঞানের এক আধার স্বরুপ। সেজন্য বর্তমানে পতিত এই সংকটে বেদই আমার আঁধার রাতের মশাল। সনাতনীগণ যখনই বেদ থেকে দূর হতে শুরু করেছে তখনই এই সুবিশাল হিমালয় প্রতিম সভ্যতার অনাকাঙ্ক্ষিত ধস নেমে আসে। তাই সেই হিমালয়ের পুনঃ উত্থান হতে পারে বেদ এর নির্দেশনাকে হৃদয়ঙ্গম করার মাধ্যমে। মানবজাতির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার উপদেশ পরমাত্মা বেদেই নির্দেশিত করেছেন যা সংগঠন সুক্ত নামে সুপরিচিত। ঋগ্বেদে ১০ মন্ডলের ১৯১ সুক্তে, 

"সং সমিদ্যুবসে বৃষন্নগ্নে বিশ্বান্যর্য আ। 
ইডস্পদে সমিধ্যসে স নো বসূন্যা ভর"।।১।। 

অর্থাৎ, হে প্রভু! তুমি সর্বশক্তিমান, নির্মাণ করেছ এই সৃষ্টিকে। তব মহিমা গায় বেদাদিশাস্ত্র, সমৃদ্ধ কর এই ভূমিকে।। 

"সংগচ্ছধ্বং সংবদধ্বং সং বো মনাংসি জানতাম্। 
দেবাভাগং য়থাপূর্বে সং জানানা উপাসতে"।।২।। 

অর্থাৎ, প্রেমপূর্বক চল সবাই, যেন মোরা জ্ঞানী হই। 
পূর্ব্বজ বিদ্বানদের অনুসরণে, কর্তব্য পালনে ব্রতী হই।। 

"সমানো মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী সমানং মনঃ সহ চিত্তমেষাম্। 
সমানং মন্ত্রমভি মন্ত্রয়ে বঃ সমানেন বো হবিষা জুহোমি"।।৩।। 

অর্থাৎ, হোক মতামত সমান সবার, চিত্ত-মন সব এক হোক। একই মন্ত্রে যুক্ত সকলে, ভোগ্য পেয়ে সবে তৃপ্ত হোক।। 

"সমানী ব আকুতিঃ সমানা হৃদয়ানি বঃ। 
সমানমস্তু বো মনো য়থা বঃ সু সহাসতি"।।৪।। 

অর্থাৎ, হোক সবার হৃদয় তথা সংকল্প অবিরোধী সদা। মন ভরে উঠুক পূর্ণপ্রেমে, বৃদ্ধি হোক সুখ সম্পদা।। 

সকল বিভেদ দূর করে সংগঠন সুক্তের আদর্শে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ গড়ে তুলবো। সকলের মাঝে ভিন্নতা রয়েছে, ইহাই বৈচিত্র্য কিন্তু আমাদের চিত্ত হোক সমান, মন্ত্র হোক একই গায়ত্রী মন্ত্র, এক লক্ষ্য মোক্ষ, এক প্রেরণা সত্য সনাতন বৈদিক ধর্ম। আমাদের সমাজ বহুধা বিভক্ত হলেও আমাদের শেকড় বেদকে যখন আমরা মূল প্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করে এগিয়ে চলবো তখন সকলে মিত্র হয়ে উঠবে। আমাদের বৈচিত্র্যতা আমাদের বিভক্ত নয়, বরং সৌহার্দ্য, ভাতৃত্ববোধ দ্বারা শক্তিশালী করবে। সেজন্য Audre Lorde বৈচিত্র্য বা ভিন্নতা সম্পর্কে বলেছিলেন, 

"It is not our differences that divide us. It is our inability to recognize, accept, and celebrate those differences." — Audre Lorde

তাই হে অমৃতের সন্তানগণ! বিভেদ নয় ঐক্যবদ্ধ হই। সত্য সনাতন ধর্মের মূল স্তোত্রগানে আবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাই।

প্রচারে :- VEDA

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন