নারী সনাতন ধর্ম শাস্ত্রে সর্বোচ্চ মর্যাদা আসনে আসীন। নারীর অবস্থান শুধু গৃহে আবদ্ধ থাকা নয়, বরং নিজ জ্ঞান ও প্রজ্ঞাবলে সে হতে পারে জগৎ জৌতি। সেই সর্ববিজয়াদের উদ্দেশ্য বেদ বলছে,
"পুরুষেভ্যো গোভ্যো অশ্বেভ্যঃ শিবা"
-অথর্ববেদ--৩/২৮/৩
অর্থাৎ, তারা সর্বভূতের কল্যণদায়িনী, সর্ববিজয়া।
সনাতন ধর্ম কখনো নারী পুরুষের বৈষম্য কিংবা বিভেদকে আশ্রয় না দিয়ে সর্বদা সাম্য ও সম-অধিকারের উপদেশ দিয়েছে। যেমন অজ্ঞানতাবশত অন্ধেরা এরুপ প্রলাপ করতো যে
নারীদের বেদ পাঠের অধিকার নেই, কিন্তু পরমাত্মা প্রদত্ত অমৃত জ্ঞান অর্জন করে আমরা জানতে পারি,
"ও৩ম্ যথেমাং বাচং কল্যানীমাবদানিজনেভ্যঃ। ব্রহ্ম রাজান্যাভ্যাং শূদ্রায়চার্যায় চ স্বায় চারণায়।
প্রিয়ো দেবানংদক্ষিণায়ৈ দাতুরিহ ভুয়াসময়ং মে কামংসমৃধ্যতামুপ মাদো নমতু।।"
-যজুর্বেদ ২৬/২
অর্থাৎ, হে মনুষ্যগণ! আমি যেরূপে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র, স্ত্রী-পুরুষ এবং অন্যান্য সমস্ত জনগনকে এইকল্যানদায়িনী পবিত্র বেদবানী বলিতেছি, তোমরাও সেই রূপ কর। যেমন বেদবানীর উপদেশ করিয়া আমি বিদ্বানদের প্রিয় হয়েছি, তোমরাও সেরুপ হও। আমার ইচ্ছা বেদ বিদ্যা প্রচার হোক। এর দ্বারা সকলে মোক্ষ এবং সুখ লাভ করুক।
নারীদের বেদপাঠের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা যেমন করা হয়েছিলো, তেমনি নারীর ও৩ম্ উচ্চারণ এর অধিকার নেই এরুপ অপপ্রচার হয়েছিল বহুবার। কিন্তু আমরা শাস্ত্র অধ্যয়ন থেকে জানতে পারি, পরমাত্মার সর্বশ্রেষ্ঠ নাম ও৩ম্। ঋগ্বেদ-৭/২২/৫ বলা হয়েছে, "সদা তে নাম স্বযশো বিবক্সি" -হে পরমেশ্বর ! আমরা সর্বদা তোমার পবিত্র নাম 'ও৩ম্' স্মরণ করি। যজুর্বেদ ৪০/১৫ এবং শ্রীমদ্ভগবদগীতায় ৮/১৩ বলা হয়েছে, মনুষ্য দেহত্যাগের সময় "ও৩ম্" স্মরণ করো। অর্থাৎ, পরমাত্মা মনুষ্য মাত্রই ও৩ম্ উচ্চারণ এর উপদেশ দিয়েছেন।
বেদ অধ্যয়ন ও ও৩ম্ উচ্চারণ এর অধিকার যেমন রয়েছে, সেই অধিকার লাভের পূর্বে প্রত্যেক মনুষ্যের মতো নারীরও উপনয়ন সংস্কার বাধ্যতামূলক। কিন্তু অন্ধ ব্যক্তিগণ নারীর উপনয়ন সংস্কার এর ক্ষেত্রেও বাঁধা সৃষ্টিতে উদ্যত। কিন্তু ধর্মশাস্ত্র সমূহে নারীর উপনয়ন সংস্কারের উল্লেখ রয়েছে। সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ এ নারী ব্রহ্মচর্য পালন বিষয়ে
বলা হয়েছে,
"ব্রহ্মচর্যেন কন্যা যুবানং বিন্দতে পতিম্।"
- অথর্ববেদ ১১.৫.১৮
অর্থাৎ, ঠিক যেমন যুবক ব্রহ্মচর্য শেষ করে বিদুষী কন্যাকে বিয়ে করবে ঠিক তেমনি একজন যুবতীও ব্রহ্মচর্য শেষ করে পছন্দমত বিদ্বান যুবককে স্বামী হিসেবে গ্রহন করবে।
এছাড়াও পাণিনি ৪.১.৪৯ এবং পাণিনি ৬.২.৮৬ নারীদের ব্রহ্মচর্যের প্রতিষ্ঠান ছাত্রীশালা ও নারী অধ্যাপক আচার্যনি এর উল্লেখ পাওয়া যায়।
হরিত ধর্মসূত্র ৩০.২১-২২, হরিত ধর্মসূত্র ২১.২৩, অশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্রের ৩.৮.১০.১৪ এ নারীদের উপনয়ন, বেদ অধ্যয়নের উল্লেখ রয়েছে।
উপরোক্ত বিশ্লেষণ থেকে আমাদের উপলব্ধি সম্ভব যে নারীর উপনয়ন সংস্কার, বেদ অধ্যয়ন, ও৩ম্ উচ্চারণ এর সমঅধিকার রয়েছে। পৌরহিত্যে সনাতন ধর্মের অন্যতম সম্মানিত স্থান।
সেই সম্মানিত স্থানে অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য প্রথম শর্ত উপনয়ন সংস্কার, পরবর্তী সময়ে পৌরহিত্যের শিক্ষা গ্রহণ করা। তাই একজন নারী উপনয়ন সংস্কার সম্পন্ন করে বেদাধ্যয়ন, যজ্ঞসহ পৌরহিত্যের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম। সেজন্য এটা সূর্যের আলোর মতো স্পষ্ট যে নারীও পৌরহিত্যের অধিকার লাভ করতে পারে। তবে তার উপনয়ন সংস্কার অত্যাবশ্যক।
#veda