"প্রেম খ্যাতি জগৎ জুড়ে,
লাগেনা কোনো হেতু
পত্নীকে রক্ষায় হলো অসাধ্য সাধন,
নির্মিত হলো রামসেতু"
🖋️ নমস্কার সকল অমৃতের সন্তানগণ! সনাতনধর্ম একমাত্র ঐশ্বরিক ধর্ম এবং তার ইতিহাস পৃথিবীর সর্বত্র খুঁজে পাওয়া যায়। যা তার প্রাচীনত্বকে প্রমাণ করে। কিন্তু তারপরও কিছু মানুষ এর ইতিহাসকে কাল্পনিক বলে উড়িয়ে দেয়। তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাপূ্র্বক তেমনি এক ইতিহাসের প্রামাণিক সত্যতা উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা করব।
🌿রামায়ণ:
🌿✍️রামায়ণ ভারত তথা সনাতনধর্ম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম এর জীবনী। যার আদর্শ আজকেও মানুষকে সঠিক মার্গ প্রদান করে। শ্রীরাম চন্দ্রের রাজ্য এতটাই শান্তি ও সৌহার্দ্যের প্রতীক ছিল যে মহাত্মা গান্ধী ভারতকে রাম রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার আহবান জানান। রামায়ণ এর অন্যতম এক অংশ হলো "রাম সেতু" যাকে "সেতু বন্ধনম" নামে উল্লেখ রয়েছে বাল্মিকী রামায়ণে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় তথাকথিত বুদ্ধিজীবী মহল এ মহান নিদর্শনকে প্রাকৃতিক এবং মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামকে কাল্পনিক আখ্যায়িত করার প্রয়াস করে থাকে। তাই বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ দ্বারা চেষ্টা করব সংশয় নিবারণ এর।
📑রাম সেতুর উল্লেখ:
🌿📑রাম সেতু অবস্থিত ভারতের রামেশ্বরম দ্বীপ থেকে শ্রীলঙ্কার মান্নার দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত ৩০ কিলোমিটার একটি সেতু। বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণে, " a chain of shoals, coral, reefs, a ridge formed in the region owing to thinking of the earth's crusts, a double tombloo, a sand spit and a barrier islands".
🌿📑 পার্সিয়ান ভৌগোলিক ইবন খোরদাদবেহ (৮২০-৯১২) তার কিতাব আল-মাসালিক ওয়াল মামলিক ( Book of Roads and Kingdom )
এ "সেতু বান্ধাই" নামে উল্লেখ করেন। এটা ছিল বহির্বিশ্বে রাম সেতুর প্রথম উল্লেখ। তাছাড়া গঙ্গা রাম গর্গ রচিত " Encyclopedia of the hindu world" প্রায় ১৪৮০ সালের দিকে এটি সমুদ্র পৃষ্ঠের উপরে ছিলো এবং তা হেঁটে পার হওয়া যেতো। এবং মন্দির এর রেকর্ড থেকে জানা যায়, পরবর্তীতে সাইক্লোন এটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে অব্যবহিত হয়ে পড়ে। আদ্রিয়ান রুম রচিত, "Placenames of the world" (২০০৬) গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে ১৮০৪ সালে একজন বৃটিশ ব্যক্তি এটিকে প্রথম "আদম সেতু" উল্লেখ করে। এবং ১৭৪৭ সালে ডাচ কার্টোগ্রাফার এটিকে "Ramancoil" উল্লেখ করেন।
⁉️কিন্তু প্রশ্ন জাগে এ ৩০ কিলোমিটার কিভাবে সেতু বানানো সম্ভব? উত্তর হলো উক্ত প্রণালী ছিলো অগভীর। মানব জাতি ইতিপূর্বে অগভীর সমুদ্র পাড়ি দূর দুরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিলো। Homo erectus, Homo neanderthals, Homo sapiens সে সুদূর আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে তারা পৌঁছে ছিলো অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ অগভীর সমুদ্র পাড়ি দেওয়া মানব ইতিহাসের অনেক পুরোনো ঘটনা। যেমন গভীর ইংলিশ চ্যানেল পার করার রেকর্ড গড়ে ছিলেন বাঙালির গর্ব ব্রজেন দাস।
রাম সেতুর বানানোর পূর্বেও এই প্রণালী পাড়ি দেওয়ার কথা রামায়ণে উল্লেখ রয়েছে। যথা:
📖 বাল্মিকী রামায়ণ যুদ্ধকান্ডের ১৭ নং সর্গে, বিভীষণ সেতু পাড়ি দিয়ে শ্রীরাম এর সাথে যোগ দিয়েছিলেন।
📖 বাল্মিকী রামায়ণ যুদ্ধকান্ডের ২০ নং সর্গে,
রাবণের গুপ্তচর শাদূল রামেশ্বরম দ্বীপে এসে সুগ্রীব এর সেনাদল পর্যবেক্ষণ করে রাবণকে জানায়।
📑 মহাবলী হনুমানজীর গুপ্তচর হিসেবে লঙ্কায় যাওয়া সর্বজনবিদিত।
এজন্য পক প্রণালী পাড়ি দেওয়া অলৌকিক বা কাল্পনিক কোনো ঘটনা নয় বরং তা বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য ও বাস্তব।
রাম সেতুর বৈজ্ঞানিক সত্যতা:
পূর্ব ব্যাখ্যা অনুসারে ইতিমধ্যে প্রমাণিত যে রাম সেতুর নির্মাণ ও সমুদ্র পারাপার এর ঘটনা কোনো অবৈজ্ঞানিক বা অবাস্তব বিষয় নয় বরং যুক্তিসঙ্গতভাবে তা সম্ভব। তবে এর পরেও কিছু বৈজ্ঞানিক প্রমাণ উপস্থাপন জরুরি যা সকল সংশয়ের নিবারণ করতে সক্ষম।
★ আমরা সাধারণত জানি যে যেকোনো ভূগর্ভস্থ মাটির ক্ষেত্রে উপরের পদার্থের বয়স কম হয় এবং নিচে অবস্থিত স্তরের বয়স বেশি হয়। কিন্তু রাম সেতুর ক্ষেত্রে তার বিপরীত চিত্র লক্ষ্য করা গেলো। কার্বন ডেটিং থেকে জানা যায়, নিচের স্তরের বালির বয়স ৪০০০ বছর, কিন্তু উপরে অবস্থিত পাথর খন্ড গুলোর বয়স তার থেকে অনেক বেশি। অর্থাৎ, এই পাথর খন্ড গুলো দূর থেকে নিয়ে আসা হয়েছে এবং এখানে স্থাপন করে সুদীর্ঘ সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
★নাসার উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি এবং অন্যান্য প্রমাণ উদ্ধৃত করে পুরাতাত্ত্বিকরা প্রমাণ করেছেন, এই সেতু নির্মাণে যে শিলাখণ্ড ব্যবহার করা হয়েছে তার বয়স আনুমানিক সাত হাজার বছর প্রাচীন এবং তা সংগ্রহ করা হয়েছিল অন্য জায়গা থেকে৷ জানা গেছে, অগভীর সমুদ্র গর্ভস্থ বালুরাশির বয়স হবে প্রায় চার হাজার বছর৷ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বালি এবং পাথরের প্রাচীনত্বের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা, অর্থাৎ যে বালুরাশির ওপর শিলাখণ্ডগুলি বসানো হয়েছিল তা বালির বয়সের চেয়ে পুরনো৷ কাজেই সেটা যে মানুষের তৈরি বিজ্ঞান এই তত্ত্বই প্রমাণ করে৷ জানিয়েছেন ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিষয়ক ইতিহাসবিদ চেলসা রোজ৷ ভূ-তাত্ত্বিক অ্যালান লেস্টার মনে করেন, এই ধরনের দীর্ঘ সেতু বানানো অতি-মানব শক্তি ছাড়া সম্ভব নয়৷
ডক্টর অ্যালান লেস্টার, একজন প্রখ্যাত ভূতাত্ত্বিক, বলছেন,
"There are Hindu legends that Lord Rama placed a bridge here connecting India to Sri Lanka".
তিনি আরো বলছেন…
"There are stones that have been brought from a far and set on top of sand bar island chain".
এই সায়েন্স চ্যানেলের বিজ্ঞানীরা রামসেতুর বালি ও পাথরের আলাদা আলাদা কার্বন ডেটিং করেছেন। এক প্রত্নতত্ত্ববিদ চেলসি রোজ জানাচ্ছেন..
"The rocks on the top of the sand actually predates the sand".
★ Geological Survey of India এর কার্বন ডেটিং রিপোর্ট থেকে জানা যায়, রামেশ্বরম ও তালাইমান্নার মধ্যবর্তী অঞ্চলটি ৭০০০ -১৮০০০ বছরের পুরনো। যা রাম সেতুর মানবনির্মিত সত্যতাকে তুলে ধরে।
★ GSI এর প্রাক্তন ডিরেক্টর এস বদ্রীনারায়ণ বলেন, তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে রাম সেতুর প্রাকৃতিক নিয়মে নির্মিত হওয়া অসম্ভব, এটি মানবনির্মিত।
★ তামিলনাড়ু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর রিমোট সেনসিং (CRS), গবেষক দলের প্রধান এস এম রামস্বামী বলেন, "as the carbon dating of
the beaches roughly matches the dates of Ramayana, its link to the Epic needs to be explored".
সংশয় নিবারণ:
⁉️ভাসমান পাথর
বিভিন্ন সময় এমন দাবি উত্থাপিত হয়ে থাকে যে পাথরের মধ্যে শ্রীরাম লিখে তা জলে ফেলে দিলে তা ভেসে উঠতো। প্রকৃত অর্থে, সুনামির সময় রামেশ্বরম এ এমন পাথর দেখা যায়। এসব পাথর ভেসে থাকতে সক্ষম। কারণ এটি প্রচুর বায়ু নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারতো৷ ফলস্বরূপ, তা জলে ফেলে দিলে ভাসত। অর্থাৎ, বাল্মিকী রামায়ণ এ নীল নল যে ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছিলো সেটি এরুপ ভেসে থাকা পাথর দিয়ে।
⁉️বানর সেনা
এটা সবথেকে অবাস্তব ও অতিরঞ্জন বলে মনে হয়। এর দুরকম ব্যাখ্যা আছে। প্রথম ব্যাখ্যাটা অধিকতর বাস্তবসম্মত, তাই আগে দিই। বানর কথাটাকে এইভাবে ভাঙা যায়…বন+ নর(মানুষ)। সংস্কৃত ভাষার অভিধানে বাঁদর বোঝানোর জন্য 'কপি' বা 'মর্কট' ইত্যাদি শব্দ আছে। এই বানরসেনা আসলে জঙ্গলে বাস করা এক আদিম অধিবাসী জনগোষ্ঠী। বানর কথার অর্থ বাঁদর নয়। রামায়ন অনুযায়ী কিস্কিন্ধায় এরা বাস করত। এই ভাবনা আরো বল পায় iraq-Silemania থেকে পাওয়া একটি চিত্রে যেখানে প্রভু শ্রী রামের সামনে নতজানু হনুমানজিকে আঁকা হয়েছে, যার কোনো লেজ নেই।
তাহলে এরুপ কাল্পনিক কিছু তথ্য কিভাবে রামায়ণে এলো। প্রকৃত অর্থে বাল্মিকী রামায়ণ এ রাম এর চরিত্র সঠিক ভাবে ফুটে উঠলেও। মধ্যযুগে রচিত রামচরিতমানস যা তুলসি দাস কতৃক প্রণীত হয়। উনি অনেক বড় ভক্ত ছিলেন। ফলে তিনি অনেক কিছু লিখেছিলেন যা মূল বাল্মিকী রামায়ণ এ ছিল না।
📑✍️রামায়ণ কোনো কাল্পনিক তথ্য নয়। এটি আমাদের গর্বের ইতিহাস। কোনো জাতিকে মেরুদণ্ডহীন করতে হলে তার ইতিহাসকে ভূলন্ঠিত করা হয়। তেমনি আজ ষড়যন্ত্রকারীগণ এ ভূখণ্ডের ইতিহাস মুছে দিতে চেয়েছে। বহু গবেষণা হয়েছে আরো হবে তবে শ্রীরাম এর কথা চিরকাল থাকবে।
🌿জয় শ্রীরাম🌿
প্রচারে: VEDA