শ্রীমদ্ভগবদগীতা ও উত্তম সিদ্ধান্ত - ০২

"মনই শত্রু-মনই পরম মিত্র"

মনুষ্যের বৈশিষ্ট্য সে অর্জন করতে চায়, জীবনের অসাধ্যকে সাধন করতে বদ্ধপরিকর, কোনো সীমাবদ্ধতা কিংবা প্রতিবন্ধকতায় সে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে থেমে যেতে প্রস্তুত নয়। অধ্যাবসায়, কঠোর পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার ফলে সে তার অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়। এমন অদম্য মনোভাবের কারণে মনুষ্য জাতি বা মানব সভ্যতা সফলতার ও অর্জনের শীর্ষে রয়েছে। 

কিন্তু জগতে সকলে এই মনোভাবের অধিকারী নয়। বরং অধিকাংশ মানুষ চেষ্টাবিহীন, ব্যর্থতায় থেমে যাওয়া কিংবা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু সফলতা কখনো এমন করে আসে নাহ। সফলতার জন্য প্রয়োজন সংগ্রামী মনোভাব। আধ্যাত্মিক কিংবা জাগতিক উভয় ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের মনই পরম আশ্রয়। কারণ মন যদি অশান্ত, অস্থির কিংবা লক্ষ্য বিমুখ হয় তবে সে ব্যক্তির দ্বারা কখনো কোনো অর্জন সম্ভব নয়। 

অতএব, মনকে যে নিজের বশে আনতে পারে, যে ইন্দ্রিয়ের দাস না হয়ে স্বয়ং ইন্দ্রিয়ের নিয়ন্ত্রক হয় সে সর্বদা উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সফলতা কিংবা লক্ষ্য অর্জন তাহার দ্বারাই হতে পারে। সেজন্য, শ্রীমদ্ভগবদগীতায় যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, 

"বন্ধুরাত্মাত্মনস্তস্য যেনাত্মৈবাত্মনা জিতঃ। 
অনাত্মনস্তু শত্রুত্বে বর্তেতাত্মৈব শত্রুবৎ।।" 

- গীতা ৬/৬ 

অর্থাৎ, যিনি তার মনকে জয় করেছেন, তার মন তার পরম বন্ধু, কিন্তু যিনি তা করতে অক্ষম, তার মনই তার পরম শত্রু।

কিন্তু আমাদের ইন্দ্রিয় অত্যন্ত চঞ্চল। জগতে মন অপেক্ষা দ্রুততর কোনো পদার্থ নেই। উদাহরণস্বরূপ, এখন পর্যন্ত গতিশীল পদার্থ সমূহের মধ্যে আলো সর্বাধিক গতিসম্পন্ন। যা প্রতি সেকেন্ডে 299,792,458 মিটার (প্রতি সেকেন্ডে প্রায় 300,000 কিলোমিটার। অর্থাৎ, আলোর গতিবেগ অনুসারে সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌঁছাতে সময় আনুমানিক ৮ মিনিট ১৯ সেকেন্ড। কিন্তু আমরা পৃথিবীতে থেকে সূর্যের কথা চিন্তা করতে কত সেকেন্ড প্রয়োজন ⁉️সে উত্তর আপনাদের উপর থাকলো। সেজন্য এই অদম্য মন সম্পর্কে অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বলছেন, 

চঞ্চলং হি মনঃ কৃষ্ণ প্রমাথি বলবদ্দৃঢ়ম্ ৷
তস্যাহং নিগ্রহং মন্যে বায়োরিব সুদুষ্করম্ ॥
- শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৬/৩৪

অর্থাৎ, হে কৃষ্ণ ! মন অত্যন্ত চঞ্চল, শরীর ও ইন্দ্রিয়সমূহের বিক্ষেপ উৎপাদক, দুর্দমনীয় এবং অত্যন্ত বলবান, একে নিরুদ্ধ করা বায়ুপ্রবাহকে রোধ করার মতই সুকঠিন৷

সেজন্য, সে চঞ্চল ইন্দ্রিয় উপর কর্তৃত্ব করতে হলে আমাদের নিজের মনকে একনিষ্ঠ করা আবশ্যক। কারণ, মনই সকল ইন্দ্রিয়ের নিয়ন্ত্রক। সে চঞ্চল মনকে অধ্যাবসায়, একনিষ্ঠতা, শৃঙ্খলা ও অভ্যাসের দ্বারা ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এরুপ উপায়ে মনকে নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো প্রদান করেন।

"অসংশয়ং মহাবাহো মনো দুর্নিগ্রহং চলম্। 
অভ্যাসেন তু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেণ চ গৃহ্যতে ॥"

- শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা- ৬/৩৫

অর্থাৎ, হে মহাবাহো! মন যে দুর্দমনীয় ও চঞ্চল তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু হে কৌন্তেয়! ক্রমশ অভ্যাস ও বৈরাগ্যের দ্বারা মনকে বশীভূত করা যায়।

উপরোক্ত আলোচনা আমাদের এই লক্ষ্য অভিমুখী জীবনে অত্যন্ত প্রয়োজন ও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের  প্রত্যেকের মধ্যে সফলতা এক অনবদ্য মনোভাব বিদ্যমান৷ কিন্তু নিজ চঞ্চল মনকে নিয়ন্ত্রণের অভাবে বারংবার লক্ষ্য ভ্রষ্ট হতে হচ্ছে। ভয়, লজ্জা কিংবা ব্যর্থতার ভয়ে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি কিংবা মনের একনিষ্ঠতা না থাকার কারণে বারংবার দিকভ্রান্ত হচ্ছি। এটা আমাদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে৷ তাই নিজ মনকে অধ্যাবসায় ও চেষ্টা দ্বারা নিজ বন্ধুতে রুপান্তর করতে হবে। নিজেকে মনের দাস হিসেবে নয় বরং নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তবে সফলতা অর্জন সম্ভব হবে। 

শ্রীমদ্ভগবদগীতা ও উত্তম সিদ্ধান্ত - ০২

🔎Run with #veda 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

🔸সনাতন ধর্ম ও নারী 💐

সনাতন ধর্মে কি গোমূত্র পানের উল্লেখ রয়েছে ⁉️

▪️একাদশী" কি শাস্ত্র সম্মত ❓