"গো-হ*ত্যা ও মিথ্যাচারের প্রত্যুত্তর"
"গো-হ*ত্যা ও মিথ্যাচারের প্রত্যুত্তর"
সনাতন ধর্ম সদা সত্য ও শাস্ত্রীয় নির্দেশিকা অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যেকোনো সংশয়, বিরোধ কিংবা দ্বন্দ্ব নিরসনে কোনো ব্যক্তির অভিমত অপেক্ষা শাস্ত্রের নির্দেশ সর্বাধিক মান্য। সেজন্য আমরা সনাতনীগণ যেকোনো কিছু গ্রহণ বা বর্জনের ক্ষেত্রে আবেগ নয় শাস্ত্রের গুরুত্ব দিয়ে থাকি। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় আমাদের শাস্ত্রের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলা হয়েছে,
"যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ। নস সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্" ॥ ২৩
"তস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণং তে কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ। জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম কতুমিহাহসি" || ২৪
গীতা = [১৬/২৩-২৪]=
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি শাস্ত্রবিধি ত্যাগ করিয়া স্বেচ্ছাচারী হইয়া কর্মে প্রবৃত্ত হয়, সে সিদ্ধি লাভ করিতে পারে না, তাহার শান্তি-সুখও হয় না, মোক্ষলাভও হয় না। অতএব কর্তব্য-অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই তোমার প্রমাণ, সুতরাং তুমি শাস্ত্রোক্ত ব্যবস্থা জানিয়া যথাধিকার কর্ম করিতে প্রবৃত্ত হও।
সনাতন ধর্মে আহার অতীব গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। যে কেউ ইচ্ছে করলে, যেকোনো কিছু খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন নাহ। ধর্মশাস্ত্রে যে সকল বিষয় গ্রহণ করতে বলা হয়েছে এবং শরীর-মনের জন্য উত্তম তাহাই আমাদের জন্য একমাত্র গ্রহণযোগ্য। সনাতন ধর্মে গো-হ*ত্যা নিষিদ্ধ ও তাহা খাদ্য রুপে গ্রহণ ধর্মবিরুদ্ধ।
কিন্তু বর্তমান সময়ে কিছু হোয়াটসঅ্যাপ পণ্ডিত সনাতনীদের নিজেদের ধর্মশাস্ত্রে জ্ঞান শেখানোর চেষ্টায় আছে। যারা নিজেরা কখনো সত্যিকার অর্থে ধর্মশাস্ত্র সঠিকভাবে অধ্যয়ন করেছে বলে ধারণা করা দুষ্কর। কিন্তু নিজেদের ত্রুটিপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ দ্বারা সনাতনীদের সর্বদা বিভ্রান্ত করতে সদা প্রস্তুত। সে ত্রুটিপূর্ণ তথ্য দ্বারা সে ব্যক্তিরা সনাতন ধর্মশাস্ত্রে, বিশেষ করে ঋগ্বেদ এ গো-মাংস ভক্ষণ এর উদ্ধৃতি দিতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাহাদের সেই ধূর্ততা সহজে প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের সম্মুখ সারির একটি পত্রিকা ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয়ক আর্টিকেল প্রকাশের ক্ষেত্রে ঋগ্বেদে গোমাংস খাওয়ার শিরোনামে একটি কলাম প্রকাশ করে। আমরা সনাতনীরা সর্বদা যেকোনো অন্যায়, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সর্বদা দৃপ্ত কন্ঠে প্রতিবাদ জানাই। কারণ, আমাদের ধর্মশাস্ত্র আমাদের সর্বদা ন্যায়ের পক্ষে ও অন্যায়ের বিপক্ষে সোচ্চার হওয়ার শিক্ষা দেয়। তবে কেউ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাদের ধর্মশাস্ত্র সম্পর্কে অজ্ঞতার পরিচয় দিয়ে মিথ্যাচার করবে সেটা কাম্য নয়। নিম্নে সে ধূর্ততা ও মিথ্যাচারের মুখোশ উন্মোচন করার সামান্য চেষ্টা করা হলো।
▪️বেদে পশু-প্রাণী সংরক্ষণের মাহাত্ম্য:-
"পশূপান্হি" - যজুর্বেদঃ ১/১
অর্থাৎ, পশুদের রক্ষা করো।
"নমঃ শ্বভ্যঃ শ্বপতিভ্যশ্চ বো নমো॥"
- যজুর্বেদ ১৬/২৮
অর্থাৎ, মানুষের উচিত পশুদের অন্ন দ্বারা পালন করে তাদের দ্বারা উপকার নেবে এবং পশু রক্ষাকারীদেরও সৎকার করবে।
▪️শাস্ত্রে গো-হ*ত্যা নিষিদ্ধ:
পৃথিবীর উপকারী প্রাণীর মধ্যে গরু অন্যতম। বৈদিক ঋষিগণ এই মহৎ প্রাণীকে হত্যা ও ভক্ষণ করা থেকে সর্বদা বিরত থাকতে বলেছেন। সেজন্য, সনাতন সংস্কৃতিতে দেশ, নদী, প্রকৃতির সাথে গরুকে সম্মানজনক ভাবে গো-মাতা বলে সম্বোধন করে ["মাতরঃ সর্বভূতানাং গাবঃ" - মহাভারত অনুশাসন পর্ব ৬৯/৭ অর্থাৎ, গাভীকে সমস্ত প্রাণীদের মাতা বলা হয়]। ইহা নিতান্তই উপকারের জন্য সম্মান প্রদর্শন করা।
কিন্তু বর্তমান একটি শ্রেণি শাস্ত্রে "গোমাংস ভক্ষণের অধিকার দিয়েছে" এরুপ ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠায় উদ্যত। যা একপ্রকার প্রোপাগাণ্ডা। এই ভুল ধারণার কারণ বেদের ভুল অনুবাদ। 'গো' শব্দটি দ্বারা সংস্কৃতে বিভিন্ন অর্থ বুঝায়। সংস্কৃতে এবং ধর্মশাস্ত্রে গো শব্দের অর্থ :-
গো (সংস্কৃত, গম+ও) গোরু, গরু (সংস্কৃত, গরূপ)। অর্থ হলোঃ— জ্ঞান, ঐশ্বর্য, ধনু, গাভি, ষাঁড়, বৃষ, নিরেট বোকা, মূর্খ প্রভৃতি। গো (বিশেষ্য পদ) গরু, গো-জাতি, পশু, স্বর্গ, রশ্মি, চন্দ্র, চক্ষু গোচর, পৃথিবী, জল, গৃহ, গোপতি।
অপপ্রচারকারী তাহার আর্টিকেল এর শিরোনাম ঋগ্বেদ দ্বারা আরম্ভ করেছিলেন৷ সেজন্য, আমরা সে ঋগ্বেদ এর মন্ত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে তাহার মিথ্যাকে অসার প্রমাণ করবো।
গো-হ*ত্যা নিষেধ করে ঋগ্বেদ ৮ম মন্ডলের ১০১ সুক্তের ১৫তম মন্ত্রে বলা হয়েছে,
"প্র নু বোচং চিকিতুষে জনায়,
মা গামনাগা মদিতিং বধিষ্ট॥"
- ঋগ্বেদ ৮/১০১/১৫
অনুবাদ : পরমেশ্বর উপদেশ দিচ্ছেন- আমি জ্ঞানবান পুরুষের নিকট বলিতেছি যে নিরপরাধ অহিংস পৃথিবী-সদৃশ গো জাতিকে হনন করিও না ।
নিরুক্ত ২.১.৫.৪ [ অমরেশ্বর ঠাকুর অনুযায়ী ] "গো" অর্থ পশু:-
{অথাপি পশুনামেহ ভবত্যেতস্মাদেব ৷৷ ৪৷
অথাপি (আর) [গো শব্দঃ] (গো শব্দ) ইহ (লোকে এবং বেদে)' পশু নাম (পশুর নাম) ভবতি (হয়) এতস্মাৎ এর (এই ধাতুদ্বয় হইতেই)।
“গো” শব্দ লোকে এবং বেদে পশু বুঝাইতেও প্রযুক্ত হয়। এই ‘গো' শব্দও পূর্ব্বোক্ত ধাতুদ্বয় হইতেই অর্থাৎ ‘গম্’ বা ‘গা’ ধাতু হইতেই নিষ্পন্ন। ইহার অর্থ—‘যে যায়’ (গচ্ছতীতি)। স্কন্দস্বামীর মতে ‘গা’ ধাতু স্তত্যর্থক, কাজেই ‘গা’ ধাতু নিষ্পন্ন পশুবোধক ‘গো’ শব্দেরও ব্যুৎপত্তি হইবে ‘গীয়তে সূয়তেহসৌ’–যে স্তুত হয় অর্থাৎ লোকে যাহার গুণকীৰ্ত্তন করে।
অনুবাদ—আর লোকে এবং বেদে ‘গো' শব্দ পশুনামও হয়, অর্থাৎ পশুবোধকও বটে; এই ধাতুদ্বয় (‘গম্' ধাতু ও ‘গা' ধাতু) হইতেই নিষ্পন্ন। }
অপর ঋগ্বেদ এর মন্ত্রেও বলা হয়েছে,
মাতা রুদ্রাণাং দুহিতা বসূনাং স্বসাদিত্যানামমৃতস্য নাভিঃ।
প্রনুবোচং চিকিতুষে জনায়, মা গামনাগামদিতিং বধিষ্ট।। - ঋগ্বেদ ৮/১০১/১৫
অর্থাৎ, গাভী রুদ্র ব্রহ্মচারী বিদ্বানগণের মাতা, নির্মাতা। দুষ্টের রোদনকর্তা বিদ্বান্, সৈনিক, সেনাপতি ইত্যাদিগণ গাভীকে মাতৃতুল্য পূজনীয়া বলে মনে করেন। গাভী বিদ্বান্ বসুগণের পুত্রী। সমাজের সংস্থাপক ব্যবস্থাপক প্রবন্ধক আদির জন্য গাভী পুত্রী-সমা পালনীয়া, রক্ষণীয়া রূপে স্বীকৃত। গাভী অমৃতের কেন্দ্র। গো-রক্ষার দ্বারা চিরজীবন সমাজচেতনা লাভ হয়। গো নির্দোষ, নিষ্পাপ, অদিতি, অখণ্ডনীয়, অবধ্য সুতরাং তাকে হ*ত্যা করো না।
▪️ঋগ্বেদ এর উদ্ধৃতির মাধ্যমে অপপ্রচারের অসারতা সিদ্ধ হয়। কিন্তু আমরা চতুর্বেদ এর থেকেও গো-হ*ত্যা নিষেধ ও গোরক্ষার উপদেশ সম্পর্কে জানার প্রয়াস করবো।
"অনাগো হত্যা বৈ ভীমা কৃত্যে মা নো গামশ্বং পুরুষং বধীঃ।" -অথর্ববেদ ১০/১/২৯
অনুবাদ-নির্দোষদের হত্যা করা জঘন্যতম অপরাধ।কখনো মানুষ,গো-অশ্বাদিদের হত্যা করোনা।
"ইমং সাহস্রং শতধারমুৎসং বাচ্যমানং সরিরস্যমধ্যে।
ঘৃতং দুহানামদিতিং জনাযাগ্রে মা হিংসীঃ পরমে ব্যোমন্।।" - যজুঃ ১৩/৪৯
অনুবাদঃ- এই গাভী মানুষের অসংখ্য সুখের সাধন, দুগ্ধের জন্য বিভিন্নভাবে পালনীয়া। গো, ঘৃত দুগ্ধ দাতৃ, অদিতি অখণ্ডনীয়া। হে মানব, একে হত্যা করো না।
▪️উপরোক্ত উদ্ধৃতি সমূহ থেকে এটা ইতোমধ্যে স্পষ্ট যে সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ এ গো-হ*ত্যাকে নিষেধ করা হয়েছে।
এছাড়াও ঐতিহাসিক গ্রন্থ মহাভারতের শান্তিপর্বে বলা হয়েছে :-
"অঘ্ন্যা ইতি গাবাং নাম, ক্ব এতা হন্তুমর্হতি।
মহচ্চকারাকুশলং বৃষং গাং বা লভেত্তু যঃ।।"
- মহাভারত শান্তিপর্ব ২৬২/৪৭
অনুবাদঃ গাভীর অপর নাম অঘ্ন্যা, এরা অবধ্যা। এই সকল গাভী ও বৃষকে হত্যা করে সে মহাপাপ করে।
পশুদের দুগ্ধ ও ওষুধি রস উপকারিতা :-
"পুষ্টি পশুনাং পরি জগ্রভাহং চতুষ্পদাং দ্বিপদাং যচ্চ ধান্যম্।
পয়ঃ পশুনাংরসমোষ ধীনাং বৃহস্পতিঃ সবিতা মে নি যাচ্ছাৎ।।
- অথর্ব্ববেদ ১৯/৩১/৫
অর্থাৎ, চতুষ্পদ পশু,দ্বিপদ পশু এবং ধান্য হইতে আমরা পুষ্টি গ্রহণ করি।এজন্য সৃষ্টিকর্তা পরমেশ্বর আমাদিগকে পশুর দুগ্ধ ও ঔষুধির রস প্রদান করিয়াছেন।
▪️অপপ্রচারকারী তার আর্টিকেল এ উল্লেখ করেছিলেন পূর্বে সনাতনীরা নাকি গোমাংস ভক্ষণ করতেন। কিন্তু আমরা ইতোমধ্যে স্পষ্ট প্রমাণ পাই যে, বৈদিক শাস্ত্রে গো-হ*ত্যা নিষেধ করা হয়েছে। তাহলে সনাতনীরা কেন বেদ এর উলঙ্ঘন করতে যাবে। সত্যিকার অর্থে, সনাতনীরা কখনো বেদবিরুদ্ধ কোনো কর্ম করবে না। শাস্ত্রে হ*ত্যা যেমন নিষেধ করা হয়েছে, তেমনি গোমাংস ভক্ষণ বিষয়েও নিষেধ করা হয়েছে।
▪️"গো" বা "পশু" ভক্ষণ নিষিদ্ধ:-
"স ধেন্বৈ চানুডুহশ্চ নাশ্নীয়াদ্ধেন্বনডুহৌ বা ইদং সর্বং বিভৃতস্তে দেবা।" - শতপথ ব্রাহ্মণ ৩/১/২/২১
"এষা পশূন্ত্সং ক্ষিণাতি কব্যাদ্ভূত্বা ব্যদ্বরী।
উতৈনা ব্রহ্মণে দধাত্তথা স্যোনা শিবা স্যাত্।।"
- অথর্ববেদ ৩/২৮/২
পদার্থ- মনুষ্যের বুদ্ধি (এষা) যেই পাপ প্রবৃত্তির দ্বারা চালিত হয়ে (পশূন) পশুদের (সংক্ষিণাতি) হত্যা করে এবং (ব্যদ্বরী) শাস্ত্রবিরুদ্ধ আহার গ্রহণ করে (ক্রব্যাদ্) মাংসভক্ষকে [অষ্ট্যা ২/২৫/২৫] (ভূত্বা) পরিণত হয় । (উত) নিশ্চয়ের সাথে মনুষ্য যদি (এনাম্) সেই পাপপ্রবৃত্তিযুক্ত বুদ্ধিকে (ব্রহ্মণে) ব্রহ্মের মধ্যে (দধাত্) সমর্পিত করে (তথা) তাহলে তার বুদ্ধি (স্যোনা) সুখদায়িনী ও (শিবা) কল্যাণী (স্যাত) হয়ে যায় অর্থ্যাৎ, সেই ব্যাক্তি নির্মল ও অহিংসক বুদ্ধিকে প্রাপ্ত করে।
"ক্ষুধে যো গাং বিকৃন্তন্তং ভিক্ষমাণঽউপ তিষ্ঠতি দুষ্কৃ॒তায়" - যজুর্বেদ ৩০।১৮
অর্থাৎ, ক্ষুধা তথা খাদ্যের জন্য যারা গো হত্যা করে তাদের দূর করো
গো" বা "পশু" হ*ত্যার শাস্তির বিধান কঠোর। স্বয়ং ঋগ্বেদে ১০/৮৭/১৬ গো হ*ত্যার জন্য কঠোর শাস্তির উল্লেখ রয়েছে। এছাড়াও অথর্ববেদ ১/১৬/৪ গো-হ*ত্যার শাস্তির উল্লেখ রয়েছে।
উপরোক্ত ব্যাখ্যা, শাস্ত্রীয় উদ্ধৃতি থেকে ইহা স্পষ্ট যে বেদ ও বৈদিক শাস্ত্রে গোরক্ষার উল্লেখ রয়েছে। গো-হ*ত্যা কিংবা গোমাংস ভক্ষণ এর মতো কোনো উদ্ধৃতি নেই। কিন্তু তবুও কেন এই অপপ্রচার। তিনি তাহার অপব্যাখ্যায় বেদের উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে বলেন, ঋগ্বেদ এর শ্লোকে উল্লেখ রয়েছে। যে ব্যক্তির এতটুকু ধারণা নেই যে, বেদে শ্লোক নয় বরং মন্ত্র হয় তাহার বেদ ও বৈদিক শাস্ত্রের জ্ঞান কতটুকু এ বিষয়ে সত্যি সন্দিহান। এরুপ মিথ্যাচার করার জন্য তিনি প্রচলিত সনাতন শাস্ত্র বিদ্বেষীদের প্রস্তুতকৃত ভুল কিংবা গোঁজামিলপূর্ণ তথ্য প্রমাণ সমৃদ্ধ কোনো বই পড়ে থাকতে পারেন।
আমরা উপরোক্ত আলোচনায় শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তাহার অপপ্রচার প্রত্যুত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি যে মূল বিষয় উত্থাপন করেছেন, ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতন। আমরা সনাতনী, বেদের অমৃত জ্ঞান আমাদের মধ্যে বিদ্যমান। সেজন্য, সমগ্র বিশ্বে সনাতনীরা পরমতসহিষ্ণু ধারণার অন্যতম ধারক ও প্রবর্তক। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে ধর্মীয় বিদ্বেষ কিংবা হানাহানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা সে সকল অন্যায় কিংবা নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার। আমরা সে বৈষম্য, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই।
তবে ভারতের অভ্যন্তরে স্বয়ং সনাতনী ভ্রাতা-ভগিনীগণ এমন বিষয়ের প্রতিবাদ করে থাকে। কিন্তু সে প্রতিবাদ কিংবা বিষয় গুলো কখনো সামনে আসে না। ভারতের সংখ্যালঘু নির্যাতন বিষয় এত উদ্বিগ্ন কিন্তু তারা ভুলে গিয়েছে ভারত একটি রাজ্যভিত্তিক রাষ্ট্র। সেখানে একটি রাজ্যের থেকে অপর রাজ্যে অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভারতের রাজনৈতিক কিংবা পরিকাঠামো জটিল। সেখানে সংখ্যালঘু নির্যাতন যেমন আছে, তেমনি সংখ্যালঘু বান্ধব নীতি ও বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘুদের প্রতি বিশেষ সুবিধা এবং শক্তিশালী অবস্থান কখনো প্রকাশ হয় না। কিন্তু একটি নির্যাতন হলেও তা গ্রহণযোগ্য নয়। যেকোনো নির্যাতন ও নিপীড়নের সুষ্ঠু বিচার হওয়া উচিত।
তবে আমাদের দেশের প্রতিবাদকারীরা সূদুর ভারতের বিষয়ে এত উদ্বিগ্ন কিন্তু নিজ স্বদেশে সনাতনীদের প্রতি হওয়া বৈষম্য ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে কখনো কি রুখে দাড়িয়েছিল? কেন বিচা হয় না, কেন মব জাস্টিস এর মাধ্যমে রক্তাক্ত শারদ, মুরাদনগর, শাল্লা দেখতে হয়, কেন একদা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ খুলনা জেলায় হিন্দুরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে, কেন দেশভাগের পর থেকে এদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের সংখ্যা কমছে, কোনো দিন কি এই প্রশ্ন করা হয়েছে, আপনার পত্রিকায় অর্পিত সম্পত্তি কিংবা দেবোত্তর সম্পত্তির বিষয় আলোকপাত করা হয়েছে ⁉️ প্রশ্ন থেকে গেলো।
বিঃদ্রঃ আমরা প্রতিটি মত ও পথকে সম্মান প্রদর্শন করি। আমাদের মধ্যে রয়েছে বেদের আদর্শ। সেজন্য আমরা পরমতসহিষ্ণুতায় বিশ্বাসী। প্রত্যেকে অমৃতের সন্তান। এই আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে আমরা সকলকে নিজেদের ভ্রাতা ভগিনী হিসেবে সম্বোধন করি। এই আর্টিকেল শুধুমাত্র একজন সনাতনী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অপপ্রচার এর প্রত্যুত্তর। কোনো জাতি-ধর্মের প্রতি বিদ্বেষ এর উদ্দেশ্য নয়। আমরা শান্তি ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কে বিশ্বাসী।
Run with #veda
মন্তব্যসমূহ