"রথযাত্রা ও অভাবনীয় দার্শনিক তত্ত্ব"
"রথযাত্রা ও অভাবনীয় দার্শনিক তত্ত্ব"
সাধারণত "রথ" শব্দের দ্বারা আমরা কোনো যান কিংবা পরিবহনকে বুঝে থাকি। যা দ্বারা রথী বা যাত্রী এক স্থান থেকে অপর স্থানে গমন করে। সে যাত্রা হোক সরলতম কিংবা যুদ্ধক্ষেত্র। তবে কালক্রমে রথযাত্রা স্থান লাভ করেছে সনাতন ধর্মের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হিসেবে।
তবে রথযাত্রা সাম্প্রতিক সময়ে এসে ধর্মীয় উৎসব হিসেবে স্থান লাভ করলেও, এই "রথযাত্রা" দৃশ্যপটের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক অসাধারণ, বিশ্লেষণমূলক এক দার্শনিক চিন্তা।
রথ কি এবং কেন? প্রকৃত অর্থে রথী কে? এসকল উদীয়মান সংশয়ের সৃষ্টি হয়ে থাকে একজন সত্যান্বেষীর দৃষ্টিতে।
তবে সেই সংশয়ের নিবারণ করেছে উপনিষদ। কঠোপনিষদে ঋষি রথ ও রথীর এক অনবদ্য দর্শন আমাদের নিকট উপস্থাপন করেছেন।
কঠোপনিষদে বলা হয়েছে,
""আত্মানম্ রথিনম্ বিদ্ধি শরীরম্ রথমেব তু।
বুদ্ধিম্ তু সারথিম্ বিদ্ধি মনঃ প্রগ্রহমেবচ॥"
"ইন্দ্রিয়ানি হয়ানাহুর্বিষয়াম্স্তেষু গোচরান।
আত্মেন্দ্রিয়মনোয়োক্তম্ ভোক্তেত্যাহুর্মনীষিনঃ॥""
-কঠোপনিষদ ১/৩/৩-৪
অর্থাৎ, আমাদের প্রত্যেকের শরীর হল রথ, আর বামন জগন্নাথ (আত্মা ও পরমাত্মা) হল সেই রথের স্বামী, আমাদের মন হল লাগাম, ঘোড়াগুলি হল ইন্দ্রিয়, এবং মনীষীগণ(যোগীপুরুষ-আমরা) বুদ্ধিরুপী সারথির নিয়ন্ত্রনে মন ও ইন্দ্রিয়কে বশীভূত করে (বিষয়রুপী) জীবন পথে পরিচালনা করে পরমাত্মামুখী যাত্রা(শুদ্ধজ্ঞানের দ্বারা কর্ম) করে উনার আশ্রয় লাভ করে(ঈশ্বরপ্রাপ্তি)।
উপনিষদের এই শ্রুতি যেন আমাদের মহাভারতের অজেয় যোদ্ধা ও তাহার পথপ্রদর্শকের সেই রথের দৃশ্যপট তুলে ধরে। যেখানে যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই ইন্দ্রিয় স্বরুপ অদম্য অশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছেন এবং রথী অর্জুন তার লক্ষ্য এগিয়ে চলছে। সে দর্শন যেন পুনঃ দৃশ্যমান হয়েছিলো কুরুক্ষেত্রের প্রান্তরে।
আমরা অনেক উপমা ও এমন উপাখ্যান এর তাৎপর্য উপলব্ধি করি না। এই দেহ রথ, আমি জীবাত্মা ও সর্বশক্তিমান পরমাত্মা এই রথের রথী। পরমাত্মার নিকট এই ইন্দ্রিয়ের লাগাম সমর্পণ করে, আমি জীবাত্মা এই দেহরথকে পরিচালিত করবো মোক্ষ অর্জনের পথে। ইহাই রথযাত্রা, ইহাই রথযাত্রার দার্শনিক চিন্তা।
🔎Run with #veda
মন্তব্যসমূহ