মন্ত্র পাঠে নারীর অধিকার নেই ⁉️
অল্পজ্ঞ: মন্ত্র পাঠে নারীর অধিকার নেই। মনুস্মৃতিতে বলা হয়েছে
"নাস্তি স্ত্রীণাং ক্রিয়া মন্ত্রৈরিতি ধর্ম্মে। ব্যবস্থিতঃ। নিরিন্দ্রিয়া হ্যামন্ত্রাশ্চ স্ত্রিয়োহনৃতমিতি স্থিতিঃ ॥" - মনুসংহিতা ৯/১৮
যেহেতু স্ত্রীলোকদিগের মন্ত্র দ্বারা জাতকৰ্ম্মাদি সংস্কার হয় না, এজন্য উহাদিগের নির্মূল অন্তঃকরণ হয় না, এবং বেদস্থতিতে অধিকার নাই, এজন্য উহারা ধর্মজ্ঞ হইতে পারে না, এবং ইহাদিগের কোন মন্ত্রে অধিকার নাই, এজন্ত পাপ হইলে মন্ত্র দ্বারা তাহা ক্ষালন করিতে পারে না; অতএব ইহারা কেবল মিথ্যা পদার্থ।
শাস্ত্রজ্ঞ: মহর্ষি মনু নিজে বেদজ্ঞ ছিলেন। তিনি মনুসংহিতায় বলেছেন, “বেদোখিলো ধর্মমূলম্।”মনুসংহিতা ২/৬
অর্থাৎ, বেদ হল হল ধর্মের মূল। ধর্মের বিষয়ে বেদ স্বতঃ প্রমাণ।
সেই বেদবিরুদ্ধ যেকোনো সিদ্ধান্ত নিশ্চিত ভাবে ত্যাজ্যা।
এ বিষয়ে মহর্ষি ব্যাসদেব ব্যাসস্মৃতি ১/৪ এ বলছেন,
"শ্রুতি-স্মৃতি-পুরাণানাং বিরোধো যত্র দৃশ্যতে ।
তত্র শ্রৌতং প্রমাণন্তু তয়োর্দ্বৈধে স্মৃতিৰ্ব্বরা" ॥
- ব্যাসস্মৃতি ১/৪
অর্থাৎ, যেখানে শ্রুতি, স্মৃতি ও পুরাণের বিরোধ দেখা যায়, সেখানে শ্ৰুতিকথিত বিধিই বলবান্ এবং যেস্থলে স্মৃতি ও পুরাণের বিরোধ দেখা যায়, সেস্থলে স্মৃতিকথিত বিধিই বলবান।
সে শ্রুতিতে নারী পুরুষ সকলের বেদ অধ্যয়নের অধিকার আছে।
" য়থেমাং বাচং কল্যাণীমাবদানিজনেভ্যঃ। ব্রক্ষ রাজান্যাভ্যাং শূদ্রায়চার্য়ায় চ স্বায় চারণায় চ। প্রিয়ো দেবানংদক্ষিণায়ৈ দাতুরিহ ভুয়াসময়ং মে কামংসমৃধ্যতামুপ মাদো নমতু|| [যর্জুর্বেদ ২৬|২]
অর্থ্যাৎ, ঈশ্বর উপদেশ প্রদান করেছেন "হে মানবগণ! আমি যেভাবে ব্রাক্ষণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র, স্ত্রী–পুরুষ এবং অন্যান্য জনগণকে এই কল্যাণদায়িনী পবিত্র বেদবাণী উপদেশ করছি, তোমরাও তেমনি করো। যেমন বেদ বাণীর উপদেশ করে আমি বিদ্বানদের প্রিয় হয়েছি, তোমরাও সেরূপ হও। আমার ইচ্ছা বেদবিদ্যার প্রচার হোক। এর দ্বারা সকলে মোক্ষ এবং সুখ লাভ করুক।"
নারীর যদি মন্ত্র উচ্চারণের অধিকার না থাকতো তবে ঋষি গার্গী, লোপামুদ্রাসহ ৩৩ জন নারী ঋষি কিভাবে মন্ত্র দ্রষ্টা হতেন ⁉️
বাল্মিকী রামায়ণে যখন শ্রীরাম তাঁর বনবাসে থেকে কৌশল্যার গৃহে গেলেন তখন মাতা কৌশল্যা মন্ত্র জপের উল্লেখ রয়েছে,
"অগ্নিং জুহোতি স্ম তদা কৃতমঙ্লা" অর্থ্যাৎ বেদমন্ত্র উচ্চারণ পূর্বক অগ্নিহোত্র যজ্ঞ করছিলেন। [বাল্মীকি রামায়ণ ২|২০|১৫]।
শতপথ ব্রাহ্মণ ২|৬|২|১৩ তে দেখা যায় নারীগণ যজ্ঞে বেদের বিখ্যাত [মহামৃত্যুজ্ঞয়ী মন্ত্র ] পাঠ করছে।
পাণিনি তাঁর বেদাঙ্গ ব্যাকরণ গ্রন্থ অষ্টাধ্যায়ীতে ছাত্রীদের ব্রক্ষচর্যের প্রতিষ্ঠান ছাত্রীশালা এবং এর মহিলা অধ্যাপক আচার্যের কথা উল্লেখ করেছেন – "....মাতুলাচার্য়াণামানুক্"-অষ্টাধ্যায়ী ৪|১|৪৯ এবং " ছাস্যদয়ঃ ছাত্রীশালায়াম্"-অষ্টাধ্যায়ী ৬|২|৮৬
অর্থ্যাৎ তখনকার সময়ে নারীরা আচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন এবং নারী ছাত্রীদের জন্য আলাদা হোস্টেলের ব্যবস্থাও ছিল যেখানে দূরদূরান্ত থেকে গুরুগৃহে পড়তে আসতেন নারীরা।
তবে এত শাস্ত্রীয় উদ্ধৃতির পরেও যাদের মনুসংহিতার বিকৃত শ্লোক একমাত্র সম্বল তাদের জন্য সমবেদনা।
🔎Run with #veda
কথোপকথনে যোগ দিন