"চলো স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালোবাসি"


"চলো স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালোবাসি"

আমরা সকলেই অমৃতের সন্তান! এই জগত যে সে পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার উপহার তাহার সন্তানদের প্রতি। এই সৃষ্টি জগতের সর্বত্রই সেই সর্বব্যাপী পরমাত্মার নিবাস। প্রতিটি প্রাণী মাত্রই পরমাত্মার করুণার পাত্র। এই সৃষ্টিকে তিনি রুপ দিয়েছেন কিন্তু দাস হিসেবে নয় বরং আমাদের সম্বোধন করেছেন সন্তান হিসেবে। 

তবে কেন আমরা একে অপরের প্রতি নিষ্ঠুর হবো? মনুষ্য অপর মনুষ্যের প্রতি যেমন শ্রদ্ধাশীল, তেমনি অপর প্রাণীকুলের প্রতিও সমধিক প্রেম ও ভালোবাসা প্রকাশ করবে। সমস্ত প্রানীর প্রতি এই হৃদয় থেকে উৎপন্ন প্রেম, আমার হৃদয় থেকে সকল মলিনতা দূর করে দিয়ে পবিত্র করে তুলবে। এই প্রার্থনা এই হৃদয়ে প্রোথিত হোক। 

"পুনস্তু বিশ্বা ভূতানি" -যজুর্বেদ ১৯/৩৯
অর্থাৎ, সমস্ত প্রাণী আমাকে পবিত্র করুক।

সমস্ত জীবের মাঝে ঈশ্বর আবাস, আমরা সকলে ঈশ্বরের কৃপানিধি এই ভাব উদয় হওয়া আবশ্যক। তবেই অপর প্রাণীকে ভোগ নয়, প্রেমের দৃষ্টিতে দেখার মনোভাব তৈরি হবে। সকলের মঙ্গল কামনা, সকলের কল্যাণের চেতনা জাগ্রত হবে এই মনে।

"তন্মে মনঃ শিবসংকল্পমস্তু" -যজুর্বেদ ৩৪/১

অর্থাৎ, সর্বভূতের কল্যাণের মহৎ চিন্তায় নিজের মনস্থির করো।


প্রাণী সকল আমাদের স্রষ্টার সৃষ্টি, অমৃতের সন্তান। পিতা-মাতা যেমন সন্তান এর প্রতি নিঃস্বার্থ, অকৃত্রিম, অকৃপণ ভালোবাসা ও প্রেম, স্নেহ প্রদান করেন, তেমনি সেই অমৃত আমাদের সকল প্রাণীর প্রতি স্নেহময়। আমাদের কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, কিংবা অপরকে নিজ ভোগ্য পদার্থে পরিণত করে শ্রেষ্ঠ হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ, আমরা সকলে সেই সর্বশ্রেষ্ঠ ঈশ্বরের সৃষ্টি। আমাদের লক্ষ্য মোক্ষ অর্জন, সৃষ্টিকে পদানত করা নয়। সেজন্য আমাদের নিকট প্রাণী মাত্রই মিত্র। 

"মিত্রস্যাহং চক্ষুষা সর্বাণি ভূতানি সমীক্ষে"
 - যজুর্বেদ ৩৬/১৮ 

অর্থাৎ, সকল জীবকে মিত্রের চোখে দেখবে।

স্রষ্টা আমাদের নিকট কোনো চাহিদা বা শূন্যতার জন্য সৃষ্টি করেননি। বরং আমরা যেন কর্মফলের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে মোক্ষ অর্জন করতে পারি। সেজন্য, বারংবার আমাদের এই তীর্থভূমিতে নানা জীব দেহে রমণ করাচ্ছেন। এই মনুষ্য দেহ নশ্বর, সেজন্য এই নশ্বর দেহকে তুষ্ট করা কখনো লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। বরং সেই স্রষ্টার প্রতি নিজের কর্মফল সমর্পণ করে মুক্তির প্রচেষ্টা করাই জীবনের সার্থকতা। 

"তস্মাদসক্তঃ সততং কার্যং কর্ম সমাচর ।
অসক্তো হ্যাচরন্ কর্ম পরমাপ্নোতি পুরুষঃ।।" 
 -গীতা ৩/১৯

অর্থাৎ, তুমি আসক্তিশূন্য হইয়া কর্ম সম্পাদন করো, অনাসক্ত হয়ে কর্মানুষ্ঠান করিলে পুরুষ পরমপদ (মোক্ষ) প্রাপ্ত হন।


ঈশ্বর সকল প্রাণীর হৃদয় দেশে অবস্থিত। তবে অর জীবকে অন্যায়ভাবে আঘাত কিংবা করায়ত্ত করার মাঝে কোনো উন্নতি নেই। আমরা যখন উপলব্ধি করবো সেই পরমাত্মার নিকট সকলেই সন্তানস্বরুপ। 
তখন আমরা ঈশ্বরকে প্রাপ্ত করার জন্য নিজ হৃদয় দেশে খুঁজবো তাকে, অপর জীবের জীবনের বিনিময়ে তাকে প্রাপ্ত করতে চেষ্টা করবো নাহ। 

"ঈশ্বরঃ সর্বভূতানাং হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি। তমেব শরণং গচ্ছ সর্বভাবেন ভারত। তৎপ্রসাদাং পরাং শান্তি স্থানং প্রাপ্স্যসি শাশ্বতম্"।। 

-গীতা ১৮/৬১-৬২ 

অর্থাৎ, হে অর্জুন! ঈশ্বর সকল জীবের হৃদয়দেশে অধিষ্ঠিত। হে ভারত! সর্বতোভাবে তারই শরণ গ্রহণ করো, তার কৃপায় পরম শান্তি ও শাশ্বত স্থান প্রাপ্ত হবে।

প্রাণী মাত্রই সুখী হোক। কারণ সকল প্রাণী মাত্রই অমৃতের সন্তান। আমরা মনুষ্য, সভ্য এবং জ্ঞানী। যা আমাদের পশু হতে পৃথক করে। এই মানব জীবন অপরের প্রতি ভালোবাসা ও প্রেমপূর্বক নিবেদন করার মধ্যে সার্থক। 

"ওঁ দ্যৌঃ শান্তিরন্তরিক্ষং শান্তিঃ পৃথিবী শান্তিরাপঃ শান্তিরোষধয়ঃ শান্তি। বনস্পতয়ঃ শান্তিবির্শ্বে দেবাঃ শান্তিবর্হ্ম শান্তিঃ সৰ্ব্বং শান্তিঃ শান্তিরেব শান্তিঃ সামা শান্তিরেধি"।।  -যজুর্বেদ  ৩৬/১৭ 

অর্থাৎ, দ্যুলোক,, অন্তরিক্ষলােক ও পৃথিবীলোক শান্তিময় হউক। জল, ঔষধি ও বনস্পতি শান্তিময় হউক। সব বিদ্বান, বেদপাঠ এবং যাহা কিছু, সবই শান্তিময় হউক। সর্বত্র শান্তিময় হউক। সেই শান্তি আমি যেন প্রাপ্ত হই।। 

"ও৩ম্ সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ
সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ।
সর্বে ভদ্রাণি পশ্যন্তু
মা কশ্চিৎ দুঃখভাগভবেৎ।

অর্থাৎ, জগতের সবাই যেন সুখী হয়, সকলে যেন নিরাময় হয়, সকল মানুষ পরম শান্তি লাভ করুক, কশ্মিনকালেও যেন কেহ দুঃখ বোধ না করেন। ঈশ্বর আমাদেরকে আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক এই তিন প্রকার দুঃখ হতে শান্তি প্রদান করুন।

তাই হে অমৃতের সন্তানগণ! চলো স্রষ্টার সৃষ্টিকে ভালোবাসি.....................

🔎Run with #veda

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ