"শ্রীকৃষ্ণ ও বন্ধুত্ব"


"শ্রীকৃষ্ণ ও বন্ধুত্ব"

বন্ধুত্ব এই শব্দের মধ্যে রয়েছে একরাশ বিশ্বাস, আস্থা। রক্তের সম্পর্কে বাইরে আমরা যে সম্পর্কের চয়ন নিজে করি, তা হলো বন্ধুত্ব। একজন প্রকৃত বন্ধু সর্বদা নিজের জন্য যা ভাবে, অপর বন্ধুর জন্য তেমনি চিন্তা করে। সেজন্য, জীবনে বন্ধুত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। সেজন্য,  
Thomas Aquinas বলেছিলেন, 

"There is nothing on this earth more to be prized than true friendship." – Thomas Aquinas
 "এই পৃথিবীতে সত্যিকারের বন্ধুত্বের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই।"

তবে বন্ধুত্ব কখনো স্বার্থ কিংবা প্রয়োজনের জন্য হওয়া উচিত নয়। কারণ, নিঃস্বার্থ বন্ধুই সর্বদা হিতকারী। একজন প্রকৃত বন্ধু কখনো অপর বন্ধুকে অন্ধভাবে সমর্থন করে নাহ বরং তাহার জন্য মঙ্গল ও সঠিক পথের পথ নির্দেশক। যেরুপ পথনির্দেশক ছিলেন, যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। কখনো রাজসিংহাসনে থেকে দরিদ্র সুদামাকে জড়িয়ে ধরে বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা কিংবা রথের চালক হয়ে মিত্র অর্জুনকে যুদ্ধ ও জীবন উভয় স্থানে অজেয় করে তোলা মধ্যে প্রকৃত বন্ধুর মতো কর্তব্য পালন করার দৃষ্টান্ত যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মধ্যেই লক্ষণীয়। 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সর্বদা তার মিত্রদের মনে রেখেছিলেন। শৈশবে সে বাল্যবন্ধু সুদামার প্রতি তার ছিল অগাধ ভালোবাসা। সময়ের আবহে তিনি হয়েছিলেন দ্বারকাধিপতি কিন্তু এই সুউচ্চ স্থানে থেকেও তিনি প্রিয় মিত্র সুদামাকে ভুলে যাননি। সেজন্য, সে দরিদ্র ব্রাহ্মণ মিত্র সুদামা যখন দ্বারকানাথের নিকট আসলেন, তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে আলিঙ্গন করে নিজের বন্ধুত্বের উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন। সুদামা নিজের দারিদ্র্যের কারণে তিনি দ্বারকায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে সাহায্য চাইতে আসেন। কিন্তু লজ্জায় কিছু চাইতে পারেননি, কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে দেখে খুব খুশি হন। তিনি নিজ হাতে সুদামার পা ধুয়ে দেন, তাঁকে আলিঙ্গন করেন এবং শ্রদ্ধার সঙ্গে অভ্যর্থনা জানান। এই মুহূর্তটি ভাগবত পুরাণ (স্কন্ধ ১০, অধ্যায় ৮০-৮১ এ সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে।

" सन्ध्यायं तं समालिङ्ग्य सप्रेमं भास्पलाच्युतः।
पपात भूमौ सस्नौ च प्रेमगद्गदया गिरा॥"
 - ভাগবত পুরাণ ১০.৮০.১৬

অর্থাৎ, ভগবান অচ্যুত (কৃষ্ণ) তাঁর প্রিয় বন্ধু সুদামাকে সস্নেহে আলিঙ্গন করেন, তাঁর চোখ থেকে প্রেমাশ্রু ঝরে পড়ে এবং তিনি প্রেমে অভিভূত হয়ে মাটিতে পড়ে যান ও কাঁদতে থাকেন।

এ যেন প্রকৃত বন্ধুত্বের অনন্য উদাহরণ। বন্ধু রাজা হোক কিংবা দরিদ্র, সর্বদা সে বন্ধুত্বই সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে থাকে যা নিঃস্বার্থ ও হৃদয় হতে হয়। 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মিত্রতা জগৎ শ্রেষ্ঠ ও অতুলনীয়। তাহার জীবনে সুদামার পরে শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর পাণ্ডুপুত্র
অর্জুন ছিল পরম মিত্র। বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণ ও পাণ্ডুপুত্র অর্জুনের মিত্রতা এতই গভীর ছিল যে একদা ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে তিনি বলেন,

"তব ভ্রাতা মম সখা সম্বন্ধী শিষ্য এব চ। 
মাংসান্যুৎকৃত্য দাস্যামি ফাল্গুনার্থে মহীপতে ॥
- মহাভারত; ভীষ্মপর্ব: ১০৭/৩৩

অর্থাৎ, আপনার ভ্রাতা অর্জুন আমার মিত্র, সম্বন্ধী এবং শিষ্য। তার হিতের জন্য আমার স্বীয় অঙ্গের মাংসও কর্তন করতে প্রস্তুত।

এছাড়াও অর্জুনের সংকটকালে কিংবা দ্বিধাবোধ দূর করে তাহার কর্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে সত্যের পথে অবিচল থাকতে অনুপ্রেরণা দেওয়া একজন প্রকৃত বন্ধু ও পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করেছিলেন। একজন বন্ধু শুধু অন্ধের মতো পাশে থাকা নয় বরং মিত্রকে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করাও প্রকৃত মিত্রতার স্মারক। কারণ, কর্ণও কিন্তু দুর্যোধনের মিত্র ছিল কিন্তু পাপকর্মে লিপ্ত থাকা এবং বিবিধ অধর্মের পথে কোন বাধা প্রদান করেননি কিংবা সত্য ও ধর্মের নির্দেশ প্রদান করেননি। বরং, দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের মতো ঘটনায় তিনি মৌন ছিলেন। এজন্য, মিত্রের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত সে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীমদ্ভগবদগীতার মতো অমৃত জ্ঞান প্রদান করে জীবনের সঠিক দিশা প্রদান করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। এজন্য বন্ধুরুপে তিনি অনন্য ও শ্রেষ্ঠ।

🔎Run with #veda

কথোপকথনে যোগ দিন

NextGen Digital... Welcome to WhatsApp chat
Howdy! How can we help you today?
Type here...