☘️ বেদে করপাত্রীর শ্রীরাম, দশরথ ও রাবণঅন্বেষণের ভ্রান্তি নিবারণ । ☘️



পৌরাণিকগণের মধ্যে মায়াবাদীদের অত্যন্ত প্রিয় শ্রী স্বামী করপাত্রী মহারাজ তার ' রামায়ণ মীমাংসা' গ্রন্থে বেদে মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরামচন্দ্র, তার পিতা দরশথ ও রাবণকেও খুঁজে পেয়েছেন। যদিও মায়াবাদীরা পরম্পরা ও কর্মকাণ্ডীয় ভাষ্য স্বীকার করেন সংহিতার ক্ষেত্রে | পরিহাসের বিষয় স্বামী করপাত্রী নিজেও তার শুক্ল যজুর্বেদ ভাষ্যের প্রারম্ভে সায়ণ – মহীধর – উব্বটের ভাষ্য স্বীকার করে নিয়ে এবং কর্মকাণ্ডীয় ব্যাখ্যাই একমাত্র সত্য ধরে নেওয়ার পরেও নিজের ভাষ্যে গিয়ে পৃথকভাবে স্বকল্পিত আধ্যাত্মিক অর্থ দেখিয়েছেন । যদিও অপ্রাসঙ্গিকভাবে আধ্যাত্মিক অর্থে শ্রীকৃষ্ণ, রাম কিভাবে এলো তা অজ্ঞাত ও এখানে তাদের আচার্যদের বা পরম্পরার কি হলো সে বিষয়ে ধূর্ত কপট মায়াবাদীরা নিশ্চুপ | আমরা আজকে তারই বেদ বিষয়ক এরকম মিথ্যাচার উন্মোচন করবো। আমরা এই খণ্ডনে উক্ত গ্রন্থের ৩য় সংস্করণ, ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ ব্যবহার করছি। প্রচলিত অন্তর্জালিক সংস্করণটিও এই সংস্করণ থেকেই তৈরীকৃত ।

পূর্বপক্ষঃ" অথর্ববেদ ১৯।৩৯।৯ - এ ইক্ষ্বাকু, ঋগ্বেদ ১।১২৬।৪ [ দশরথের লাল চল্লিশটি ঘোড়া এক হাজার ঘোড়ার নেতৃত্ব প্রদান করে = করপাত্রীকৃত অর্থ ] - এ রাজা দশরথের, ঋগ্বেদ ১০।৯৩/১৪ ও প্রশ্ন উপনিষদ ৬।১ এ শ্রীরামচন্দ্রের বর্ণনা আছে " ২য় অধ্যায় | পৃষ্ঠা ১৫-১৬ ।

উত্তরপক্ষঃ বেদের পঠন-পাঠন রামায়ণের বহু পূর্ব থেকেই চলে আসছে। যদি সত্যিই সেখানে এসকল চরিত্রের কথা থাকতো তবে কি তারা জানতেন না কি হবে না হবে? আর যাদের জন্ম পরে সেসব লৌকিক ও অনিত্য ইতিহাস বেদে কিভাবে থাকতে পারে।

যং ত্বা বেদ পূর্ব ইক্ষ্বাকো যং বা ত্বা কুষ্ঠ কাম্যঃ। যং বা বসো যমাৎস্যস্তেনাসি বিশ্বভেষজঃ ॥ অথর্ববেদ ১৯.৩৯.৯

অনুবাদঃ

(কুষ্ঠ) হে কুণ্ঠ ! [মন্ত্ৰ ১] (যম্ ত্বা) যে তোমাকে (পূর্বঃ) প্রথম [মুখ্য] (ইক্ষ্বাকঃ) জ্ঞানকে প্রাপ্তকারী [ (ইক্ষ্বাকঃ) ইষেঃ ঝুঃ। উ০৩৷১৫৭৷ ইষ গতৌ-ঝু+অক গতৌ-অ! ইক্ষুং জ্ঞানম্ অকতি গচ্ছতি প্রাপ্নোতীতি সঃ। জ্ঞানপ্রাপ্তঃ পুরুষঃ], (বা) অথবা (যম্ ত্বা) যে তোমাকে (কাম্যঃ) কামনাযুক্ত, (বা) অথবা (যম) যাকে (বসঃ) নিবাসদাতা, [বা] (যম) যাকে (আৎস্যঃ) সব দিকে সদা গতিশীল [পুরুষ] (বেদ) জানেন, (তেন) এই কারণে তুমি (বিশ্বভেষজঃ) সর্বৌষধ (অসি) হও ॥৯॥

ভাবার্থ - বড়-বড় বিদ্বান, পুরুষার্থী ব্যক্তিগণ পরীক্ষা করে কুষ্ঠকে সর্বৌষধ জানেন ॥৯॥
চত্বারিংশদ্দশরথস্য শোণাঃ সহস্ৰস্যাগ্রে শ্রেণিং
নয়ন্তি। 
মদচ্যুতঃ কৃশনাবতো অত্যান্কক্ষীবন্ত উদমৃক্ষন্ত পজ্ৰাঃ ॥ 
 ঋগ্বেদ ১.১২৬.৪

সায়ণভাষ্যঃ

“দশরথস্য দশসংখ্যাকরথবতঃ “সহস্ৰস্য সহস্রসংখ্যাকানুচরোপেতস্য কক্ষীবতো গোয়ূথসহস্ৰস্য বা “অগ্রে পুরস্তাৎ “শোণাঃ শোণবর্ণোপেতা: অশ্বাঃ “চত্বারিংশৎ একৈকস্য রথস্য চতুষ্টয়ে সতি দশরথানাং মিলিত্বা চত্বারিংশদশা ভবন্তি। তেহপি “শ্রেণিং পঙ্ক্তিমাশ্রিত্য “নয়ন্তি রথান্ অভিমতদেশং প্রাপয়ন্তি ৷ যদ্বা অশ্বনিযুক্তান্ রথান্ শ্রেণিং শ্রেণীভাবং নয়ন্তি প্রাপয়ন্তি একৈকং রথং চত্বারশ্চত্বারঃ পক্ত্যাকারেণ বহন্তীত্যৰ্থঃ । অথ তান্ “কক্ষীবন্তঃ । কক্ষ্যা অশ্বসংবন্ধিনী রজ্জুঃ | কক্ষ্যা রজ্জুরশ্বস্য' (নিরু. ২.২) ইতি যাস্কেনোক্তত্বাৎ | তাভিস্তদ্বন্তঃ যদ্বা। অঙ্গিরসঃ পুত্রাঃ সর্বেঽপি কক্ষীবন্তঃ । অথবা কক্ষীবদনুচরাঃ সর্বেঽপি ছত্রিন্যায়েন কক্ষীবন্তঃ “পজ্রাঃ ঘাসাদ্যন্নবন্তঃ সন্তঃ “মদচ্যুতঃ মদস্ৰাবিণ: উদ্বৃত্তান্ শত্ৰুণাং মদস্য চ্যাবয়িতূন্ বা “কৃশনাবতঃ সুবর্ণময়নানাভরণযুক্তান্ কৃশনমিতি হিরণ্যনাম 'কৃশনং লোহম্ (নি. ১. ২.৭ ) ইতি তন্নামসু পাঠাত্ । সুবর্ণাভরণোপেতান্ “অত্যান্‌ সততগমনশীলানশ্বান্ “উদমৃক্ষন্ত অধ্বশ্রমজনিতস্বেদাপনয়নায় উৎকৃষ্টং মাৰ্জয়ন্তি।
সায়ণ ভাষ্যানুযায়ী অনুবাদঃ

গো সহস্রের সম্মুখে দশখানি রথের চত্বারিংশৎ শোণঘোটক শ্রেণীবদ্ধ হয়ে চলতে লাগল। কক্ষীবানের অনুচরেরা ঘাসাদি খাদ্য সংগ্রহ করে মদস্রাবী সূবর্ণময় আভরণ বিশিষ্ট সতত গতিশীল অশ্বদের মার্জন করতে লাগল।
মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতীকৃত ভাষ্যঃ

পদার্থঃ যে (দশরথস্য) দশ দিকে রথ দ্বারা যুক্ত সেনাপতির (চত্বারিংশৎ) চল্লিশ (শোণাঃ) লাল ঘোড়া (সহস্ৰস্য) সহস্ৰ যোদ্ধা বা সহস্র রথের (অগ্রে) আগে (শ্রেণিম্) নিজের পংক্তি বা শ্রেণিকে (নয়ন্তি) পৌঁছান অর্থাৎ একসাথে হয়ে আগে চলেন বা যে সেনাপতির ভৃত্য এমন (পড্রাঃ) যেন তার সাথে এক মার্গে গমন করে (কক্ষীবন্তঃ) যার প্রশংসিত কক্ষা বিদ্যমান অর্থাৎ যার সাথী গতিশীল, বীর লড়াকু, সেই (মদচ্যুতঃ) যিনি আনন্দকে সদা প্রবাহিতকারী, (কৃশনাবতঃ) সুবর্ণ আদি অলঙ্কার পরিধানকারী, (অত্যান্) যার দ্বারা মার্গে সদা গতিশীল সেই ঘোড়া, হাতি, রথ আদিকে (উদমৃক্ষন্ত) উৎকর্ষতার সাথে সহ্য হয় (অর্থাৎ যিনি ঘোড়া, হাতি, রথ উৎকৃষ্টতার সাথে পালন করেন), তিনিই শত্রুদের জয় করার যোগ্য হন ॥৪॥ ভাবার্থ - যাঁর চার ঘোড়া যুক্ত দশ দিশায় রথ, সহস্র অশ্বারোহী, লাখো পদাতিক, অত্যন্ত পূর্ণ রাজকোশ, ঐশ্বর্য এবং পূর্ণ বিদ্যা, বিনয়, নম্রতা আদি গুণ রয়েছে, তিনিই চক্রবর্তী রাজ্য স্থাপনের যোগ্য ॥ ৪ ॥
প্র তদ্দু:শীমে পৃথবানে বেনে প্র রামে বোচমসুরে মঘবৎসু । যে যুক্ত্বায় পঞ্চ শতাস্ময়ু পথা বিশ্রাব্যেষাম্‌ ॥
ঋগ্বেদ ১০.৯৩.১৪

সায়ণভাষ্যঃ
যে দেবাঃ “পঞ্চ “শতা শতানি রথান্ “যুক্ত্বায় অশ্বৈর্যুক্ত্বা "অস্ময়ু অস্মৎকামাঃ সন্তঃ “পথা যজ্ঞমার্গেণ গচ্ছন্তি তেষাম্ “এষাং দেবানাং “বিশ্রাবি দেবানাং লোকে বা বিশেষেণ শ্রাবকগুণযুক্তং “তৎ স্তোত্রং “দুঃশীমে দুঃশীমনামি “পৃথবানে | পৃথবানঃ পৃথিঃ তস্মিন্ “বেনে চ "অসুরে বলবতি “রামে চৈতেষু রাজসু “প্র “বোচং প্রব্রবীমি | প্রখ্যাপয়ামীত্যর্থঃ। “মঘবৎসু অন্যেষু ধনবৎসু চ প্রখ্যাপয়ামীত্যৰ্থঃ || অধীক্বত্ৰ সপ্ততিং চ সপ্ত চ।
সায়ণভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদঃ

যে সকল দেবতা পঞ্চশত রথে ঘোটক যোজনা করিয়া পথে গমন করেন, (অর্থাৎ যজ্ঞে যাইবার জন্য), তাহাদিগের বর্ণনাযুক্ত স্তব আমি দুঃশীম ও পৃথবান ও বেন ও অসুর রাম এই সকল ধনাঢ্য রাজার নিকট পাঠ করিয়াছি।
স্বামী ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজককৃত ভাষ্যঃ

পদার্থঃ (যে-অস্ময়ু) আমাদের যেসকল হিতাকাঙ্ক্ষী হিতৈষী বিদ্বান (পঞ্চশতা) পাঁচ শতগুণ শক্তিশালী ইন্দ্রিয়সমূহকে (যুক্ত্বায়) যোজিত করে (পথা) জ্ঞানমার্গ দ্বারা জ্ঞানপ্রদান ক্রম দ্বারা (বিশ্রাবি) বিশেষরূপে শ্রবণ করানোর যোগ্য পরমাত্মজ্ঞান [প্রদান করেছেন], (এষাম্) এর অর্থ (তৎ) সেই শোনানোর যোগ্য (দুঃশীমে) যারা দুঃখে শয়ন করে, তেমন (পৃথবানে) বিস্তৃত (বেনে) কামনাপূর্ণ (রামে) ভোগ রমণকারী জনগণের মাঝে (মঘবৎসু) ধনবান জনের মাঝে (প্রবোচম্) প্রবচন করি ॥১৪॥

ভাবার্থ - যে হিতৈষী বিদ্বানগণ জ্ঞানপ্রদান ক্রম দ্বারা আমাদের মন আদিকে পাঁচ শত গুণ শক্তিশালী বানিয়ে পরমাত্মজ্ঞান প্রদান করেন, সেই জ্ঞান বিশেষরূপে বিষয়ে রত, দুঃখের সাথে শয়নকারী জনগণের মাঝে তথা ধনকামী জনের মাঝে উপদেশ করা উচিত ॥১৪৷
অথ হৈনং সুকেশা ভারদ্বাজঃ পপ্রচ্ছ। ভগবন্ হিরণ্যনাভঃ কৌসল্যো রাজপুত্রো মামুপেত্যৈতং প্রশ্নমপৃচ্ছত | ষোড়শকলং ভারদ্বাজ পুরুষং বেত্থ | তমহং কুমারমব্রুবং নাহমিমং বেদ। প্রশ্ন উপনিষদ ৬.১

অনুবাদঃ

[ শাঙ্করভাষ্য অনুযায়ী ] বৃত্তান্ত খ্যাপনপূর্ব্বক প্রশ্ন করিতেছেন।-সুকেশা বলিলেন, ভগবন্! হিরণ্যনামক কোশলদেশীয় কোন ক্ষত্রিয়জাতীয় রাজতনয় আমার সমীপে জিজ্ঞাসা করিয়াছেন, ভরদ্বাজ! যে পুরুষেতে অবিদ্যাধ্যারোপিত ষোড়শকলার কল্পনা হয়, সেই পুরুষ কে? তাহা আমাকে বল।
অনুবাদঃ
[গীতাপ্রেস ] ব্যাখ্যা—এই মন্ত্রে সুকেশা ঋষি নিজের অল্পজ্ঞতা এবং সত্যভাষণের মহত্ত্ব প্রকাশ করে ষোড়শকলাবান পুরুষের বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন। তিনি বললেন—প্রভু! একবার কোসল দেশের রাজকুমার হিরণ্যনাভ আমার নিকট এসেছিল। সে আমাকে জিজ্ঞাসা করল-ভারদ্বাজ তুমি কি ষোড়শকলাবান পুরুষের বিষয়ে জান ?
এখানে দেখুন, কোসল বানান স দিয়ে। যদিও কিছু শাঙ্করভাষ্যের বাংলা সংস্করণে শ দেখা যায় কিন্তু অধিকাংশই স

আর শ্রীরামচন্দ্র অযোধ্যার রাজপুত্র, কোশল তাদের অধীনে একটি রাজ্যমাত্র অতঃ এখানে কোশল দেশীয় রাজপুত্র মোটেও শ্রীরামচন্দ্র নয়। যেমন শ্রীরামচন্দ্র কোশল দেশ অতিক্রম।

করপাত্রী বলেছেন বাল্মিকী রামায়ণ ২.৭৫.১৩ তে শ্রীরামচন্দ্রের নাম হিরণ্যনাভ বলা হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটা তার একটি বৈশিষ্ট্য। নাম নয়।

ক্ষিপ্ৰং মামপি কৈকেয়ী প্ৰস্থাপয়িতুমর্হতি। হিরণ্যনাভো যত্রাস্তে সুতো নে সুমহাবশাঃ।। বাল্মিকী রামায়ণ ২.৭৫.১৩

অনুবাদঃ সুবর্ণময় নাভিযুক্ত মহাযশস্বী আমার পুত্র রাম যেখানে আছে ; কৈকেয়ী আমাকে শীঘ্র সেখানে পাঠিয়ে দিক।

পূর্বপক্ষঃ " অথর্ববেদে দশশীর্ষ ব্রাহ্মণের উল্লেখ আছে " অধ্যায় ১৯ – পৃষ্ঠা ৫৯০। 

উত্তরপক্ষঃ মন্ত্র উল্লেখ না করাতে এখানে আমরা
উত্তর দিলাম না ।

(http://back2thevedas.blogspot.com/2021/12/blog-post_28.html)

ॐ কৃণ্বন্তো বিশ্বম্ আর্যম্

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন