উত্তরঃ ধর্মের স্কন্ধ তিনটি। এগুলোর মধ্যে যজ্ঞ, অধ্যায়ন ও দান হল প্রথম ধর্ম স্কন্ধ। শ্রীমদ্ভগবত গীতায় ভগবান বলেছেন-
"কর্তব্য ও অকর্তব্য নিধারণে শাস্ত্রই তোমার প্রমাণ। অতএব শাস্ত্রীয় বিধানে কথিত হয়েছে যে কর্ম তথা স্বধর্ম, তা জেনে তুমি সেই কর্ম করতে তথা স্বধর্ম পালন করতে যোগ্য হও।" গীতা ১৬।২৪.
এখন বিচার্য বিষয় হল, ধর্মের উপরোক্ত তিনটি স্কন্ধ নির্বাচন এর ক্ষেত্রে শাস্ত্র কি বলে। ছান্দোগ্য_উপনিষদ ২/২৩/১ নং শ্লোকে স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে-
"ত্রয়ো ধর্ম স্কন্ধ্যাঃ য়জ্ঞ অধ্যয়ন দানমিতি প্রথমঃ তপঃ এব দ্বিতীয়ঃ ব্রহ্মচার্যকুলবাসী তৃতীয়ঃ।" অর্থাৎ যজ্ঞ, অধ্যয়ন ও দান এই তিনটিই ধর্মের স্কন্ধ ও প্রথম বিভাগ, তপস্যা হল দ্বিতীয় বিভাগ এনং আচার্য গৃহে শরীর ক্ষয়কা
গুরুগৃহবাসী ব্রহ্মচারীই তৃতীয় বিভাগ।
শ্রীমদ্ভগবত গীতায়ও প্রায় একই উক্তিই ভগবান করেছেন একটু ভিন্ন ভাবে, তিনি বলেছেন(যদিও এগুলো যে ধর্ম স্কন্ধ তা তিনি বলেনি)- "যজ্ঞ, দান ও তপস্যা ত্যাগ করা উচিত নয়, তা অবশ্যই করা কর্তব্য।" গীতা ১৮।৫.
এই দুইটো শাস্ত্রের তুলনা করলে দেখা যায় দুটো ক্ষেত্রেই যজ্ঞ ও দান মিলে যায়, কিন্তু অপরটি প্রথমিক দৃষ্টিতে কিছুটা অমিল। উপনিষদের ঋষি বলেছেন 'অধ্যয়ন' ও গীতার প্রবক্তা শ্রী ভগবান বলেছেন 'তপস্যা'। মনে প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কি দুটি শাস্ত্র ধর্মের স্কন্ধ দুই রকম বলেছে নাকি? বাস্তবে ঠিক তা নয়, কেননা তপস্যা বললে অধ্যয়নও এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তাছাড়া গীতায় এগুলোকে স্কন্ধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়নি, কিন্তু নিত্য কর্ম হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তৈত্তিরীয় উপনিষদে তপস্যা বলতে কি বুঝানো হয়েছে তা লক্ষ্য করলেই ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যায়। ঋষি বলেছেন-
"হে ব্রহ্মচারী! শাস্ত্র_প্রদর্শিত_কর্মবিধি_জানিবে এবং বেদ অধ্যায়ন ও অধ্যাপনা করিবে। সত্য বলিবে এবং অধ্যায়ন ও অধ্যাপনা করিবে। তপস্যা করিবে এবং অধ্যায়ন অধ্যাপনা করিবে। অন্তর ইন্দ্রিয় সংযত করিবে এবং অধ্যায়ন ও অধ্যাপনা করিবে। অগ্নি বিদ্যার সেবন পূর্বক বিদ্যা অধ্যায়ন ও অধ্যাপনা করিবে। অগ্নিহোত্র অনুষ্ঠান করিবে এবং অধ্যায়ন ও অধ্যাপনা করিবে। অতিথি সৎকার করিবে এবং অধ্যায়ন ও অধ্যাপনা করিবে। সন্তান উৎপাদন করিবে এবং অধ্যায়ন ও অধ্যাপনা করিবে। ঋতুকালে ভার্যাগমন করিবে এবং অধ্যায়ন ও অধ্যাপনা করিবে। পৌত্র উৎপত্তির জন্য পুত্রকে গার্হস্থে নিবেশিত করিবে এবং অধ্যায়ন ও অধ্যাপনা করিবে। সত্যবাদী হওয়া তপস্যা- ইহা সত্যবচা_রাথীতর_আচার্যের_মত। ন্যায় আচরণ করিতে গিয়া কষ্ট সহ্য করাই তপস্যা- ইহা তপোনিত্য পৌরুশিষ্টি_আচার্যের_মত। ধর্ম পথে চলিয়া অধ্যায়ন, অধ্যাপন ও সত্য উপদেশ দানই তপস্যা- ইহা নাক_মৌদগল্য_আচার্যের_মত। অন্যান্য আচার্যের মতেও উপরোক্ত বিষয়গুলিকে তপস্যা বলে। পূর্বোক্ত বিষয়গুলিই তপস্যা- তাহা তুমি জানিবে।" তৈত্তিরীয়_উপনিষদ ১/৯.
উপরে তপস্যার বর্ণনা করতে গিয়ে ঋষি বারবার অধ্যয়ন এর কথা উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, অধ্যয়নও একটি পরম তপস্যা। যে সকল ব্যক্তি ধর্মের এই তিনটি স্কন্ধকে ধারণ করেন, "তারা সকলেই পুণ্যলোকে গমন করেন, এর সাথে যিনি ব্রহ্মের উপাসনা করেন তিনি অমরত্ব লাভ করেন।" ছান্দোগ্য উপঃ ২/২৩/১.
✍️আর্য প্রতিনিধি সভা বাংলাদেশ।✍️
ও৩ম্ শান্তি শান্তি শান্তি