✍️🍁ধর্ম ঈশ্বর কতৃক প্রণীত এবং তা সবসময় সনাতন বা চিরন্তন। মানব কল্যাণের জন্য ঈশ্বর পবিত্র বেদ এর মাধ্যমে আমাদের যেমন উপদেশ দিয়েছেন তেমনি কিছু বিধিনিষেধ করেছেন যাহার লঙ্ঘন অপরাধ বলে গণ্য হয় বর্তমান সমাজেও। সে সকল বিধিনিষেধ সমূহকে একত্রে সপ্তমর্যাদা বলা হয়।
🪔 বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই সপ্তমর্যাদার গুরুত্ব ও এর শাস্ত্রীয় উল্লেখ নিম্নে বর্ণনা করা হলো :-
🌿📖 "সপ্ত মর্য়াদাঃ
কবয়স্ততক্ষুস্তাসামেকামিদভ্যংহুরো গাৎ
আয়োর্হ স্কম্ভ উপমস্য নীলে পথাং বিসর্গে ধরুণেষু তস্থৌ" - ঋগ্বেদ ১০/৫/৬ 📖
অর্থাৎ, সপ্ত হল সেই মর্যাদা সমূহ যা ভাল মন্দের মধ্যে পার্থক্য করে দেয়। যে এই নিষেধ গুলোর একটি লঙ্গন করে তবে সে পাপী হয়। পরমাত্মা এই মহাবিশ্বের ভিত্তি এবং মানবতার ধারক। যে সমগ্র জীবন এই গুলো মেনে চললে সে তার সর্বলোকে উপনীত হয়।
তবে সে সপ্তমর্যাদা সমূহ কি কি?
১. চুরি
২. অশ্লীলতা ও ব্যভিচার
৩. ব্রহ্মবিদ্ মানবের হত্যা
৪. ভ্রুণ হত্যা
৫. পাপকর্মের পুনরাবৃত্তি
৬. মদ্যপান
৭. পাপকর্ম লুকানো বা অসততা
🍁 চুরি :-
🌿 "মা গৃধঃ কস্যিস্বদ্ ধনম্" - যজুর্বেদ ৪০/১ 📖
অর্থাৎ, হে মানব! অপরের ধন-সম্পদের প্রতি লোভ কোরো না।
🍁 অশ্লীলতা ও ব্যভিচার :
🌿 "সনাদগ্নে মৃণসি য়াতুধানান্ন ত্বা রক্ষাংসি পৃতনাসু জিগ্যুঃ" - সামবেদ ৮০
অর্থাৎ, পরমাত্মা আমাদের ব্যভিচারের নিমিত্তে আগত অবৈধ কাম নষ্ট করুন।
🌿 "জহতীস্বৎকমমানুষীষু মানুষো নিষেবে"
- ঋগ্বেদ ১০/৯৫/০৪ 📖
অর্থাৎ, শাসক ব্যভিচারী ও নির্যাতনকারীদের থেকে প্রজাদের রক্ষা করবেন।
🌿 "প্রমিনতী মনুষ্যা য়ুগানি য়োষা জারস্য"
- ঋগ্বেদ ১/৮২/১১ 📖
অর্থাৎ, ব্যভিচারী নারী পুরুষ নিজেদের আয়ু নাশ করে।
✍️🌿 শালীনতা ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শালীনতা শুধু নারীর জন্য নয় বরং পুরুষের জন্য প্রযোজ্য। পরমাত্মা আমাদের সে উপদেশ দিয়েছেন পবিত্র বেদে।
🌿 "অধঃ পশ্যস্ব মোপরি সংতরাং পাদকৌ হর। মা তে কশপ্লকৌ দৃশন্ৎস্ত্রী হি ব্রহ্মা বভূবিথ"
-ঋগ্বেদ ৮/৩৩/১৯📖
অর্থাৎ, হে পুরুষ ও নারী! তোমাদের দৃষ্টি সবসময় হোক ভদ্র ও অবনত। তোমাদের চলন হোক সংযত, দেহ হোক পোশাকে আবৃত, নারীগণ হোক যজ্ঞকর্ত্রী।
✍️🌿 বর্তমান সমাজে নারীকে আবদ্ধ দেয়াল বা পোশাকে আবদ্ধ রাখার যে একটি বিশেষ প্রচেষ্টা করা হয় তা কিন্তু ধর্ম নয়। নারীর মর্যাদা ও সম্মান তার ব্যক্তিত্বও চরিত্রে। তা নিম্ন শ্লোক থেকে অবগত হয়।
🌿 ন গৃহাণি ন বস্ত্রাণি ন প্রাকারাস্তিরস্ক্রিয়াঃ। নেদৃশা রাজসৎকারা বৃত্তমাবরণং স্ত্রিয়ঃ।
- বাল্মিকী রামায়ণ ৬/১১৪/২৭ 📖
অর্থাৎ, গৃহদ্বারা নয়, পোশাক দ্বারা নয়, কোনোপ্রকার আবদ্ধ দেয়ালে লোকচক্ষু থেকে আবৃত থাকা নয়, নয় কোন রাজ অাভিজাত্য, চরিত্রই একজন নারীর প্রকৃত আবরণ।
🍁 হিংসা বা হত্যা :-
✍️🌿 বিনা অপরাধ কাউকে আঘাত করা বা হত্যা করা যেমন উচিত নয় তেমনি প্রাণীর প্রতি হিংসা করাও অধর্ম কারণ তাহা বেদ বিরুদ্ধ। নিম্ন মন্ত্র থেকে তাহা অবগত হয়।
🌿 "ঘৃতং দুহানামদিতিং জনায়গ্নে মা হিংসীঃ"
- যজুর্বেদ ১৩/৪৯ 📖
অর্থাৎ, আমরা যেন অদিতি অর্থাৎ খন্ডন অযোগ্য ঘৃত প্রদানকারী গবাদি পশুকে হত্যা না করি।
🌿 "ক্ষুধে য়ো গাং বিকৃন্তন্তং ভিক্ষমাণহউপ তিষ্ঠতি দুষ্কৃতায়" - যজুর্বেদ ৩০/১৮
অর্থাৎ, খাদ্যের জন্য যারা হত্যা করে, তাদের দূর করো।
🌿 "দ্বিপাদব চতুষ্পাৎ পাহি" - যজুর্বেদ ১৪/৮
অর্থাৎ, মনুষ্য ও পক্ষী আদি ও অশ্ব, গো, মহিষাদি উভয়কে রক্ষা করো।
🍁 ভ্রুণ হত্যা :-
✍️🌿 সমগ্র বিশ্বে এখন গর্ভপাত বা ভ্রুণ হত্যা অন্যতম একটি বড় সমস্যা। যা সভ্য সমাজে কলঙ্ক স্বরুপ। বিশেষ করে কন্যা ভ্রুণ হত্যা একটি প্রচলিত নিকৃষ্ট অপরাধ যা ক্ষমার অযোগ্য। পবিত্র বেদ এ ঈশ্বর আমাদের কি উপদেশ দিয়েছেন তা লক্ষ্য করা প্রয়োজন। নিম্নোক্ত মন্ত্র ও শ্লোক থেকে উপলব্ধি হয় ঈশ্বর কতৃক আদিষ্ট বিধান লঙ্ঘন করে মানুষ অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। ভ্রুণ হত্যা একটি অপরাধ যা বেদ বিরুদ্ধ।
🌿 "মম পুত্রা শত্রুহণোহথো মে দুহিতা বিরাট"
- ঋগ্বেদ ১০/১৫৯/৩ 📖
অর্থাৎ, পুত্র যদি শত্রু ঘাতক হয়, তবে কণ্যা বিরাট সৌভাগ্যদায়ক।
🌿 "দুহিতা মে পন্ডিতা জায়তে, সর্বম আয়ুঃ ইয়াৎ ইতি"
- বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৬/৪/১৭ 📖
অর্থাৎ, আমার বিদুষী কন্যা জন্ম লাভ করুক এবং পূর্ণায়ু হোক ।
🍁 নেশা বা মদ্যপান :-
🌿 "হৃৎসু পীতাসো য়ুধ্যন্তে দুর্মদাসো ন সুরায়াম্। ঊধর্ন নগ্না জরন্তে"।। - ঋগ্বেদ ৮/২/১২ 📖
অর্থাৎ, মদ্যপায়ী হৃদয় খুলে মদ্য পান করে পরস্পর কলহ বিবাদ করে এবং সারারাত্রি প্রলাপ উক্তি করতে থাকে। তারা নিশ্চয়ই দুষ্টু বুদ্ধি।
🍁 জুয়া খেলা :-
🌿 "অক্ষৈর্মা দীব্যঃ কৃষিমিৎকৃষস্ব বিত্তে রমস্ব বহু মন্যমানঃ। তত্র গাবঃ কিতব তত্র জায়া তস্মে বি চষ্টে সবিতায়মর্য়ঃ।।" - ঋগ্বেদ ১০/৩৪/১৩ 📖
অর্থাৎ, হে জুয়াবাজ! জুয়া খেলো না! ভাল ভাবে কৃষিকার্য করো। নিজের যে ধন আছে, তাই প্রচুর মনে করে উপভোগ করো।
✍️🌿 পরমাত্মা আমাদের যে সকল উপদেশ দিয়েছেন তা মেনে চলা এবং নিষেধ গুলো অমান্য না করা উচিত।
পবিত্র বেদ আমাদের সঠিক পথনির্দেশক ও মানবজাতির সংবিধান স্বরুপ। তা উপেক্ষা করলে আমাদের জীবনে নেমে আসবে অন্ধকার স্বরুপ দুঃখ। তাই আমরা বেদ জ্ঞান এর আলোয় আলোকিত হই। এবং অন্ধকার থেকে আলোর দিকে যাত্রা শুরু করি।
🪔 হোক এই প্রার্থনা :-
-----অসতো মা সদ্ গময় তমসো মা জৌতির্গময়।-------
------------------মৃত্যোর্মা অমৃতং গময়।।-----------------
[বৃহদারণ্যক উপনিষদ- ১/৩/২৮]
অর্থাৎ, হে ঈশ্বর! তুমি আমাদের অসত্য মার্গ থেকে সত্যমার্গে, অজ্ঞান রুপ অন্ধকার থেকে মুক্ত করে জ্ঞান রুপ আলোর দিকে নিয়ে যাও এবং মৃত্যু আদি দুঃখ থেকে মুক্ত করে অমৃতের দিকে নিয়ে যাও এই প্রার্থনা করি।
প্রচারেঃ VEDA
⚔️🌿 -------------- ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি -------------🌿⚔️