☀️সূর্য গ্রহণ বা Solar eclipse☀️


🌼 নমস্কার 🌼🙏

📑✍️সূর্য গ্রহণ বা Solar eclipse আমাদের খুব পরিচিত একটি মহাজাগতিক ব্যাপার। যা শুধু আমাদের মনে বিস্ময়ের জন্মই দেয় না সাথে সৃষ্টি করে কৌতূহল। পৃথিবীবাসী বিভিন্ন সময় সূর্য গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করে থাকে। আজকে সূর্য গ্রহণ এবং এর সূত্র পবিত্র বেদ ও বৈদিক শাস্ত্র থেকে দেওয়ার প্রচেষ্টা করব। 

📑✍️সূর্য গ্রহণ/ Solar eclipse:-  

চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার সময় কিছু সময়ের 
ধরিত্রী এবং সূর্যের মধ্যে এসে পড়ে, তখন পৃথিবীতে বসবাসরত সকলের নিকট সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণ রুপে স্বল্প সময়ের জন্য অদৃশ্য হয়ে যায়। এই মহাজাগতিক ঘটনাকে সূর্য গ্রহণ বলে। অমাবস্যার পরে চাঁদ ওঠার সময় এরুপ ঘটনা ঘটে। প্রতি বছর এমন সূর্য গ্রহণ পরিলক্ষিত হয়। 

২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ শেষ সূর্যগ্রহণ হয়। এইদিনে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ হয় এবং রিং অফ ফায়ার তৈরি হয়। আরব ভূখণ্ড থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত সূর্যগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়।

📑✍️চার প্রকারের সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। যথা: 
১.পূর্ণ সূর্যগ্রহণ ২.বলয় সূর্যগ্রহণ ৩.হাইব্রিড সূর্যগ্রহণ
৪.আংশিক সূর্যগ্রহণ 

📑✍️পৃথিবী থেকে বেশিক্ষণ ধরে এবং বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সূর্যগ্রহণ দেখতে পাওয়ার শর্ত হল:

📑সূর্য বেশি দূরত্বে থাকার ফলে তুলনামূলকভাবে ছোট মনে হবে।
📑চাঁদ কাছে থাকবে ফলে চাঁদের বড় গোলক সূর্যকে বেশিক্ষণ ধরে আড়াল করে রাখতে পারবে।
📑চাঁদ কাছে থাকলে তার ছায়াও বৃহত্তর ভূখন্ডের ওপর পড়বে।
📑মূলমধ্যরেখার যত কাছে। 

📑✍️এরুপ মহাজাগতিক ঘটনার বর্ণনা পবিত্র বেদ এ রয়েছে এবং অবশ্যই বৈজ্ঞানিকভাবে। বিভিন্ন মতবাদীগণ যেখানে হাস্যকর যুক্তি দিয়ে এসবের বর্ণনা দেয় সেখানে পবিত্র বেদ তথা সনাতনধর্ম তার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ প্রদান করে। 

"অত্রাহ গোরমন্বত নাম ত্বষ্টু রপীচ্যম্। ইত্থা চন্দ্রমসো গৃহে"।।  -ঋগ্বেদ ১/৮৪/১৫📖🌿                                                                       

অর্থাৎ, গমনশীল চন্দ্রলোকে সূর্য্যের উজ্জ্বল জ্যোতি প্রতিফলিত হয়- এরূপ মানা হয়।

"সোমো বধুযুরভবোদশ্চিনাস্তামুভা চরা। সূর্যা যৎপত্যে সংশন্তো মনসা সবিতাদদাত"।।                                                       -ঋগ্বেদ ১০/৮৫/৯ 📖🌿

অর্থাৎ, এই মন্ত্রে বধুরুপী চন্দ্র এবং বররুপী সূর্যের উপমা দেয়া হচ্ছে যেখানে সবিতা চন্দ্ৰকে আলো উপহার দিচ্ছেন।অর্থাৎ চাঁদের আলো যে সূর্য থেকে প্রাপ্ত তার সুন্দর একটি উপমা সহকারে বর্ণনা পবিত্র বেদে দেয়া হয়েছে।

"যত্ত্বা সূর্য স্বর্ভানুস্তমসাবিধ্যদাসুরঃ । 
অক্ষেত্রবিদ্যথা মুগ্ধো ভুবনান্যদীধয়ুঃ"॥
- ঋগ্বেদ ৫/৪০/৫ 📖🌿

[ পণ্ডিত জয়দেব বিদ্যালঙ্কার মীমাংসাতীর্থের ঋগ্বেদ ভাষ্য অনুসারে অনুবাদিত ]

অর্থাৎ, হে সূর্য যাকে তুমি তোমার নিজ আলো উপহার স্বরূপ প্রদান করেছ (চাঁদ), তাঁর দ্বারা যখন তুমি আচ্ছাদিত হয়ে যাও, তখন আকস্মিক অন্ধকারে পৃথিবী ভীত  হয়ে যায় । 

ভাবার্থ : চাঁদের নিজের আলো নেই, এটি সূর্যের আলো দ্বারা আলোকিত হয় । কিন্তু যখন এই চাঁদ পরিভ্রমণরত অবস্থায় পৃথিবীর সাপেক্ষে সেই সূর্যের সাথে একই রেখায় অবস্থান করে,তখন পৃথিবী হতে দেখা যায় চাঁদ তার অন্ধকার পৃষ্ঠ দ্বারা পুরো সূর্যকেই আবৃত করে ফেলছে । সেই সময়ে পৃথিবী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়। ফলে তখন পৃথিবী থেকে অসময়ে অন্যান্য নক্ষত্র,যাদের আমরা তারা বলি, সেগুলোও দৃশ্যমান হয়ে যায় । যারা জ্যোতির্বিদ্যা জ্ঞানশূন্য তারা এরূপ সূর্যগ্রহণের মূল কারণ জানতে না পেরে আশ্চর্য হয়ে যায় ৷ অথচ সূর্যগ্রহণ হয় মূলত সেই সূর্যের আলোয় আলোকিত চাঁদেরই কারণে। 

"চন্দ্রোজলমর্কোগ্নিমূদভ্যুশ্ছায়াপি যা তমস্তদ্ধি । 
ছাদয়তি শশী সূর্য শশীনং মহতি চ ভুচ্ছায়া"।।
- আর্যভাটিয়া,গোলপাদ ৪/৩৭📖🌿

অর্থাৎ, চাঁদ জলের,সূর্য অগ্নির,ধরণী মৃত্তিকার আর তার ছায়া অন্ধকার । চাঁদের ছায়া ঢাকে সূর্যকে আর ধরনীর বিরাট ছায়া ঢেকে দেয় চাঁদকে ।

এমন চমৎকার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পবিত্র বেদ হতে পাওয়া সম্ভব। কারণ পবিত্র বেদ ও সনাতনধর্ম শাশ্বত ও চিরন্তন। তাই এর সিধান্ত ও বাণী সত্য ও চিরন্তন। 

❌সূর্য গ্রহণ ও কুসংস্কার: 
সূর্য গ্রহণ প্রাকৃতিক একটি ঘটনা এবং এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে পবিত্র বেদ এ। তবুও কিছু লোক অজ্ঞানতাবশত এমন ঘটনাকে জটিল ভাবে তুলে ধরে এবং কুসংস্কার সৃষ্টি করে। 
যেমন: ★ গ্রহণের সময় ভ্রমণ না করা। ★ কিছু না খাওয়া ★ গর্ভবতী মায়েরা কিছু খেলে সন্তান মোটা হয় ★ গর্ভবতী মায়েরা ডাল-পালা ভাঙলে সন্তানের ক্ষতি হয়। ★ গ্রহণের সময় চুল নক কাটা যাবে না। 
সত্যিকার অর্থে এগুলো সামজিক বহুদিন ধরে প্রচলিত প্রথা। যার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। গ্রহণের সময় অন্যান্য দেশে এসবই করা হয় এবং অনেক গ্রহণ আমাদের নজরে আসে না যা মূলত দূর্গম জায়গায় হয়ে থাকে। 

⚠️সতর্কতা: সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের দিকে সরাসরি তাকানো উচিৎ নয় । এসময় সুতীব্র আলোকরশ্মি নির্গত হয়,যা সরাসরি চোখে পড়লে দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে । ঢাকা বিশ্যবিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক নওরীন আহসান বলছেন : ❝সূর্যগ্রহণের দিন মানুষ সূর্যের দিকে খালি চোখে তাকায়,কারণ সেদিন সূর্যের প্রখরতা অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক কম থাকে । তাই মানুষের অনেকক্ষণ যাবৎ তাকিয়ে থাকার সম্ভাবনা ও সুযোগ থাকে - যেটি ক্ষতির কারণ হতে পারে । যে কোনো সাধারণ দিনে মানুষ সূর্যের দিকে কিছুক্ষণ তাকালেও চোখের ক্ষতি হবে । পার্থক্যটা হলো,সাধারণ দিনে মানুষ তাকায় না,সূর্যগ্রহণের সময় মানুষ তাকায়,তাই বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয় । তাই সূর্য গ্রহণ উপভোগ করার জন্য বিশেষায়িত ' কালো চশমা ' পাওয়া যায় সেগুলো ব্যবহার করা উচিত । 

📑✍️পবিত্র বেদ আমাদের সত্যের শিক্ষা দেয়। কুসংস্কার পরিহার করে শুদ্ধ জীবন গঠনের আদর্শের শিক্ষা দেয়। তাই কুসংস্কার ত্যাগ করে বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে জীবন গড়ি। 

প্রচারে: VEDA 

🌿🌼--------ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি-----------🌼🌿

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

🔸সনাতন ধর্ম ও নারী 💐

সনাতন ধর্মে কি গোমূত্র পানের উল্লেখ রয়েছে ⁉️

▪️একাদশী" কি শাস্ত্র সম্মত ❓