▫️আত্মহত্যা ও মুক্তিনামক বিভ্রান্তি🌱

🙏🌼 নমস্কার 🌼🙏

আমরা সকলে অমৃতের সন্তান। এ ধরিত্রীর মাঝে আমাদের বসবাস। কিন্তু আমাদের জীবনচক্র কোনো যান্ত্রিক কাঠামো ভিত্তিক নয় বা পশুজাত প্রবৃত্তিও আমাদের নয়। আমাদের রয়েছে এক জটিল কিন্তু সুশৃঙ্খল জীবনপদ্ধতি। যা অনুসরণে মাধ্যমে আমরা নিজেদের আত্মিক উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হই। তবে আত্মিক উন্নতি সর্বোপরি লক্ষ্য শুধু জাগতিক সুখ ভোগে মত্ত থাকা নয় বরং নিজেদেরকে জাগতিক মোহ থেকে মুক্ত করে সর্বোত্তম সুখ তথা মোক্ষ প্রাপ্ত করা। একটি আবদ্ধ পক্ষী যেমন খাঁচা নামক বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে তার অনাবিল আনন্দ উপভোগ করে। মনুষ্য তেমনি নিজেদের আত্মিক উন্নতি ঘটানোর মাধ্যমে সকল কর্মফলের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে ঐশ্বরিক সুখ অনুভব করে। 

কিন্তু সে সুখের জন্য তো মৃত্যুনামক এক অধ্যায়কে পার হতে হয় তাহলে কি আত্মহত্যা দ্বারা মুক্তি সম্ভব ⁉️

বর্তমান সময়ে আমরা অজ্ঞনতাবশত অপূর্ণতার কারণে সনাতন ধর্মে মোক্ষকে অনেকসময় বুঝতে অক্ষম হয়ে পড়ি। তাহলে বিশ্লেষণপূর্বক উদঘাটন করি আত্মহত্যা নাকি পূর্ণ জীবন অতিবাহিত করার মাধ্যমে আমরা ধর্মাচরণ করবো। 

আত্মহত্যা কি সঠিক নাকি ধর্ম বিরুদ্ধ কাজ? আমাদের জীবনের লক্ষ্য কি? 
মোক্ষ বা মুক্তি কিভাবে ঘটে?

আমাদের জীবনের লক্ষ্য: 

মানব জন্ম একটি উপায় বা সুযোগ স্বরুপ যার মাধ্যমে কর্মফলের বন্ধনে আবদ্ধ জীবাত্মা মুক্ত হতে পারে। আমাদের এ ধরিত্রীর মাঝে মানবদেহের কি কারণ তা পবিত্র বেদ এ উল্লেখ রয়েছে, 

"ইয়েন্তে যজ্ঞিয়া তনুঃ" -যজু ৪|১৩ 📖🌿

অর্থাৎ,  হে মানব!  তোমাদের এই শরীর উত্তম কর্মের এবং ঈশ্বর প্রাপ্তির জন্য তোমরা লাভ করেছ। 

এখানে স্পষ্ট যে আমাদের জন্মলাভ বৃথা নয় বরং উত্তম কর্ম এবং ঈশ্বরকে প্রাপ্ত করার জন্য জীবাত্মা মানবদেহ লাভ করে। কিন্তু আমাদের মৃত্যু হবেই তাহলে আমরা কত বছর বাঁচতে পারি? এ বিষয়ে পবিত্র বেদ উপদেশ দিয়েছে, 

"ওম কুর্বন্নেবেহ কর্মাণি জিজীবিষেচ্ছতং সমাঃ।
এবং ত্বয়ি নান্যথেতোৎস্তি ন কর্ম লিপ্যতে নরে"।।
- যজুর্বেদ ৪০/২ 📖🌼

অর্থাৎ, হে মনুষ্যগণ! তোমরা উত্তোমোত্তম কর্ম করিতে করিতে একশত বৎসর যাবৎ তথা তাহার উর্দ্ধে জীবিত থাকার ইচ্ছা কর। তবেই তোমাদের কর্মবন্ধন হইতে মুক্ত হইবে।

এ মন্ত্রে স্পষ্টত প্রতীয়মান যে পরমাত্মা আমাদের এ উত্তম কর্ম করার জন্য একশত বৎসর জীবিত থাকার জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। এ একশত বৎসরে চতুরাশ্রম দ্বারা আমরা আমাদের জীবন সঠিক মার্গে পরিচালিত করবো। যাহাতে আমাদের আত্মিক উন্নতি ঘটে এবং আমরা মোক্ষ অভিমুখে যাত্রা করতে পারি। কিন্তু এক মানবজন্মে কি মোক্ষ প্রাপ্তি হতে পারে?  

এখানে সঠিক উত্তরটি হলো ইহা আপনার উপর নির্ভর করে। আমার আপনার কত বার জন্ম হয়েছে তা আমরা জানতে পারি না। জীবাত্মা এক্ষেত্রে তার পূর্ব জন্মের কথা স্মরণ রাখতে অপারগ। কিন্তু তার পূর্ব জন্মের কর্মের ফল তাকে ভোগ করতে হয় যার মাধ্যমে সে পূর্বকৃত কর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে। 
কিন্তু কিভাবে মোক্ষ বা মুক্তি ঘটে ⁉️ 

"কামান যঃ কাময়তে মন্যমানঃ
 স কামভির্জায়তে তত্র তত্র।
পর্যাপ্তকামস্য কৃতার্থনস্তু
 ইহৈব সর্বে প্রলীনয়ন্তি কামাঃ।।"
- মুণ্ডক উপনিষদ ৩/২/২📖🌼

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি যেই  যেই রকম কামনা বাসনা মনে মনে পোষণ করেন সেই সকল অতৃপ্ত কামনা বাসনার জন্য তিনি সেই রকম স্থানে জন্মগ্রহণ করেন যাতে তার অতৃপ্ত কামনা পূর্ন হতে পারে। পক্ষান্তরে যার কামবাসনা পূর্ণ হয়েছে বা কামবাসনা ত্যাগ করে যিনি কৃতার্থ হয়েছেন  তার বর্তমান জন্ম ও আগের জন্মের কামনা বাসনার নিবৃত্তি এই জীবনেই ঘটে ( পরিণামে মোক্ষলাভ করেন)।

" যস্মিন দ্যৌঃ পৃথিবী চান্তরীক্ষ
ওতং মনঃ সহ প্রাণৈশ্চ সর্বৈঃ।
তমবৈকং জানথ অন্যা বাচো 
বিমুঞ্চথামৃতস্যৈষ সেতুঃ" ।। 
- মুন্ডক ৫/২/২ 📖🌼

অর্থাৎ, যাতে দূলোক, ভূলোক পৃথিবী, আকাশ, মন প্রাণ ইন্দ্রিয়াদি ও জীবসকল সম্পূর্ণ সমর্পিত হয়ে আছে। হে শিষ্যগন,  তোমরা সেই এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বরকে জান, এ ছাড়া অন্য কথা মনে এনো না, কারণ মোক্ষলাভের সেতু বা পথই হচ্ছে তাকে জানা।

মোক্ষ একটি মুহুর্তের বিষয় নয় বরং জীবাত্মা দীর্ঘ জন্ম ও মৃত্যুর মাধ্যমে কর্মফলের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে সে এই অবস্থা প্রাপ্ত হয়ে থাকে।  সে তার দীর্ঘ ১০০শত বৎসরে সর্বদা চেষ্টা করে কামনা বাসনা থেকে মুক্ত হয়ে নিষ্কাম কর্ম করার। যার ফলে সে কর্মফলের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে। 

" কুর্বন্নেবেহ কর্মাণি জিজিবিষেৎ শতং সমাঃ
এবং নান্যতেথোহস্থি ন কর্ম লিপ্যতে নরে।'"
 -> ঈশো উপনিষদ, স্তোত্র-২ 📖🌼

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি এই জগতে শত বৎসর বাঁচিয়া থাকিতে উৎসুক, তিনি (শাস্ত্র- বিহিত) কর্ম করিয়াই বাঁচিতে ইচ্ছা করিবেন। এই প্রকার (আয়ুষ্কামীও) নরাভিযানী তোমার পক্ষে এতদ্ব্যতীত অন্য কোনও উপায় নাই যাহাতে তোমাতে (অশুভ) কর্ম লিপ্ত না হইতে পারে। 

উপরিউক্ত বিশ্লেষণ থেকে এটা উপলব্ধ যে আমাদের জীবনের রয়েছে একটি লক্ষ্য। আমাদের জীবন অবহেলা বা দিকভ্রান্তের নয়। বরং পরমাত্মাকে জেনে, সকল কর্মফলের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে, নিষ্কাম কর্ম করার মাধ্যমে মুক্তি তথা মোক্ষ প্রাপ্তি ঘটে। কিন্তু সে মোক্ষ অর্জনের জন্য মৃত্যু বা দেহের অবসান হতে হয়।

⚜️ তাহলে কি আত্মহত্যা একটি যথার্থ উপায় হতে পারে সকল কর্মের ফল, কামনা বাসনা থেকে মুক্ত হওয়ার⁉️

এটি নিতান্ত একটি মূর্খতা সুলভ চিন্তা। কারণ উপরে উল্লেখ রয়েছে যে, এ জীবন অবহেলার নয় বরং এর রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। আমাদের একশত বৎসর জীবিত থাকার প্রচেষ্টা করতে হবে যাতে আমরা উত্তম করতে করতে পারি, ঈশ্বর সান্নিধ্য লাভের প্রয়াস করতে পারি। কর্ম থেকে পলায়ন কখনো নিষ্কাম কর্ম নয় বরং কর্মের কামনা বাসনা পরিত্যাগ করাই নিষ্কাম কর্ম। আত্মহত্যা দ্বারা আমরা ঈশ্বর প্রদত্ত সে সুযোগের অপপ্রয়োগ করে তাকে অবহেলা করছি। জীবন তার প্রাকৃতিক নিয়মে অবসান হওয়ার আগে নিজে থেকে তার বিনাশ ধর্মবিরুদ্ধ তথা অধর্ম। 

আত্মহত্যা কি❓

⚜️💔 আত্মহত্যা বা আত্মহনন (ইংরেজি: Suicide) হচ্ছে কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়াবিশেষ। ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা।

আত্মহত্যা করা অধর্ম। মনুষ্য তার জীবনে সর্বদা একটি উত্তম পরিকল্পনা অনুসরণ করে চলে শ্রেষ্ঠ আনন্দ তথা সুখ প্রাপ্তির জন্য যা একমাত্র মোক্ষ। কিন্তু সে যদি তার কর্তব্য থেকে দূরে সরে গিয়ে আত্মহত্যাকে মুক্তি ভাবে তাহলে সে মূর্খতা পূর্ণ আচরণ করে। ইহা কখনো একজন ধার্মিক বা আর্য তথা শ্রেষ্ঠের কর্ম হতে পারে না। তাহলে পবিত্র বেদ এবং বৈদিক শাস্ত্র সমূহ থেকে উদ্ধৃতি প্রদান করা হোক যে আত্মহত্যা করা অধর্ম। 

"অসুর্য়্যা নাম তে লোকাऽঅন্ধেন তমসাবৃতাঃ ।
তাঁস্তে প্রেত্যাপি গচ্ছন্তি য়ে কে চাত্মহনো জনাঃ ।।৩।।
 - যজুর্বেদ ৪০/৩ 📖🌼

পদার্থঃ যে সকল (লোকাঃ) মানুষ (অন্ধেন) অজ্ঞানের আবরণ দ্বারা (আবৃতাঃ) সর্বতোভাবে আচ্ছাদিত (য়ে, কে, চ) এবং যারা (আত্মহনঃ) আত্মহননকারী (জনাঃ) মানুষ, (তে) তারা (অসুর্য়্যাঃ) নিজের প্রাণপোষণে তৎপর অবিদ্যা আদি দোষযুক্ত মানুষের মতো পাপকর্মকারীরূপে (নাম) প্রসিদ্ধ হয় (তে) তারা (প্রেত্য) মৃত্যুর পর [পরজন্মে] (অপি) এবং জীবিত অবস্থাতেও (তান্) সেই দুঃখ অজ্ঞানরূপ অন্ধকারযুক্ত ভোগসমূহকে (গচ্ছতি) প্রাপ্ত হয় ।

সরলার্থঃ যে সকল মানুষ অজ্ঞানের আবরণ দ্বারা সর্বতোভাবে আচ্ছাদিত এবং যে সকল মানুষ আত্মহননকারী, তারা নিজের প্রাণপোষণে তৎপর অবিদ্যা আদি দোষযুক্ত মানুষের মতো পাপকর্মকারীরূপে প্রসিদ্ধ । তারা মৃত্যুর পর পরজন্মে এবং জীবিত অবস্থাতেও সেই দুঃখ অজ্ঞানরূপ অন্ধকারযুক্ত ভোগসমূহকে প্রাপ্ত হয় ।

"অতিমাতাদতিক্রোধাৎস্রৈহাদ্বা যদি বা ভয়াৎ।
উদ্বধ্নীযাৎস্ত্রীপুমাত্মা গতিরেষা বিধীযতে।।
পুযশোণিতসম্পূর্ণৈ তন্ধৈ তমস মজ্জতিঃ"
- পরাশর সংহিতা ৪/১ 📖🌼 

অর্থাৎ, যে ব্যক্তি ক্রোধে বা ভয়ে বা অহংকারের বশে আত্মহত্যা করে সে পুরুষ হোক বা স্ত্রী তার অন্ধকারে নিমজ্জিত হবার গতি হয় ।

All who kill the self-go after death to demonic worlds that are cloaked in blind darkness.”  -Isha Upanishad, verse 3📖🌼

 According to the Manusmriti, it is clearly mentioned that you have to wait for a certain time for your death. It means that you can't commit suicide. In the meantime, you have to do the best Work which is 

📖✍️ According to the Manusmriti, it is clearly mentioned that you have to wait for a certain time of your death. It means that you can't commit suicide. In the meantime, you have to do the best Work which is required for your Mokhsa.

"Let him not desire to die, let him not desire to live; let him wait for his appointed time, as a servant waits for the payment of his wages".  - Manusmriti, chapter 6, verse 45

সর্বোত্তম অনুপ্রেরণাদায়ী গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত শ্রীমদ্ভগবদগীতা যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, 

 " সমং পশ্যন্ হি সর্বত্র সমবস্থিতমীশ্বরম্। 
   ন হিনস্ত্যাত্মনাত্মানং ততো যাতি পরাংগতিম্"।। 
   - গীতা১৩/২৯📖🌼 

অর্থাৎ, যিনি সর্বত্র সমভাবে অবস্থিত পরমাত্মাকে (ঈশ্বরকে) অনুভব করে। নিজের দ্বারা নিজেকে হিংসা (হত্যা) করেন না তিনি পরমগতি তথা মুক্তি লাভ করে।  

উপরিউক্ত বিশ্লেষণ থেকে আমরা সত্যকে উপলব্ধি করতে পারি। অর্থাৎ আত্মহত্যা করা অধর্ম। শাস্ত্র কখনো আত্মহত্যা করার অনুমতি আপনাকে প্রদান করেনি। বরং পরমাত্মা আমাদের একশত বৎসর জীবিত থাকার জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। একশত বৎসর জীবিত থেকে উত্তম কর্ম করার এবং পরমাত্মাকে প্রাপ্ত করার অনুপ্রেরণা রয়েছে পবিত্র বেদ এ। 

আত্মা প্রকৃতির ত্রিগুণাত্মক বন্ধনে আবদ্ধ। কিন্তু সাধনা ও যথার্থ পথে এগিয়ে গেলে আত্মা এ বন্ধন ছিন্ন করে পরমাত্মার সাথে মিলিত হতে পারে। অষ্টাঙ্গ যোগ অনুশীলনের মাধ্যমে সাধনা অনুশীলন করলে বিভিন্ন রোমাঞ্চকর অনুভূতি হতে পারে। তা যথার্থ মুক্তি নয়। জীবাত্মা, প্রকৃতি ও পরমাত্মা অনাদি। অর্থাৎ এ তিনস্বত্তার বিনাশ সম্ভব নয়। কিন্তু দেহ নশ্বর আত্মা অবিনশ্বর এ বিষয় জ্ঞাত হওয়া উত্তম কিন্তু তা জেনে আত্মহত্যা দ্বারা মৃত্যুকে আত্মার মুক্তি ভাবা অনুচিত। বরং এমন কর্ম দ্বারা আত্মার অধঃপতন হয়ে থাকে। আত্মার মুক্তি সম্ভব পরমাত্মাকে উপলব্ধি করার মাধ্যমে।

প্রচারে:- VEDA

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

🔸সনাতন ধর্ম ও নারী 💐

সনাতন ধর্মে কি গোমূত্র পানের উল্লেখ রয়েছে ⁉️

▪️একাদশী" কি শাস্ত্র সম্মত ❓