Big Bang Theory - মহাবিস্ফোরণ/সৃষ্টিতত্ত্ব:


Big Bang Theory - মহাবিস্ফোরণ/সৃষ্টিতত্ত্ব: 

এ জগৎ বহু রহস্যে আবৃত। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জগৎ এর সকল অত্যাশ্চর্য আমাদের বিস্মিত করে এবং কৌতূহলী করে তোলে। সে কৌতূহল এর মধ্যে এ মহাবিশ্বের সৃষ্টির ধারণা আমাদের মাঝে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ ও সংশয়ের জন্ম দেয়। কিছু শতাব্দী পূর্বেও মানুষ বিশ্বাস করতো যে এই বিশাল ব্রহ্মান্ড Static বা স্থির কিন্তু এরুপ ধারণা এখন আর প্রযোজ্য নয়। কারণ, আমাদের সকলের নিকট এখন এই তত্ত্ব পরিষ্কার যে মহাবিশ্ব সম্প্রসারণ হচ্ছে আলোর চেয়েও দ্রুত গতিতে। এই সম্প্রসারণ শুরু হয়েছিল সেই মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে। যা বিগব্যাং তত্ত্ব নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে বিগ ব্যাং নামক এক মহাজাগতিক বিষ্ফোড়নের মাধ্যমে যেটা ১০ থেকে ২০ বিলিয়ন বছর পূর্বে শুরু হয়েছিল। সৃষ্টির শুরুতে মহাবিশ্ব ছিল একটি গরম আগুনের গোলার মত। মহাবিষ্ফোড়নের প্রথম সেকেন্ড থেকেই মাধ্যাকর্ষণ সৃষ্টি হয়। মহাবিশ্ব তখন খুব দ্রুতই সম্প্রসারিত হতে লাগলো । চারিদিকে অতিপারমানবিক কণা গুলো ছড়িয়ে পড়ছিল যারা একে অপরের সাথে ধাক্কা খাচ্ছিল। এ সময় প্রোটন, ইলেক্ট্রন এবং নিউট্রনের সৃষ্টি হয়। ডাজ লেমেটর এর পর জর্জ গ্যামফ ও শেষে এডুইন হাবলের হাত ধরে বিশ্ব জানল যে মহাবিশ্ব একটি ডিমের ন্যায় Super Atom নামক অতি ঘনত্ব ও তাপমাত্রা বিশিষ্ট বিন্দু হতে বিস্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। মহাবিশ্বের সৃষ্টি সম্পর্কে বহু মিথ বা কল্পকাহিনী প্রচলিত রয়েছে। তবে তাহাদের কোনো কল্পকাহিনী বিগব্যাং থিওরির সঠিক ব্যাখ্যার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে পারে না। শুধুমাত্র পবিত্র বেদ এ বিষয়ে সর্বোৎকৃষ্ট বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। 

সৃষ্টির পূর্বে জগৎ এর অবস্থা ঋগ্বেদ এর ১০ মন্ডল, ১২৯ সুক্তের, ১ম মন্ত্র রয়েছে, 

"নাসাদাসীন্নো সদাসীত্তদানীং নাসীদ্রজো নোব্যোমা পর যৎ।
কিমাবরীবঃ কুহ কস্য শর্মান্নদ্ভ কিমাসীদ্গহনং গভীরম"।। ঋগ্বেদ ১০/১২৯/১

অর্থাৎ,  এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির পূর্বে পরিবর্তনশীল জগৎ ছিল না এবং যাহাতে আকাশ অবস্থিত তাহাও ছিল না। সে সময় কোথায় কি?  কিসের আবরণ ছিল? কিসের আশ্রয় বা কি ছিল? সে সময় গভীর জলরাশি কি ছিল? 

"ন মৃত্যুরাসীদমৃতং ন তর্হি না রাত্র্যা অহ্লা আসীৎ প্রকেত।
আনীদবাতং স্বধয়া তদেকং তস্মাদ্ধান্যন্ন পরঃ কিঞ্চিৎ নাস"।। ঋগ্বেদ ১০/১২৯/২ 

অর্থাৎ, সে সময় মৃত্যু ছিল না সুতরাং অমরত্ব ছিল না। দিন ও রাত্রি বিভাগের কোনো সংকেত ছিল না। সে সময় এক আত্মতত্ব প্রকৃতির সহিত বিদ্যমান ছিল।  তাহার অস্তিত্ব প্রাণবায়ুর উপর নির্ভর করিত না। তাহার অপেক্ষা নিশ্চয়ই কেহ শ্রেষ্ঠ ছিল না। 

জগৎ সৃষ্টির পূর্বের এই স্থিত অবস্থা খুব বেশি সময় থাকে নি। কারণ এ মহাবিশ্ব নিরন্তর সৃষ্টি ও ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে বয়ে চলে। শুরু হয় সৃষ্টি সে এটম বা হিরণ্যগর্ভ থেকে। 

"তম আসীত্তমসা গুঢ় মগ্রে হপ্র কেতং সলিলং সর্ব্বমা ইদং। 
তুচ্ছ্যেনাভবপিহিতং যদাসীৎ তপসস্তন্মহিনা জায়তৈকম"।। ঋগ্বেদ ১০/১২৯/৩ 

অর্থাৎ,  মূল প্রকৃতি প্রথমে আবৃত ছিল এবং এই জগৎ অজ্ঞেয় অন্ধকার জলরাশির ন্যায়  একাকার ছিলো। যখন শূন্যতা দ্বারা সেই ব্যাপকপ্রকৃতি আচ্ছাদিত ছিল তখন জ্ঞানময় তপের মহিমায় এক পদার্থ রচিত হইল। ইহাই জগতের আরম্ভ। 

"আপো হ য়দ বৃহাতিরিবিশ্বমায়ান গর্ভম"
- ঋগ্বেদ ১০/১২১/৭

অর্থাৎ, সেই হিরণ্যগর্ভ ছিল থাকা উত্তপ্ত তরল হতে যাতে ছিল সৃষ্টির সমস্ত বীজ তা হতে সকল সৃষ্টি ব্যক্তি হল।

বিজ্ঞান এ বিষয়ে একমত যে আজকের এ মহাবিশ্ব যে বিশাল এবং গ্যালক্সি কিংবা নক্ষত্র রয়েছে তা এই এটম থেকে সৃষ্টি। কিন্তু এ এটম বা হিরণ্যগর্ভ বিস্ফোরণ পর জগৎ দ্রুত বিস্তার বা সম্প্রসারণ লাভ করে যা এখনো সম্প্রসারিত হয়ে চলছে। 

"ब्रह्म॑ण॒स्पति॑रे॒ता सं क॒र्मार॑ इवाधमत् । दे॒वानां॑ पू॒र्व्ये यु॒गेऽस॑त॒: सद॑जायत" ॥

ब्रह्माण्ड का स्वामी परमात्मा अव्यक्त प्रकृति से व्यक्त जगत् को उत्पन्न करता है। प्रथम प्रादुर्भूत होनेवाले परमाणुरूप अङ्कुरों को तपाता है, पुनः दिव्यगुणवाले सूर्यादि पदार्थों को उत्पन्न करता है ॥२॥

ভাবার্থ: ব্রহ্মান্ডের স্বামী পরমাত্মা অব্যাক্ত প্রকৃতি থেকে ব্যাক্ত জগৎকে উৎপন্ন করেন। প্রথম পাদুর্ভূত হওয়ার যোগ্য পরমাণুরূপ অঙ্ককুরসমূহকে সন্তপ্ত করেন,  পুনঃ দিব্যগুনযুক্ত সূর্যাদি পদার্থসমূহকে উৎপন্ন করেন।

"दे॒वानां॑ यु॒गे प्र॑थ॒मेऽस॑त॒: सद॑जायत । तदाशा॒ अन्व॑जायन्त॒ तदु॑त्ता॒नप॑द॒स्परि॑" ॥ 

"भूर्ज॑ज्ञ उत्ता॒नप॑दो भु॒व आशा॑ अजायन्त । अदि॑ते॒र्दक्षो॑ अजायत॒ दक्षा॒द्वदि॑ति॒: परि॑" ॥

भावार्थः अव्यक्त उपादन प्रकृति से व्यक्त विकृतिरूप उत्पन्न होता है, फिर संसार उत्पन्न होता है, पुनः दिशाएँ प्रकट होती हैं, पश्चात् पृथिवीलोक, पृथिवीलोक से कामनावाले प्राणी उत्पन्न होते हैं। इसी प्रकार आरम्भसृष्टि में अखण्ड अग्नि से सूर्य और सूर्य से उषा का प्रकाश होता है ॥

ভাবার্থ: অব্যক্ত উপাদান প্রকৃতি থেকে ব্যাক্ত বিকৃতিরূপ প্রকৃতি উৎপন্ন হয়,  তারপর সংসার (জগৎ) উৎপন্ন হয়,  পুনঃ দিকসমূহ প্রকট হয়, তারপর পৃথিবীলোক,  পৃথিবীলোক থেকে কামনাযুক্ত প্রাণী উৎপন্ন হয়,  এইভাবে সৃষ্টির আরম্ভে অখন্ড অগ্নি থেকে সূর্য এবং সূর্য থেকে উষার প্রকাশ হয়।  -ঋগ্বেদ ১০/৭২/৩,৪

উপরিউক্ত মন্ত্রসমূহ বিশ্লেষণ করলে আমরা উপলব্ধি করতে পারি পবিত্র বেদ এর সৃষ্টিতত্ত্বের সাথে আধুনিক বিজ্ঞানের "Lambda-CDM Concordance Model সামঞ্জস্যপূর্ণ। সৃষ্টিতত্ত্বের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মডেল "Lambda-CDM Concordance Model অনুযায়ী The evolution of the universe from a very uniform, hot, dense primordial state to its present অর্থাৎ একটি উত্তপ্ত, কেন্দ্রীভূত আদি অবস্থা থেকেই বর্তমান অবস্থার উৎপত্তি। 

বিগব্যাং মানেই যে এ মহাবিশ্ব চিরস্থায়ী তা কিন্তু নয়।  এ মহাবিশ্ব যেমন সম্প্রসারণ হচ্ছে তেমনি সেটি একসময় সংকুচিত হয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে যাবে এবং পুনরায় বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের এর মাধ্যমে হিরণ্যগর্ভ থেকে এ জগৎ সৃষ্টি হবে। এরুপ সংকোচনকে বিজ্ঞানীগণ নাম দিয়েছেন  Big Crunch Theory.  প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তার "A Brief history of time" গ্রন্থে বলেছেন এ বিশ্ব পরিণতি বা  Fate হবে যে এক সময় এ জগৎ যে বিন্দু থেকে বিস্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল, তেমনি একসময় এ জগৎ আবার সংকুচিত হয়ে একটি বিন্দুতে বা ০ তে পরিণত হবে যা Big Crunch নামে পরিচিত। 

The Big Crunch is one of the scenarios predicted by scientists in which the Universe may end. Just like many others, it is based on Einstein’s Theory of General Relativity. That is, if the Big Bang describes how the Universe most possibly began, the Big Crunch describes how it will end as a consequence of that beginning. - Wikipedia 

এ বৈজ্ঞানিক তত্ত্বটি এক বাক্যে খুঁজে পাওয়া যায় , 
যজুর্বেদ ৩২তম অধ্যায়ের ৮নং মন্ত্রে, 

"বেনস্তৎপশ্যন্নিহিতং গুহা সদাত্রবিশ্বং ভবত্যেকনীড়ম। 
তস্মিন্নিদং সং চ বি চৈতু সর্বেং স আোতং প্রোতশ্চ বিভু প্রজাসু"।। -যজুর্বেদ ৩২/৮

অর্থাৎ, জ্ঞানী ব্যক্তিরা সেই পরমাত্মাকে জ্ঞান দৃষ্টিতে দর্শন করেন যার মধ্যে এই সমগ্র জগৎ আশ্রয় গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে এই সমগ্র জগৎ মিলিত হয় এবং তার মধ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। 

ব্যাখ্যা:- তার মধ্যে হতে সমগ্র জগৎ বিস্ফোরণের মাধ্যমে জগৎ সৃষ্টি হয় এবং তার মধ্যে অন্তে সমগ্র জগৎ সংকুচিত হয়ে মিলিত হয়।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর Dr.
Kevin Hurley বেদ এর সৃষ্টি তত্ত্ব সম্পর্কে আশ্চর্য হয়ে মন্তব্য করেন যে,  "How could Aryan sages have known all this 6000 years ago, when scientists have only recently discovered this using advanced equipments which didn't exist that time!" 

এবং কার্ল সেগান তার কসমস বইতে উল্লেখ করেন, 

“The Hindu religion is the only one of the world's great faiths dedicated to the idea that the Cosmos itself undergoes an immense, indeed an infinite, number of deaths and rebirths. It is the only religion in which the time scales correspond to those of modern scientific cosmology" 

 - Carl Sagan 

Lambda-CDM Concordance Model গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে আমরা আরো জানতে পারি মহাবিস্ফোরণের সময় সৃষ্টি হওয়া সেই মহাজাগতিক তরঙ্গ যা সমগ্র সৃষ্টিতে ছড়িয়ে পড়েছিলো যাকে আধুনিক বিজ্ঞানের ভাষায় Cosmic sound wave বলা হয়। ইউনিভার্সিটি অব এরিজোনা এর এস্ট্রোনমির প্রফেসর ডেনিয়েল জে আইনষ্টাইন এবং জন হপকিনা ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ্যার প্রফেসর চার্লস বানেটের সম্মিলিত আর্টিকেল "Cosmic sound wave rules" থেকে কি করে এই শব্দের মাধ্যমে মহাবিশ্ব সৃষ্টি তার ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। হিরণ্যগর্ভের মধ্যস্থিত পদার্থসমূহকে Cosmologist গণ দুই ভাগে ভাগ করেন Baryonic & Non-baryonic Baryonic পদার্থ হল ইলেকট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন। সেইসময় এসকল পদার্থ ছিল Ionizable/আয়নিত অবস্থায়। প্রসারন শুরু হবার জন্য মূল ভূমিকা ই ছিল এই উত্তপ্ত ও আয়নিত Baryonic পদার্থগুলোর মধ্যস্থিত ইলেকট্রনগুলোর মাধ্যমে নিঃসৃত ফোটন কনাগুলো(Compton scattering of photon from electron)। এই ফোটন কনাগুলো উত্তপ্ত প্লাসমার সাথে Baryon- photon fluid তৈরী করে। কনাসমূহের মধ্যে সংঘর্ষের কারনে এই Fluid এর সংকোচন ঘটে কিন্তু এই সংকোচিত প্লাসমাই ফোটনসমূহকে উচ্চ বেগে বিচ্ছুরিত করে। যে স্থান থেকে ফোটনসমূহ নির্গত হয়ে যায় সেই স্থান ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় সেখানে একটি নিম্নচাপ যুক্ত স্থান তৈরী হয় যা তার চারদিকের Fluid দ্বারা চাপে ঘান্ত হয়। আর এই চাপই সেই জলে একটি শব্দ তরঙ্গের সৃষ্টি করে, শুধু পার্থক্য হল এই যে এখানে কাউকে মুখে শব্দ করে তরঙ্গ তৈরী করতে হয়নি বরং ফোটন নির্গত হয়ে যাওয়ায় সৃষ্ট চাপের কারনেই এই তরঙ্গের তৈরী হয়। এবং বৈদিক সৃষ্টিতত্ত্ব অনুসারে উক্ত শব্দ বা Cosmic sound wave হলো পরমাত্মার সর্বশ্রেষ্ঠ নাম ও৩ম্। 

পবিত্র বেদ এর বিজ্ঞান তথ্য সমূহ এতই নিখুঁত ও সর্বতোভাবে সত্য তার উদ্দেশ্য  ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর Dr. Kevin Hurley বেদ এর সৃষ্টি তত্ত্ব সম্পর্কে আশ্চর্য হয়ে মন্তব্য করেন যে,  "How could Aryan sages have known all this 6000 years ago, when scientists have only recently discovered this using advanced equipments which didn't exist that time!"

✏️ VEDA

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ