যজ্ঞোপবীত মাহাত্ম্য


"যজ্ঞোপবীত মাহাত্ম্য"

নমস্কার! সকল অমৃতের সন্তানগণ। 🙏🚩

📜 মনুষ্য জন্ম গ্রহণ করে এবং বৃদ্ধি লাভ করে। সে জ্ঞান অর্জন করে, ন্যায়-অন্যায়, কর্তব্য ও অকর্তব্য এর বিষয় সিদ্ধান্ত নিতে সমর্থ হয়। তবে, মনুষ্য জন্মলাভ করে যেমন কিছু অধিকার প্রাপ্ত হয়, তেমনি সে কিছু ঋণের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। যজ্ঞোপবীত মনুষ্যকে সেই ঋণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। বৈদিক শাস্ত্র অনুসারে ষোড়শ সংস্কারের ১০ম সংস্কারের উপনয়ন এর মাধ্যমে শিষ্যকে গুরুর সাহচর্যে শিক্ষাগ্রহণ করে বিদ্বান ব্যক্তিতে পরিণত হয়।  এই সংস্কারের মাধ্যমে গুরু তার শিষ্যকে যজ্ঞোপবীত দিয়ে দীক্ষিত করেন।

➡️ পিতৃঋণ : মনুষ্যের প্রথম ঋণ পিতা মাতার নিকট যাঁরা তাকে জন্ম দিয়েছে। যজ্ঞোপবতীতের প্রথম সূত্র ধারণকর্তাকে 'পিতৃঋণ' এর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। 

সেজন্য,  যজ্ঞোপবীত ধারণ করার সময়ে আমাদের পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্বের কথা স্মরণ করায়। 

➡️ আচার্যঋণ: মনুষ্যের দ্বিতীয় ঋণ সেই পথপ্রদর্শক আচার্যের নিকট। যজ্ঞোপবীতের দ্বিতীয় সূত্র 'আচার্যঋণ' এর কথা স্মরণ করায়। কারণ, গুরুই শিষ্যকে তাহার প্রকৃত স্বরুপকে চিনতে এবং জীবনে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হতে সহায়তা করে। মহর্ষি বশিষ্ঠ এর মতো গুরুর প্রদত্ত জ্ঞানের মাধ্যমে শ্রীরাম জগৎ মর্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম হয়ে উঠেন, গুরু আচার্য সান্দীপনির শিষ্যত্ব গ্রহণ করে শ্রীকৃষ্ণ হয়ে উঠেন আর্যশ্রেষ্ঠ যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, আচার্য চাণক্যের মতো গুরুর প্রজ্ঞার মাধ্যমে সাধারণ বালক থেকে সুমহান মৌর্য সাম্রাজ্যের স্থপতি হয়ে উঠেন সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত, স্বামী রামদাসের মতো গুরুর কারণে স্বরাজ্যের সংস্থাপক হয়ে উঠেন ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ। 

➡️ ঋষিঋণ: যজ্ঞোপবীতের তৃতীয় সূত্র আমাদের প্রাচীন ঋষিদের কথা স্মরণ করায়। জগৎের কল্যাণের জন্য প্রাচীন ঋষিগণ পরমাত্মা প্রদত্ত বৈদিক জ্ঞান ধরিত্রীর সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছেন। মহর্ষি গৌতম, কপিল, কণাদ, ব্যাস, জৈমিনি, পতঞ্জলি, বশিষ্ঠ, বিশ্বামিত্র, কশ্যাপ, ভরদ্বাজ, অত্রি, নারদ ইত্যাদি ঋষিগণ যে অমৃত জগৎ কল্যাণকর জ্ঞান প্রদান করেছেন তাদের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা স্মৃতিচারণ করিয়ে দেয় যজ্ঞোপবীতের তৃতীয় সূ্ত্র। 

পারস্কর গৃহসূ্ত্রে যজ্ঞোপবীতকে পরম পবিত্রতম ও নির্মল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে  এবং ইহা ধারণের মহিমা বর্ণিত হয়েছে। 

ও৩ম্ "যজ্ঞোপবীতং পরমং পবিত্রং প্রজাপতের্যৎস হজং পুরুস্তাৎ। আয়ুষ্যমগ্র্যং প্রতিমুঞ্চ শুভ্রং যজ্ঞোপবীতং বলমস্তু তেজঃ। যজ্ঞোপবীতমসি যজ্ঞস্য ত্বা যজ্ঞোপবীতেনোপনহ্যামি।। 

-[]পারস্কর গৃহসূ্ত্র ২/২/১১[]-

অর্থাৎ, পরমপবিত্র নির্মল যজ্ঞোপবীত পরমাত্মার সহৎপন্ন, আয়ু, তেজ ও বল প্রদান করে। তুমি  , তোমাকে ধারণ করছি। 

📜 যজ্ঞোপবীত ধারণ তথা উপনয়ন সংস্কার প্রত্যেক মনুষ্যের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। যজ্ঞোপবীত নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য বিধিগত। বর্তমান সময়ে কিছু ধর্মের নামে অধর্মের প্রচারকারী নারীকে উপনয়ন ও বেদপাঠের অধিকার হতে বঞ্চিত করার চেষ্টা করে। ব্রাহ্মণ ব্যতীত সকলের জন্য বেদজ্ঞান পাঠ ও যজ্ঞোপবীতকে রাখতে চায় দূরে। কিন্তু তারা এরুপ করে পবিত্র উল্লেখিত পরমাত্মার বাণীর অবজ্ঞা করছে৷ কারণ, যজুর্বেদ এর ২৬তম অধ্যায়ের ২য় নং মন্ত্রে বলা হয়েছে, 

"যথেমাং বাচং কল্যাণীমাবদানি জনেভ্যঃ

ব্রহ্মরাজন্যাভ্যাং শূদ্রায় চার্য্যায় চ স্বায় চারণায়।।

প্রিয়ো দেবানাং দক্ষিণায়ৈ দাতুরিহ ,ভূয়াসময়ং মে কামঃ সমৃধ্যতামুপ মাদো নমতু" ।।

➢ যজুর্বেদ ২৬/২

অর্থাৎ, হে মনুষ্যগন আমি যেরূপে ব্রাক্ষণ, ক্ষত্রিয় ,বৈশ্য ,শূদ্র , স্ত্রীলোক এবং অন্যান্য সকল জনগনকে এই কল্যানদায়িনী পবিত্র বেদবাণী বলিতেছি, তোমরাও সেই রূপ কর। যেমন বেদবাণীর উপদেশ করিয়া আমি বিদ্বানদের প্রিয় হয়েছি, তোমরাও সেইরুপ হও। আমার ইচ্ছা বেদ বিদ্যা প্রচার হোক। এর দ্বারা সকলে মোক্ষ এবং সুখ লাভ করুক ।

📜 হে অমৃতের সন্তানগণ! পরমাত্মা কর্তৃক প্রদত্ত ষোড়শ সংস্কার আমাদের অবশ্য পালনীয়। শিষ্যের গুরু গৃহে শিক্ষা লাভের শুরু হয়ে থাকে উপনয়ন সংস্কার এর মাধ্যমে। সে উপনয়ন সংস্কার এর মাধ্যমে আমরা প্রাপ্ত করি পবিত্র যজ্ঞোপবীত। তাই আমরা সকলে নির্দিষ্ট সময় পর উপনয়ন সংস্কার সম্পন্ন করার মাধ্যমে ধারণ করি যজ্ঞোপবীত। মুক্ত হওয়ার প্রয়াস করি সেই ঋণ থেকে, যা যজ্ঞোপবীত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। 

ফিরে যাই, সেই চেতনার দিকে যা আর্যাবর্তকে দিয়েছিলো শ্রেষ্ঠত্বের আসন। 

🖋️ VEDA

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ