☑️ শ্রীমদভগবদগীতা পড়ি কিন্তু মান্য করি কি❓
🖋️ নমস্কার। শ্রীমদ্ভগবদগীতা বর্তমান সময়ে অন্যতম জনপ্রিয় এবং অধ্যয়নকৃত গ্রন্থ। যা বহু ইতিহাস বিখ্যাত মানুষের পথনির্দেশক হিসেবে ভূমিকা যেমন রেখেছে, তেমনি বহু মানুষের মার্গ পরিবর্তন করে সঠিক দিশা দেখিয়েছে স্মৃতি শাস্ত্রের মধ্যে প্রাণময় গ্রন্থটি। শ্রীমদ্ভগবদগীতার অধ্যয়নের ফলে মনুষ্য যেমন সংশয় দ্বিধা দূর করে নিজেকে অমৃতপানে পরিচালিত করতে পারে, তেমনি সিদ্ধান্ত গ্রহণে রয়েছে এর হিমালয়প্রতিম গুরুত্ব।
কিন্তু শ্রীমদ্ভগবদগীতা সনাতনীদের সুপ্রসিদ্ধ গ্রন্থ হওয়া সত্ত্বেও আমরা প্রত্যেকে শ্রীমদ্ভগবদগীতার নামে শ্রীমদ্ভগবদগীতার উপদেশ সমূহের পালন করছি না। ফলস্বরূপ, আমরা আর্যাবর্তের অধিবাসীগণ নিজের হীরক খচিত মুকুট এর সঠিক সমাদর করতে ব্যর্থ হচ্ছি।
➡️ আজকে সেই আলোচনায় মনোনিবেশ করা উচিত। ➡️ আমরা শ্রীমদ্ভগবদগীতার জ্ঞান উপদেশ কতটুকু মান্য করছি?
☑️ শাস্ত্র মান্যতা: কর্তব্য অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই আমাদের বিবেচ্য হওয়া উচিত। কোনো ব্যক্তিবিশেষ এর মত অনুসরণীয় বা অনুকরণীয় হতে পারে কিন্তু তাহা শাস্ত্রের উর্ধ্বে নয়। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন স্থানে সমাজে এরুপ ধারণা স্থান অধিকার করেছে যে, শাস্ত্রের থেকে কোনো ব্যক্তির নিজস্ব অভিমত প্রাধান্য অধিক। কিন্তু শ্রীমদ্ভগবদগীতা আমাদের বলেছে,
"তস্মাচ্ছাস্ত্রং প্রমাণং তে কার্যাকার্যব্যবস্থিতৌ ।
জ্ঞাত্বা শাস্ত্রবিধানোক্তং কর্ম কর্তুমিহার্হসি' ॥
- গীতা ১৬/২৪
অর্থাৎ, সেইজন্য এই কর্তব্য এবং অকর্তব্য নির্ধারণের ব্যাপারে শাস্ত্রই তোমার প্রমাণ হোক। শাস্ত্রোক্ত বিধিনিষেধ জেনে এই সংসারে কর্ম করা উচিৎ।
শুধু শাস্ত্র অনুসারে কর্ম করা নয় বরং শাস্ত্রীয় বিধি পরিত্যাগ করে যথেচ্ছাচার করলে ব্যক্তির পরিনতি সম্পর্কেও যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন,
"যঃ শাস্ত্রবিধিমুৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ ।
ন স সিদ্ধিমবাপ্নোতি ন সুখং ন পরাং গতিম্॥"
- গীতা ১৬/২৩
অর্থাৎ, যে মানুষ শাস্ত্রবিধি ত্যাগ করে কামনার বশীভূত হয়ে কর্ম করে, সে সিদ্ধিলাভ করে না; পরমগতিও প্রাপ্ত হয় না।
☑️ বেদই ভিত্তিমূল: বেদ সনাতনধর্ম শাস্ত্রের ভিত্তিমূল। যেকোনো সিদ্ধান্ত কিংবা সংশয় নিবারণে বেদ এর জ্ঞানই প্রাধান্যতা লাভ করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে বিভিন্ন মতপ্রচারক ব্যক্তিগণ নিজ স্বীয় স্বার্থে বেদকে অবমূল্যায়ন করে শ্রীমদ্ভগবদগীতাকে অধ্যয়ন এর প্রচার করে। কিন্তু শ্রীমদ্ভগবদগীতায় সেই বেদ এর প্রাধান্য স্বীকার করে বলা হয়েছে,
"কর্ম ব্রহ্মোদ্ভবং বিদ্ধি ব্রহ্মাক্ষরসমুদ্ভবম্।
তস্মাৎ সর্বগতং ব্রহ্ম নিত্যং যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিতম্"॥
- গীতা ৩/১৫
অর্থাৎ, কর্ম বেদ থেকে উৎপন্ন বলে জানবে। বেদ অবিনাশী অক্ষর [ক্ষয় রহিত পরমাত্মা] থেকে উৎপন্ন। সেজন্য সর্বব্যাপী ব্রহ্ম নিত্য (সবসময়) যজ্ঞে প্রতিষ্ঠিত।
"সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্টো মত্তঃ স্মৃতির্জ্ঞানমপোহনং চ । বেদৈশ্চ সর্বৈরহমেব বেদ্যো বেদান্তকৃদ্ বেদবিদেব চাহম্" ॥ - গীতা ১৫/১৫
অর্থাৎ, আমি সকল প্রাণীর হৃদয়ে স্থিত আছি। আমার থেকেই স্মৃতি, জ্ঞান ও অপোহন(হয় এবং সকল বেদ দ্বারা আমিই জানার যোগ্য । আমিই বেদান্তের কর্তা এবং বেদের জ্ঞাতা।
যারা নিজস্ব মত প্রচারের জন্য শ্রীমদ্ভগবদগীতার অধ্যয়ন এর উপর গুরুত্বারোপ করেন কিন্তু বেদ অধ্যয়নে নিরুৎসাহিত করে থাকেন তাহারা কি শ্রীমদ্ভগবদগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বাক্যকে উপলব্ধি করতে অসমর্থ হলো।
☑️ ও৩ম্ উচ্চারণ: পরমাত্মার শ্রেষ্ঠ নাম ও৩ম্। কঠ উপনিষদে ১/২/১৬ বলা হয়েছে – ‘এই অক্ষরই ব্রহ্ম। কিন্তু আমরা বর্তমানে ও৩ম্ উচ্চারণ এবং ইহার ধ্যান বহুলাংশে সীমাবদ্ধ করে কিছু নামধারী গোষ্ঠীর মধ্যে রাখার প্রয়াস চালানো হচ্ছে। এবং বহু ক্ষেত্রে পরমাত্মার সর্বশ্রেষ্ঠ নাম ও৩ম্ এর পরিবর্তে বিশেষায়িত কিছু নামের প্রচার করা হচ্ছে এবং জপের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে।
কর্মের প্রারম্ভে ও৩ম্ উচ্চারণ:-
"তস্মাদোমিত্যুদাহৃত্য যজ্ঞদানতপঃক্রিয়াঃ ।
প্রবর্তন্তে বিধানোক্তাঃ সততং ব্রহ্মবাদিনাম্" ॥
- শ্রীমদ্ভগবদগীতা ১৭/২৪
অর্থাৎ, সেইজন্য বেদমন্ত্র উচ্চারণকারী মানুষেরা সর্বদা “ওঁ” উচ্চারণ করে শাস্ত্রবিধি অনুসারে যজ্ঞ, দান ও তপস্যা আরম্ভ করেন।
ও৩ম্ উদ্দেশ্য:
"যদক্ষরং বেদবিদো বদন্তি বিশন্তি যদ্ যতয়ো বীতরাগাঃ।
যদিচ্ছন্তো ব্রহ্মচর্যং চরন্তি তৎ তে পদং সংগ্রহেণ প্রবক্ষ্যে"॥
- শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৮/১১
অর্থাৎ, বেদবিদগণ যে সচ্চিদানন্দঘন রূপ পরমপদকে অক্ষর নামে অভিহিত করেন, অনাসক্ত যত্নশীল মানুষেরা যাতে প্রবেশ করেন আর যে পরমপদকে পাওয়ার ইচ্ছা করে ব্রহ্মচর্যের আচরণ করেন⎯সেই পরমপদটি তোমাকে সংক্ষেপে বলছি।
অন্তীম মুহুর্তে ও৩ম্:
"সর্বদ্বারাণি সংযম্য মনো হৃদি নিরুধ্য চ।
মুর্ধ্ন্যাধায়াত্মনঃ প্রাণমাস্থিতো যোগধারণাম্" ॥
ওমিত্যেকাক্ষরং ব্রহ্ম ব্যাহরন্ মামনুস্মরন্।
যঃ প্রয়াতি ত্যজন্ দেহং স যাতি পরমাং গতিম্" ॥
- শ্রীমদ্ভগবদগীতা ৮/১২-১৩
অর্থাৎ, যে মানুষ সকল ইন্দ্রিয়দ্বার সংযত করে, মনকে হৃদয়ে নিরুদ্ধ করে ও প্রাণকে মস্তকে স্থাপন করে যোগে স্থিত হয়ে ‘ও৩ম্’⎯এই এক অক্ষররূপ ব্রহ্মকে উচ্চারণ পূর্বক আমাকে স্বরণ করে দেহকে ত্যাগ করে যায়, সেই মানুষ পরম গতিকে প্রাপ্ত করে।
🖋️ হে অমৃতের সন্তানগণ! শ্রীমদ্ভগবদগীতা আমাদের ধর্ম শাস্ত্রের অমৃত-সম্ভারের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। যা আমাদের কাছে অন্যতম সহজবোধ্য এক অনন্য গ্রন্থ। কিন্তু শ্রীমদ্ভগবদগীতা অধ্যয়ন করেও তাহার সঠিক মান্যতা না করে শুধু স্তুতিধ্বনি প্রচার করলে কখনো সেই অমৃত জ্ঞানের উদ্দেশ্য সাধিত হয় না। বরং সে জ্ঞান মান্য করে জীবনে প্রয়োগ করার মধ্যে প্রকৃত উপযুক্ততা রয়েছে।
প্রচারে : VEDA
#veda