▪️ বেদ ও বিজ্ঞান পর্ব :- ৩
"বৈদিক রসায়ন বিজ্ঞান"
➡️ নমস্কার! সনাতনধর্ম শাস্ত্র শুধু নীতি কিংবা জীবন নির্দেশক গ্রন্থই নয় বরং বিজ্ঞান, রাজনীতিসহ বহুবিধ জ্ঞানের এক সমুদ্র। বেদ সেই সকল ধর্মশাস্ত্রসমূহের মূল স্তম্ভ। জ্ঞানের বিবিধ আলোচনার এক হিমালয় প্রতিম সম্ভার বেদ।
অমৃত জ্ঞানের সম্ভার বেদ এর মধ্যে বহু বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বিদ্যমান। বেদ এর মধ্যে তেমনি একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব
নিয়ে আজকের আলোচনা।
➡️ বৈদিক রসায়ন বিজ্ঞান
বেদে রসায়ন বিজ্ঞানের সংবদ্ধ অনেক মহত্ত্বপূর্ণ সূত্র পাওয়া যায়। এর মধ্যে জলের উৎপত্তি, জলের মহত্ত্ব, জলের গুণ, জলের ভেদ, জল থেকে সৃষ্টি আদির বর্ননা পাওয়া যায়।
জলের উৎপত্তি বিষয়ে বেদে উল্লেখিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব-
💧জলের উৎপত্তিঃ-
অথর্ববেদে বলা হয়েছে যে জলে অগ্নি (Hydrogen) এবং সোম (Oxygen) এই দুইই বিদ্যমান রয়েছে। এস্থলে এটা ধ্যান রাখা উচিত যে, বেদে Oxygen এর জন্য - সোম, মিত্র, বৈশ্বানর এবং মাতরিশ্বা আদি শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। Hydrogen এর জন্য অগ্নি,জল, আপঃ, সলিল, বরুণ আদি শব্দের প্রয়োগ হয়েছে। অথর্ববেদের একটি মন্ত্রে বলা হয়েছে যে, জলে মাতরিশ্বা বায়ু (Oxygen) প্রবিষ্ট রয়েছে। ঋগ্বেদে বলা হয়েছে যে জলে বৈশ্বানর অগ্নি (Hydrogen) বিদ্যমান রয়েছে।
➡️ "অগ্নীষোমৌ বিভ্রতি- আপ ইত্ তাঃ"
[অথর্ব০-৩/১৩/৫]
-[পণ্ডিত জয়দেব শর্মা বিদ্যালঙ্কার ]
➡️ "অপ্সু-আসীন্-মাতরিশ্বা প্রবিষ্টঃ"
[অথর্ব০-১০/৮/৪০]
-[শ্রী পণ্ডিত ক্ষেমকরণদাস ত্রিবেদী]
➡️ "বৈশ্বানরো যাসু-অগ্নিঃ প্রবিষ্টঃ, তা আপঃ"
[ঋগ্বেদ-৭/৪৯/৪]
💧জলের সূত্রঃ-
ঋগ্বেদের একটি মন্ত্রে জলের সূত্র দেওয়া হয়েছে যে, মিত্র এবং বরুণের সংযোগ দ্বারা জল প্রাপ্ত হয়।
"মিত্রং হুবে পূতদক্ষং বরুণং চ রিশাদসম্।
ধিয়ং ঘৃতাচীং সাধন্তা"।। - [ঋগ্বেদ-১/২/৭]
পদার্থ :- (পুত-দক্ষং) পবিত্র করে বল বৃদ্ধিকারী (মিত্রং হুবে) মিত্র বায়ুকে আমি নিই, এবং (রিশ্-অদসম্ বরুণং চ) জং [দূষণ] বিনষ্টকারী বরুণকে নিই। এই দুই অর্থাৎ মিত্র ও বরুণ (ঘৃত-অর্চী ধিয়ং সাধন্তা) জল প্রবাহিত করার কর্মের সাধনা করে। ]
মন্ত্রার্থঃ- জলের প্রাপ্তির জন্য আমি পবিত্র ঊর্জা (Energy) শালী "মিত্র" (Oxygen) এবং দোষসমূহকে বিনষ্টকারী "বরুণ" (Hydrogen) কে গ্রহণ করি।
মন্ত্রে "মিত্র" এবং "বরুণ" শব্দ দ্বারা Oxygen এবং Hydrogen এর নির্দেশ রয়েছে, পরন্তু এর মাত্রার স্পষ্টত সংকেত নেই। জলের সূত্র = H20। বিজ্ঞানের অনুসারে হাইড্রোজেন গ্যাসের ২ অনু (Molecule) এবং অক্সিজেনের ১ অনু (Molecule) একটি পাত্রে রেখে এর মধ্যে বিদ্যুৎ-তরঙ্গ প্রবাহিত করলে জল প্রাপ্ত হয়।
ঋগ্বেদের চার মন্ত্র (ঋগ্বেদ-৭/৩৩/১০-১৩) দ্বয়ে স্পষ্ট রূপে বলা হয়েছে যে, মিত্র এবং বরুণের সংযোগে জল (বসিষ্ট) এর উৎপত্তি হয়েছে। সাথে এটাও স্পষ্ট করা হয়েছে যে যতক্ষন পর্যন্ত বিদ্যুৎ - প্রবাহ (Electric current) দ্বারা এর মধ্যে চঞ্চলতা উৎপন্ন না করা হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত জল তৈরি হবে না।
মন্ত্রতে 'কুম্ভ' ও 'পুষ্কর' শব্দ পরোক্ষভাবে (Test - Tube) এর সংকেত দেওয়া হয়েছে। অতএব অগস্ত্যকে কুম্ভজ বা কলশি দ্বারা উৎপন্ন বলা হয়েছে। "উর্বশী" শব্দের অর্থ বিদ্যুৎ (Electricity), কেননা এই উরু (বিশাল ক্ষেত্রে) অশী (ব্যাপ্ত) রয়েছে।
মন্ত্রতে "মিত্র" (Oxygen) এবং "বরুণ" (Hydrogen) এর সাথে "উর্বশী" "বিদ্যুতো জ্যোতিঃ" এর দ্বারা (Electric current) এর স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে।
প্রসঙ্গত এর বিপরীত প্রক্রিয়া হলো জলকে বিশ্লেষণ করলে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাসের উদঘাটন যেটাকে বলা হয় " Electrolysis of Water" - যেটা ছবিতে দেখানো হলো।
হে অমৃতের সন্তানগণ! বেদ বিবিধ জ্ঞানের এক সমুদ্র। আমরা বর্তমান সময়ে বেদের জ্ঞানকে বিশ্লেষণ করে বহুমাত্রিক জ্ঞান অর্জন করতে পারি এবং মানবকল্যাণে তা ছড়িয়ে দিতে পারি। কিন্তু বেদবিমুখতা আমাদের সেই অমৃত জ্ঞান থেকে বঞ্চিত করছে। বেদ অধ্যায়নে আরো আগ্রহী হয়ে উঠে নিজেদের পৌঁছে নিয়ে যাই শ্রেষ্ঠতম স্থানে।
প্রচারে:- Veda