ঈশ্বর কি আমাদের পরিক্ষা করেন ⁉️


🖋️ ঈশ্বর কি আমাদের পরিক্ষা করেন ⁉️ 

আমরা সকলেই ঈশ্বরের সন্তান! এ জগৎ তাহার অপরুপ সৃষ্টি এবং তাহার সক্ষমতার ও শক্তির নির্দেশক। সেজন্য, পরমাত্মা সর্বদা আমাদের মোক্ষ অর্জনের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উপদেশ প্রদান করেছেন। আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে যখন বিচ্যুত হয়ে কর্মফলে আসক্ত হয়ে কর্ম সম্পাদন করি তখনই আমাদের মোহ বা বন্ধন ঘটে। 

পরমাত্মার বৈশিষ্ট্য অনন্ত। তিনি সর্বজ্ঞ, তাহার অগোচর কিছুই নেই। আমাদের বর্তমান সময়ে একটি সংশয় উপস্থিত, যে ঈশ্বর যদি সর্বজ্ঞ হয়ে থাকেন তবে তিনি কেন আমাদের পরিক্ষা নেন? 

সত্যি কি ঈশ্বর আমাদের পরিক্ষা করেন ⁉️ 

ইহার সদুত্তর হলো নাহ! ঈশ্বর সর্বজ্ঞ, সেজন্য তিনি সর্ব বিষয় অবগত। ভক্তের ভক্তি এবং একনিষ্ঠতা প্রমাণ করার জন্য পরমাত্মার কোনো পরিক্ষার প্রয়োজন নেই। বরং, ভক্তের ভক্তি যখন তাকে ঈশ্বরের সমীপে নিয়ে আসে তখনই ভক্তের ভক্তির প্রমাণ পাওয়া যায়। 

কিন্তু আমরা ভক্তির পথে, মোক্ষ অর্জনের পথে যেসকল বাঁধার সম্মুখীন হই সেগুলো যদি ঈশ্বরের পরিক্ষা না হয় তবে সেগুলো কেন হয় ⁉️ 

এরুপ বাঁধার কারণ বিবিধ। আমরা অনাদি জীবাত্মা, ফলস্বরূপ আমরা বহুবার এই জড় দেহ ধারণ করেছি। ফলে আমাদের সকাম কর্মজনিত যেসকল কর্মফল রয়েছে তা ভোগব্যতীত বিনাশ সম্ভবপর নয়। কর্মফল বিষয়ে অথর্ববেদে বলা হয়েছে, 

"इष्वा॒ ऋजी॑यः पततु॒ द्यावा॑पृथिवी॒ तं प्रति॑।सा तं मृ॒गमि॑व गृह्णातु कृ॒त्या कृ॑त्या॒कृतं॒ पुनः॑॥" [अथर्ववेद ५/१४/१२]

"ইস্বা ঋজীয়ঃ পততু দ্যাবাপৃথিবী তং প্রতি।সা তং মৃগমিব গৃহ্নাতু কৃত্যা কৃত্যাকৃতং পুনঃ।।"

=[]অথর্ববেদ ৫/১৪/১২[]=

অর্থাৎ, দ্যুলোক ও পৃথিবীলোকে দুষ্টকর্ম ফল হয়ে ফেরত আসে কর্তার দিকে যেমন উপরে ছোঁড়া ধনুক নিচের দিকে দ্রুত তেড়ে আসে,যেমনটা আসে বাঘ হরিণের দিকে।

শুধু এরুপ কর্মফল ভোগ করতে হয় তা নয় বরং ত্রিবিধ দুঃখের ভাগীদার আমাদের হতে হয়। ত্রিবিধ দুঃখসমূহ হলো:- 

১. আধ্যাত্মিক দুঃখ:  নিজের মনের অহংকার, হিংসা, বিদ্বেষ এসব পুষে রাখলে এসব দ্বারা মানুষ নিজেই দুঃখ-কষ্ট পায় । তাই এগুলো আধ্যাত্মিক দুঃখ । 

২. আধিদৈবিক দুঃখ ৷ প্রকৃতিক বস্তুসমূহ, যাদেরকে আমরা দেবতাও বলি, তাদের দ্বারা যেসব দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে সেগুলো আধিদৈবিক দুঃখ ৷ যেমন— ঝড়, বন্যা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা প্রভৃতি ৷ 

৩. আধিভৌতিক দুঃখ । অন্যান্য প্রাণী, মানব দ্বারা আমরা যেসব দুঃখ-কষ্ট পাই সেগুলো আধিভৌতিক দুঃখ । 

এই দুঃখ সমূহ মূলত কর্মফলের সাথে সম্পর্কিত নয় । এগুলো মূলত ত্রিগুণাত্মক প্রকৃতির ফলে সংগঠিত হয়। এগুলো কর্মফল হলে মানুষের মধ্যে মোক্ষ (দুঃখ হতে মুক্তি) লাভের ইচ্ছে থাকত না ৷ কর্মের ফলের অতিরিক্ত এই জগতে দুঃখ পেতে হয় বলে মানুষ এই দুঃখ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চায় । সেজন্য, মানুষ কর্ম ফলের বন্ধন ত্যাগ করে মুক্ত হওয়ার প্রয়াস করে।

কিন্তু অজ্ঞানতাবশত আমরা এগুলো ঈশ্বরের পরিক্ষা বলে অভিহিত করি। ঈশ্বর সর্বজ্ঞানী, তাই তিনি আমাদের ভক্তি, মনোভাব সম্পর্কে অবগত। তাই পরিক্ষা করার মাধ্যমে, আমাদের যাচাই এর প্রয়োজন নেই। বরং, এসকল দুঃখসমূহকে নিজেকে নির্লিপ্ত থেকে শুধু পরমাত্মায় নিজেকে নিবদ্ধ রেখে শুধু কর্তব্যের জন্য কর্ম করে মোক্ষ অর্জনের পথে অগ্রসর হতে হবে। সেজন্য শ্রীমদ্ভগবদগীতায় বলা হয়েছে, 

"কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন। 
মা কর্মফলহেতুর্ভূর্মা তে সঙ্গোহস্ত্বকর্মণি"।।

=[] গীতা: ২/৪৭[]=   

অর্থাৎ, কর্মেই তোমার অধিকার, কর্মফলে তোমার কোনো অধিকার নেই। কর্মফল যেন তোমার কর্মপ্রবৃত্তির হেতু না হয়, কর্ম ত্যাগেও যেন তোমার প্রবৃত্তি না হয়। 

তাই হে অমৃতের সন্তানগণ! আমরা কর্মফল ও ত্রিবিধ দুঃখের হেতু বিবিধ বাঁধা প্রাপ্ত হই বা দুঃখ ভোগ করি। ঈশ্বর আমাদের মোক্ষ অর্জনের পথে মার্গ নির্দেশ করেছেন। সেজন্য, তিনি সর্ব বিষয়ে অবগত, তার অগোচরে কিছু নেই এই দৃশ্যমান অথবা সুক্ষ জগতে। তাই পরমাত্মার, আমাদের ভক্তির খাটিত্ব প্রমাণের জন্য কোনো পরিক্ষার প্রয়োজন নেই।

প্রচারে : VEDA

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন