"হস্তমৈথুন ত্যাগ করি,
সুখী-সমৃদ্ধ জীবন গড়ি"
নমস্কার সকল অমৃতের সন্তানগণ। মানব সমাজ বহু বিচিত্র এবং বহু সংস্কৃতি ও অভ্যাস মাধ্যমে গঠিত। বৈদিক শাস্ত্রে মানব জীবনকে শত আয়ুর জীবন হিসেবে সম্বোধিত করা হয়েছে এবং সেই শত বৎসরের দীর্ঘায়ু হতে অনুপ্রাণিত করেছে। যজুর্বেদে বলা হয়েছে, "রায়স্পোষং বিশ্বমায়ুরশীয়" - যজুর্বেদ ৮.৬২ অর্থাৎ, আমি যোগক্ষেম লাভ ও সুরক্ষা এবং পূর্ণ আয়ু প্রাপ্ত করি।
মনুষ্যের এরুপ সুখী-সমৃদ্ধ জীবনের বুনিয়াদ গড়ে উঠে ব্রহ্মচর্য পালনের মাধ্যমে। বৈদিক শাস্ত্রে বর্ণিত চতুরাশ্রমের মধ্যে ব্রহ্মচর্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ঋগ্বেদের ৩য় মন্ডলের ৮ম সুক্তের ৪র্থ মন্ত্রে বলা হয়েছে,
" য়ুবা সুবাসাঃ পরিবীত আগাৎ স উ শ্রেয়ান ভবতি জায়মানঃ। তং ধীরাসঃ কবয় উন্নয়ন্তি স্বাধ্যো ৩ মনসা দেবয়ন্তঃ॥" -ঋগ্বেদ ৩/৮/৪
অর্থাৎ, যে পুরুষ সর্বতােভাবে যজ্ঞােপবীত ধারণ ও ব্রহ্মচর্য সেবন দ্বারা বিদ্বান্ এবং সু শিক্ষিত হইয়া , সুন্দর বস্ত্র পরিধান পূর্বক , ব্রহ্মচর্য্যযুক্ত পূর্ণ যৌবন প্রাপ্ত হইয়া , বিদ্যাগ্রহণ করিয়া গৃহাশ্রমে প্রবেশ করেন , তিনিই দ্বিতীয় বিদ্যাজন্মে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়া অতিশয় শােভাযুক্ত ও মঙ্গলকারী হন । উত্তম ধ্যানযুক্ত বিজ্ঞান দ্বারা বিদ্বানেরা সেই পুরুষকে উন্নতিশীল করিয়া প্রতিষ্ঠিত করেন । আর যে স্ত্রী পুরুষ , ব্রহ্মচর্য্য ধারণ , বিদ্যা এবং সুশিক্ষা গ্রহণ না করিয়া বাল্যাবস্থায় বিবাহ করে তাহারা নষ্ট - ভ্রষ্ট হইয়া বিদ্বান্ ব্যাক্তিদের মধ্যে সম্মান লাভ করেনা ॥
কিন্তু ব্রহ্মচর্য রক্ষার পথে সবচেয়ে বড় বাধাস্বরূপ আমাদের কামনা। কাম যখন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠে তখনই ঘটে বিপর্যয়। হস্তমৈথুনের অভ্যাস [masturbation] সেরূপ বিপর্যয়ের অন্যতম। হস্তমৈথুনের অভ্যাস প্রাচীন সময় থেকে প্রচলিত এবং নিন্দিত। বৈদিক শাস্ত্রেও রয়েছে হস্তমৈথুনের নিষেধাজ্ঞা,
" স্বয়মিন্দ্রিয়মোচনমিতি " গোভিল গৃহ্যসূত্র -৩/১/২৬
অর্থাৎ:- হস্তমৈথুন করবে না।
সেজন্য, একজন ব্রহ্মচর্য পালনকারী ব্যক্তির জন্য হস্তমৈথুন প্রত্যাখান যোগ্য।
তবে বহু মনুষ্য হস্তমৈথুনের প্রতি আসক্ত। ফলস্বরূপ, বিভিন্ন শারীরিক-মানসিক অধঃপতনের দিকে ধাবিত হচ্ছে এরুপ ব্যক্তিগণ। মনুষ্য অভ্যাসের দাস তাই এরুপ কু-অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হলে প্রয়োজন ভালো অভ্যাস এবং মনের দৃঢ়তা। হস্তমৈথুনের পরিত্যাগে ০৩টি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।
১. কর্মব্যস্ত থাকা
২. অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকা
৩. নিয়মিত ধর্মাচরণ
🔸কর্মব্যস্ত থাকা: জরিপের তথ্য বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, হস্তমৈথুনের অভ্যাস গড়ে উঠে কর্মহীনতা, অলস ও একাকিত্বের কারণে। সেজন্য, সবসময় বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত থাকা। যা নতুন উদ্যমের সৃষ্টি করবে এবং কুচিন্তা থেকে দূরে রাখবে।
🔸অশ্লীলতা থেকে বিরত থাকা: অশ্লীলতা হস্তমৈথুনের অন্যতম কারণ। বিভিন্ন পর্নোগ্রাফি সাইট, নগ্ন-অর্ধনগ্ন কনটেন্ট, চটি এসকল অশ্লীলতা মনে বিরুপ প্রভাব ফেলে। ফলস্বরূপ, ব্যক্তি হস্তমৈথুন, অবৈধ যৌনলালসায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে। সেজন্য, অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকতে হবে।
🔸নিয়মিত ধর্মাচরণ: ধর্ম মনুষ্যকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করে এবং অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করে। সেজন্য, প্রতিদিন বৈদিক শাস্ত্র সমূহ অধ্যয়ন করা, প্রাতঃকালে ঘুম থেকে উঠে স্নানপূর্বক বৈদিক সান্ধৌপসনা, ঈশ্বর স্তুতি উপাসনা পাঠ, গায়ত্রী মন্ত্র জপ করা, ॐ ধ্যান করা, ব্রহ্মসংগীত অনুশীলন করা। এর ফলে, ব্যক্তির মনে নেতিবাচক মনোভাব পরিবর্তন হয়ে ইতিবাচক মনোভাব বৃদ্ধি পাবে।
হে অমৃতের সন্তানগণ! মনুষ্য দেহ বহু কর্মের ফলে প্রাপ্ত হয়েছে। তাই কামনার মায়াবন্ধনে আবদ্ধ না হয়ে প্রকৃত সত্য অনুসন্ধান তথা ব্রহ্মকে প্রাপ্তির চেষ্টা নিয়োজিত করি।
ধন্যবাদ।