"তুলসী ও ঔষধিগুণ"



"তুলসী - Holy Basil"

তুলসী সনাতনীদের নিকট অতি পরিচিত অসামান্য গুণসম্পন্ন এক নাম। বহুবিধ গুণসম্পন্ন হওয়া তুলসীকে কুইন অব হার্বস বলা হয়ে থাকে। ইহার বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum Sanctum যা একটি ঔষধিগাছ। তুলসী অর্থ যার তুলনা নেই। তুলসী গাছ লামিয়াসি পরিবারের অন্তর্গত একটি সুগন্ধী উদ্ভিদ। বেদের অন্তর্গত উপবেদ - আয়ুর্বেদ এ তুলসী বিবিধ ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেজন্য  সনাতনীদের নিকট এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসাবে সমাদৃত।  চরকসংহিতায় 'বিষ্ণুপ্রিয়া' হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে এই অসাধারণ ঔষধিগাছকে। 

আজ এই বিশেষ দিবসে তাই তুলসীপাতার উপকারিতা সম্পর্কে জানার প্রয়াস করি।

✍️সর্দি-কাশির মহৌষধ:- 

শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের মানুষের ঠান্ডা, সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে তুলসী পাতা মহৌষধ। বাচ্চার সর্দি-কাশি থাকলে আধা চা–চামচ মধুর সঙ্গে তুলসী পাতার রস মিশিয়ে খাওয়ালে কাশি কমে যাবে। বুকে কফ বসে গেলে সকালবেলা এক গ্লাস পানিতে   করুন, আরাম পাবেন। তুলসী পাতা ফুটিয়ে গড়গড়া করলে গলাব্যথায় আরাম পাওয়া যায়।

✍️মানসিক চাপ দূরীকরণে:- 

বেশির ভাগ দেশে তুলসীকে মানসিক চাপমুক্ত করার একটি অসাধারণ ঔষধি হিসেবে গণনা করা হয়। তুলসীতে ভিটামিন সি, অ্যান্টি-ইনফ্লেমটরি ও অন্যান্য অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। এ উপাদানগুলো নার্ভকে শান্ত করে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তুলসী শরীরে কর্টিসোলের মাত্রা কমিয়ে আনতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত উত্তেজনা ও চাপ থেকে মুক্তি দেয়।

✍️রোগ প্রতিরোধে:

বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে তুলসী পাতায় রয়েছে অসাধারণ রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যেমন অ্যাজমা, ফুসফুসের সমস্যা, ব্রঙ্কাইটিস ইত্যাদি। এ ছাড়া জ্বরের সময়ও তুলসী পাতা খুব উপকারী। বর্ষাকালে এই তুলসী পাতা ও এলাচি দিয়ে ফোটানো পানি পান করলে খুব সহজেই নানা রকমের রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বিভিন্ন সার্জারির পর বা কোনো ক্ষতস্থানে তুলসী পাতা বেটে লাগালে তা বেশ তাড়াতড়ি শুকিয়ে ওঠে।

✍️সুগার ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে:

তুলসী পাতা রক্তের সুগারের মাত্রা ও কোলেস্টেরল দুটোই কমাতে সাহায্য করে, যার ফলে খুব সহজেই আপনি ওজন বৃদ্ধির হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

✍️ক্যানসার প্রতিরোধে:

ক্যানসার প্রতিরোধ করতে তুলসী পাতা খুবই উপকারী। তুলসী পাতায় রয়েছে রেডিওপ্রটেকটিভ উপাদান, যা টিউমারের কোষগুলোকে মেরে ফেলে। তুলসী পাতায় থাকা ফাইটোকেমিক্যাল যেমন রোসমারিনিক অ্যাসিড, মাইরেটিনাল, লিউটিউলিন এবং এপিজেনিন ক্যানসারের বিরুদ্ধে খুবই কার্যকরী। অগ্ন্যাশয়ে যে টিউমার কোষ দেখা দেয়, তা দূর করতেও তুলসী উপকারী। ব্রেস্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করতেও তুলসী পাতা খুব কার্যকরী।

✍️ত্বকের যত্নে: 

ত্বকের যত্নের জন্যও তুলসী পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। তুলসী পাতায় থাকা ভিটামিন সি, ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস ও এসেনশিয়াল অয়েলগুলো চমৎকার অ্যান্টি–অক্সিডেন্টের কাজ করে, যা বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে। কেউ কেউ আবার তুলসী পাতাকে যৌবন ধরে রাখার টনিকও মনে করেন। তুলসী পাতা বেটে সারা মুখে লাগিয়ে রাখলে ত্বক সুন্দর ও মসৃণ হয়। এ ছাড়া ত্বকের কোনো অংশ পুড়ে গেলে তুলসীর রস এবং নারকেলের তেল ফেটিয়ে লাগালে জ্বালা কমবে এবং সেখানে কোনো দাগ থাকবে না।

✍️চর্মরোগ প্রতিরোধী: 

তুলসীতে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানগুলো চোখের চুলকানি, অঞ্জনি, পিচুটিজাতীয় যাবতীয় সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। পুষ্টিগুণে ভরপুর তুলসী পাতা, দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ছানি এবং গ্লুকোমার মতো চোখের রোগকে দূরে রাখতেও সাহায্য করে।

✍️হার্টের রোগ প্রতিরোধে:

তুলসী পাতা হার্টের রোগীদের জন্য অনেক উপকারী। কেননা হার্টের রোগ জন্ম দেয় হাইপারটেনশন, উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টরলের। তুলসী পাতার দ্বারা রক্তের জমাট বাঁধার সমস্যা দূর করা যায় ও হার্ট অ্যাটাক রোধ করা যায়। হার্টের অন্যান্য সমস্যাও সহজে রোধ করতে পারে তুলসী পাতা।

✍️পেটের সমস্যা দূরীকরণ:

পেটের সমস্যায় তুলসী পাতা মহৌষধ। পেটব্যথা, অম্বল, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর করতে তুলসী পাতা দারুণ কার্যকরী। পেটে আলসারের বিরুদ্ধেও তুলসী পাতা ভালো কাজ করে। পেটে ব্যথা হলে ২০ মিলি পানিতে তুলসী পাতা ভালো করে ফুটিয়ে ১০ মিলি কমিয়ে পান করুন। এতে পেটব্যথা ও হাইপার অ্যাসিডিটি খুব সহজে কমে যায়।

তাই এই অমৃত সমৃদ্ধ ঔষধি বৃক্ষ রোপন করি এবং একে অপরকে উপহার স্বরুপ প্রদান করি।

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন