সনাতন ধর্ম কি উগ্রতাকে সমর্থন করে ⁉️


🔅 সনাতন ধর্ম কি উগ্রতাকে সমর্থন করে ⁉️

📌 সনাতন ধর্ম শান্তি ও সৌহার্দ্যের আদর্শকে ধারণ করে। মনুষ্যত্ববোধ, ন্যায়, উদারতা, পরমতসহিষ্ণুতা সনাতনীদের ইতিহাসের এক স্বর্ণালি অধ্যায়। এ জগতের প্রতিটি প্রাণীকে অমৃতের সন্তান হিসেবে সম্বোধন, সমগ্র পৃথিবীকে এক পরিবার, প্রাণী মাত্রই মিত্রের দৃষ্টিতে দেখার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। 

সাম্প্রতিক সময়ে দোলপূর্ণিমা উপলক্ষে হওয়া কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিবিধ সমালোচনার উদয় ঘটেছে যে পরমতসহিষ্ণুতার ধারক হিসেবে প্রসিদ্ধ সনাতনীগণ কি উগ্রতাকে সমর্থন করে ?

পৃথিবীতে প্রতিটি অন্যায় নিন্দনীয় এবং অমার্জনীয়। জগতের মাঝে সকলের অধিকার রয়েছে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে গড়ে তোলার। অপরের উপর দমন পীড়ন, নিষ্ঠুরতা কিংবা যেকোনো অন্যায় মানবতার বিরুদ্ধে। একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে সকলের উচিত সে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠে প্রতিবাদ করা। 

সনাতন ধর্ম শান্তি ও সৌহার্দ্যের ধারক। জগতের শান্তি ও কল্যাণ কামনা করা প্রতিটি সনাতনীর শাস্ত্রীয় শিক্ষা। সেজন্য একমাত্র সনাতন ধর্মে প্রতিটি ধর্মীয় কার্য শেষে বিশ্বশান্তির উদ্দেশ্য বিশ্বশান্তি মন্ত্র পাঠ করা হয়। যেখানে বলা হয়,

"ॐ সর্বেসাম স্বস্তির ভবতু,
সর্বেসাম শান্তির ভবতু,
সর্বেসাম পূর্ণম ভবতু,
সর্বেসাম মঙ্গলম ভবতু 
সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ
সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ।
সর্বে ভদ্রাণি পশ্যন্তু
মা কশ্চিৎ দুঃখভাগভবেৎ।। 

ভাবার্থ: জগতের সবাই যেন সুখী হয়, সকলে যেন নিরাময় হয়, সকল মানুষ পরম শান্তি লাভ করুক, কশ্মিনকালেও যেন কেহ দুঃখ বোধ না করেন। ঈশ্বর আমাদেরকে আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক এই তিন প্রকার দুঃখ হতে শান্তি প্রদান করুন।

সনাতন ধর্ম অপর কোনো মনুষ্যের প্রতি হিংসাকে সমর্থন করে নাহ। জীব মাত্রই তাহার কল্যাণ কামনা করা সনাতন শাস্ত্রের উপদেশ। মনুষ্যকে নিজের সুখের পাশাপাশি অপরের প্রতি সহমর্মিতা, ভালোবাসা ও সুখ সমৃদ্ধির কামনা করাই উচিত। 

"আ শাসতে প্রতি হর্যন্ত্যুক্থেমা হরী বহতস্তা নো অচ্ছ" - ঋগ্বেদ ১/১৬৫/৪

অর্থাৎ , যেভাবে নিজের সুখের কামনা করা হয় , সেভাবে সকলের সুখের জন্য তাদের দুঃখ দূর করা উচিৎ।

প্রতিহিংসার স্থান সনাতন ধর্মে নেই। কারণ, সনাতন ধর্মশাস্ত্র "অহিংসা পরম ধর্ম" এই নীতিকে আপন করে চলে। সেজন্য অপরের প্রতি বিদ্বেষ, ঘৃণা, হিংসার ভাব সনাতনীরা কখনো ধারণ করে নাহ। প্রতিটি অমৃতের সন্তান পরমাত্মার নিকট প্রার্থনা করে যে, 

 "যুযোধ্যস্মদ্ দ্বেষাংসি'   ঋগ্বেদ - ২/৬/৮ 
অর্থাৎ, হে পরমেশ্বর! আমাদের হৃদয় থেকে ঈর্ষা , দ্বেষ , বৈরী ভাবকে দূর করো। 

তবে কেন এরুপ সংশয় উদীয়মান হতে পারে যে, সনাতন ধর্ম উগ্রতাকে সমর্থন করে কিংবা ধারণ করে? অপর কাউকে প্রতিহিংসা তো দূর বাক্য অপরকে কটুবাক্য পরিহার করা সনাতন ধর্মের শিক্ষা,

 "মা বো বচাংসি পরিচক্ষ্যাণি বোচম্" - সামবেদ ৬১০ 

অর্থাৎ, আমি যেন কটূ বচন উচ্চারণ না করি।

হিংসা কিংবা উগ্রতাকে পরিত্যাগ করে সর্বদা প্রেমপূর্বক, স্থির ও নমনীয় হয়ে সত্য ধারণ করা আদর্শ জীবনের পরিচায়ক।  সেজন্য বেদে বলা হয়েছে,  

"মাহিরভূর্যা পৃদাকুর্নমস্ত আতানানৰ্বা প্রেহি"
- যজুর্বেদ ৬/১২

অর্থাৎ, হে মনুষ্য,হিংস্র বা উগ্র হয়োনা। নমনীয় ও সত্যনিষ্ঠ হও।

পরিশেষে এতটুকু বলার রয়েছে, সনাতন ধর্ম না তো উগ্রতাকে সমর্থন করে, না প্রতিহিংসাকে লালন করে। যদি সনাতনীরা পরমতসহিষ্ণুতাকে ধারণ না করতো, তবে দীর্ঘ সময় ধরে তাহাদের উপর হওয়া অত্যাচার, অন্যায়ের জন্য প্রতিহিংসার আশ্রয় নিতে পারতো। বরং, এত দমন-পীড়নে হলেও তাহারা এখনো ভাতৃত্ব বোধ বজায় রেখে চলে। সেজন্য, সনাতন ধর্মের বিশ্বজনীনতা এবং অসীম উদারতা দেখে স্যামুয়েল ইভান্স স্টোকস, জুনিয়র হয়ে গিয়েছিলেন সত্যানন্দ স্টোকস, জর্জ হ্যারিসন হয়ে গিয়েছিলেন সনাতনের অগ্রদূত, আরো বহু মনিষী নিজ জীবনকে পরিচালিত করেছিলেন সনাতনধর্মের উদার বটবৃক্ষ ছায়ায়। আজও হাজারো ভিন্ন মতাবলম্বী সনাতনের উদারতা ও পরমতসহিষ্ণুতার আবেশে মুগ্ধ হয়ে সনাতনকে জানার যাত্রা শুরু করে। কারণ, সনাতন ধর্ম কখনো জোরজবরদস্তি নিজের জ্ঞান, আদর্শ অপরের উপর চাপিয়ে দেয়নি, বরং লক্ষ লক্ষ ভক্ত সনাতনের মহিমায় মুগ্ধ হয়ে নিজ জীবনকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে গড়ে তুলতে এসেছিলেন সনাতন বটবৃক্ষের ছায়াতলে।

✏️Run With Veda 

#veda

Please Select Embedded Mode To Show The Comment System.*

নবীনতর পূর্বতন