কেন সনাতনীরা সর্বদা বিশ্বমানবতার পক্ষে কথা বলে ⁉️


কেন সনাতনীরা সর্বদা বিশ্বমানবতার পক্ষে কথা বলে ⁉️

মানবতা বর্তমান সময়ে, সর্বসাধারণের স্বতঃস্ফূর্ত ধারণা ও আদর্শ। সমগ্র জগতের মাঝে সকলের প্রতি হৃদয়ে যে প্রেম, ভালোবাসা, স্নেহ কিংবা করুণার ভাব উদয় হয়, তাহাই মানবতা। তবে মানবতাকে হতে হয় নিরপেক্ষ। কারণ পক্ষপাত কিংবা সংকীর্ণতা কখনো মানবতা বা মনুষ্যত্ব বোধের প্রতিফলন ঘটাতে পারে নাহ। 

এই পৃথিবীতে বহু মতাদর্শ, সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। যাহার নিজ জাতীয়তাবাদ, আদর্শকে ধারণ করে চলে। কিন্তু প্রত্যেকের মাঝে সার্বজনীনভাবে যে গুণাগুণ বিদ্যমান, তা হলো মনুষ্যত্ব বোধের বিবেক। কিন্তু সে বিবেক সর্বদা জাগ্রত হয় না, কিংবা হলেও থাকে নিশ্চুপ। 

উদাহরণস্বরূপ, ৯০ এর দশকে ভারতের অন্তর্গত জম্মু-কাশ্মীরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেতে থাকে। কিন্তু সে বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডের প্রধান লক্ষ্যে পরিণত হয় কাশ্মীরী হিন্দু পণ্ডিতেরা। ফলস্বরূপ, কাশ্মীরী সে সংখ্যালঘু পণ্ডিতেরা আক্রান্ত হয়, শিকার হয় নির্যাতন, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, বাধ্য হয় নিজ দেশে দেশান্তরী হতে। কিন্তু সে সময়, বিশ্বমানবতা নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করেছিলো। আজও সে অসহায় নির্যাতনের শিকার মানুষ গুলো ফিরতে পারেনি তাদের নিজ আবাসে। কিংবা পাকিস্তান সৃষ্টির আগে থেকে সেই সকল স্থানে হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর যে নির্মম নির্যাতন চলে আসছে, নিশ্চিহ্ন হচ্ছে তাদের অস্তিত্ব, আফগানিস্তানে যে হিন্দু গোষ্ঠীর বসবাস ছিল, সেখানে আজ হিন্দু-বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী প্রায় বিলুপ্ত। কিন্তু সে সকল অসহায়ের আর্তনাদে বিশ্বমানবতা কতটুকু দাঁড়িয়ে ছিল কিংবা সে সকল দেশের আপামর সাধারণ সে নির্যাতিতের পাশে কতটুকু সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো। কিংবা ভিয়েতনাম, আরমেনিয়া, সার্ভিয়া, তিব্বত এর মতো স্থানে এত আগ্রাসন কিংবা মানবতা বিরোধী কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন দেশ ছিলো নিশ্চুপ। যেমন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের দ্বারা মানবতাবিরোধী জঘন্য অপরাধ এর বিষয়ে আমেরিকা ও চীন কিংবা ওআইসি ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। 

কিন্তু মানবতা মনুষ্যের হৃদয়ে প্রোথিত রয়েছে। সেজন্য, ১৯৭১ সালের গণহত্যায় বহু বিবেকবান মানুষেরা এগিয়ে এসেছিলেন এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো। কারণ প্রত্যেকের মাঝে রয়েছে সুপ্ত মানবিক সত্তা। যা ঈশ্বর কর্তৃক প্রদত্ত। 

সে মানবতার সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে সনাতনীরা। সনাতনীরা সর্বদা বিশ্বমানবতার পক্ষে এবং যেকোনো নির্যাতন ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানায়। কারণ, সনাতন ধর্মে  অমৃতের সন্তানদের উদ্দেশ্য বলেছে,

"মনুর্ভব জনয়া দৈবং জনম্" -||ঋগ্বেদঃ১০/৫৩/৬||-
অর্থাৎ, প্রকৃত মানুষ হও এবং অন্যকে মানুষ হিসেবে গড়ে  তোল।

এই মানবহিতৈষী ভাবের সর্বোত্তম স্থান দেওয়া হয়েছে সনাতন ধর্ম শাস্ত্রে তা অন্য কোথাও অনুপস্থিত। আমরা বিভিন্ন মতাদর্শের গ্রন্থে খুঁজে পাই, শুধু মাত্র নিজ সম্প্রদায় এর কল্যাণ কামনা করা এবং অপরের বিনাশের প্রত্যাশা। কিন্তু বিপরীতে সনাতন ধর্মে বলা হয়েছে,

"ॐ সর্বেসাম স্বস্তির ভবতু,
সর্বেসাম শান্তির ভবতু,
সর্বেসাম পূর্ণম ভবতু,
সর্বেসাম মঙ্গলম ভবতু 
সর্বে ভবন্তু সুখিনঃ
সর্বে সন্তু নিরাময়াঃ।
সর্বে ভদ্রাণি পশ্যন্তু
মা কশ্চিৎ দুঃখভাগভবেৎ।। 

ভাবার্থ: জগতের সবাই যেন সুখী হয়, সকলে যেন নিরাময় হয়, সকল মানুষ পরম শান্তি লাভ করুক, কশ্মিনকালেও যেন কেহ দুঃখ বোধ না করেন। ঈশ্বর আমাদেরকে আধ্যাত্মিক, আধিদৈবিক ও আধিভৌতিক এই তিন প্রকার দুঃখ হতে শান্তি প্রদান করুন।

এরুপ বিশ্বের প্রতিটি প্রাণী মাত্রই সুখ, সমৃদ্ধির জন্য কামনা করা ইহা আর কোথায় খুঁজে পাবেন। সনাতন ধর্ম অপর কোনো মনুষ্যের প্রতি হিংসাকে সমর্থন করে নাহ। সনাতন শাস্ত্র তো আমাদের উপদেশ দিয়েছে নিজের যে সুখ সমৃদ্ধি আমরা কামনা করি, তা যেন অপরের জন্য কামনা করি। এরুপ ভাতৃত্ব বোধ এর ধারক বলে সনাতনীরা সর্বদা বিশ্বমানবতার পক্ষে কথা বলে। 

"আ শাসতে প্রতি হর্যন্ত্যুক্থেমা হরী বহতস্তা নো অচ্ছ" - ঋগ্বেদ ১/১৬৫/৪

অর্থাৎ , যেভাবে নিজের সুখের কামনা করা হয় , সেভাবে সকলের সুখের জন্য তাদের দুঃখ দূর করা উচিৎ।

অপরের প্রতি মনে ঈর্ষা সনাতন ধর্ম শাস্ত্র বিরুদ্ধ। আমাদের হৃদয় সর্বদা অপরের জন্য প্রেম ও ভালোবাসার জন্য 

 "যুযোধ্যস্মদ্ দ্বেষাংসি'   ঋগ্বেদ - ২/৬/৮ 
অর্থাৎ, হে পরমেশ্বর! আমাদের হৃদয় থেকে ঈর্ষা , দ্বেষ , বৈরী ভাবকে দূর করো। 

বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে অন্যায়, অবিচার হলে সনাতনীরা সর্বদা ন্যায়ের পক্ষে থাকবে। সে অন্যায়কারী যদি সনাতনীও হয়, তবুও সনাতনীরা পক্ষপাত করে না। কারণ অন্যায়কে অন্যায় বলার সৎ সাহস বেদ আমাদের দিয়েছে। আমাদের নিকট এই বিশ্বের সকলে অমৃতের সন্তান এবং আমাদের ভ্রাতা। আমরা কারো প্রতি হওয়া অন্যায়ে ব্যথিত হই। কারণ আমাদের ধর্মশাস্ত্র আমাদের নৈতিকতা, মানবিকতার চর্চায় উদ্বুদ্ধ করে। সেজন্য, সনাতন ধর্মের বিশ্বজনীনতা এবং অসীম উদারতা দেখে স্যামুয়েল ইভান্স স্টোকস, জুনিয়র হয়ে গিয়েছিলেন সত্যানন্দ স্টোকস, জর্জ হ্যারিসন হয়ে গিয়েছিলেন সনাতনের অগ্রদূত, আরো বহু মনিষী নিজ জীবনকে পরিচালিত করেছিলেন সনাতনধর্মের উদার বটবৃক্ষ ছায়ায়। আজও হাজারো ভিন্ন মতাবলম্বী সনাতনের উদারতা ও পরমতসহিষ্ণুতার আবেশে মুগ্ধ হয়ে সনাতনকে জানার যাত্রা শুরু করে। কারণ, সনাতন ধর্ম কখনো জোরজবরদস্তি নিজের জ্ঞান, আদর্শ অপরের উপর চাপিয়ে দেয়নি, বরং লক্ষ লক্ষ ভক্ত সনাতনের মহিমায় মুগ্ধ হয়ে নিজ জীবনকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে গড়ে তুলতে এসেছিলেন সনাতন বটবৃক্ষের ছায়াতলে।

✏️Run With Veda

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

🔸সনাতন ধর্ম ও নারী 💐

সনাতন ধর্মে কি গোমূত্র পানের উল্লেখ রয়েছে ⁉️

▪️একাদশী" কি শাস্ত্র সম্মত ❓