আধুনিক বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম :
আধুনিক বিজ্ঞান ও সনাতন ধর্ম :
সনাতন ধর্ম (হিন্দুধর্ম) প্রাচীন বিশ্বে বিজ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, ধাতুবিদ্যা, স্থাপত্য, ও দর্শনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতীয় পণ্ডিতদের অবদান আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান উল্লেখ করা হলো—
১. গণিত:
শূন্যের আবিষ্কার: আর্যভট্ট ও ব্রহ্মগুপ্ত শূন্যের ধারণা প্রতিষ্ঠা করেন, যা আধুনিক গণিত ও কম্পিউটারের ভিত্তি।
দশমিক পদ্ধতি:
ভারতীয় পণ্ডিতরা দশমিক সংখ্যা পদ্ধতির উদ্ভাবন করেন, যা আজকের গাণিতিক গণনায় অপরিহার্য।
পাই (π) এর মান:
আর্যভট্ট পাই-এর (π) একটি সঠিক মান নির্ণয় করেন (৩.১৪১৬)।
২. জ্যোতির্বিজ্ঞান:
পৃথিবীর আহ্নিক গতি: আর্যভট্ট প্রথম বলেন যে পৃথিবী নিজ অক্ষে ঘূর্ণন করে এবং সূর্য স্থির।
গ্রহ-নক্ষত্রের গতি:
বরাহমিহির ও ভাস্করাচার্য গ্রহ-নক্ষত্রের গতি ও খগোলীয় ঘটনা নিয়ে গবেষণা করেন।
চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ:
প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিদরা গ্রহণের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেন।
৩. চিকিৎসাবিজ্ঞান (আয়ুর্বেদ ও শল্যচিকিৎসা):
শুশ্রুত সংহিতা ও চরক সংহিতা:
চরক ও শুশ্রুত প্রাচীন ভারতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিত।
প্রথম শল্যচিকিৎসা:
শুশ্রুত প্রথমবার প্লাস্টিক সার্জারি, ক্যাটার্যাক্ট অপারেশন এবং অন্যান্য জটিল অস্ত্রোপচারের বিবরণ দেন।
ঔষধ ও ভেষজ:
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহু ঔষধি গাছ ও ভেষজ উপাদান ব্যবহারের কৌশল বর্ণিত আছে।
৪. ধাতুবিদ্যা ও রাসায়নিক বিজ্ঞান:
লোহা ও ইস্পাত: ভারতীয়রা উন্নত ধাতু প্রক্রিয়াকরণে পারদর্শী ছিলেন। দিল্লির "লৌহস্তম্ভ" মরিচা না ধরে থাকা প্রাচীন ভারতীয় ধাতুবিদ্যার প্রমাণ।
দাহ্য ও বিস্ফোরক দ্রব্য: প্রাচীন ভারতীয়রা বারুদ ও অগ্নিসংক্রান্ত বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করতেন।
৫. স্থাপত্য ও প্রকৌশল:
বিশ্বের প্রথম শহর পরিকল্পনা: হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়ো সভ্যতায় সুপরিকল্পিত শহর, নিকাশী ব্যবস্থা, এবং কাঠামোগত উন্নতির প্রমাণ রয়েছে।
মন্দির স্থাপত্য:
অজন্তা-ইলোরা গুহা ও কনার্কের সূর্য মন্দির প্রাচীন ভারতীয় স্থাপত্যশিল্পের অনন্য নিদর্শন।
৬. দর্শন ও যুক্তিবিজ্ঞান:
ন্যায়শাস্ত্র ও যুক্তিবিদ্যা: গৌতমের ন্যায় দর্শন এবং কণাদের বৈশেষিক দর্শন আধুনিক যুক্তিবিদ্যা ও পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
যোগ ও মনোবিজ্ঞান:
পতঞ্জলির যোগসূত্র আজও বিশ্বব্যাপী শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার:
প্রাচীন ভারতের বিজ্ঞানীরা আধুনিক বিজ্ঞানের বহু শাখার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, চিকিৎসাবিজ্ঞান, ধাতুবিদ্যা, স্থাপত্য, এবং দর্শনে তাদের অবদান আজও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
প্রচারে :- VEDA
✨ Run with veda #veda
কথোপকথনে যোগ দিন